(সতর্কতা: নরনারীর যৌনাচার নিয়ে এই প্রবন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই কামসম্পর্কিত নানাবিধ টার্ম ব্যবহার করতে হয়েছে প্রবন্ধে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যেও তাই অশালীনতার গন্ধ পাওয়া যেতে পারে। কাম সম্পর্কে যাদের শুচিবাই আছে, এই প্রবন্ধ পাঠে আহত হতে পারেন তারা। এই শ্রেনীর পাঠকদের তাই প্রবন্ধটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধে করা যাচ্ছে। পুর্ব সতর্কতা সত্বেও যদি কেউ এটি পাঠ করে আহত বোধ করেন, সেজন্যে কোনভাবেই লেখককে দায়ী করা চলবে না।)
চতুর্থ কলি (শেষ পর্ব)
অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের সাথে সাক্ষাতযোগ্য হওয়ার উপযুক্ততা ঃ তার কাছ থেকে দশ কিস্তি দুগ্ধপান
মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.1.8:
......উম্মুল মোমেনীন হাফসা আসিম বিন আব্দুলাহ বিন সা'দকে তার (হাফসার) বোন ফাতিমা বিন্ত উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি তাকে দশবার বুকের দুধ খাওয়ান; তা'হলে সে (আসিম) তার কাছে যেতে পাারবে এবং দেখা করতে পারবে। তিনি (ফাতিমা) তা করেছিলেন, সুতরাং সে (আসিম) তার (হাফসার) সাথে দেখা করতে যেতো।
(লক্ষ্য করুন, দশবার দুধ খাওয়ানোর রীতি পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তীতে পাঁচ বারে নেমে আসে)
মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.3.17:
..........আয়েশা বলেন- "কোরানে যা নাজেল হয়েছিল তা এই- 'দশবার বুকের দুধ খাওয়ালে সে হারাম হয়ে যায়', অতঃপর তা 'পাঁচবার' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। রাসুলুলাহ (দঃ) যখন মারা যান, তখন কোরাণে এখন যেভাবে আছে সেভাবেই ইহা তেলাওয়াত হয়ে আসছিল"।
একথা বলা নিসপ্রয়োজন যে ইসলামি সমাজে রিযা পদ্ধতি শিশুদের জন্যে দুগ্ধ-সরবরাহ সমস্যার এক অনুপম উপায়। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বিয়ের মার্কেটের অবস্থাটা কী দাড়াবে? যদি মায়েরা কিছু সময়ের জন্যেও তার শিশুটিকে ধাত্রী মায়ের হাতে তুলে দেয়, বিয়ের মার্কেট থেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। রিযার কারণে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল বরটিও তার জন্যে একটি কনে যোগাড় করতে হিমশিম খাবেন, এতে কোন সন্দেহ আছে কি?
উপরের মন্তব্য অবশ্য ইসলামি ফষ্টারেজ পদ্ধতির চরম দিককে লক্ষ্য করেই। আধুনিক বিশ্ব এখন আদৌ রিযা পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল নয়। যেসব মায়েরা শিশুকে স্বাভাবিক মাতৃদুগ্ধ দিতে অপারগ, বাজারে তাদের জন্যে রয়েছে হরেক রকমের ফর্মুলা মিল্ক। তবে রিযার বিকল্প হিসেবে শিশুকে বোতলজাত দুধ পান করানোর ব্যপারে কোন শারিয়া আইন আছে কিনা, অনেক খুজেও আমি তা বের করতে পারিনি। ভেবে দেখুন, সপ্তম শতাব্দীতে মানুষ ফর্মুলা মিল্কের নামও জানত না, বটলফিডিংয়ের ধারণাও ছিল না কারও। সুতরাং মরুচারি বেদুঈনরা মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে রিযা
পদ্ধতি অনুসরণ করতো। এভাবেই তারা দুগ্ধসরবরাহের অপ্রতুলতার মোকাবেলা করেছে।
এবার একটি প্রশ্ন। এতক্ষন আমরা ফস্টারেজ পদ্ধতিতে ধাত্রী মায়ের দুধ খাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করলাম। এখন প্রশ্ন- দুগ্ধবতী কোন মেয়ে সাবালক পুরুষকে দুধ খাওয়াতে পারে কি?
