আব্বুর অফিসে বার্ষিক পিকনিক হতো। কোম্পানির সিলেট বিভাগে আব্বুই ছিল "বস" তাই ছোট বড় সব হিসাবই আব্বুর এপ্রুভাল পেয়ে ঢাকায় যেত। পিকনিকের বাজার সদাইয়ের হিসাবও। দোকানের রিসিটে পণ্য তালিকা থাকতো, মূল্য লেখা থাকতো, এবং নিচে দোকানির সিগনেচার। আব্বুর এপ্রুভাল সিগনেচার এলে অফিসের বাজেট থেকে সেটা পরিশোধ করা হতো।
একবার পিকনিকের আগের রাতে দুই আংকেল এসেছেন আমাদের বাসায় আব্বুর সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করতে। আব্বু তখনও বাইরে। আংকেলরা আমাদের ভাইবোন আর আম্মুর সাথে গল্প করছেন। পরদিন পিকনিক। স্বাভাবিকভাবেই আমরা একটু আনন্দিত। এই দুই আংকেল আবার আছেন পিকনিকের বাজার সদাইয়ের দায়িত্বে। কথায় কথায় আম্মু জিজ্ঞেস করলো লটারির পুরস্কার হিসেবে এইবার কি থাকছে।
প্রসঙ্গত বলে ফেলি, পিকনিক আনন্দের একটি অংশ ছিল এই লটারি পুরস্কার। পিকনিকে যাবার আগে আমরা সবাই খুব ভোরে অফিসে এসে উপস্থিত হতাম। প্যাকেটে করে নাস্তা দেয়া হতো। সব প্যাকেট বাইরে থেকে দেখতে একরকম হলেও তিন চারটার ভিতরে প্রথম পুরস্কার, দ্বিতীয় পুরস্কার ইত্যাদি লেখা কার্ড থাকতো। ওগুলো যার ভাগ্যে পড়বে, সে সেই পুরষ্কার জিতে নিবে।
তারপরে ধরেন পিকনিক স্পটে গিয়ে কার্ডে প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় ইত্যাদি লিখে কোন ঝরা পাতার নিচে, কোন গাছের গায়ে ইত্যাদি সহজ কিন্তু একটু ক্রিয়েটিভ স্থানে লুকিয়ে রাখা হতো। সবাই মিলে হই হুল্লোড় করতে করতে খোঁজা হতো, যে যেটা পেল, সে জিতে নিল। খাবারের সময়েও পুরস্কার থাকতো। সহজ খেলাধুলারও ব্যবস্থা থাকতো। মোট কথা প্রচুর পুরস্কার কেনা হতো, এবং নানান ছোট বড় বাহানায় সেসব বিলিয়ে দেয়া হতো। নতুন নতুন জায়গায় পিকনিকের আনন্দের পাশাপাশি পুরস্কার জেতার আনন্দ।
তাই লটারির পুরস্কার নিয়ে আমাদের খানিকটা কৌতূহল থাকাটাই স্বাভাবিক।
এক আংকেল জবাব দিলেন, "এইবার ভালই জিনিস কেনা হয়েছে। প্যান্টিন শ্যাম্পু, নিভিয়া বডি লোশন, জিলেট অমুক তমুক" বলে বলে আংকেল কয়েকটা বিদেশী এবং লোকাল মার্কেটে পাওয়া যায় এমন দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর নাম বললেন। "হয়েক্সট" ছিল জার্মান কোম্পানি, এবং স্বভাবতই নাক উঁচা। কোম্পানির টাকায় সস্তা জিনিস কিনলে উল্টো হেড অফিস থেকে ধমক শুনতে হতো। আব্বুদের যখন ঢাকায় কনফারেন্স হতো, কোম্পানি বিমানের টিকেট পাঠাতো, পূর্বাণী হোটেলে থাকার খরচ দিত। এমপ্লয়ী প্লেনের টিকিটের টাকা নিয়ে ট্রেনে বাসে নাকি পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসছে, এবং ঢাকায় কোন আত্মীয়ের বাড়ি বা সস্তা হোটেলে উঠছে, তা নিয়ে ওদের মাথাব্যথা নেই। ওদের স্ট্যান্ডার্ড, ওরা ধরে রাখতো।
