- পয়লা কিস্তি -
জা.বি’র ক্লান্তিকর ক্লাশগুলো রীতিমতো হাপিত্যেশ করে তুলেছিলো আমাদের। ক্লাস টিউটোরিয়াল, সেমিস্টার এক্সাম, একের পর এক.. উহ্। খুব ইচ্ছে করছিলো দূরে কোথাও বেরিয়ে আসার। চিন্তা করতে না করতেই দেখি ফেসবুক ‘গ্রুপ পেজ’-এ একটি পোস্ট, ‘পিকনিক’ নিয়ে। অত:পর ‘বহুমুখী প্রতিভা’র অধিকারী ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে রীতিমতো ঝড় তুললো- পিকনিক ইনডোর হবে কিনা আউটডোর নাকি দূরে কোথাও? অবস্থা এমন বেগতিক পর্যায়ে গিয়েছিলো যে ‘জগাখিচুড়ি’ই মনে হচ্ছিলো। সবাই যে যার মতো মতামত ব্যক্ত শুরু করলো। বুঝাই যাচ্ছে, আমরা কত্ত স্বাধীনচেতা গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক। নো প্রবলেম, উই এপ্রিশিয়েট। বাট, ততক্ষণেও যদি থামতো! থামলো না। চলছে তো চলছে....!আমার বন্ধুমহলে রীতিমতো ‘গ্রুপিং’.. [কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন এব্যাপারে, কিম্বা কেউ বলতে পারেন কোন গ্রুপিং হয়নি, ওটা স্রেফ ডিসকাসন, ওপেন ডিসকাসন ইত্যাদি ইত্যাদি..]।
যাই হোক, স্বপ্নের অপমৃত্যু কি করে নিশ্চুপে মেনে নিই? ব্যাপারটা এখন ওপেন, নো সিক্রেট। ট্যুরও হবে, ইনডোরও হবে। যার যেখানে পছন্দ সেখানে অংশ নিবে, চাইলে দুটোতেই। কিন্তু ‘নো গ্রুপিং’। যেই ভাবনা, সেই কাজ। বন্ধুমহলের কেউ (এই মুহুর্তে মনে নেই) ফেসবুকে গ্রুপ চ্যাটিং শুরু করলো। যারা বাইরে যেতে আগ্রহী, তারা সায় দিলেন। দেখলাম বেশ ক’জন আছে, আগ্রহটা আরো বেড়ে গেল। একসময় তালিকাটা আরো লম্বা হতে লাগলো।
তারপর অফিসের ফাঁকে ফাঁকে ট্যুর প্ল্যান, কস্টিং, হোটেল বুকিং, টি-শার্ট কালেকশন-ডিজাইন-প্রিন্ট সবই করা হলো। তবে, দু’একটা সাধুবাদ না দিলে বন্ধুমহলে ‘দুষ্ট ছেলে’ হয়ে যাবো বিধায় বন্ধুমহলকে ‘ধইন্যা পাতা’। ওহ্, বন্ধুমহলের তো পরিচয় দেয়া হলো না এখনো। সো, বন্ধুমহল কিংবা পাঠকদের সুবিধার্থে বন্ধুদের আপডেট প্রোফাইলের চুম্বক অংশ দেখে নিই-
‘নাবালিক’ আমরা ‘ট্যুর’ নিয়ে যখন রীতিমতো ‘বেগতিক’ তখন দ্ব্যর্থহীনভাবে মনে পড়লো, ‘প্রত্যেকটা ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’ -সেই পদার্থের জনক স্যার আইজ্যাক নিউটন এর গাত্রবর্ণের সাথে, চুলের সাথে, চেহারায়, আকার-ইঙ্গিতে এত্ত মিল.. কি আর করা- একটু খানি একার ওকার উল্টেপাল্টে ‘নিউটন’ বলে ডাকি। বলছিলাম আমাদের প্রাণভ্রোমরা নোতন প্রসাদ ঘোষ এর কথা। এত্ত মিলের মধ্যেও আরেকটা মিল, ‘ক্ষ্যাপাটে’! একটু বেশিই মনে হয়..
অয়ন ধর, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ক্রিয়ার সাথে [বি-ষ]ক্রিয়ার সংঘর্ষে অর্থাৎ বিক্রিয়ায় প্রতিভার বিচ্ছুরন পরতে পরতে ছড়িয়ে দেন। শেষতক, এমন ছড়িয়েছিলো যে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ‘সার্জারি’ ডিপার্টমেন্টের নব্য ‘শিক্ষানবিশী’দের পা ছুঁয়ে ‘সেলামী’ নিয়েছেন। একেই বলে ‘প্রতিভা’। কে পারে, ওমন করে ডিগবাজি খেতে..?