তৌবা তৌবা। এ কী উদ্ভট প্রশ্ন! ইসলাম এমন জিনিস কখনও অনুমোদন করতে পারে না। ইসলামিষ্টরা নিশ্চয়ই বলবেন, শয়তানের প্ররোচনাতেই কেবল এরুপ ধারণা কারও মনে উদয় হতে পারে। বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষকতৃক নারীদুগ্ধ পানের বৈধতা সংক্রান্ত কোন উলেখ আমরা শারিয়া আইনে দেখতে পাই না ঠিক, তবে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলি পড়লে সত্যি সত্যিই হোচট খেতে হয়। আসুন, সেরকম কয়েকটি হাদিস নেড়েচেড়ে দেখে নেয়া যাক এখন।
একজন স্ত্রীলোক তরুনবয়স্ক কোন পুরুষকে তার বুকের দুধ খেতে দিলে তরুনটি তার জন্যে হারাম হয়ে
যায়।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-008, হাদিস নং-3426:
ইবনে আবু মুলায়েকা বর্ণনা করেছেন যে আল কাশেম বিন মহম্মদ বিন আবু বকর তার কাছে বলেছেন যে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে সাহলা বিন্ত সুহাইল বিন আমর আলাহর রাসুলের (দঃ) কাছে আসল এবং বলল- রাসুলুলাহ। সেলিম (আবু হোজাইফার মুক্তকৃত দাস) আমাদের গৃহে আমাদের
সাথে থাকে, এবং একজন পুরুষ যা অর্জন করে তা সে অর্জন করে ফেলেছে (অর্থাৎ সাবালকত্ব), এবং সেই জ্ঞান অর্জন করেছে যে জ্ঞান একজন পুরুষ অর্জন করে (অর্থাৎ যৌনবিষয়ক জ্ঞান)। তদুত্তরে তিনি বললেন- তাকে তোমার বুকের দুধ খাওয়াও, এতে সে তোমার জন্যে মেহরিম হয়ে যাবে। সে (ইবনে মুলায়েকা) বলেন- আমি ভয় বশতঃ এই হাদিসটি বছর খানেকের জন্যে কারও কাছে বলিনি। অতঃপর একদিন কাশেমের সাথে আমার দেখা হলে আমি তাকে বললাম- আপনি আমাকে যে হাদিসটি বলেছিলেন আমি তা কারও কাছে বলিনি। তিনি বললেন- কোন্ হাদিস? আমি হাদিসটির কথা উলেখ করলে তিনি বললেন- আমার কথা বলে তুমি হাদিসটি বর্ণনা করতে পার যে আয়েশার (রাঃ) কাছ থেকে আমি উহা শুনেছিলাম।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-004, হাদিস নং-3428:
জয়নাব বিন্ত আবু সালামা হতে বর্ণিতঃ আমি রাসুলুলাহর (দঃ) স্ত্রী উম্ সালামাকে আয়েশার কাছে
বলতে শুনেছিঃ আলাহর কসম, আমি এমন তরুণ পুরুষের সামনে যেতে চাই না যে ফষ্টারেজ পিরিয়ড
পার করেছে (বুকের দুধ খাওয়ার মেয়াদ পার করেছে)। তখন আয়েশা বললেনঃ 'কেন? সাহলা বিন্ত সুহাইল রাসুলুলাহর (দঃ) কাছে এসে বলেছিল- ইয়া রাসুলুলাহ। আলাহর কসম, সেলিম (আমাদের
ঘরে) ঢুকে বিধায় আবু হুযাইফার মুখে আমি চরম বিরক্তি দেখেছি। প্রতিউত্তরে আলাহর রাসুল (দঃ)
বললেন- তাকে তোমার বুকের দুধ খাওয়াও। সে বলল- তার মুখে যে দাড়ি। কিন্তু তিনি (আবারও)
