ভালমনেই মিন্টু মিয়া কুমড়াটা নিয়ে বাজারে এসেছিল।
ঝুলে পড়া আর খুলতে থাকা খড়ের চালে কুমড়া কয়টা আতঙ্কিত হয়ে শুয়ে ছিল। মিন্টু মিয়া আর বউ বলে খ্যার। “কুমড়াগুলি না নামাইলি চাল তো ভেইঙ্গি যাবি। খ্যারের চাল তো চারবছর হইয়ি গেল। এ কি ছাদ পেইয়েছ?” এসব কথায় মিন্টু মিয়া কখনো হাসে। ও ভালই জানে খ্যারের চাল বলেই কুমড়াগুলো হয়েছে। ছাদে হতো না। সেটা বউ শেফালীও জানে। কথাগুলো আসলে চালের হাল নিয়ে বলা। মিন্টু গায়ে মাখে না। “বলারই তো কথা।” কোন ভালমানুষের বেটি চারবছর একই খ্যারের চালের নিচে থাকতে চায়? খ্যারগুলোর রঙ, মিন্টু ভাবে, কোনোকালে যে হলদেটে ছিল সেটা আর মনেও আসে না। পচা গোবরের মতো কালো হয়ে গেছে। আর ভুসভুসে। ভুলমনে কখনো কান খোঁচানোর জন্য মিন্টু একটা কালচে রঙের খ্যারের ল্যাজা ধরে টান দিলে আরো পাঁচ-দশটা সমেত গুঁড়া গুঁড়া হয়ে হাতে চলে আসে। সাধারণত মিন্টু লজ্জা পায়। একদিন কেন জানি রাগ চড়ে গেল। হাতের কাছে না-পাওয়া ঘরামিকেই এক হাত নিয়ে নিল। “সুমুন্দির পুত মতি যে কী চাল বানায়!” সেদিন আবার শেফালী হেসে ফেলেছিল। ফলে মিন্টু মিয়া সেই লজ্জাই আবার পায়। কমলা রঙের হয়ে-ওঠা কুমড়াগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে ও। মিন্টুর খ্যারগুলোকে আরো পচা গোবরের মতো মনে হয়। কুমড়াগুলা সরানো দরকার। চালটা আরো খারাপ দেখায়।
সবসময় যে শেফালীর কথায় মিন্টু হাসে তা নয়। কখনো উপরের দাঁতের পাটি দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভুরু কুঁচকে মিন্টু কুমড়াগুলার দিকে তাকায়। একটু আলতো করে ডান হাত দিয়ে থুতনিটা চুলকাতে থাকে। যেন কুমড়া সৎকারের চাইতে আর কোনো জটিল দুরূহ কাজ জগতে মিন্টুর নেই। ওকে এই ভঙ্গিতে দেখে শেফালীর রাগ চড়ে যাবার কথা। কিন্তু শেফালীর হাসিই পায়। শেফালী ভাবে মিন্টু কুমড়াগুলো একসাথে পাড়বে। পেড়ে বলবে পাড়ার ভাবিদের দিয়ে আসতে। এবারে কিন্তু মিন্টু কিছুতেই এত সহজ ফয়সালায় পৌঁছাতে পারে না। থুতনি টুতনি চুলকে ভুরু সোজা করে মাথা নামিয়ে আনে। যেন কুমড়া-টুমড়া কোনো প্রসঙ্গ নয়। এরকমই চলছিল।
তারপর সেদিন সকালে হঠাৎ ঘুম থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পড়ে মিন্টু মিয়া। আধঘুমো শেফালীর মনে হলো বুঝি স্বপ্ন দেখে ওইরকম করছে। সে ডেকেও বসল “যাও কই।” মিন্টু মিয়া এমন দৃঢ় গলায় “আইসছি দাঁড়াও” বলে বাইরে গেল যে শেফালীর আর চিন্তা থাকল না। দু’ বছরের মেয়েটা বাবার এই দুড়দাড় করে যাওয়াতে একবার ভ্যা করে কান্না শুরু করল, তারপর ভুলে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। শেফালীও তখন করবার মত কিছু কাজ নেই জেনে আরেক প্রস্থ ঘুমানোর জন্য মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে পাশ ফিরল। মিন্টু ততক্ষণে পাশের বড়ই গাছটাতে চড়ে লুঙ্গি সামলে ঠ্যাং লম্বা করে চালে নেমেছে। কিছু ঢ্যাবসা খড় শেফালীর শাড়ির ওপরে পড়ল। ও তেমন খেয়াল না করেই ঘুমাতে থাকে।
মিন্টু পান্তা খেল বউয়ের সঙ্গেই। অনেক ছিল না। যতটুকু ছিল সেটা নিজেই সমান ভাগ করে খুশি খুশি মনে শেফালীকে ডাকতে লাগল। শেফালীর তখন রাগে মুখটা লাল হয়ে আছে। এই চালে বারবার ওঠার কী মানে! শেফালীর সাফ সাফ জিজ্ঞাসা।
“এমন লাফ দিয়ি উঠলা য্যান স্বপ্নে দেইখিছো। কুমড়া পাড়বা ভাল কথা। তো একটা কুমড়া পারতি গেলা ক্যানে?”
