somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম হিসেবে কতটা পতিত হয়ে গেছি!

০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুধু বাংলাদেশেরই না, আমাদের পুরো বিশ্বের মুসলিম কমিউনিটির সবচেয়ে বড় দোষের কথা বলি। সেটা হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা "বদনামীর" ভয়ে কিছু মেজর অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করি। সেটার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয় কী? "নিজের বাড়ির সমস্যা নিজেরা বসে সমাধান করতে হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীকে জানানোর প্রয়োজন হয়না।"
বাক্যটি আমাকে একবার এক ফেসবুক আলেম ভাই শুনিয়েছিলেন। কারন তখন আমি আমাদের দেশের মসজিদের ঈমাম কর্তৃক এক শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছিলাম। বলেছিলাম এত বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমাদের আল্লাহর ঘর মসজিদে, আর আমাদের ইসলামিক নেতারা ব্যস্ত আছেন আজাইরা বিষয় নিয়ে।
কেউ কেউ বললেন, "এতে ফিৎনা ছড়াবে।"
মিথ্যা অভিযোগ হলে আমি গুজব ছড়িয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ালে তখন হবে ফিৎনা। প্রমাণিত সত্যকে ধামাচাপা দিলে বরং ফিৎনা আরও বেশি ছড়ায়।
এছাড়া এইসব ঘটনায় আরও কিছু ব্যাপার খুব মেজাজ খারাপ করে।
ইসলামোফোবরা তখন রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথা বলে। ওদের কনসার্ন "শিশু ধর্ষণ" না, ওদের ফোকাস পয়েন্ট মসজিদের ঈমাম।
মুসলিম যারা ধামাচাপা দেয়, তাদেরও ফোকাস পয়েন্ট শিশু ধর্ষণ না। ওদের সব আলোচনা যেহেতু মসজিদের ঈমামকে ইসলামোফোবরা আক্রমন করছে, সেহেতু একে ধামাচাপা দিতেই হবে।
শুরু হয়ে যায় তখন স্ট্যাটিস্টিক্স ঘাটাঘাটি। বিশ্বের কোথায় কোথায় কোন কোন উপাসনালয়ে ধর্মগুরু কর্তৃক শিশু/নারী/পুরুষ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সব দুইদিনেই জানা হয়ে যায়। এসব ঘটনা দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করা হয় এসবের তুলনায় এই ঘটনা কিছুই না। কাজেই এ নিয়ে লাফালাফির কিছু নেই।
মাঝে দিয়ে যেই শিশু ভিকটিম, পুরো ঘটনায় সে আউট অফ ফোকাস হয়ে যায়।

এইবারে একটি বাস্তব ঘটনা শোনাই। দেখা যাক আমরা এ থেকে কোন শিক্ষা পাই কিনা।