কিন্তু প্রতিভার কিইবা দেখালাম। সবে তো শুরু, বলছি ড্যান্স গুরু প্রদীপ ঘোষ এর কথা। অতিসাম্প্রতিক ‘সাবালিক’ হয়েছেন, গড়েছেন শীর্ষ রেকর্ড। জি-বাংলার ড্যান্স বাংলা ড্যান্স জুনিয়র, ভালোবাসবে তুমিও.. (কমন ডায়ালগ) কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন (কাল্পনিক)। আর উপহার হিসেবে নিয়েছেন ‘১টন হরলিক্স’। সেই হরলিক্সের সুবাদেই হয়তোবা এমন ‘স্ট্যামিনা’। সদা জাগ্রত। কথা সত্য, বিলকুল। তাইতো আমরা লাইভ পারফরম্যান্স দেখেছি, বিনা পয়সায়..
এতো এতো প্রতিভা। লিখতে লিখতে তো চাছাছোলা হয়ে যাবো। মূল বিষয়টিই লেখা হলো না। সো, বাকি বন্ধুরা থাক, ভ্রমণের ফাঁকে ফাঁকে না হয় কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ জানাবো..। এবার মূল পর্বে আসি-
১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩। ফকিরাপুল, রাত-৮:৩০মি., ঢাকা। আমরা হানিফ বাসযোগে বান্দরবান রওনা দিলাম। বাসের প্রায় মধ্য হতে শেষ সারি পর্যন্ত ‘ইয়াং পোলাপান’। আমাদের মতো আরো একটি গ্রুপ পেলাম, তারাও যাচ্ছে ‘বান্দর-হাওয়া’ গায়ে মাখতে। অত:পর আমরা একটি মিনি ‘ফর্মুলা ওয়ান’ রেসিং প্রতিযোগিতায় নামলাম। আমাদের চালক একে একে পাড়ি দিচ্ছেন শহরের পর শহর। ডানে-বামে, কখনো সোজা আবার কখনো সজোরে.. আমাদের বাহবা, হাততালিও চলছে- সমানে সমানে। এতদিন পর আজ মনে হচ্ছে, সেসময় মনে কোনও ভয় জাগেনি কেন? আসলে উত্তেজনা এতো চরম পর্যায়ে পৌছেঁছিল যে, আমরা আরো ক্ষিপ্র হতে চেয়েছি, যেনো নিজেরাই ড্রাইভ করছি..।
রাতের ভ্রমণে চন্দ্র দর্শনও অপরুপ লাগছিলো। ওরকম মুহুর্ত আগে কখনো এসেছিলো বলে মনে পড়ে না। সেই ছোট্ট চন্দ্র ক্যপচার করতে ভুললেন না আমাদের মি. ক্যপশনিস্ট। ওহ্, শিট্। মি. ক্যপশনিস্ট ওরফে মি. ফটোগ্রাফার হচ্ছেন তন্ময় প্রামানিক। এখন ‘ফুলটাইম ব্যাচেলর’। এমন ‘স্ট্যাটাস’ নিয়ে বিস্তর আপত্তি। রাজবাড়ির পোলা, আশি টাকা তুলা। যাহা দর্শনীয় তাহাই ফ্রেমবন্দী করেন। শুধু মূল জিনিসটা বাকি রয়ে গেছে। নো প্রবলেম। আই থিংক হি উইল ম্যানেজ ইট ইন জাস্ট টাইম। সো, ধইন্যা পাতা ফর ফ্রেমিং আস।
একসময় হেলপার খুব সুন্দর পরিপাটি ভাষায় জানান দিলেন, ২০মি. লাঞ্চ ব্রেক। কুমিল্লার কোনও এক জায়গা। একে একে সবাই নেমে পড়লাম। নাস্তা করলাম, চা খেলাম। কিঞ্চিৎ ক্লান্তি দূর হলো। অত:পর ঘুরিফিরি বটর তল, তথা বাসে..
দীর্ঘ এক ক্লান্তি নিয়ে আমরা বান্দরবান শহরে পৌছুলাম, ঘড়িতে তখন প্রায় সকাল ৬:৪৫মি., ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩। নেমেই দেখলাম এক দীর্ঘকায় পাখির ভাস্কর্য/মূর্তি। দারুণ। কিন্তু ‘অপদার্থ ছেলের দল’ কেউই সুস্পষ্ট করে পাখিটার নাম বলতে পারলো না। আসলে আমরা কেউই ‘পাখি বিশারদ’ না তো তাই...