“বাজারে নিয়ি যাব।” হাতের তেলো চাটতে চাটতে মিন্টু বলে।
“বুঝলাম তো বাজারে নিয়ি যাবা। তো সবগুলা বাজারে নিয়া যেতু না?”
“বললাম না একটা একটা কইরি নিয়ি যাব।”
মিন্টু এ বিষয়ে বিশেষ আলাপ করবে না Ñ এটা শেফালী খুব ভাল করে জানে। বিয়ের পর থেকে এই লোকটার কাণ্ডকারখানা দেখতে দেখতে শেফালীর বহু শিক্ষা হয়ে গেছে। তাও যদ্দিন শাশুড়ি ছিল একটু অন্যরকমই লাগত মিন্টুকে। শেফালীর নিশ্চিত মনে হয় শাশুড়ি মরে যাওয়াতে লোকটা আরো পাগলা পাগলা হয়ে গেছে। দুই জায়ের সঙ্গে যখন শেফালী কথা বলে তখন সে মিন্টুকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করে। কিন্তু একা একা দেখতে থাকলে ওর আসলেই রাগ ওঠে। যদিও একটু পরই ওর কোনো না কোনো কারণে হেসে ফেলা লাগে। সেই জায়েরা এই এক ঘরে গায়ে গায়ে লেগে ছিল। এখন তারা স্বামীদের সঙ্গে চলে গেছে। দুই ভাসুরই রিকশা চালায়। বড়জন মোহিনী মিলে, মানে শাহ মখদুম মিলে কাজ করতে গেছিল। শেষে কুষ্টিয়াতে রিকশা চালায়। পরে মেজোজন বড়ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিকশা চালাতেই চলে গিয়েছিল কুষ্টিয়া। এখন আবার ঝিনাইদহে তার শ্বশুরবাড়ির ধারে রিকশা চালায়। মিন্টু রিকশা চালাবে না। সে ভিটাও ছাড়বে না। ফলে কামলা খাটাই তার কাজ। তাও যখন পায়। আগের দিনই সাধারণত কেউ না কেউ এসে বায়না করে। না করলে পরদিন কাজ নাই। ছোটবাজারের মোড়ে ভোরবেলা ঝুড়ি কোদাল নিয়ে বসতে এখনো মিন্টু চায় না। সে নিয়ে শেফালীরও কোনো আক্ষেপ নাই। কামলা বিক্রি করেই তো খাওয়া। শেফালী ভাবে আল্লা যদি কোনোদিন রাস্তার পাশেও বসায়, তো বসবে।
নতুন লোকে নাম জিজ্ঞেস করলে “মিন্টু আমার নাম” বলে এমন এক হাসি দেয় মিন্টু যে শেফালীর পিত্তি জ্বলে যায়। সেই কবে এক সিনেমা দেখেছিল মিন্টু। তার নাম ছিল “মিন্টু আমার নাম”। তারপর থেকে সে এইভাবে লোকজনকে নাম বলে। খবরটা বিয়ের পর শেফালীর শাশুড়ি দিয়েছে। এমনকি লোকে নাম জিজ্ঞেস না করলেও সে একা একা হঠাৎ করে “মিন্টু আমার নাম” বলে বসে। শেফালীর বিয়ের পর দুইবার তাকে নিয়েও সিনেমা দেখতে গিয়েছিল মিন্টু। এখন আর যায় না। শেফালী বুঝতে পারে মিন্টুর অবস্থা আসলে পড়তির দিকে। যদিও তখনো কামলাই ছিল মিন্টু। এই তো তিন বছর আগেকারই তো কথা! অবশ্য সিনেমা দেখা নিয়েও শেফালীর কোনো আফসোস নেই।
