অনেক দিন পরে আবার লিখতে বসেছি সামহোয়ারে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে শৈশবের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমরা তিন ভাই বোন( দুই ভাই এর মাঝে আদরের এক বোন)। ছোট বেলায় এক সাথে পড়তে বসলে প্রায়ই আমাদের ভেতর মারামারি হতো...সবারই এমনটা হয়েছে মনে হয়।
যাই হোক, খুনশুটি হতো আমার সাথে দিদি ভাইয়ের(আমি সবার ছোট) আর দিদিভাইয়ের সাথে দাদার(বড় ভাই)। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে আমাদের যে কোন একটা জুটিতে ঝগড়া হতোই সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসলে। আর এই চিৎকার এক সময় রান্না ঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত মায়ের কানে পৌচ্ছে যেত। এক সময় শুরু হতো মার খড়ি(লাকড়ি) হাতে অপারেশন। মা চিৎকার করতে করতে আমাদের কাছে আসা মাত্রই আমি আর দাদা দে দৌড়। দিন কি রাত এক দৌড়ে কোথায় পালিয়ে যেতাম মায়ের হাতে লাঠি দেখে তার ঠিক নাই। কিন্তু দিদিভাই গোবেচারা আমাদের মতো এই কাজে পটু না। সে একা একা মায়ের হাতে মার খেত। মা পরে রাতে খাওয়ার সময় আপসোস করে বলতেন রাগের সময় মেয়েটা আমার একা একাই মার খেল।
দিদিভাই আর আমি কাছাকাছি বয়সের হওয়ার কারণে আমাদের ভেতর খুব বেঁধে যেতে। ক্লাস এইট পর্যন্ত খুব ঝগড়া করছি দিদির সাথে। এরপর কি মনে হলো আর কোন দিন দিদিভাইয়ের গায়ে হাত তুলি নাই। রাগ হলেও মেনে নিতাম ওর কথা। দিদিভাইকে তুই করে বলতাম কিন্তু এর পর থেকে তুমি করে বলতাম। বাবা যদি একটা সিংগারা নিয়ে আসতেন দিদিকে হয় পুরাটা ছেড়ে দিতাম।
ও তাইতো শুধু মার কথা লিখলাম। বাবাকে সব সময় কুল দেখে আসছি ছোট বেলা থেকে। কোন দিন আমাদের গায়ে হাত তোলেননি রাগ হলে। লাঠি এনে আশে পাশে মারতেন কিন্তু গায়ে মারতেন না। আর সব চেয়ে বড় ব্যাপার হলো বাবা এতোই কুল যে তিনি যদি একটু বকা দিয়েছেন তাতেই আমরা খুব ভয় পেয়ে যেতাম। বাবা আমাদের কোন আবদারকে না বলতেন না যদিও তার পক্ষে আমাদের বেশির ভাগ আবদার মেটানো সম্ভব ছিলো না (এক জন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষকের বেতন কতই বা...)। বাবার কাছে কোন আবদার করলে বাবা বলতেন তুমি চিন্তা করে দেখো এটা করা উচিৎ কিনা বা এটা কেনা আমাদের সম্ভব কিনা। আমরাও বেশির ভাগ সময় শুধু প্রয়োজনীয় আবদার করতাম।
একদিনের মজার ঘটনা, একদিন আমি আর দিদি অনেক ঝগড়া করছি। বাবা বাড়িতে ছিলেন। আমাদের অনেক বার চুপ করার জন্য বোঝালেন। আমরা আমাদের ফাইট চালিয়ে যাচ্ছি। এক সময় মোটা একটা লাঠি নিয়ে আসলেন। কি ভাবছেন আমাদের ধোলাই দিলেন। মোটেও না। বাবা গায়ে হাত তুলবেন না, তুলেন নাই। আমাকে ল্যাংটা করে বাড়ির সামনের রাস্তায় দাড় করিয়ে রাখলেন। তখন প্রাইমারীতে পড়ি তাই এটা কিছুটা লজ্জার ছিলো বৈকি।
আমি প্রায় সন্ধ্যায় না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। কিংবা দাদা অথবা দিদিভাই কেউ আমাকে মারলে যতখন বাবা না বাড়ি ফিরতেন ততখন আমার কান্না থামতো না। কারণ আমার শেষ জেতাটা চাই ই চাই। বাবা এসে ওদের বকা দেবে আর তাতেই আমার কান্না থেমে যাবে। এর পর বাবা কোলে নিয়ে দুধ ভাত মেখে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। এই স্মৃতি আমার চোখে এখনও ভাসে।
নির্বাচনের গরমে আমার এই প্যাচাল কারো ভালো লাগবে না তাই আজ এই টুকুই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৫০