ধরা যাক, আমার বাবাকে কেউ খুন করলো। আমরা আদালতে গেলাম, আদালত রায় ঘোষণা দিল আসামি দোষী, এবং সাজা মৃত্যুদন্ড।
ওরা উচ্চ আদালতে আপিল করলো। আরও অনেক কাঠ খড় পোড়ালো। মাঝে কেটে গেল পাঁচ ছয় বছর। ক্ষেত্র বিশেষে দশ বিশ বছর। সবশেষে উচ্চ আদালত নিম্নআদালতের রায়ই বহাল রাখলো। খুনির ফাঁসি হবে।
দিন ক্ষণ ঘনিয়ে এলো।
আমরাতো বাবাকে ফেরত পাবো না। অন্তত ন্যায় বিচারটা হোক। যাতে অন্য কেউ শিক্ষা পায়। এইভাবে কেউ পিতৃহীন না হয়।
এবং একটা সময়ে জানতে পারলাম বাবার খুনির ফাঁসি হচ্ছে না। কারন রাষ্ট্রপতি তাকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা দিয়ে মুক্তি দিয়ে দিয়েছেন।
এখন এই যে এতগুলি বছর ধরে আমরা সেই খুনিকে, খুনিদের পরিবারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি, জেল হাজতে চক্কর দিয়েছি, এর সবকিছুর বদলা নিতে চাইলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন? বাপ মরেছে আমার, বিধবা হলো আমার মা, এতিম হলাম আমরা ভাইবোনরা, রাষ্ট্রপতি কে ওকে ক্ষমা করার? এত দয়ার সাগর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ক্ষমা করার? পারলে শেখ হাসিনার বাবার খুনিদের ক্ষমা করে দেখাক। সেই সময়ে উনাদের এই মহান উদার মনোভাব কোথায় গায়েব হয়ে যায়? খুনিকে এইভাবে মাফ করার প্রবণতা থাকলে আদালতের প্রয়োজনটা কী? বছরের পর বছর ধরে চলমান নাটক, আর্থিক, মানসিক, শারীরিক ক্ষতিরতো কোন মানে হয়না।
সেদিন খবরের শিরোনাম ছিল, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ক্ষমা পেয়ে মৃত্যুদন্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি আবারও একটি খুনের প্রধান আসামি হয়েছে।
এখন এই খুনের দায় কী রাষ্ট্রপতির নয়? তিনি পারবেন খুন হওয়া ব্যক্তিকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে? আমাদের দেশের আইনে এমন আহ্লাদী, আজগুবি নিয়ম পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে কি মনে হয় না? জাতীয় সংসদে এই নিয়ে আলোচনা হবেনা। কারন, মাফ পাওয়া সব খুনিই সরকারি দলের কর্মী, নেতা বা নেতাদের আত্মীয়।
যদি ক্ষমা করার ক্ষমতা কারোর থাকেই, তবে সেটা যেন নিহতের পরিবারের থাকে। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিবে ওদের মাফ করবে কি করবে না। কিন্তু এক্ষেত্রেও দেখা যাবে, হয়তো মৃত্যুর হুমকি দেখিয়ে ঠিকই ক্ষমা আদায় করে নিবে।
কালকে আরেকটা খবর পড়ে চমকে উঠতে হলো। একটি "কিশোর" অতি ঠান্ডা মাথায় চারটি খুন করে, যার একটি প্রতিবন্ধী শিশুর, যার মধ্যে দুইজনের আবার ধর্ষণও ছিল। খুনি একে আগেও খুনের দায়ে জেল খাটা কয়েদি, কিন্তু "কিশোর" হবার কারনে এলাকায় মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এইবারও সে কিশোর দেখিয়ে মুক্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ঘটনার পূর্ণ বিবরণ যদি শোনেন, আপনাদের মোটেও মনে হবে না সে "কিশোর।" বরং অনেক প্রবীনের মাথাও এতটা ঠান্ডা থাকেনা খুনের সময়ে। এই আইনেরও কি সংশোধন প্রয়োজন না? ধরন আমাকে কোন কিশোর হত্যা করলো। এতে আমার বাবা মা সন্তানহারা হবেন। আমার বৌ বিধবা, আমার বাচ্চারা এতিম। মানে খুনের কারনে ক্ষতির পরিমান খুনির বয়সের উপর নির্ভর করছে না। তাহলে কেন শাস্তি বয়সের উপর নির্ভর করবে? খুনিকে অবশ্যই ফাঁসিতে ঝুলানো উচিৎ, আর এই ধরণের খুনিকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে শুকনা স্পঞ্জ মাথায় দিয়ে হাই ভোল্টেজ চালু করে দেয়া উচিৎ যাতে তীব্র ভোল্টের বিদ্যুৎ এদের পুরো শরীর পুড়িয়ে দেয়, ও মৃত্যুর আগে ভালভাবে উপলব্ধি করে কোন অপরাধের জন্য তাদের এই শাস্তি দেয়া হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৪