যাহোক শেফালী বুঝতে পারে মিন্টুর মাথায় নতুন ফন্দি এসেছে। কাজ পায় না যখন, বাসাতেই ঝিম মারে। এখন এই একটা একটা করে কুমড়া সে বাজারে নিয়ে যাবে। একমাত্র জামাটাকে এত সময় ধরে মিন্টু পরে যেন শেরওয়ানী গায়ে দিচ্ছে। তারপর ডান হাতে কুমড়ার বোঁটাটা শক্ত করে ধরে, বাঁ হাতে লুঙ্গির একটা কোণা তুলে ধরে, একগাল হাসি দিয়ে মিন্টু বউয়ের কাছে বিদায় নিয়ে রওনা হয়। মিন্টুকে খুশি দেখে শেফালীর আসলে ভালই লাগে শেষমেশ।
কুমড়াটা নিয়ে মিন্টু মিয়া ভালমনেই বাজারে এসেছিল। অনেকক্ষণ বসেও ছিল তেমন কোনো বিপর্যয় ছাড়া।
বেলা ঠিক দশটার দিকে মিন্টু মিয়া ছাল-ওঠা আর একপাশে টেঁপশে যাওয়া হাবিলদারের জুতোজোড়া দেখতে পায়। হাঁটছে। বাজারের শেষ প্রান্ত দিয়ে পৌরসভা পুকুরের দিকে পায়ে হাঁটার যে রাস্তা, মিন্টু বসে ছিল সেই রাস্তার ধারেই। লোকজন এমনিতে যে মিন্টু বিশেষ অপছন্দ করে তা নয়। কিন্তু কুমড়াটা নিয়ে ও একটু দূরে দূরে থাকতেই চাচ্ছিল। হাবিলদারের জুতোজোড়া দেখে সে বগলের দিকে তাকায়। হাবিলদারের বগলে বরাবরের মতোই লাঠিখানা। তখনো মিন্টু ঠিক ভাবেনি যে হাবিলদার এই কুমড়া দেখতে আসছে। মিন্টু একেবারে অভ্যাসবশে আড়চোখে হাবিলদারের জুতা, তারপর বগলের লাঠি, তারপর হাবিলদারের মুখ আর মোঁচ দেখে। হাবিলদার ততক্ষণে একদম কুমড়ার পাশে দাঁড়িয়ে।
“কী রে একখান কুমড়ো নিয়ি বইসে রইয়িচিস!” হাবিলদার তাকে উসকায়।
“হ্যাঁ। পাঁচ টাকা।”
মিন্টুও একদম তলানিতে চলে আসে। অন্য কাউকেই সে পাঁচ টাকা বলতে রাজি ছিল না। অন্যদিকে তাকিয়ে সে বলে।
“এই কুমড়ো পাঁচ টাকা? হুঁহ্!” খ্যাঁকানি দেয় হাবিলদার। মিন্টুও আর কথা বলতে রাজি হয় না।
এরই মধ্যে হাবিলদার হাঁটু ভেঙে বসে পড়েছে। আর মিন্টু কিছু বোঝার আগেই কুমড়াতে একটা চিমটি বসিয়ে দিয়েছে। মিন্টু হতভম্ব হয়ে পড়ে। একটু আগে সে রহিম পেশকারকে হাতই দিতে দেয়নি কুমড়াতে।
“এইটি কি লাউ নাকি?”
“লাউ হোলিই তুই চিমটি কাটতে দিইতিস?”
মিন্টুর মুখে আর উত্তর আসে না। সে বলে Ñ
“ভাল কুমড়া।”
“হ্যাঁ সে তো দেইখতিই পাচ্চি। দিয়ে দে।”
“কী বলেন ছার?”
এতক্ষণ যে আশঙ্কা করছিল তার দ্বারপ্রান্তে হাবিলদার পৌঁছে গেছে দেখে মিন্টু মরিয়া হয়ে ওঠে।
“পয়সা দিবেন না?” নাচার হয়ে বলে বসে মিন্টু।
“হ্যাঁ রে! তোর বাপের জায়গায় বইসিচিস?”