অত:পর আমরা হোটেল ‘হিলবার্ড’ এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
রেস্টুরেন্টে যাবার পথেই চোখে পড়লো বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য। তারই পাশে বান্দরবান পৌরসভা চত্বরে হাত উচিয়ে আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশকে স্বাধীন করেও মুজিব অস্বীকার করেছিলেন, বাংলা ভাষার অপরাপর ভাষাগুলোর স্বীকৃতি দিতে। খুবই আশ্চর্য লাগে! থাক্, সেসব তর্কে আর যেতে চাই না। শহীদ মিনারটি সম্ভবত স্টীল কিম্বা স্টিল জাতীয় কোন কিছু দিয়ে নির্মিত। সকালের নরম রোদেও চিক চিক করছে। বেশ সুন্দর। ওরকম কোথাও দেখিনি। রাজধানী ঢাকাতেও এতো সুন্দর, পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি সাজানো দেখিনি..।
পৌরসভা চত্ত্বরের পাশেই (সম্ভবত সেটি চৌমুহনাতে) বাজারে যাবার পথে চোখে পড়লো আরেক স্তম্ভ। মধ্যিখানে এক ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়ানো। নিরানন্দ দায়িত্বে সদানন্দ বাবু। উপরে খোদাই ও নকশা করা প্লেট/ছাদ। তার উপরে আরো ছোট্ট একটা প্লেট। তারও উপরে ঝুড়িতে সাজানো শাক-সবজি, ফলমুল। দেখে মনে হলো সবই তরতাজা। ফরমালিন মুক্ত। কিন্তু ফরমালিন খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া আমরা কি ফরমালিন মুক্ত শাকসবজি-ফলমুলের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবো? ঈশ্বরই জানে, কি হয়।
দেখুনতো, এইটা কি ঠিক হলো? আমার যে বন্ধুটি এই ট্যুর প্রোগ্রামে আদ্যেপান্ত হৃদয় দিলেন, তারই প্রোফাইল লিখলাম না। যাই হোক, আমরা সবাই মিলে তাকে ‘সুইটি’ বলে ডাকি। বান্দরবানের সুপারস্টার। একসময় ফার্মগেট, রাজাবাজার, শ্যাওড়াপাড়া, পান্থপথে প্রায় একসাথেই থাকতাম, সেই সূত্রে জানতাম তার একখানি ‘ইয়ে’ আছে। বললাম, করবি কবে ‘বিয়ে’? জানে-জিগরি দোস্ত বলল, “বিয়ে করবো না, আমাকে বিয়ে করবে..”। আমি শুনে থ...।
সো হোয়াট..! নাথিং ইজ ইমপসিবল..
যাক্, বহুত ফটর ফটর করলাম। এইবার সরাসরি বলি, সুইটিং মারমা, অপেশাদার বেকার। বর্তমানে পুরোদস্তর লাভার। হ্যান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ.. থুক্কু, আর বেশী কিছু না বলাই শ্রেয়। ক্ষেপে যেতে পারে..। ক্ষেপে গেলে নেক্সট চান্স আর থাকবে না..। থ্যাংকু সুইটি।
অনেক আগে থেকেই মনে মনে ভাবতাম, বান্দরবান শব্দে ‘বান্দর’ উপসর্গটি যোগ হলো কেন? আপনি কি জানেন? যাক, দীর্ঘদিন পর হলেও সেটি উদ্ধার করতে পারলাম-
এক সময় বান্দরবানে প্রচুর বানর বিচরণ করতো। বানরগুলো শহরের নিকটস্থ খাল বা ছড়া পাড়ি দিয়ে সারিবদ্ধভাবে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ফলমূল অণ্বেষণে যেত এবং বানরের সারিবদ্ধভাবে খাল পারাপারের এই দৃশ্যটি দূর থেকে বাঁধের মত মনে হত যা এতদাঞ্চলের মারমা সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষন করে মর্মে স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি রয়েছে। একে তারা তাদের ভাষায় ‘ম্যাকছে’ (যার অর্থ হল বানরের বাঁধ) বলত। বানরের বাঁধ থেকে বান্দরবান শব্দের সূচনা।
