বিশ্বাস একটি ভাইরাস এটি পুরনো কথা। কিন্তু বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের ভয়াবহতা সব সময়েই ভয়ংকর আঘাত হেনেছে মানব সভ্যতার উপরে। বিশ্বাসকে পুজি করে মানুষ মানুষকে দিয়ে কত অন্যায় করিয়ে নিয়েছে ইতিহাস তার সাক্ষি। নানা সময়ে হাজারও ক্রুসেডে প্রাণ হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও দাপটের সাথেই ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠিগুলো বর্তমানের বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত ভয়াবহ রোগীদের উতকৃষ্ট উদাহরণ। আল কায়েদা, তালেবান, আই এস, বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসীগোষ্ঠিগুলো প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস কতটা ভয়ংকর ভাইরাস।
একথা সবাই স্বীকার করবে যে, বিশ্বাসের ভাইরাসগুলোর মধ্যে ভয়ংকর ভাইরাস হলো ধর্মীয় ভাইরাস। ধর্ম একটা ভয়ংকর ভাইরাস। ধর্মের কারণে মানব সমাজে যতটা ক্ষতি হয়েছে (এবং হয়েই চলেছে) তা আর কোন কারণে হয়নি। ধর্মের ভাইরাসকে মানুষ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। এখনও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে মানুষ ব্যবহার করছে। তাই ধর্মের ভাইরাসকে সমাজ থেকে বিদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসকে (যেটা বিশ্বাসের প্রধান ভাইরাস) টিকিয়ে রেখেছে যেভাবে পোষক দেহ ভাইরাসকে টিকিয়ে রাখে এবং সবার মাঝে ছরিয়ে দেয় ঠিক সেভাবেই। ফলে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভাইরাসটি এখনও অত্যন্ত ভয়ংকর রুপে আক্রান্ত করে চলেছে মানুষকে।
বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা আত্বঘাতী হামলাগুলো দেখলেই বুঝা যায়। এইসব বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত সন্ত্রাসীগুলো নিজের জীবনের তুয়াক্কা করে না। তারা পরকাল নামের বিশ্বাসের ভাইরাসের টোপে বিভোর থেকে মানুষের উপর হামলে পড়ে আত্বঘাতী বোমা বুকে বেধে। নিজে মরে এবং অনেক নীরিহ মানুষকে মেরে ফেলে বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো্। কারণ তারা বিশ্বাস করে আত্বঘাতী বোমা মেরে মানুষ মেরে ফেলাটা তার ধর্মীয় অবশ্য কর্তব্যজনীত কাজ। এটা করলেই সে পেয়ে যাবে কাঙ্খিত বেহেস্ত, যেখানে আছে অনন্ত সুখ, মদ এবং হুরপরী। সে মিথ্যে পরকালের সুখের লোভে নিজেকে শেষ করে দেয়, সাথে হাজারো নিরীহ মানুষকে।
এরা বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিভোর থাকে বলেই এমন অর্থহীন কাজ তারা করতে পারে। তাদেরকে বিশ্বাসের ভাইরাস মনে ঢুকিয়ে দেবার সময় স্বর্গের লোভ এবং নরকের ভয় দেখানো হয়। ফলে বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কাছে এই পৃথিবীর জীবনকে তুচ্ছ মনে হয়। সে বিভোর থাকে পরকাল নামের কুসংস্কারে মাতাল হয়ে। বিশ্বাসের ভাইরাস তাকে মাতাল করে রাখে। ফলে সে স্বর্গের হুরপরীর লোভে থাকে বিভোর, মাতালের মতই। তাই তার আত্বঘাতী হতে দ্বীধা থাকে না কোনই। সে জানে এই আত্বঘাতী ধ্বংসাত্বক কাজটাই তাকে স্বর্গের টিকিট এনে দেবে। মরার সাথে সাথেই স্বর্গের সুখ, মদ এবং নারী। তাই আর দেরী কেন?
এই বিশ্বাসগুলোই মানুষকে আত্বঘাতীর মত ধ্বংসাত্বক কাজে উদভুদ্ধ করে। এই অন্ধবিশ্বাসগুলোই কাজ করে ভাইরাসের মত করে। বিশ্বাস একটি ভাইরাস মাত্র। মানুষকে প্রাচীন ধ্যাণ ধারনার করে রাখা এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রাখা বিশ্বাসের ভাইরাসের প্রধান কাজ। যাতে সে যেকোন সময় ভাইরাসের প্রকটতায় ধ্বংসাত্বক রুপ নিতে পারে।
বিশ্বাস কাজ করে ভাইরাসের মতো। নানা অন্ধবিশ্বাসীরা তার প্রমান দিয়ে চলেছে। প্রমান দিয়েছে সব সময়ই।
বিশ্বাস যে একটি ভাইরাস, বিশ্বাসের কাজ যে একেবারে ভাইরাসের মতো সেটা আর নতুন করে প্রমাণ দেবার প্রয়োজন নেই। বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলোই সেটার প্রমান দিয়ে চলেছে সব সময়।
সম্প্রতি পাকিস্তানে গির্জায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে ১৫ জন। পাকিস্তানে খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে বোমা হামলার কথা স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবানের শাখা জামাত-উল আহরার।
এটি আরেকটি বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর উদাহরণ।
বিশ্বাসের ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করে, তাকে বস করে ফেলে এবং তাকে দিয়ে অন্যান্য মানুষকে আক্রমন করতে বাধ্য করে। এই ভাইরাসটা সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে এবং মানুষটিকে পুরোপুরি কব্জা করার পর সেই মানুষটিকে আত্বঘাতি হতে বাধ্য করে। বিশ্বাসের ভাইরাসটা তাকে পরকালের লোভে বিভোর করে রাখে। ফলে তার আর বাঁচার ইচ্ছে থাকে না। মানুষ মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে; যাতে সে পরকালের সুখ পেতে পারে সেই পথকে পরিষ্কার করতেই সে আত্বঘাতী হয়ে উঠে। এভাবেই বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষগুলো সমাজের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠে।
পাকিস্তানে গীর্জার সামনে বোমা মেরে মানুষ মারা হলো "বিশ্বাস যে একটা ভাইরাস" সেটার সাম্পতিক উদাহরণ।
বিশ্বাসের ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের এসব কর্মকান্ড দেখেও কি মানুষ বুঝতে পারবে না যে, বিশ্বাস একটি ভাইরাস, একটি ভয়ংকর ভাইরাস?