হাবিলদার মেলা কথা খরচ করার কারণ দেখে না। মিন্টু কথাটা শুনে দমে যায় না। ওর ইচ্ছে করে হাবিলদারের বগল থেকে লাঠিটা সুরুত করে বের করে কিছু একটা করে বসে। কিন্তু সেটা যে খুব অবিবেচকের মত হয়ে যাবে তা নিশ্চিত জানে সে। লাঠির দিকেই সে তাকিয়ে থাকে। একটা যুৎসই উত্তর খুঁজে পায় Ñ
“আপনারাই তো মা-বাপ। আপনাদের জায়গাতিই তো বইসিচি।”
এইবারে যে কাজটা মিন্টু করতে চায় নাই, সেই কাজটাই করে বসল হাবিলদার। বাম বগলের তলা থেকে ডান হাত দিয়ে লাঠিটা বের করে মিন্টুর পাছা পেঁচিয়ে একটা বাড়ি দিল। মিন্টু ছিল বসে। ফলে বাড়িটা গিয়ে পড়ে কোমরে। মিন্টু ত্বরিৎ কুমড়াটা বগলদাবা করে নেয়। দ্বিতীয় বাড়িটা তুলতে তুলতে হাবিলদার বলে “জানিস না শূইয়োরের বাচ্চা, আমি দারোগার বাজার করি?” আর মিন্টু কুমড়া বগলদাবা অবস্থায় “ওরে বাবারে, মাগো রে ...” বলে চেঁচামেচি করতে করতেই দ্বিতীয় বাড়ি খায় হাঁটুর দিকে। এবং এটা আরো জোরে। এরপরই সে পৌরসভার পুকুরের দিকে একটা দৌড় লাগাতে শুরু করে। হাবিলদারও ভালমতো উঠে দাঁড়িয়ে ওকে ধাওয়া দেয়।
তিন কি চার লাফও মিন্টু দৌড়াতে পারেনি। আশপাশের সব তরিতরকারি বিক্রেতা এবং ক্রেতা, টিনের চালার নিচে গরু-মহিষের জবাইওয়ালা বিক্রেতা সবাই এই দৃশ্য তখন দেখছে। কাজ-বাজ সব হাতে ফেলে রেখে সকলের ঘাড়, মাথা, চোখ তখন এদিকে। এদের সবাইকে মিন্টু গভীর হতাশায় ফেলে দিয়ে পা পিছলে গিয়ে পড়ল ড্রেনের মধ্যে। পৌরসভার ড্রেন, ফলে হেন জিনিস নাই যে এর মধ্যে বহমান না। শক্ত ইট থেকে শুরু করে নরম সব। আবার বেশ গভীরও। তার মধ্যে মিন্টু “আঁক” ধরনের একটা শব্দ করে পড়ল। হতে পারে কোমরের ব্যথাটার কারণেই ও ঠিকমতো দৌড়াতে পারছিল না। আবার হতে পারে যে পেছনে হাবিলদার দৌড়াচ্ছিল বলেই ও থতমত খেয়ে পা ফেলতে পারেনি ঠিকমতো। যাহোক, মিন্টু পড়ল। আর কুমড়াটা কী এক কারণে ড্রেনের বাইরে পড়েছে। আর আপাতঃ এই ছন্দোপতনে হাবিলদার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল খানিক। বিশেষতঃ এদিক-সেদিক থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউ কেউ দৌড়ে আসতে শুরু করেছে। কয়েক সেকেন্ডেই হাবিলদার বুঝল ওরা মিন্টুকে তুলতে আসছে। খানিক প্রশান্তিতে হাবিলদার কুমড়াটা মাটি থেকে তুলে বার দুয়েক ফুঁ দিল। একটা আধা ধরনের গালি দিল। দিল মিন্টুকেই। সম্ভবত আছাড় খেয়ে তার তাড়া দেয়াটাকে মাটি করে দিল বলে। কিন্তু শুনলে মনে হয় গালি দিল কুমড়াটাকে। তবে সত্যি তাকে তখন খুশি খুশি দেখাচ্ছিল। সে তেমন কোনো নতুন আওয়াজ না করে কুমড়াটা নিয়ে আগের দোকানে রাখা তার ব্যাগের সন্ধানে চলে গেল।
মোটামুটি এগারোটা নাগাদই মিন্টুকে হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। যারা ওকে নিয়ে এসেছিল তারাই দেখতে থাকল। এবং সেটাও বিশেষ এই দ্বিধা সমেত যে এই পুরো ঘটনাটিকে কৌতুকের হিসেবে দেখা আদৌ ঠিক হবে কিনা। তার মধ্যে দোকান ফেলে এসেছে সবাই। ফলে সবাই চলে গেল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। হাসপাতাল পৌরসভার পুকুরের একেবারে ধারেই। ওদিকের রাস্তাটা আলাদা এই যা। ফলে মিন্টুর পতনস্থল এবং তার গুণাগুণ বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল উদ্ধারকর্মীদের। তারা সবাই মিলে প্রায় ফুট চারেক নিচ থেকে স্তম্ভিত এবং ক্লিষ্ট মিন্টুকে তোলে। মিন্টুর জামায়, গায়ে সর্বত্র তখন যথা-অসম্ভব মাখামাখি। লোকজন বুঝে পেল না হাত দেবে কোথায়। আর পায়ে বিঘত খানেক জায়গা কালো ঝোল আর রক্তে ভয়ানক দেখাচ্ছে। লোকজন যখন হেঁচড়ে ডাঙায় তুলল তখন একবার ঘোলাটে চোখে চারপাশ দেখে নিল মিন্টু। কুমড়াটার খোঁজেই সম্ভবত। তারপর সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতায় একবার “উফ্” বলে চোখ বুঁজল। লোকজনের কাজ অবশ্য অত সহজে শেষ হলো না। প্রথমেই তারা চ্যাংদোলা করে মিন্টুকে নিয়ে পৌরসভার পুকুরের ঘাটে নিয়ে গেল। বাস্তবে প্রায় গোসল সারাল তারা ওর। এবং নিজেদের শরীরও ফেলল সব ভিজিয়ে। পায়ের বিঘত খানেক চামড়া-ছোলা জায়গায় পানি লাগতেই মিন্টু আরেকবার “উফ্” বলল। কিন্তু লোকে ঠিকই বুঝল আসল ব্যথা কোমরে আর পিঠে।