বললেন- তাকে বুকের দুধ খাওয়াও, তা'হলেই আবু হুযাইফার মুখে যা আছে দুর হয়ে যাবে (অর্থাৎ বিরক্তি চলে যাবে)। (পরবর্তীতে) সে (সাহলা) বলেছিল- (আমি সেরুপ করেছিলাম) এবং আলাহর কসম করে বলছি, এর পরে আর আমি আবু হুযাইফার মুখে (বিরক্তির) চিহ্ন দেখতে পাইনি।
(হুবহু একই ঘটনা নিয়ে আরও দু'টি হাদিস- সুনান আবু দাউদঃ ভলিউম-2, হাদিস নং-2056, পৃ-
549 এবং মুয়াত্তাঃ সেকশন-30, হাদিস নং-12, পৃ-245-246। কলেবর বড় হওয়ায় হাদিসগুলি
উলেখ করা গেল না)।
এ এক আজব নিয়ম! বক্ষ নারীদেহের সর্বশ্রেষ্ঠ কামকেন্দ্র, পুরুষ তো দুরের কথা যুবতী নারীর উত্তাল
বুক দেখে অচেতন গাছপালাও নাকি ভিমড়ি খায়। রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা কাব্যে পড়েছি, রুপসী চিত্রাঙ্গদা বিজন বনে ফুলগাছের নীচে শুয়ে আছে। পাহাড়ের মতো উচু কিন্তু নবনীর মতো কোমল বস্তুদুটির মোহনীশক্তি এতই বেশী যে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলগুলিও তা দেখে মুর্ছিত হয়ে পড়ল এবং চিত্রাঙ্গদার বুকে পড়ে আত্মহত্যা করল। "স্তনতটমুলে ফুলগুলি বিছাইল আপনার মরণ শয়ন"। অথচ ইসলামের সমাধান কতোই না সরল। বুক খুলে অনাত্মীয় পুরুষকে এক চুমুক 'ডুডু' খাইয়ে দাও,
বাস্- সে মেহরিম হয়ে গেল। এতে করে হিজাব পড়ার ঝামেলাও অংশত কমে যাবে বলে মনে হয়। কোরাণ-হাদিস যেহেতু আলাহপাকের অপরিবর্তনীয় বিধান যা কেয়ামতের আগ পর্য্যন্ত পালন করে
যেতে হবে, সুতরাং সহি হাদিসবর্ণিত এই সুন্দর নিয়মটি আমাদের ইসলামপন্থী ভাইয়েরা তাদের
স্ত্রীকন্যকে পালন করতে উদ্বুদ্ধ করবেন আশা করি।
ক্রীতদাসী কিংবা যুদ্ধবন্দিনী একজন মুসলমান পুরুষের জন্যে পুরোপুরি বৈধ, এদের সাথে যৌনসঙ্গম
করায় ইসলামী আইনে কোন বাধা নেই। তবে একজন মুসলিম মেয়ের ক্ষেত্রে নিয়মটা কী? ছেলেদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একজন মুসলমান মেয়ে কি পারে তার ক্রীতদাসের সাথে সেক্স করতে? না, মেয়েদেরকে এরুপ যৌন-উৎসবে গা ভাসানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। সুতরাং সে যখন দেখবে তার স্বামী ক্রীতদাসী কিংবা কোন মালে গনীমত মেয়ের সাথে অবাধে সেক্স করছে, তার মনে ঈর্ষা জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। স্বামীকে এই অশীলতা থেকে বিরত রাখতে সে কী করতে পারে? সে কি স্বামীকে থামাতে রিযার নিয়ম প্রয়োগ করতে পারে? সে যদি তরুনী ক্রীতদাসীটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ায়, তাহলেই তো ক্রীতদাসীটি তার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে। হ্যা পাঠক, ঠিক এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল একবার। একজন ঈর্ষাপরায়ন স্ত্রী তার তরুনী ক্রীতদাসীকে বুকের দূধ খাইয়ে দিয়েছিল এই আশায় যে তার কামার্ত স্বামীটি আর তার কাছে যেতে পারবে না। কিন্তু হায়, মেয়েটির ফন্দি কাজে লাগে নাই, উল্টো ইসলামী শাস্তির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছিল তাকে। খলীফা উমর মেয়েটিকে প্রহার করার আদেশ দিয়ে মুসলমান পুরুষের জন্যে ক্রীতদাসী ভোগের অপ্রতিহত অধিকার সংরক্ষন করেছিলেন।