৪ হাজার ৪ শত ৭৯ দশমিক ০৪ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষে ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল বান্দরবান মহকুমা ও লামা মহকুমা সমন্বয়ে ৭টি উপজেলা ও ২৯টি ইউনিয়ন নিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা গঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভূক্ত বান্দরবানের বর্তমান ইউনিয়ন সংখ্যা ৩১টি।
বান্দরবানে মারমা, চাকমা, ম্রো, ত্রিপুরা, খুমী, লুসাই, বম, খেয়াং, চাক, পাংখোয়া ও তঞ্চঙ্গ্যা মোট ১১টি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির বসবাস। তন্মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মারমা সম্প্রদায়।
উল্লেখযোগ্য উৎসব
সাংগ্রাই (১লা বৈশাখ)
প্রবারণা পূর্ণিমা (ফানুস উৎসব)ও রথ যাত্রা (অক্টোবর মাসে)
কঠিন চীবর দানোৎসব (অক্টোবর-নভেম্বর মাসে)
ম্রোদের গো-হত্যা উৎসব ও ম্রো বাশি নৃত্য (মার্চ মাসে)
বম, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমী তথা খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন
এছাড়াও এখানে প্রতি বছর জুমের ফসল কাটার পর বোমাং চীফ কর্তৃক খাজনা আদায়ের সময় ‘রাজ পূণ্যাহ মেলা’ (পইংজারা পোওয়ে) অনুষ্ঠিত হয়।
বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকাসমূহ
সদর উপজেলা : মেঘলা, নীলাচল, কানাপাড়া পাহাড়, স্বর্ণ মন্দির, রামজাদি মন্দির, প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত ও চিম্বুক।
রুমা উপজেলা : নীলগিরি, ঋজুক ঝর্ণা, বগালেক, ক্যওক্রাডং, তাজিংডং, পাসিং পাড়া, দার্জিলিং পাড়া ও রেইনক্ষ্যং পুকুর।
থানছি উপজেলা : জীবন নগর, তিন্দু, রেমাক্রী, বড় পাথর, নাফাখুম, মদক ও ডিম পাহাড়।
লামা উপজেলা : আলীর সুরঙ্গ ও মেরাইথন জাদি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা : উপবন লেক।
নাস্তা খেয়ে আমরা রওনা দিলাম ‘চাঁন্দের গাড়ি’তে করে। ওহ্, এই চাঁন্দের গাড়ি নিয়েতো কিছুই বলা হলো না। ফোর-হুইলার এই গাড়িটির প্রধান বৈশিষ্ট্য চাঁদের উচ্চতা সমান যদি পাহাড় পর্বত থাকতো, তাহলে সেখানেও সে নির্বিঘ্নে চলে যেতো। বাস্তবেও তাই দেখিলাম- ‘নীলাচলে’ উঠতে উঠতে গাড়িটা কালো ধোঁয়া ছাড়া শুরু করল, কিঞ্চিৎ পর স্টার্ট অফ। আবার ঠ্যালা-ধাক্কা, আবার স্টার্ট, আবার ভোঁ.. সম্ভবত তার এই ক্রিয়া বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘চাঁন্দের গাড়ি’ নামকরণ। নামটি স্থানীয়, যথার্থ। অর্থাৎ চাঁটগাইয়া।
আমরা প্রথমে ‘স্বর্ণ মন্দির’-এ গেলাম। কিন্তু আমাদের যে ‘পোড়াকপাল’, সেইটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। সেদিন শুক্রবার। পূজা হচ্ছিলো কেউবা বলল, স্থানীয় আয়োজকদের নিয়ে পূজা সংক্রান্ত ‘বৈঠক’ হচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই ভেতরে প্রবেশ করা গেলো না। শেষতক্ কিনা হাঁটে এসে হাড়ি ভাঙলো! যাই হোক, স্বর্ণ মন্দিরের চাকচিক্য বাইরে থেকে দর্শন করে ব্যথিত মনে ফিরতে হলো। (স্বর্ণ মন্দিরের গল্প দেখুন শেষ অংশে)
