somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিক আব্দুস সালাম

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আব্দুস সালাম (১৯১০-১৯৭৭)

আব্দুস সালাম বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি অবিস্বরণীয় নাম। এদেশের সাংবাদিকতার পৃথিকৃৎ যারা ছিলেন তিনি তাদের পুরোধা। সাংবাদিকতা জগতের কিংবদন্তী, ভাষাসৈনিক ফেনীর মুহুরী প্রজেক্টের উদ্যোক্ততা লবন চাষ আন্দোলন, জিলাতিয়া প্রজা আন্দোলন ও বন্যা নিরোধ আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।

জন্ম ঃ
বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুস সালাম ১৯১০ সালের ২রা আগস্ট ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ ধর্মপুর নামে এক অজ পাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন ঃ
আবদুস সালাম ছাত্রজীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান পান। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আই,এস,সি পরীক্ষায় মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে তিনি শীর্ষস্থান লাভ করেন। কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এরপর ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম হয়ে টনি মেমরিয়াল স্বর্ণপদক পান।
কর্মজীবন ঃ
আবদুস সালাম ইংরেজিতে অল্প কিছুদিন ফেণী কলেজে অধ্যাপনার পরে সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন। ইংরেজ আমলে বেঙ্গল সরকারের আয়কর, সিভিল সাপ্লাইজ, অডিট ইত্যাদি বিভাগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবে দেশ বিভাগের সময় তিনি ঢাকা চলে আসেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ব বাংলা সরকারের
উপ-মহাহিসাব পরিচালক নিযুক্ত হন।

সাংবাদিক জীবন ঃ
আবদুস সালাম উপলব্ধি করেন যে পূর্ব বাংলাকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী একটা উপনিবেশ করে রাখতে চায়। লোভনীয় সরকারী চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে অবজার্ভার পত্রিকাতে সাংবাদিকতা মাধ্যমে অনিশ্চিত নতুন জীবন শুরু করেন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ঢাকার সব দৈনিকের স¤পাদক পরিবর্তন হলেও আবদুস সালাম তাঁর স্বপদে বহাল থেকে যান। অবশ্য তখন ‘ঞযব ঙনংবৎাবৎ’ -এর নাম পরিবর্তন ‘ঞযব ফধরষু ইধহমষধফবংয ঙনংবৎাবৎ’ হয়েছে কিন্তু নতুন সরকারকে কিছু গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে ‘দি সুপ্রীম টেস্ট’ নামে একটি স¤পাদকীয় লেখায় তাঁকে স¤পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এর পরেও তিনি অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকায় কলাম ও স¤পাদকীয় লিখতে থাকেন।
রাজনৈতিক জীবন ঃ
নিখিল পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হলে এরমাধ্যমে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আব্দুস সালাম যুক্ত ফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে বিপুল ভোটে প্রাদেশিক সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে দেশে শামরিক আইন জারি করে।

জেল জীবন ঃ
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারীর এক সপ্তাহ আগে তাঁর এক স¤পাদকীয়কে ধর্ম বিরোধী আখ্যা দিয়ে নূরুল আমীনের মুসলিম লীগ সরকার সালামকে কারারুদ্ধ করেন এবং পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ দু'বছর সালামকে এখানে-সেখানে ছোটখাট চাকুরী করে সংসার চালাতে হয়।
এরপর ১৯৫৮ সাল পরবর্তি সময়ে আবদুস সালাম আইউব খানের আত্মজীবনী ‘ঋৎরবহফং, হড়ঃ গধংঃবৎং’ এর বিরূপ সমালোচনা করায় তাঁর পত্রিকায় সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই সূত্র ধরে অবাঙালিদের স্বার্থের মুখপত্র ‘মর্নিং নিউজ’ পত্রিকার প্রেস দুর্ঘটনাক্রমে আগুনে পুড়ে গেলে আবদুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়। তবে সমস্ত পাকিস্তানেই আবদুস সালাম বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য একটি সম্মানিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাঁকে পাকিস্তান কাউন্সিল অব নিউজপেপার এডিটরস-এর সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবেরও আজীবন সদস্য পদ লাভ করেন।
প্রেস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা ঃ
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবদুস সালাম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে প্রেস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধে করেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর অনুরোধ সাদরে গ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট আর আব্দুস সালাম হন তার প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতেই তিনি শেষ শক্তি ব্যয় করেন।
সম্মাননা ও প্রদক ঃ
১৯৭৬ সালে একুশে পদক চালু হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে আব্দুস সালামও এই পদক প্রাপ্ত হন।
সমাজকর্ম ঃ
এমএলএ থাকা কালিন এবং অন্য সময়ও আব্দুস সালাম নানাবিধ সমাজসেবা মূলক কাজ করেছেন। তিনি ফেনীর উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। অনেককে তিনি চাকুরী দিয়ে এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। লবন চাষ আন্দোলন, জিলাতিয়া প্রজা আন্দোলন ও বন্যা নিরোধ আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।
মৃত্যু ঃ
১৯৭৭ সালের ১৩ই ফেব্র“য়ারী সাংবাদিক জগতের এই মহান পুরুষ ৬৬ বয়সে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×