ঘটনাটি আপনার কাছে জন্যে হৃদয়বিদারক বলে মনে হচ্ছে, তাই না? ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ মুয়াত্তা থেকে জেনে নিন। চার মাজহাব সুন্নী মুসলমানদের চারটি স্তম্ভ, এর অন্যতম প্রধান রূপকার হযরত ইমাম মালিক (রঃ) মুয়াত্তা প্রন্থের প্রনেতা। মুয়াত্তা মালেকি মাজহাবের প্রধান আইন বই।
মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.2.13:
আব্দুলাহ ইবনে দিনার বলেন- "লোকদেরকে যেখানে বিচার করা হয় সেখানে একদিন আমি আব্দুলাহ ইবনে উমরের সাথে বসা ছিলাম। তখন একজন লোক তার কাছে আসল এবং বয়স্ক লোকদেরকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। উত্তরে আব্দুলাহ ইবনে উমর বলল-
'একবার এক লোক উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে এসে বলল-'আমার একটি ক্রীতদাসী আছে, তার সাথে আমি নিয়মিত যৌনসঙ্গম করি। আমার স্ত্রী তার কাছে গিয়ে তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে। এরপর যখন আমি মেয়েটির কাছে গেলাম, আমার স্ত্রী আমাকে বের হয়ে যেতে বলল, কারন সে নাকি তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে'। উমর লোকটিকে স্ত্রীকে প্রহার করার আদেশ দিলেন এবং (আগের মতোই) সে তার দাসীমেয়েটির কাছে যেতে পারবে বললেন। কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় তা কেবল ছোটদের বেলায়।"
রযার ধারণা স্বামীস্ত্রীর মধ্যে প্রয়োগ করলে কী হবে? স্ব্বামীর পাকস্থলীতে যদি স্ত্রীর দুধ ঢুকে যায় তখন?
ওয়াস্তাগফিরুলাহ, নাউজুবিলাহ! কোন সুস্থ্যমস্তিষ্কের মুসলমান এরুপ কথা চিন্তাও করতে পারে না।
পাঠক, আসুন না একবার চেষ্টা করে দেখি ইসলামের পবিত্র কেতাবগুলিতে এসম্পর্কে কোন বিধান খুজে পাওয়া যায় কিনা।
যদি আপনি আপনার স্ত্রীর বুকের দুধ খান, সেজন্যে স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে না। দুই বছর বা তার চেয়ে কম বয়েসে বুকের দুধ খেলে তবেই কেবল তাদের মধ্যে (দুগ্ধদাত্রী এবং শিশুটি) আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।(30.2.14)
মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.2.14:
আবু মুসা আল আশারিকে জনৈক লোক জিজ্ঞেস করল- "আমি আমার স্ত্রীর স্তন্য হতে কিছু দুধ খেয়ে
