somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাইজেনবার্গের অদ্ভুত নীতি কিংবা শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল

০৫ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দৈনন্দিন জগত থেকে অণু-পরমাণু-কণার জগতটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। এটা আমাদের অভিজ্ঞতালব্ধ নিয়ম-নীতি থেকে পুরোপুরি আলাদা নীতি অনুসরণ করে চলে। এখানে কখনও পরিষ্কার ভবিষ্যৎবাণী চলে না। উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার হওয়া যাক..................


পৃথিবীর চতুর্দিকে বিভিন্ন সময়ে চাঁদের অবস্থান জেনে আমরা চাঁদের গতি সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারি এবং এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বছরের অমুক তারিখ আমাবস্যা হবে কিংবা পূর্ণিমার আলোতে চারিদিক ঝলমল করবে। কিন্তু একটি ইলেকট্রন সম্বন্ধে কখনোই এরকম প্রেডিকশন সম্ভব নয়। এর পেছনের কারনটা জানতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে Heisenberg এর বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতি (Uncertainty Principle)।

অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর দিকে যখন পুরো বিশ্ব জুড়ে বিজ্ঞানের জয়জয়কার তখন বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুই বৈজ্ঞানিক নীতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এবং তা দ্বারা ভবিষ্যতে কি ঘটবে তাও প্রেডিক্ট করা যাবে। এমন কি মানুষের ভাগ্য সম্পরকেও বৈজ্ঞানিক বিধিগুলো ভবিষ্যৎবাণী করতে পারবে বলে তাদের আশা ছিল। কিন্তু সেই সময়কার প্রখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী Werner Heisenberg তাদের সমস্ত ধারনার অবসান ঘটিয়ে তাঁর বিখ্যাত 'অনিশ্চয়তা নীতি' প্রকাশ করেন।


এ নীতির মূল কথা হল, আমরা কখনোই একই সাথে একটি কোয়ান্টাম কণার অবস্থান এবং গতিবেগ পুরোপুরি নির্ভুলভাবে পরিমাপ করতে পারবো না। আমরা যতই তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবো, তার গতিবাগ সম্পর্কে তত বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগবো!! একইভাবে যত বেশি নির্ভুল গতিবেগ খুঁজবো তার অবস্থান তত বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে!!! (it sounds a little bit awkard, isn't it?) ঘটনা সত্যি। আসেন এবার এর ব্যাবচ্ছেদ করা যাক।


এটা আমাদের সবার জানা যে, কোন কিছুকে দেখার জন্য তা থেকে আলোকরশ্মি আমাদের চোখে এসে পৌঁছতে হবে। ফলে আমাদের কাছে তার অবস্থান স্পষ্ট হবে। কিন্তু আমরা যেটা দেখতে চাই সেটা যদি আলোক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট হয় তাহলে কি অবস্থা হবে?!!!

এক্ষেত্রে বস্তুটির অবস্থান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে সূক্ষ্ম ব্যবধানে নির্ণয় করা অসম্ভব। এটা থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমরা একটা কাজ করতে পারি- আমরা আরো ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করতে পারি যাতে অবস্থানটা আর সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যায়। কিন্তু Max Planck বসের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে যত ছোট হবে তার শক্তি তত বেড়ে যাবে। এই শক্তি----শালী(!!) তরঙ্গ ব্যবহার করলে এটি কণাটিকে বেশি শক্তি যোগাবে, ফলে তার দাপাদাপি আরও বেড়ে যাবে এবং গতিবেগের এমন পরিবর্তন শুরু হবে যে আমরা তার গতিবেগ সম্পর্কে অস্পষ্ট হয়ে পড়বো। (তাইলে ক্যামনে কি?!) ফলে দেখা যাচ্ছে আমরা কখনই দুটি বিষয়ে একসাথে পরিষ্কার ধারণা পাব না।


এটাই হাইজেনবার্গের অদ্ভুত নীতি। এই নীতির উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে সেই বিজ্ঞান, যার নাম কোয়ান্টাম মেকানিক্স।

এবার আমরা আরও মজার একটা বিষয় সম্পর্কে জানবো। Schrödinger এর বিলাই! এটা কোয়ান্টাম পাড়ার খুব বিখ্যাত একটা প্যারাডক্স।

দুই জগতে গতির এই ভিন্ন দুই অবস্থাকে ব্যাখ্যা করার জন্য অষ্ট্রিয়ার বিখ্যাত পদার্থবিদ Erwin Schrödinger উদ্ধাবন করলেন এক মর্মান্তিক থট-এক্সপেরিমেন্ট, নাম- Schrödinger's Cat বা শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল।



প্রথমে একটা বিড়াল এমন একটা বাক্সের ভেতর রাখা হয় যেটা আমাদের এই জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন! এই বাক্সের ভেতর একই সাথে রাখা হয় এক শিশি বিষাক্ত সায়ানাইড। এই বিষাক্ত সায়ানাইডের শিশির উপর এমন শর্ত আরোপ করে দেয়া হয় যে কিছু তেজস্ক্রিয় পরমাণুর অবক্ষয় ঘটলেই কেবল এই শিশি থেকে বিষাক্ত সায়ানাইড গ্যাস নিঃসরিত হবে!

এখানে এমন এক অবস্থা যে তেজস্ক্রিয় পরমাণুর অবক্ষয় নিয়ন্ত্রিত হয় কোয়ান্টাম সুপারপজিশন নীতির দ্বারা- হয় তেজস্ক্রিয় পরমাণুটির অবক্ষয় ঘটেছে নয়তো তা অক্ষত। তার মানে বিড়ালটিও পরোক্ষভাবে সুপারপজিশন অবস্থাতে আছে। যতক্ষণ আমরা বাক্সের ভেতর উকি না দেই ততক্ষন বিড়ালটি জীবিত অথবা মৃত- এই দুই অবস্থার সংমিশ্রন হিসেবে থাকে!!! (কস্কি মমিন!) যখন কেউ বাক্সের ভেতর উকি মারার চেষ্টা করবে তখন সে বিড়ালটিকে সম্ভাব্য দুটি অবস্থার যেকোনো একটির দিকে ত্বরান্বিত করবে; অর্থাৎ বিড়ালটির সেই অবস্থাটির জন্য দর্শক নিজে দায়ী হবে!! অর্থাৎ কেউ বাক্সের ভেতর দেখার চেষ্টা না করলে বিড়ালটি সারা জীবন দুটি অবস্থার মিশ্রন হিসেবে থেকে যেতো!!! (দিলেন তো সব আউলাইয়া!)



কি অদ্ভুত!! এই কারনেই তো এটাকে paradox বলা হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×