লেখাটা কে কিভাবে নেবেন আমি জানিনা তবে আমার লেখার উদ্দেশ্য মানবিক। আমি লিখছি আমার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে। আজ পর্যন্ত লেখালেখি করে অনেক আজেবাজে ট্যাগ পেয়েছি তবে এখন পর্যন্ত কেউ বিএনপি বা আওয়ামীলীগের দালাল আমাকে বলেনি আর আমার পরিচিত জনেরা, বন্ধু-বান্ধবেরাও ভালো করেই জানে আমি এই দুই রাজনৈতক সংগঠনের সাথে কোনোকালে কোনোভাবেই জড়িত ছিলাম না এবং এখনো নেই। বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া বা রাজনৈতিক আবহ দেখে বহুদিন থেকে বলবো বলবো করে যে কথাগুলো বলা হয়নি তাই বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার লেখা রাজনীতির সাথে অনেকটা সম্পর্কযুক্ত হলেও আমি আসলে কোন উদ্দেশ্যে লিখছি তা আশাকরি লেখাটা পড়লে বুঝা যাবে।
আমার মনে হয় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বা তাকে সামনে রেখে আবার বিএনপির সরকার গঠন অথবা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো শক্তি গঠন করার চিন্তাভাবনাটা এই বয়োবৃদ্ধ মহিলাকে নির্যাতন করার সামিল।
তাই রাজনীতির মারপ্যাঁচ আর নোংরামি থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে সময় কাটাতে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। যতো যাই হোক উনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী। উনার এমন মানবেতর জীবন কাটানো কোনোভাবেই মানবিক হতে পারেনা। এখনো তো তার সন্তান জীবিত।
তার এখন যে মানসিক, শারীরিক অবস্থা তাতে রাজনীতির মাঠে নিজেকে মেলে ধরার অবস্থা নেই। উনার এখন অবসাদগ্রস্ত শরীর মন নিয়ে শান্তির বিশ্রাম প্রয়োজন।
আমি যদি আজ তারেক রহমানের জায়গায় থাকতাম তাহলে উনি আর কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হবেননা এই মর্মে প্রয়োজনে সরকারকে বন্ড দিয়ে হলেও সবকিছু থেকে মুক্ত করে দেশের বাইরে নিয়ে যেতাম। মায়ের চাইতে মূল্যবান পৃথিবীর আর কিছুই হতে পারেনা। কিসের দেশ আর কিসের রাজনীতি? একজন মা যদি মরার আগে শান্তিতে ছেলেপুলে, নাতিনাতনি থাকতেও তাদের সাথে সময় কাটাতে না পারেন তাহলে তার মতো দুর্ভাগা কেউ হয়না। একটা দেশের বিনিময়েও আমি মা হারাতে রাজি নই আর দেশ, কিসের দেশ? দেশের জন্য রাজনীতি করছে কারা? কোন রাজনীতিবিদ? কোন সংগঠন?
আমার কথায় অনেকের গা জ্বালা করবে তবুও বলি বেগম খালেদা জিয়াও এখন একটি নামে পরিণত হয়েছেন বা ব্রান্ডে। দেশের অনেক সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসে তা অস্বীকার করার উপায় নেই তবে সেই ভালোবাসা তো তার কোনো কাজে লাগছেনা। উল্টো তিনি এখনো জীবিত আছেন এই সুযোগে উনার একমাত্র সন্তান কমিটি আর নির্বাচনি নমিশেন বাণিজ্যে হাজার কোটি টাকা ঠিকই কামাই করছেন। সংগঠনের প্রবীণদের তো তিনি আগেই শেষ করে দিয়েছেন। তিনি শুধু সংগঠনেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেননি একটা দেশ থেকে বিরোধী শক্তি বিলীনেও ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া নিজের মায়ের জন্যই কী উদ্যোগ নিলেন তিনি এতোকাল ধরে নাকি কোনো একটি সংগঠিত আন্দোলনের রূপ দিতে পেরেছেন বিলেতে বসে বক্তৃতা দেয়া ছাড়া? না দেশ না মা কারো কোনো কাজে অন্তত তিনি আসেননি বিগত বহুবছর ধরে। এই অবস্থায় এখনো তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির আন্তরিক নেতাকর্মী যারা আছেন তারা যদি ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করেন এবং বেগম খালেদা জিয়া আবার সরকার গঠন করবেন এমনটা ভাবেন সেটা হবে তাদের আন্তরিকতা থেকে সৃষ্টি আবেগি ভাবনা। সংগঠনের উপরমহলের অধিকাংশই বিএনপির নামটা মুছে ফেলেনি সুযোগের লোভে কিন্তু সরকারের ছায়াতেই আছে জীবন ও জীবিকার তাগিদে। তরুন প্রজন্মের উটতি সাংগঠনিক নেতাকর্মীরাও বুঝে গেছে কিভাবে টিকে থাকা লাগে? তাছাড়া এইদেশে আন্দোলন সংগ্রাম করাটাও চাট্টিখানি কথা নয় তা তো জানা কথাই।
খালেদা জিয়া গ্রেফতারের দিন যে সাংগঠনিকরা বাসাবাড়ির ছাদে উঠে মিছিল দিয়েছে তারা আবার যখন তাকে গণতন্ত্রের মা, রাজনৈতিক মা বলে সম্বোধন করে তখন আমার হাসি পায়। মায়ের প্রতি আন্তরিকতার লেশ তো দেখিনা শুধু সোশ্যাল সাইটে আবেগি ছবি, পোস্টার আর বক্তৃতাবাজি ছাড়া। শুধু শুধু এই বয়োবৃদ্ধ মহিলাকে নিজ দেশে নির্বাসনে ফেলে রাখাটা অন্তত আমার কাছে অমানবিক তাই কথাগুলো না লিখে পারলামনা। আমার কাছে পুরো বিষয়টাই তার সন্তান তারেক রহমানের স্বার্থপর মনোভাব মনে হচ্ছে। তিনি তার মায়ের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জঘন্য মানসিকতা লালন করছেন। এখানে না দেশ না মা কোনোকিছুর প্রতিই তিনি আন্তরিক নন। সবই পয়সা কামানোর ধান্দা। নমিনেশন বাণিজ্য আর দলীয় ফান্ড যোগাড়ের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা কামানোর নীল নকশা সবকিছু।
(সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:৩০