বোস্টন গ্লোব পত্রিকার একটি দল গোপনে একটি অতি সেনসিটিভ বিষয়ের তদন্তে নামে। তাঁদের কাছে তথ্য আসে যে ক্যাথলিক ধর্মযাজকগণ তাঁদের উপাসনালয়ে শিশুদের যৌন নির্যাতন/হেনস্থা বা সহজ কথায় ধর্ষণ করেন। বিষয়টির সত্যতা প্রমান হলে শুধু উত্তর অ্যামেরিকা মহাদেশই নয়, বরং পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় শুরু হবে। এবং অ্যামেরিকায় বসে ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়াটাও অনেক বড় ব্যাপার। ওদের হাত হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত শক্তিশালী।
কিন্তু, দেশটি অ্যামেরিকা বলেই এত বড় কাজের সাহস সেই পত্রিকাওয়ালারা করতে পেরেছিল।
নানা ঘটনা দুর্ঘটনা শেষে তাঁরা কেবল ২০০২ সালেই ৬০০ এর বেশি নির্যাতন কাহিনী প্রকাশ করেছিল। কেবল বোস্টন এলাকাতেই ২৪৯ জন ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের প্রকাশ্যে দোষারোপ করা হয়েছিল। কেবল বোস্টন এলাকাতেই নির্যাতনের শিকার হয়ে সারভাইভ করা লোকসংখ্যা এক হাজারের বেশি ছিল।
এই ঘটনার ফলে তৎকালীন কার্ডিনাল বার্নার্ড ফ্রান্সিস ল পদত্যাগে বাধ্য হন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমান মেলে যে তাঁর অধীনে যে এতসব যৌনশিকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে, তিনি সব জানা সত্বেও ওদের বাঁধা দেয়াতো দূরের কথা, ওদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
তবে সমস্যা কী হয়েছিল জানেন? এই কার্ডিনাল ল কে রোমের Basilica di Santa Maria Maggiore চাকরি দিয়ে নিয়ে যায়। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং মর্যাদাময় রোমান ক্যাথলিক চার্চের অন্যতম।
যাই হোক, বোস্টন গ্লোবের এই বোমা বিস্ফোরণের পর গোটা অ্যামেরিকার পঞ্চাশটি স্টেটতো অবশ্যই, গোটা বিশ্বজুড়েই অভিযোগ ওঠা শুরু হয়। সবার অভিযোগ এক, ধর্মযাজকগন শিশুকিশোরদের যৌননিপীড়ন করেন। ক্যাথলিক চার্চের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল এই ঘটনা। এখনকার #মিটু মুভমেন্টের তখনকার ভার্সন।
ক্যাথলিকদের দোষ কী ছিল জানেন? ঐ যে আমাকে যে ফেসবুক আলেম বয়ান শুনিয়েছিলেন, সেই একই বয়ান অন্তরে লালন। "নিজের বাড়ির সমস্যা নিজেরা বসে সমাধান করতে হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীকে জানানোর প্রয়োজন হয়না।"
যখন শুরুর দিকে এক দুইটা ধর্মগুরু এই কাজ শুরু করেছিল, তখনই যদি ওদের হাত গুড়িয়ে দেয়া হতো, তাহলে সেই কালো দিনটি তাঁদের দেখতে হতো না। বিশ্বজুড়ে এত লাখ লাখ মানুষকে এই দুর্বিষহ ঘটনার শিকার হতে হতো না।
তাঁরা তাঁদের রেপুটেশন নিয়ে ভেবেছিলেন। কিন্তু আপনারাই বলেন, কোনটা রেপুটেশনের জন্য খারাপ?
"ক্যাথলিক চার্চ তাঁদের একজন ধর্মযাজককে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে শাস্তি দিয়েছে।" নাকি বোস্টন গ্লোব ইনভেস্টিগেট করে যা বের করেছে তা?
