somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহফুজ
আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

পুলিশ ভ্যানে বোমারু

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"পুলিশ ভ্যানে বোমারু"

রাত ১২ টা বেজে ৪৪ মিনিট বাজে। কাকড়াইমোড় থেকে হাঁটা শুরু করেছিলাম। শাহবাগ মোড় থেকে প্রায় ২০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছি এখন। ইচ্ছে করে দাঁড়াইনি। একটা পুলিশ ভ্যান এসে পাশে থামলো। সামনের সিট থেকে একজন মাথা বের করে ডাকলো। পেছন থেকে আরো দুইজন নামলো। ঐ দু'জন কনস্টেবল বুঝতে পারলাম। সামনের জনের চেহারা ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা তবে ধরে নিলাম অফিসার গোছের কেউ হবে যেহেতু সামনে বসে আছে।
-গাড়ীতে উঠেন।
অফিসারের কড়া আদেশ। আমি ভাবলাম একটু মজা করে নেই।
-জ্বী না, লাগবেনা। আমি পায়ে হেঁটেই যেতে পারবো।
-থানা পর্যন্ত যেতে আপনার কষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ীতে চুপচাপ উঠে বসুন।
ব্যাটা আমার থেকেও বড় মস্কারি করলো।
বুঝতে পারলাম আজ ওদের পকেটে খড়া চলছে। আমাকে ফাঁসানোর ইচ্ছা। কিন্তু ওরাতো ভুল করছে আমাকে ধরে নিয়ে গেলেও আমি কোন টাকা পয়সা দিতে পারবোনা। কারণ আমি যেদিন রাতে বের হই সাথে মাত্র দুই কাপ চায়ের পয়সা রাখি। সিগারেট আর লাইটার বাসা থেকেই নিয়ে আসি।

-কি হলো, উঠছেন না কেন?
বাজখাঁই কণ্ঠে হাক চাড়লো অফিসার।

-আমি আপনার পাশের সিটে বসি?

আমার প্রশ্ন শুনে অবাক হলো অফিসার।
-আমার পাশে কেন!

-না, এমনিই। পিছে বসে গেলে অনেকে আমাকে বিরাট কয়েদী ভাববে আর আপনার মত ইয়ং পুলিশ অফিসারের পাশে বসে যাওয়াতো অনেকটা উপভোগ্যও হবে।

প্রশংসা শুনে সবাই কিছুটা হলেও খুশী হয়। তার প্রমান পেলাম ভ্যানের সামনের দরোজা খোলে যেতেই। উঠে বসলাম। অফিসার একটু চেপে বসলো ড্রাইভারের দিকে।

-তা কোথায় কোথায় বোমা ফিট করলেন?
বসা মাত্রই এমন প্রশ্নে আমি হকচকিয়ে গেলাম। তবে ঘাবড়ালামনা। এটা ওদের ট্রিকস। যত বড় অভিযোগের ভয় দেখাবে তত বেশী টাকা হাতানোর ফন্দি। ড্যাসবোর্ডে রাখা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগ্রেট ধরালো অফসার। দিয়াশলাইয়ের আলোতে দেখে নিলাম ব্যাজে লিখা নামটা। মো.আবরার।
নামের আগে মোহাম্মদকে এখন 'মো.' লিখতে হয়।
বাংলা বানানের নতুন নিয়ম। সারাজীবন শিখে আর দেখে এসেছি 'মোঃ' লিখা। যাই হোক বানানে কি আসে যায়? হোয়াটস ইন এ স্পেলিং! আবরারের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যেন তেন উত্তর দিলে চলবেনা। সোজা চালান হয়ে যাব।

-সুযোগই তো পেলামনা, ফিট করার আগেই পাকড়াও করে ফেললেন।

মো. আবরার বিষ্মিত হলো আমার উত্তরে।
-কি!
-না মানে সবে বের হয়ে কিছু প্লেস ঠিক করেছি, অমনি এসে ধরে গাড়ীতে তুলে ফেললেন, সেকথা বলছিলাম।

-এর মানে আপনি সত্যি সত্যি বোমাবাজ!

-সত্যি নয়তো কি? আপনারা কি না জেনে ধরেছেন আমাকে! কি কাণ্ড কি কাণ্ড, আমিওতো বলি বাংলাদেশের পুলিশ এত কর্মঠ আর বুদ্ধিমান হলো কিভাবে? বোম ব্লাস্ট তো দূর সেটিংয়ের আগেই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডিয়ানদের মতো এসে উপস্থিত!

আবরার কি বলবে বুঝতে পারছেনা। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর বিষ্ময়ের ঘোর কাটার আগে আরো কিছু বিষ্ময় তার নিউরনে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
-আপনার তো প্রমোশন হয়ে যাবেরে ভাই। বোমাসহ বোমাবাজকে ধরে ফেলেছেন।

বিষ্ময়ে আবরারের দু'চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।
-কি ক্কি আপনার সাথে বোমা?
-জ্বী, বেশ কয়েকটা। একটা ফাটলে এই ভ্যানের কেউ জীবিত থাকবোনা নিশ্চিত। আমি দু:খিত যে আমি ধরা দিতে পারবনা। আমাদের সংঘটনের কেউ ধরা পড়লে তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। আমি চাইনা আমার জন্যে আমার পরিবার ধ্বংস হোক। তার উপর এক সপ্তাহ হয়েছে বিয়ে করেছি। আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এখন আত্মঘাতী হব তবে আপনাদের সাথে নিয়ে।

আমার কথা শেষ হবার আগেই ড্রাইভার গাড়ী থামিয়ে দরোজা খোলে দৌড় দিয়েছে। পেছনে বসা কনস্টেবল গুলোও পড়িমরি করে ছুটছে। বাকী রয়েছে আবরার। সে হা করে তাকিয়ে আছে। সে বিষ্ময়ের ধাক্কাটা নিতে পারেনি। ফ্রীজ হয়ে গেছে।

-আপনার সাথের সবাই পালিয়েছে। আপনি কি আমার সাথে উপরে যেতে ইচ্ছুক?
-অ্যা,, নাআআআআআ। উপরে যাব কেন? আমি তো পালাবো।

এবার আবরারও দৌড় দিল। দেখলাম গতিটা ওরই সবচাইতে বেশী।
চিন্তা করে পেলামনা যে বাংলাদেশি পুলিশরা চোর ডাকাতদের পিছে ধাওয়া করলে চোর ডাকাত পালায় কিভাবে। কারণ ওদের দৌড়ের যে গতি দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে, অলিম্পিকে না হোক কমনওয়েলথে অনায়াসে সোনা জিতবে।

আমি এবার একা। পুলিশ ভ্যানটা আমার দখলে। তাতে কিছু আসে যায়না। কারণ আমি গাড়ী চালাতে পারিনা। পারলে না হয় বাসা পর্যন্ত ফিরে যেতাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আবরার ফোনে বা ওয়ারলেস দিয়ে কথা বলছে। নিশ্চই রিপোর্ট করছে হেড কোয়ার্টারে। ওরা সবাই রাস্তার অন্যপাশে চলে গিয়ে আমাকে ফলো করছে। আমার সিগারেট শেষ। আবরারের সিগারেটের প্যাকেট থেকে দুইটা নিয়ে চুপিচুপি গাড়ী থেকে নেমে পড়লাম। ভাবছি কি করবো ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে আরো ভড়কে দেবো নাকি পালানোর চেষ্টা করবো?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:২১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×