লোকজন যতই “মাজা ভেইঙেছে” বলুক না কেন এক্স-রে করে হাসপাতালের লোকজন বলে দিল ভাঙেনি। বাজারের এতগুলো লোককে ভাগানোর জন্যই তারা যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এক্স-রে টেক্স-রে করে মিন্টুকে শুইয়ে দিল। বলল Ñ
“বাড়িত খবর দাও গিয়ি। আর যাও তো সবাই। এক রুগির জইন্য বাজারসুদ্দু লোক চইলি এয়সিছে।”
লোকজন অনেকেই যাবার আগে মিন্টুকে ধরে ভরসা দিয়ে গেল। একজন পাড়ার ছেলেও পাওয়া গেল। সে নিজেই মিন্টুর বাড়িতে গিয়ে খবর দেবে বলল। সব মিলে একটা হুলুস্থূল যখন শেষ তখনই কেবল মিন্টু পুরো বিষয়টা নিয়ে একটু বিষণœ হবার সুযোগ পেয়েছে।
মিন্টু একটু বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। হাঁটুর নিচের ক্ষতে আয়োডিন লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল আগেই। খালি পেটেই খান তিনেক বড়িও নার্সরা গিলিয়ে দিয়েছে। খেয়েছে কিনা ওকে জিজ্ঞেস করেছিল। ও বলে দেয় যে খেয়েছে। সকালের
পান্তাটার কথাই সে বোঝাতে চেয়েছে। এরপর ওর পাছা উদোম করে যেখানটাতে হাবিলদার মারটা ঠিকমত লাগাতে পারেনি, ওইখানে একটা ইঞ্জেকশন ফুটিয়ে দিল। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে খালি গায়ের ছিলে যাওয়া জায়গাগুলোতে একটু হাতের ছোঁয়া পেয়ে মিন্টু জেগে ওঠে।
সিভিল সার্জনকে লোকজন রাণা ডাক্তার হিসেবে চেনে। তাঁর নাম রাণা আহমেদ। এবং তিনি এরকম বানানেই কালো টিনের ওপর হলুদ রঙে তাঁর নামটা বাঁশ দিয়ে খাড়া করে রেখেছেন। হাসপাতালে ঢোকার সদর দরজার ঠিক পাশেই। প্রতি দুপুরে সরকারী বাসভবনে খেতে যান। তার আগে আধাঘণ্টা সময় তিনি জেনারেল ওয়ার্ডে ঘোরেন। এই রুটিনটা তিনিই চালু করেছেন হাসপাতালে। প্রতিদিনকার মতো তিনি কাজটা সেরেই চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চোখ খুলেই মিন্টু এমন হাউ হাউ করে সকালের যাবতীয় ঘটনা বলতে শুরু করে যে রাণা ডাক্তার ঠিক চলে যেতে পারছিলেন না। অন্য সময় হলে তিনি বলতেন “হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে। তুমি বিশ্রাম নাও। ঠিক হয়ে যাবে।” ইত্যাদি। মিন্টুর বলার মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল যে ডাক্তার সাহেব মনোযোগ দিলেন। শুনলেন। এবং মিন্টুর প্রায় কাদা-মাখা চুলেও একটু হাত দিয়ে দেখলেন।
বেলা আড়াইটার সময় দেখা গেল শেফালী হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছে। ভীষণ ভারী গম্ভীর একটা মুখ ওর। ভেতরে হাসপাতালের বিছানায় মিন্টু আরেক দফা ঘুমাচ্ছে। দারোগা হোন্ডাটা থামিয়ে বাইরের গেটের দিকে তাকিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। শেফালী ভয়ে সিঁটিয়ে গেল। কী চিন্তা করে একজন নার্সের সঙ্গে কথা বলবার জন্য ভিতরে ঢুকেছে। তার নিশ্চিত বিশ্বাস দারোগা এবারে মিন্টুকে থানায় নিয়ে যেতে এসেছে। মিনিট কয়েক খামকাই শেফালী ওয়ার্ডের ভেতরে দৌড়াদৌড়ি করল। দারোগা সিগারেটটা আধখাওয়া অবস্থাতেই দেখল হাবিলদার সাইকেল নিয়ে ঢুকেছে। সিগারেটের পাছা মাটিতে ফেলে যখন জুতা দিয়ে পাড়াচ্ছে দারোগা, হাবিলদারের মুখটা শুকিয়ে কাঠ। সাইকেল থেকে নেমে স্যালুট ঠুকতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে একশেষ। দারোগা সেই স্যালুট পাত্তাও দিল না। এমনভাবে ওয়ার্ডের ভেতরে ঢুকল যে হাবিলদারও বুঝে গেল যে কী করতে হবে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দারোগা বুঝে নিল কোন বিছানা। তারপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শেফালীর দিকে একবার তাকিয়ে ঘুমন্ত মিন্টুর মাথা ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল Ñ
“কী হয়েছে রে?”