যাই হোক, পরদিন লটারিতে আমার ভাই লাগাতার পুরস্কার জিততে লাগলো। সকালের নাস্তায়, দুপুরের খাবারে, বিকালের খেলায় - মানে যত বিভাগ ছিল, মোটামুটি সবগুলোতেই সে হয় প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হয়েছে। এই ঘটনা আমাদের কাছে নতুন না। ও আগের বছরও এমনটা জিতেছে, পরের বছরগুলোতেও এইভাবে জিতেছে।
বাসায় এসে যখন পুরস্কারের প্যাকেটগুলি খুললাম, তখন দেখি ভিতর থেকে মেরিল শ্যাম্পু, কেয়া কসমেটিক্সের জিনিসপত্র বেরুচ্ছে।
মানে হচ্ছে, দোকান থেকে কেনা হয়েছে এরোমেটিক হালাল সাবান, কিন্তু রসিদে লেখানো হয়েছে "ডভ।"
আব্বু অবাক হলেন না। কারন এই অফিসেই কোন অফিসারের যখন বাচ্চা হতো, নরমাল ডেলিভারি হলেও বিল লেখানো হতো সিজারিয়ানের। কারন কোম্পানি ১০০% মেডিকেল বিল পরিশোধ করতো। মেডিকেল বিল দেয়া শেষে বাকিটা সেই এমপ্লয়ীর লাভ। সেখানে পিকনিকের পুরস্কার সামগ্রীতে টুটা ফুটা লাভতো ওয়ানটু। মনে নাই হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র জীবনের প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা? তাঁর সূচ লাগবে, প্রোডাকশনের এক বয় পরম উৎসাহের সাথে সূচ সংগ্রহের দায়িত্ব নিল। কয়েক মিনিটেই সূচ হাজির, সাথে বিল। সূচের মূল্য এক টাকা, যাওয়ার জন্য বেবি (ট্যাক্সি) ভাড়া পঞ্চাশ টাকা, আসার সময়ে বেবি ভাড়া পঞ্চাশ টাকা। দুই ক্ষেত্রেই বেবিওয়ালার সই আছে।
এই হচ্ছে দেশের প্রাইভেট মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে দুর্নীতির নমুনা। তাহলে সহজেই বুঝে নিন, সরকারি অফিসে কি হতে পারে! আর আমরা কেবলই দোষ চাপাই সরকারের অব্যবস্থাপনার উপর! দুর্নীতির জন্য দেশকে গালাগালি করি।
আমি অবশ্য আজকে দুর্নীতি নিয়ে লিখতে বসিনি। বসেছি "ভাগ্য" নিয়ে লিখতে। বিশেষ করে লটারি ভাগ্য।
যেমন এই ঘটনায় আঙ্কেলদের ভাগ্য ছিল খারাপ। হাতেনাতে দূর্নীতি ধরা পড়েছে।
আমার ভাইয়ের লটারি ভাগ্য বরাবরই ছিল দুর্দান্ত। সেটা শুধু অফিস পিকনিকই না, স্কুলের অনুষ্ঠান বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যেত। আব্বুর বিশ্বাস ছিল, ওকে দিয়ে যদি ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলের লটারি টিকেট কেনা হতো, তাহলেও অবশ্যই জিতে যেত। আব্বু সেই প্রস্তাবও একদিন দিল।
"আমি তোমাকে দশ টাকা দিব।"
আমাদের শৈশবে দশ টাকা অনেক টাকা। এক বোতল কোক কেনা যেত, অথবা একটা আস্ত চকবার। এক প্লেট শিক কাবাবের দাম ছিল পনেরো টাকা। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে হাফ প্লেট চিকেন বিরিয়ানি পনেরো-বিশ টাকায় খেতাম।
ভাইয়ের চোখ মুখ উজ্জ্বল। "ঠিক আছে, দাও।"
আব্বু বলল, "কিন্তু ঐ টাকা দিয়ে আমরা একটা লটারি কিনবো।"
"লটারি কিনলে কি হবে?"
"আমরা কোটি টাকা জিতবো।"
"আচ্ছা। আর না জিতলে?"