যদি উপরওয়ালার ভরসা করেই থাকেন, তাহলে এইটা নিশ্চই জানেন, আপনি যতই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন না কেন, তিনি ঠিকই একদিন অন্যায়কে জনসম্মুখে হাজির করবেনই। এবং তখন হায় হায় করেও কূল কিনারা পাবেন না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম কী কখনও কোনদিন বলেছে "মেজর" ক্রাইম ধামাচাপা দিয়ে রাখতে? বরং উল্টোটাই কী বলেনা? প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ! বা পাথর মেরে মৃত্যু।
কেন? যাতে পটেনশিয়াল অপরাধীর এই শাস্তি দেখে যেন কলিজা শুকিয়ে যায়। যেন সে সেই অপরাধ করার আগে তিনশোবার চিন্তা করে তার পরিণতির ব্যাপারে। ইসলাম কখনই বলেনা "অপরাধকে" চেপে যেতে। কুরআন শরীফে এক্সপ্লিসিট আয়াত আছে, ন্যায়ের জন্য নিজের বিরুদ্ধে গেলেও যাও।
আমাদের খলিফা উমার (রাঃ) অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে খুবই কট্টর ছিলেন। অপরাধী মুসলিম হলে ডবল শাস্তি দিতেন। প্রথম শাস্তি অপরাধের জন্য। দ্বিতীয় শাস্তি মুসলিম হয়ে অপরাধ করার জন্য।
সহজ উদাহরণ দেই। আগেও বহুবার দিয়েছি, তবুও এই একটি উদাহরণ দিতে আমার কখনই বিরক্ত লাগেনা। আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে হুবহু মিলে যায় বলেই।
বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনে আল আস (রাঃ) তখন মিশরের গভর্নর। তাঁর ছেলে লোকাল এক মিশরীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় রাগের মাথায় সেই মিশরিকে লাঠি পেটা করেন। দরিদ্র সাধারণ সেই মিশরী খলিফা উমারের (রাঃ) দরবারে বিচার নিয়ে হাজির হন। গভর্ণরপুত্র তাঁকে বিনা কারনে মেরেছে। পিতার ক্ষমতার অপব্যবহার।
উমার (রাঃ) সাথে সাথে পিতাপুত্রকে রাজধানীতে সমন করলেন। আমর (রাঃ) ভাল করেই জানেন উমারের (রাঃ) বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে। তাই তিনি বারবার পুত্রকে জিজ্ঞেস করছেন, "তুই কোন আকাম ঘটাসনিতো?"
পুত্র পিতাকে বারবার অভয় দিচ্ছেন, "না।"
মদিনায় হাজির হলে উমার (রাঃ) সেই মিশরিকে পিতাপুত্রের সামনে আনেন। অভিযোগ পুনরায় শুনেন। এবং তারপর আমরপুত্রের দিকে তাকিয়ে হুংকার দেন, "তুমি কী তোমার দোষ শিকার করছো?"
পৃথিবীতে এক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং আবু বকর (রাঃ) ছাড়া দ্বিতীয় কোন মানুষ ছিল না যে উমারকে (রাঃ) ভয় পেত না। সেই উমারের (রাঃ) সামনে মিথ্যা বলার প্রশ্নই উঠে না। তিনি স্বীকার করলেন।
উমার (রাঃ) নিজের লাঠি সেই মিশরীর হাতে দিয়ে বললেন, "একে ততক্ষন পেটাও যতক্ষণ না তোমার মনে হয় তুমি ন্যায় বিচার পেয়েছো!"
মিশরী আচ্ছামতন গভর্ণরপুত্রকে পেটালো। তারপর সন্তুষ্ট হয়ে লাঠি ফেরত দিতে গেলে উমার (রাঃ) বললেন, "বিচার এখনও শেষ হয়নি। এবারে তুমি ওর বাপকে (আমরকে) পেটাবে। ও ভেবেছে ওর বাপ গভর্নর বলে ও যা খুশি তাই করতে পারবে। ও তাঁর বাবার পদবীর অপব্যবহার করেছে। যে তাঁর পুত্রকে বুঝাতে অক্ষম, সেও অপরাধী। ওকে এবং ওর বাপকে বুঝিয়ে দাও, আল্লাহর সামনে কোন আশরাফ আতরাফ নেই।"
আমর ইব্নে আল আসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এখন দেয়া যাক। সেই জাহেলী যুগে মক্কার কুরাইশ বংশ যখন নানান গোত্রে বিভক্ত, সেই সময়ে আমরের বাবা আল আস ছিলেন বনু সাম গোত্র প্রধান। মানে ধরে নিতে পারেন সেই গোত্রের রাজা। তিনি ছোটবেলা থেকেই রাজকীয় কায়দায় বড় হয়েছেন। বর্তমানেও তিনি মিশরের গভর্নর। সেই তাঁকে কিনা লাঠিপেটা করবে এক সাধারণ দরিদ্র কৃষক??? ক্ষোভে এবং অপমানে তাঁর অন্তর জ্বলে গেল। কিন্তু মুখে টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না।