ধড়মড় করে উঠে বসে মিন্টু। শেফালী কিছু একটা বলতে যায়। দারোগা তাকে থামিয়ে দেয়। দারোগার পেছন থেকে ইঁদুরের মতো উঁকি দিয়ে তাকিয়ে থাকে হাবিলদার।
রাণা ডাক্তারের মন যারপরনাই তেতো হয়ে গিয়েছিল। এসব আকছার দেখছেন তিনি। কিন্তু আজ কেন জানি তাঁর মনে ধরেছে। দুপুরে খেতে বসেও তাঁর স্বাদ ফিরছিল না। এঁটো হাতেই তিনি ফোন করে বসলেন এসপি সাহেবকে। সকালের ঘটনাটা নিয়ে কথা বললেন। এসপি সাহেব তখন বাসায় গড়াগড়ি করছেন ভাত খেয়ে। প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিতে চাইলেন তিনি Ñ “হঠাৎ এসব নিয়ে মাতলেন কেন ডাক্তারসাহেব?” কিন্তু পরে রাণা ডাক্তারের কটাক্ষগুলো তাঁর লেগেছে। এমনিতেই গত তিনরাতে ডাক্তার সাহেবের কাছে তাসে গাড্ডা মারছেন তিনি। শেষে গলায় অবশ্য বন্ধুত্বটা ধরে রাখলেন Ñ “ডাক্তারসাহেব, আমি দেখছি। তবে এসব বিষয় অহেতুক পাত্তা দিচ্ছেন কিন্তু।” এসপি সাহেবের ‘দেখছি’টা রাণা ডাক্তারের মোটামুটি শান্তিতে খাবার একটা ব্যবস্থা করল। ফোনটা রেখেই প্রায় বাঘের মতো লাফ দিয়ে এসপি সাহেব চাপরাশিকে ডাকতে ছোটেন বারান্দায়। ওসি মানে দারোগা তখনও ঠিকমতো খায়নি। এসপির তলব শুনেই বিষম খেয়ে বসল। মাথায় স্ত্রী থাবড়া দিতে এলে হাত সরিয়ে দিয়ে বেল্ট বাঁধতে লেগে গেল দারোগা। এসপি কিন্তু দারোগাকে হাসপাতালে যেতে বলেননি। কিন্তু তাঁর বাসা থেকে গালাগাল শুনে এসে মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে দারোগার। থানার অফিস ঘরে মতি হাবিলদারকে দেখেই বলল Ñ “একটা বালও তো ঠিকমতো ছিঁড়তে পার না। হাসপাতালে চলো।” মতি হাবিলদারের বোঝার কারণ ছিল না হাসপাতালে যেতে হবে কেন। সারা সপ্তাহে এরকম ঘটনা কতগুলো ঘটে তার কোনো হিসাব আছে? কিন্তু তার মাথা খুব ভাল কাজ করছিল সেদিন। সে বেড়ালের মতো মুখ করে সাইকেলটা বের করতে গেল। তারপর এই কাহিনী।
ধড়মড় করে উঠে বসে মিন্টু হাউ হাউ করে তাই-ই বলল যা রাণা ডাক্তারকে বলেছিল। এক অপার্থিব রহস্যজনক কারণে দারোগা এই প্রথমবারের মতো মনোযোগ দিয়ে কারো কথা শুনল। শেফালী কাঁদবে নাকি দারোগাকে দুই কথা শুনিয়ে দেবে এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। দারোগা হাসপাতালে চলে এসেছে রাগের চোটে। তার ইচ্ছা ছিল মতিকেও আচ্ছামতো গালাগালি করবে আর কুমড়াওয়ালাকে ভয়টয় দেখিয়ে আসবে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যেন থানায় যায়। কিন্তু মিন্টুর এই দীর্ঘ বয়ানে সব আউলিয়ে গেল। আসাটা, সে বুঝল, ঠিক হয়নি। কী নিয়ে একটা বিচার-মতো কিছু করা যায় তাই ভাবতে থাকে দারোগা। শেষে উপসংহারে যেন কুমড়াটাই সকল নষ্টের মূলে, দারোগা জিজ্ঞেস করে Ñ
“তো সেই কুমড়ো কই?”