"না জিতলে নাই।"
ভাই তখন নতুন প্রস্তাব রাখে, "জিতলে ঐ কোটি টাকা আমার। আর না জিতলে আমাকে দশ টাকা ফেরত দিবা।"
এরপরে আর লটারিই কেনা হতো না।
তা আমার ভাইয়ের ঠিক বিপরীত হচ্ছে আমার লটারি ভাগ্য। আমি যদি অতি সূক্ষ্ম গাণিতিক হিসাব করেও লটারি খেলি, তারপরেও জিততে পারি না। প্রোবাবিলিটির সমীকরণে যে অংশ শূন্য থাকে, আমার বিচরণ কেবল সেই অংশেই। ডিনার টেবিলে আমার পাশেরজন পুরস্কার জিতেছে এমন বহু ঘটনা আছে, কিন্তু আমার কখনোই জেতা হয়নি। যে কারনে আমি জীবনেও পয়সা খরচ করে লটারি কিনিনা।
কারোর মনে আছে কিনা জানিনা, অনেক আগে আমি লিখেছিলাম, একবার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে শুনি ছয় মাস বয়সী এক শিশুর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। মসজিদের বাইরে ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আগ্রহীরা যেন অবশ্যই স্যাম্পেল দেন।
আগ্রহী হয়েই গেলাম।
কটনবাডের মতন একটা জিনিস ধরিয়ে দিয়ে বলল ওটা মুখে নিয়ে গালের ভিতরে কয়েক মিনিট ঘষতে। তারপরে সেই লালা মিশ্রিত কাঠিতে একটা স্টিকার লাগিয়ে একটা খামে ভরে নাম ঠিকানা ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য লিখে চলে আসলাম। ওরা পরীক্ষা করে জানাবে। যদি ম্যাচ করে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিবে।
আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম, যেন শিশুটির ম্যাচ দ্রুত পাওয়া যায়।
আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করলেন। ম্যাচ পাওয়া গেল। অবশ্যই আমি না। আমার লটারি ভাগ্য যেমন ছিল তেমনই রইলো।
এরই মাঝে আমার ভাই তাঁর সহকর্মী এক ব্লাড ক্যান্সার রোগীর সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারলো। নিয়মিত রক্ত দিয়ে যাচ্ছে কয়েক বছর হলো। মহিলার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
তা গত মাসে আমি আমার ফোনে একটা কল পেলাম। নিউইয়র্ক থেকে এসেছে। অফিস টাইমে ফোন করায় স্বাভাবিকভাবেই একটু বিরক্ত হলাম। কিন্তু কৌতূহল থেকেই ফোনটা ধরলাম।
"ইজ দিস ম্যানজুর?"
আমেরিকান কেউ।
বললাম, "বলছি।"
"তোমার নাম কী আমি ঠিকভাবে উচ্চারণ করেছি?"
আমি বিদেশিদের ক্ষেত্রে নাম শোধরানোর চেষ্টা করিনা। "মঞ্জুর" বলাতে বলাতে এক ঘন্টা লেগে যাবে। যা খুশি ডাকরে ভাই, আমার কিছুই যায় আসেনা।
"ঠিক আছে। তুমি সঠিক উচ্চারণ করেছো।"
"যাক!" বলে সে নিজের পরিচয় দিল। কোন সংস্থা থেকে ফোন করেছে। সাধারণত এমন ফোনে আমি খুবই বিরক্ত হই। বেশিরভাগই টেলিমার্কেটিং করতে ফোন করে। আমি জীবনেও ম্যারিয়ট হোটেলে থাকিনি, অথচ ফোন আসে ম্যারিয়ট থেকে, আমি নাকি ওদের তিনদিন চার রাতের ভ্যাকেশন প্যাকেজ জিতেছি। আগ্রহী হলে দ্রুত ফোন করতে। কিংবা, আমার গাড়ির ওয়ারেন্টি কভারেজ শেষ গেছে। বা আরও অন্যান্য কিছু। মোট কথা, ওদের থেকে কিছু একটা কিনতে হবে। কিন্তু যখন লোকটা বললো, "মনে আছে তুমি ডিএনএ স্যাম্পল দিয়েছিলে দুই হাজার পনেরো সালে?"
তখন আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম।
"তোমার জন্য সুখবর! আমরা একটা ম্যাচ খুঁজে পেয়েছি। একজন ব্লাড ক্যান্সার রোগীর দ্রুত বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লেন্ট প্রয়োজন।"
আমি তখন উত্তেজনায় ফুটছি। মনে মনে বললাম, "কস কি মুমিন!"