মিশরীর হাত কেঁপে উঠলো। সে খলিফার পায়ে লাঠি ফেলে বলল, "আমি আমার বিচার পেয়ে গেছি। আমিরুল মুমিনীন! আমি ন্যায় বিচার পেয়ে গেছি।"
ঘটনাটি এই কারণেই বললাম যে উমার (রাঃ) ইচ্ছা করলেই বর্তমান মুসলিম নেতাদের মতন ধামাচাপা দিতে পারতেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরপুত্রের ফাজলামি জীবনেও বন্ধ হতো না। এবং উল্টো তাঁকে আল্লাহর দরবারে এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য জবাবদিহি করতে হতো।
কিছুদিন আগে আমাদের পাশের শহরের এক মসজিদে এক লোককর্তৃক child molestationএর ঘটনা ঘটে। সেই মসজিদ কর্তৃপক্ষ কী করেছে জানেন? শিশুটির পিতামাতার সাথে যোগাযোগ করেছেন। পিতামাতা বলেছেন, আমরা এই হারামজাদাকে আর অত্র এলাকায় দেখতে চাই না। মসজিদ কর্তৃপক্ষ ধাধিন ধাধিন নাচতে নাচতে সেই অভিভাবকদের কথায় রাজি হয়ে ব্যাটাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। পুলিশকে জানানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজন বোধ করেন নি কেউ। "নিজের বাড়ির সমস্যা নিজেরা বসে সমাধান......" বুলশিট।
এই যে হারামজাদাটা এখন অন্য এলাকায় গেল, সে কিন্তু এখন সেই এলাকার বাচ্চাদের সাথে এই আকাম করে বেড়াবে। যেকোন ক্রিমিনাল কেস হিস্ট্রি পড়ে দেখুন। এইটা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এক অপরাধী একবার যদি কোন অপরাধ করে পার পেয়ে যায়, তবে সেই অপরাধ বা তারচেয়েও বড় অপরাধ সে বাকি জীবনে করবেই। ততক্ষন পর্যন্ত করে যাবে যতদিন না পর্যন্ত সে শাস্তি পাচ্ছে। আমাদের এক প্রফেসর বলেছিলেন, "যদি ব্যাংক ডাকাতি করো, তাহলে জীবনে একবারই করবে। প্রথমবার মোটামুটি কেউই ধরা খায় না। কিন্তু তারপরে কয়েকবার করলেই তোমার অপরাধের প্যাটার্ন তখন পুলিশের মুখস্ত হয়ে যাবে। তখন তুমি যত "বুদ্ধি-ম্যানই" হও না কেন, ধরা তোমাকে খেতেই হবে।"
ভাগ্যভাল, সেই মসজিদেরই ঈমাম, যে কিনা একজন কনভার্ট (পূর্বজন্মে খ্রিষ্টান ছিলেন) এমনভাবে ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছেন যেভাবে বিশ্বের এক বিলিয়ন মুসলিমের করা উচিৎ ছিল। ঈমাম খুৎবায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, "আমার বাচ্চার সাথে যদি সে এই কাজটা করতো, তাহলে আমি তার শরীরের প্রতিটা হাড্ডি ভেঙে দিতাম।"
মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। একজন মুসলিমের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। আমরা নিজেদের বাড়িতে যতটা শান্তি পাই, তার সমান বা তারচেয়ে বেশি স্বস্তিবোধ করার কথা আল্লাহর ঘর মসজিদে। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের মসজিদে নিয়ে যাই নিজের ধর্ম শেখাতে। আল্লাহর সাথে কানেক্টেড হতে। সেই মহাপবিত্র স্থানকে যদি কোন জানোয়ার নিজের শিকারভূমি বানানোর চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের শরিয়া নিয়ম অনুযায়ী সেই জানোয়ারের প্রকাশ্যে শিরোচ্ছেদ করা উচিৎ। সেখানে আমরা বদনামীর ভয়ে চাপা দিয়ে দেই। কিসের বদনামী? আমাদের মান সম্মান কিসে সেটা আমরা বারবার ভুলে যাই কেন?