“ছার, কুমড়ো তো আপনার জন্যিই নিয়ি গিয়িলো। বললাম না?” মিন্টু বলে।
“ছার, কুমড়ো তো ড্রেইনি পইড়ি গেল। বললাম না?” হাবিলদার বলে।
“না ছার, ড্রেইনি পড়েনিকো। ছার ড্রেইনি পইড়িছি আমি।” আবারো মিন্টু।
“ছার দুজনেই ড্রেইনি পইড়ি যাচ্চিলো। আমি ধইরিচি। কুমড়োটা।”
আবারো হাবিলদার। দারোগা হাঁসফাঁশ করতে থাকে।
“তো কই সেটা মতি?” দারোগা ধমক দেয়।
“আছে তো!” ধমক খেয়ে হাবিলদার মিউমিউ করতে থাকে।
“সেটা নিয়ে আমার অফিসে আয়।” বলে দারোগা শেফালীর দিকে তাকিয়ে আন্তরিকভাবে বলল Ñ
“ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া দিও।”
একটা ভাল বিচারকার্য শেষ করবার খুশিতে দারোগা রওনা দিল দরোজার দিকে। মতিকে শায়েস্তা অফিসেই করবে। হাবিলদার ক্যাবলা মুখে দরোজা পর্যন্ত গেল, তারপর দারোগা মোটরসাইকেল স্টার্ট দেবার পর আবার বোঁ করে ঘুরে মিন্টুর বিছানার দিকেই দৌড়ে আসল। মিন্টু আর শেফালী সেদিকেই তাকিয়ে ছিল। শুয়ে থাকা অন্য রোগী আর তাদের আত্মীয়রাও এসবই দেখছে। এক দৌড়ে হাবিলদার মিন্টুর মাথার উপর ঝুঁকে চোখ গোলগোল করে তাকায়।
“তোর নাম কী রে?”
“মিন্টু আমার নাম।”
“তোর কি মাথা খারাপ হইয়েছে?”
“ক্যানে?”
“কুমড়োটা ড্রেইনি পইড়লি কী হোতু? আমি এখন কুমড়ো কোথায় পাব?”
“ক্যানে?”
“কুমড়ো তো তোর ভাবিকে দিয়ি এইসিচি।”
চারটার দিকে হাবিলদার যখন দারোগার ঘরে কুমড়ো নিয়ে ঢোকে তখন দারোগা অনেক ঠাণ্ডা। দুপুরের এসপির অপমান আর তখন মাথায় নেই। ভালমতো না তাকিয়েই বলে “যা তোর ভাবিকে দিয়ে আয়।” আর মিন্টু তখন হাসপাতালে চোখ বুঁজে আছে। হাসিমাখা একটা মুখ তখন। দ্বিতীয় কুমড়াটার ভাল একটা ব্যবস্থা হয়েছে। আর শেফালী রিকশায় বাড়ি গেল। হাবিলদারের পয়সায়। মতি হাবিলদার তখন পচা চালে কুমড়া কীভাবে পাড়বে তাই নিয়ে ভয় পাচ্ছিল। মিন্টুই তাকে মইয়ের বুদ্ধি দিয়ে পাঠাল।
সেই দুপুরটা অশান্তিতে কাটল কেবল এসপি সাহেবের। রাগে তাঁর মাথা গরম হয়ে গেল। বাথরুমে গিয়ে মাথায় পানি ঢাললেন তিনি। তারপর তিনি ফোন ঘুরিয়ে ডাক্তার সাহেবের অফিসে একটা ফোন দিলেন।
“কী ডাক্তার সাহেব দেখলেন তো?” কথাটা বলবার সময় এসপি সাহেব গলা লুকাতে পারলেন না।
“কী দেখালেন?” রাণা ডাক্তার প্রায় ভুলতেই বসেছিলেন। এসপির ফোনে তাঁরও মেজাজ ফিরে এল।
“পুলিশ ডিপার্টমেন্ট মরে যায়নি, বুঝলেন?”