ফেলেছি, তা আমার পাকস্থলিতে চলে গেছে"। আবু মুসা বললেন- "আমি তোমাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সে তোমার জন্যে হারাম হয়ে গেছে"। (তখন) আব্দুলাহ ইবনে মাসুদ বললেন- "তুমি কী বলছ তা ভেবে দেখ"। আবু মুসা বললেন- "তা'হলে তোমার মত কী"? আব্দুলাহ ইবনে মাসুদ বললেন- "দুধ খাওয়ার কারণে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল প্রথম দু'বছরে"। (অর্থাৎ দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশু যখন মা ছাড়া অন্য নারীর দুধ পান করে, তখনই কেবল শিশুটি এবং দুগ্ধদানকারী স্ত্রীলোকটির মধ্যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়))। আবু মুসা বললেন- "এই জ্ঞানী লোকটি যতক্ষন আমাদের মাঝে থাকবেন, তোমরা আমাকে কোন কিছুর ব্যপারে জিজ্ঞেস করো না"।
আব্দুলাহ ইবনে মাসুদ কে ছিলেন? যে দশজন সাহাবি রাসুলের সবচেয়ে ঘনিষ্ট ছিলেন এবং মৃতু্যর পুর্বেই যাদেরকে বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল (আশারা মোবাশ্বেরা- সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ জন), আব্দুলাহ ইবনে মাসুদ তাদের অন্যতম। ইবনে মাসুদ উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, মহম্মদের (দঃ) ঠিক পরেই ছিল তাদের স্থান। এরকম উচ্চমর্য্যাদাশীল সাহাবির মুখে এ কি কথা, স্ত্রীর দুধ খাওয়ার পরও দাম্পত্যসম্পর্ক টিকে থাকে! আশ্চর্য্য! এই রকমই আরেকটি হাদিস দেখুন নীচে।
দুধেল নারী সাথে সঙ্গম করা হালাল (8.3391)।
সহি মুসলিমঃ বুক নং-8, হাদিস নং-3391:
জুদাইমা বিনতে ওয়াহাব আল আসাদিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি আলাহর রাসুলকে (দঃ) বলতে শুনেছেনঃ আমি দুধেল স্ত্রীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম যে রোমান এবং পারসিকরা তা করে থাকে এবং শিশুটির তাতে কোন ক্ষতি হয় না। (ইমাম মালিক বলেছেনঃ এই হাদিসের খালাফ বর্ণিত যে ভার্সনটি আছে তাতে যে নামটি আছে তা হচ্ছে জুদামাত আল-আসাদিয়া। তবে ইয়াহিয়া বর্ণিত ভার্সনে যে নামটি আছে সেটিই সঠিক, অর্থাৎ নামটি হবে জুদাইমা আল-আসাদিয়া)।
বয়ঃপ্রাপ্ত স্বামী কতৃক দুধেল স্ত্রীর স্তন্য চোষণ করা কিংবা দুধ পান করা কেন অসিদ্ধ নয়, নীম্নে উদ্ধৃত
ইমাম মালিকের পংতিগুলি হতে তার জবাব মেলে।
যখন কোন বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর দুধ পান করে, সেটা স্বাভাবিক খাদ্য মাত্র, ধাত্রীদুগ্ধ (ফষ্টার মিল্ক) নয়!
এ এক আজব আইন! দু'বছরের কমবয়েসী কেউ (শিশু স্বামীও হতে পারে) এক ফোটামাত্র খেলেও তা
হলো ফষ্টার মিল্ক, দু বছর পার হলেই সেই একই দুধ হয়ে যায় স্বাভাবিক খাদ্য। কী বিচিত্র এই নিয়ম
সেলুকেস!