আবারও উমারের (রাঃ) উদাহরণ দেই। জেরুসালেমের দরজায় যখন মুসলিম খলিফাকে অভ্যর্থনা জানাতে নগর কর্তৃপক্ষ অপেক্ষারত ছিলেন, তখন তাঁরা দেখলেন কেবল একজন দাসের টানা উটে চড়ে খলিফা আসছেন।
নগরপিতাদের চোখ কপালে উঠে গেল তখনই যখন তাঁরা জানতে পারলেন, উটারোহী নন, বরং জীর্ন তালি দেয়া পোশাকের বিশালদেহী দাসটিই আসলে মুসলিম খলিফা। পালা বদল করে উটে চড়ছিলেন বলেই নগরের দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত দাসের টার্ন পরে গিয়েছিল।
সাহাবীগণ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। একজনতো বলেই বসলেন, "ওহে উমার! তুমি আজ আমাদের অপমানিত করলে!"
খলিফা বললেন, "কবে থেকে দামি পোশাক এবং বেশভূষা আমাদের সম্মানের ধারকবাহক হলো? আমাদের সম্মানের প্রতীক হলো তাকওয়া।" বাংলায় বললে খোদাভীরুতা। মানে কোন অন্যায়তো নিজের করা না, সাথে অন্য কোন অন্যায়কেও প্রশ্রয় না দেয়া। সবসময়ে এই ধারণা মাথায় রাখা, উপরে আল্লাহ সব দেখছেন। একদিন তিনি সবকিছুর হিসেব চাইবেন। এবং এই যে অমুক মসজিদে শিশুর গায়ে এক জানোয়ার হাত তুললো, সেই ঘটনায় আমার ভূমিকা নিয়েও আমাকে প্রশ্ন করা হবে। তখন আমি আমার রবকে কী জবাব দিব?
আজকে একটি মলেস্টারকে ছাড় দিলাম। কারন ওটাতো আমার বাচ্চার সাথে ঘটেনি। কিন্তু কালকে যে আমি আমার বাচ্চাকে মসজিদে নিয়ে যাব, এবং সেই মসজিদে এমন মলেস্টার থাকবে না, এর গ্যারান্টি আপনি আমাকে দিতে পারবেন?
বাড়িতে কুরআন শেখাতে আসা হুজুর বা সাধারণ গৃহশিক্ষক কর্তৃক এমন আচরণের শিকার হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে লাখে লাখ। স্কুলে, কলেজে স্যাররা মাঝে মাঝে ফালতু অজুহাতে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়। এমন ঘটনা যে দেখেনি তার উচিৎ নিজের চোখ খুঁচিয়ে অন্ধ করে ফেলা। যে চোখ কিছু দেখেও দেখে না, সেই চোখ রাখবেন কোন অজুহাতে?
দয়া করে কেউ "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" হিসেবে বুলি আওড়াতে আসবেন না। আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি এই শব্দটিকে। এই শব্দ উচ্চারণ করা মানেই হলো অপরাধকে লঘু করে ফেলা। উপরের উদাহরণে উমার (রাঃ) কী বলেছিলেন এই সাহাবী হিজরত করেছে, মিশর জয় করেছে - তাঁর পুত্র সামান্য এক জনতাকে লাঠিপেটা করেছে - এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এত বড় করে কেন দেখা?
যেহেতু তিনি সেই কাজটিকে "বিচ্ছিন্ন" হিসেবে গণ্য করেননি, সেহেতু তাঁর সময়েই ইসলাম এত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছিল।
আমরা হালকা করে দেখতে শুরু করলে আমাদের পতন হতে বাধ্য।
বা কে জানে, ইতিমধ্যে কতটা পতিত হয়েও গেছি।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১২
৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×