“সে তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু কীভাবে বেঁচে উঠল সেটাও বলুন প্লিজ।”
হাসতে হাসতেই ডাক্তার পেরেক পুঁততে থাকলেন। এসপি সাহেব আবারো কুঁকরে গেলেন। কারণ আসলেও তিনি বিশেষ কোনো ফলো-আপ জানেন না। ফলে তিনি আবারো কোনোমতে ফোনটা রেখে ফোনের উপরই লাফ দিয়ে পড়লেন।
“ওসি সাহেব। সেই কেইসের কী হলো?”
“কোন কেস স্যার?” দারোগা ভাবতেই পারে না সকালের ঘটনাটা কেইস হয়ে গেছে।
“কেইস না, মানে কুমড়ো।”
দারোগা আশ্চর্য হয়ে যায়। এসপির হলোটা কী আজ? এসপিও নিজের এলোমেলো আচরণে ভীষণ বিব্রত হয়ে পড়েন।
“হ্যাঁ, না মানে মতিকে আচ্ছামতো শান্টিং দিয়েছেন তো?”
“ও মতি স্যার?”
“হ্যাঁ শান্টিং! দিয়েছেন তো?”
“সে তো স্যার কেঁদে-টেদে একাকার।”
মতি একটু ঝিমাচ্ছিল। দারোগার কথা কানে আসতেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
“হ্যাঁ, ওই ডাক্তার সাহেব সকালে বলছিলেন কুমড়োটা নাকি আপনার জন্যই এনেছে মতি।”
“স্যার এইটা আপনি বিশ্বাস করলেন?”
“ওসি সাহেব, আমি আপনার নোটিসে আনলাম।”
“স্যার আমি মতিকে আবার ডাকছি।”
“না না ছেড়ে দিন। বেচারার এক কুমড়ো নিয়ে কম ভোগান্তি হলো না।”
“স্যার আপনার কথা ভেবেই আমি ওকে আজ ছেড়ে দিয়েছি।”
“তো, ... এখন কোথায়?”
“এই তো অফিসেই আছে স্যার।”
“তো নিয়ে আসুন না।”
“স্যার, বেশি লাই হয়ে যাবে না? আপনি এর মধ্যে আবার ...”
“আহা হা, মতির কথা কে বলছে?”
“ও ... তাহলে?”
“কুমড়োটা। আসলে বাজারে পাঠাবার সময় এই কুমড়ো টুমড়ো আর মনে পড়ে না। অথচ রুটি দিয়ে ঘ্যাট খেতে ... আপনি তো জানেন, আমি তো রাতে রুটি খাওয়া অভ্যাস করেছি।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ স্যার ... হাতের কাজটা সেরেই আসছি স্যার।”
এরপর দারোগাকে নিজের কোয়ার্টারে একদৌড়ে যেতে দেখা গেল, এবং একই গতিতে অফিসেও আসতে দেখা গেল। মতি পুরো সময়টা গোলগোল চোখে তাকিয়েই থাকল।
“কেটে ফেলেছে মতি।”
“কেইটে ফেলিচে ছার?”
“একটুখানি ফালি করে ফেলে কাজের মেয়েকে দিয়ে দিয়েছে।”
“কট্টুক কেইটেচে?”
“কট্টুক দিয়ে কী করবি?” দারোগা হতাশ হয়ে ধমকানো শুরু করল।
“ছার কুমড়োটা না কুফা!” মতি দার্শনিকভাবে বলল।
“এখন কুমড়ো পাই কই?”
“ছার ওইদির বাড়িতে আরু আচে।”
“শিগগির চল। হাতের কাজ সেরে আসব বলেছি।”
“ছার, হাসপাতালে কুমড়োআলার পারমিশান নেয়া ভাল। ঝামেলা বাধাইতি পারে।”
মতির মাথা খুলে গেছে। চোখ বুঁজে গম্ভীরভাবে সে বসকে পরামর্শ দেয়। তারপর হাসিমুখে দারোগার পেছনে মোটরসাইকেলে চাপে।
সাড়ে চারটার মধ্যেই তিন নম্বর কুমড়াটার ব্যবস্থা করে মিন্টুর তখন মন টইটম্বুর। সকালেও সে এরকম ভাবেনি। সে একটা একটা কুমড়া বাজারে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। এখন পিঠে, পাছায়, পায়ে ভীষণ ব্যথা নিয়ে মিন্টু শুয়ে। কিন্তু এক প্রগাঢ় দার্শনিক প্রসন্নতা তার চেহারায় জেল্লা এনেছে। মিন্টু বিশ্বাস করতে শুরু করে ঘটনা-পরম্পরা ভালই হয়েছে।
[এক পোস্টে পুরা গল্পটা আসছে না বলে আরেকটি পোস্টে দিচ্ছি বাকি অংশ।]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ৯:২৩