"তুমি কি এখনও আগ্রহী?"
সুখবর হজম করতে সময় লাগলো। মুখ দিয়ে সাথে সাথে কথা বেরুলো না। মুখের অপেক্ষায় না থেকে মনে মনেই বললাম, "আবার জিগায়!"
"হ্যালো! হ্যালো! তুমি কি আছো?"
"হ্যা, হ্যা আমি আছি।"
"তুমি কি এখনও বোন ম্যারো ডোনেশনে আগ্রহী?"
"অবশ্যই।"
"যাক বাঁচালে!"
এরপরে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চললো। কিভাবে কি করতে হবে, ওরা কি করবে ইত্যাদি। যেটুকু বুঝলাম, মূল কথা হচ্ছে, আমার কোন অপারেশন হবেনা। রক্ত দানের মতন আমি রক্ত দিব, এবং এতেই ওরা স্টেম সেল পেয়ে যাবে। কিছু ইনজেকশন নিতে হবে শুধু। আর কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন করোনা বা এই ধরনের কোন ভাইরাল রোগ বাঁধানো যাবেনা, যৌন রোগ বাঁধানো যাবেনা, মোট কথা সুস্থ থাকতে হবে।
এর মাঝে একদিন গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আসলাম। পরীক্ষা মানে কয়েক শিশি রক্ত নিল, এবং ওগুলো পরীক্ষা করে দেখবে কোন সহজ বা জটিল রোগ শরীরে আছে কিনা। তারপরেই অ্যাকশন শুরু হবে।
জ্বি, আমার লটারি ভাগ্য খুবই খারাপ ছিল। জীবনেও কোন লটারিতে পয়সাতো দূরের কথা, শ্যাম্পু, বডি ওয়াশ, শেভিং কিট্স্ও জেতা হয়নি। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় লটারিতে আমি জিতে গেছি। একজন ব্লাড ক্যান্সার রোগী কিংবা ডাক্তার ভাল করে জানেন বোন ম্যারো ম্যাচিং কত বিরল ঘটনা। আমার ভাগ্য ভাল, একজন মরণাপন্ন রোগীর সাথে আমার ম্যাচ করেছে। তাঁকে আরও কিছুদিন বাঁচবার স্বপ্ন দেখাতে পারছে। বাকি হায়াৎ মৌত সবই আল্লাহর হাতে।
আমি কেবল নিজের আনন্দ শেয়ার করার জন্য কিন্তু লিখতে বসিনি। বরং একটি বিষয় জানাতেই টাইপিং করতে বসা।
ঘটনাটা ভাল করে ভেবে দেখুন, যদি আমি সেদিন সেই মসজিদে না যেতাম, যদি না সেদিন ডিএনএ স্যাম্পল দিতাম, তাহলে আজকে এই রোগীর সাথে আমার ম্যাচিং হতো না। আমরা খুব কম মানুষ জানি এই সিস্টেমের ব্যাপারে। আমরা কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছি যাদের মধ্যে লাখে লাখে ম্যাচিং প্রোফাইল আছি, ইচ্ছা করলেই লাখে লাখে প্রাণ রক্ষা করতে পারি, অথচ স্রেফ জানি না বলেই আজকে অগণিত মানুষ ব্লাড ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন। একটি ম্যাচিং প্রোফাইলের জন্য হাহাকার চারিদিকে, অথচ অজান্তে আমি নিজেই হয়তো তাঁর ম্যাচ। কোটি কোটি টাকা দান করেও মানুষের প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়না। কিন্তু বোন ম্যারো দান করেই আপনি হয়তো তাঁকে বাঁচিয়ে তুলতে পারবেন।
কারোর মনে আছে কিনা জানিনা, বেশ কিছুদিন আগে মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীর জন্য আমরা হাত পেতেছিলাম। বেচারির হঠাৎ ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে, ইন্ডিয়াতে চিকিৎসা নিতে যায়, বাবার বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে তাঁর শরীরে দেয়া হয়, ফিট না করায় মেয়েটি মারা যায়। ইনবক্সে এখনও তাঁর হাহাকার ভরা ম্যাসেজ আছে। মেয়েটি কেবল বাঁচতে চেয়েছিল! আমাদের দেশেরই কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে অবশ্যই হাজারে হাজারে ম্যাচিং প্রোফাইল ছিল তাঁর, কিন্তু কোন সিস্টেম ছিল না তাঁকে সেই খোঁজ দেয়ার।
যারা এই লেখাটি পড়ছেন, আমেরিকান হলে অবশ্যই DKMS.org এ রেজিস্ট্রি করুন। অতি সহজ পদ্ধতি। আপনি নাম ঠিকানা দিয়ে সাবমিট করবেন। ওরা আপনার কাছে কিট পাঠিয়ে দিবে। আপনি কেবল নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের লালার স্যাম্পেল নিয়ে ওদের পাঠানো খামে ভরেই পোস্ট করে দিবেন। আপনার এক পয়সাও খরচ হবেনা। বাকিটা ওদের দায়িত্ব। ওরা রেকর্ড রাখবে। আপনার সাথে কারোর ম্যাচ পাওয়া গেলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। সব তথ্য বিস্তারিত তখন জানাবে।
ওদের মোটো হচ্ছে, "we delete blood cancer."