মুয়াত্তাঃ বুক নং-30, হাদিস নং-30.1.11:
মালিকের সুত্র উলেখ করে ইয়াহিয়া বলেন যে ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ বলেছেন যে তিনি সাইদ আল
মুসাবকে বলতে শুনেছেন- "শিশুটি যখন দোলনায় থাকে, তখনই কেবল দুধপান সংক্রান্ত নিয়মকানুন
প্রযোজ্য। অন্য সময়ে এ থেকে (বুকের দুগ্ধপান থেকে) কোন রক্তের সম্পর্ক জন্মায় না"।
মালিকের সুত্র উলেখ করে ইয়াহিয়া আমাকে বলেন (ইবনে শিহাবের সুত্রে) যে তিনি বলেছিলেন-
"বুকের দুধ পান, তা সে যত অল্প কিংবা যত বেশীই হোক না কেন, (সম্পর্ককে) হারাম করে ফেলে।
দুগ্ধপানের মধ্য দিয়ে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পুরুষকে মাহরিম করে"।
ইয়াহিয়া বলেন যে তিনি মালিককে বলতে শুনেছেন- "দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশুদের ক্ষেত্রে
বুকের দুগ্ধপান, তা সে যত অল্প বা বেশী হোক না কেন, হারাম (সম্পর্কের) সৃষ্টি করে। দুই বছর
বয়েসের পরে যদি তা করা হয়, তা সে কম=বেশী যাই হোক না কেন, সেজন্যে কোন কিছু হারাম হয়ে যায় না। এ নেহায়েতই খাদ্যের মতো"।
এবং সর্বশেষে মুক্তাসদৃশ্য নীম্নোক্ত হাদিসটি।
সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-34, হাদিস নং-4210:
আব্দুলাহ ইবনে মাসুদ হতে বর্ণিতঃ
আলাহর রাসুল (দঃ) দশটি জিনিস অপছন্দ করতেন: হলুদ রং করা, শাদা চুল কলপ করা, পোষাকের
প্রান্তভাগ মাটি ছুয়ে যাওয়া, স্বর্ণের তৈরী আংটি পড়া, সাজ-সজ্জা করে গায়ের মেহরাম পুরুষের সামনে যাওয়া (বাপ, ছেলে, ভাই ইত্যাদি চৌদ্দপ্রকার সম্পর্ক আছে যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম, এরুপ সম্পর্কের ইসলামি নাম মেহরাম; এর বাইরে যাবতীয় সম্পর্ক গায়ের মাহরাম, যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ), পাশা খেলা, যাদু বা ইন্দ্রজাল করা, তাবিজ/কবজ ব্যবহার করা, বীর্য্যপাতের ঠিক আগ মুহুর্তে যোনির ভেতর হতে লিঙ্গ বের করে আনা - তা সে নিজের স্ত্রী হোক বা অন্য মেয়েলোক হোক (অর্থাৎ উপপত্নী বা যৌনদাসী) এবং এমন মেযেলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করা যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তবে তিনি এগুলিকে হারাম বলে ঘোষণা করেননি।
(ইসলামি সেক্স নিয়ে আরও মজাদার তথ্যসম্বলিত পঞ্চম কলির জন্যে অপেক্ষায় থাকুন)।
রেফারেন্সসমুহঃ
1। দ্য হলি কোরাণ; অনুবাদ- আঃ ইউসুফ আলী, পিক্থল, শাকির।
2। সহি বুখারি; অনুবাদ- ডঃ মোহম্মদ মহসিন খান।
3। সহি মুসলিম; অনুবাদ- আব্দুর রহমান সিদ্দিকী।
4। সুনান আবু দাউদ; অনুবাদ- প্রফেসর আহম্মদ হাসান।
5। ইমাম মালিক রচিত মুয়াত্তা; অনুবাদ- আ'শা আব্দুর রহমান এবং ইয়াকুব জনসন।
6। ডিকসনারি অব ইসলাম-1994, গ্রন্থকার- টি.পি.হাফস।
7। ইমাম গাজ্জালির ইয়াহ্ আল উলুমেদ্দিন (আব্দেল সালাম হারুন কতৃক সংক্ষেপিত-1997);
ডঃ আহম্মদ এ. জিদান কতৃক সংশোধিত এবং অনুদিত।
8। রিলাইয়ান্স অব দ্য ট্র্যাভেলার (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ)-1999, গ্রন্থকার- আহম্মদ ইবনে নাগিব আল মিস্রি, সংকলক- নুহ হা মিম কেলার।
9। শারিয়া দ্য ইসলামিক ল'-1998, গ্রন্থকার-আব্দুর রহমান ই. ডই।
10। ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুলাহ, অনুবাদ- এ. গুইলম, 15তম সংস্করণ।
11। দ্য হেদাইয়া কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক ল'স-(পুণর্মুদ্রন-1994); অনুবাদ- চার্লস হ্যামিল্টন।
লেখকঃ আবুল কাশেম, সিডনি, অষ্ট্রেলিয়া।
অনুবাদঃ খেলারাম পাঠক, ঢাকা- বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০