অত:পর আমরা রওনা দিলাম ‘রামজাদী মন্দির’ এর উদ্দেশ্যে। প্রথমেই বিপত্তি! থ্রি কোর্য়ার্টার ও হাফপ্যান্ট পরে প্রবেশ নিষেধ!! ভাগ্যিস, জিন্স প্যন্টটা সঙ্গে নিয়েছিলাম। অগত্যা সেই থ্রি কোর্য়ার্টার এর উপর জিন্স পড়লাম। নাড়াচাড়া করতেও অন্তত: ‘১০ ক্যালরি শক্তি’ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফুল টাইট। সেই নব্বইয়ের ‘বচ্চনীয়’ ‘ফিল্মি স্টাইল’ হয়ে গেলাম। সেভাবে পোজও দিলাম, ক্যামেরা ক্লিক করে উঠল। মন্দিরের প্রবেশ পথটা খুব সুন্দর। ডানে বামে সিড়ি, সিড়ির উপরে সিড়ি। উঠছি আর ভাবছি, এই মনে হয় শেষ। কিন্তু না, মূল মন্দিরে পৌছাতে আরো উঠতে হবে..! শেষতক, মন্দিরের চূড়ায় উঠতে পেরে আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। কারণ, স্বর্ণ মন্দিরের ক্ষত এখনো যে শুকোয়নি।
তখন তপ্ত রোদ, ক্ষিদেয় পেট চো চো করছে। অত:পর একটু শান্তির খোজেঁ গেলাম ‘মেঘলা’ পর্যটন কেন্দ্রে। তাক লাগলো, চোখে। কৃত্রিম লেক, কৃত্রিম পরিবেশ। তবুও প্রকৃতির ছোঁয়া।
ঝুলন্ত ব্রিজ দেখে তরুণ সেনানী দল শুরু করল ‘ম্যারাথন’ ‘হাই-জাম্প’ ‘লং-জাম্প’..! ‘ওলিম্পিক’ কিম্বা ‘সাফ গেমসে’ প্রায়ই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ‘নতমাথা’ পত্রিকার শিরোনাম হয়ে ওঠে আর সাংবাদিকদের কলমের ‘খোরাকি’ জোগায়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই দলটিকে মাঠে নামানো হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবুও স্থির হতে পারছিলাম না। তাই, মনে মনে সাঁতারের প্রস্তুতি নিলাম। কখন যে ভেঙে পড়ে ধপাস করে..! আর ওমন একটা পাহাড়কোনে কে কার খোঁজ রাখে, ইস..!! ক’দিন আগেই নিজ চক্ষুহর্ষে দর্শন করিলাম ‘রানা প্লাজা’। সো, আই ডোন্ট লাইক টু ফেইস এ্যানি আনফরচুনেট সিচুয়েশন। বিকজ, মিসফরচুনস নেভার কাম এ্যলোন..
এতোক্ষণ বিস্তর আলোচনা হলো, এইবার একটু অন্যদিকে দেখি আমাদের অন্যতম প্রিয় বন্ধু মাশরুর হাসান হিমেল কি করছেন।
ভাবখানা এমন যে, এইমাত্র এক হরিণশাবক শিকার করে এনেছেন। আর হরিণশাবক জোর গলায় চেঁচিয়ে বলছেন, ছেড়ে দে শয়তান-দেহ পাবি তবু মন পাবি না..! আর হিমেল বাবু পরমানন্দে দুই হাতে উচিয়ে কাঁধে নিয়ে আসছেন ‘হরিণশাবক’টিকে। আসলে এটি কল্পনা মাত্র, বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। বাট্, হিমেল বাবুর টেম্পারেচার দারুণ আপ-ডাউন করে। ক্রেজি টেম্পারামেন্ট। ‘সুনামি’র সাথে নিশ্চয় কোথাও না কোথাও ‘গোপন-যোগসূত্র’ আছে। নইলে কি ওমন করে কারো সাধ জাগে যে [ফেসবুকের গ্রুপ পেজে] ‘সুনামি’ বইয়েছেন- উইদাউট নো বর্ডার, নো সিক্রেসি..! সো, বি কুল ম্যান..! ইউ হ্যাভ টু গো এ-লট..
আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ‘নীলাচল’।
বন্ধুরা, আমাদের মূল ভ্রমণ কিন্তু এখান থেকেই শুরু। সামনে আরো মজার মজার অভিজ্ঞতা.. সাথেই থাকুন, ক্রমান্বয়ে চলবে...
নোট: মূল লেখাটি আমার ফেসবুক একাউন্টে। সেখানে ছবিসহ দেয়া হয়েছে। এখানে যত্রতত্র ছবি দিয়ে দীর্ঘায়িত করতে চাইনি বিধায় ছবি দেয়া থেকে বিরত থাকলাম। তবে, পরবর্তী পর্বগুলোতে প্রয়োজনবোধে দেয়া হবে। মূল লেখাটিসহ ফেসবুকে ছবি দেখুন- https://www.facebook.com/maibam.sadhon
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৮