এবং এজন্য আমার আপনার সবার সহায়তা চাই।
যারা অন্যান্য দেশের প্রবাসী, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, একটু অনলাইনে সার্চ করেই দেখুন, আমি নিশ্চিত, সেসব দেশেও এইরকম কোন নেশনওয়াইড ডাটাবেজ সিস্টেম নিশ্চই আছে। আপনারা তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে জেনে বুঝে রেজিস্ট্রি সেরে ফেলুন।
আর বাংলাদেশের পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, কেননা আমরা আমাদের দেশেই এমন কোন সিস্টেম গড়ে তুলি? খুব কঠিন কিছু না। রক্তদান নিয়ে আমাদের অনেক গ্রূপ আছে। স্কুল জীবনের এক বান্ধবীর সাথে আমার নিজেরই গড়া একটি ব্লাড গ্রূপ আছে। কেননা ডাক্তার+ইঞ্জিনিয়ার+ভলান্টিয়ারদের নিয়ে এমন কোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম গড়ে তোলা যাক যেখানে আমরা ব্লাড ক্যান্সার রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারবো? সরকারি পর্যায়ে প্রশাসনের লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে আরও ভাল হয়। কেউ কি আছেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান পৌঁছে দিতে পারবেন?
এখন এই মুহূর্তে বোন ম্যারো ম্যাচ পাওয়া অতি বিরল ঘটনা। কিন্তু কোটি কোটি স্যাম্পল জমা হলে সেখান থেকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এইটা অতি সহজ সরল প্রোবাবিলিটির অংক। ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাও বুঝবে। তাই আমাদের সবার দায়িত্ব, নিজ আগ্রহে, নিজের আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব প্রতিবেশী, দেশবাসী ও মানুষের জন্য হলেও এগিয়ে আসা।
"আমার বন্ধু ক্যান্সারে মারা গেছে" - এই বোধে আমার যা কষ্ট হয়, তারচেয়ে বহুগুন কষ্ট বাড়ে যদি আমি সেই বন্ধুর ক্যান্সারে কিছু করতে না পারি।
ক্যান্সার অতি বদ রোগ। এখন পর্যন্ত এর কোন চিকিৎসা নেই। কিন্তু যেভাবে কোন ক্যান্সার রোগীর প্রাণ রক্ষা সম্ভব, আমাদের উচিৎ সেপথেই চেষ্টা করা। নিজের সামান্য অনুদানে যদি একটি প্রাণ রক্ষা পায়, তাহলে মাত্র কয়েকদিনের মানব জীবনে আর কি চাহিদা থাকতে পারে? কেয়ামতের দিন আল্লাহ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করবেন জীবনে গর্বিত হবার মতন কিছু করেছি কিনা, তখন এই ঘটনা থাকবে তালিকার এক নম্বরে। জীবনেতো আর কিছুই করতে পারলাম না। কুরআনের সেই বিখ্যাত আয়াত মনে করিয়ে দেই যা তাওরাতেও আল্লাহ বলেছেন, "যে একটি প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন গোটা মানবজাতির প্রাণ রক্ষা করলো।"
এরপরে আর কিসের জন্য অপেক্ষা করবেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১০:১১