somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানির ঈদ, ক্রেতা ও বিক্রেতা দুইজনের জন্যই

২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন, "মাংস খাওয়া" এখানে সেকেন্ডারি বিষয়। যে কোরবানি করছে, সে যদি মাংস নাও খায়, কোনই সমস্যা নাই। সে ইচ্ছা করলেই পুরোটা বিলিয়ে দিতে পারে।
আবার এমন যদি হয় যে উনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক, এবং সেই তুলনায় মাংসের পরিমান (খাসির ক্ষেত্রে যা হয়) খুবই কম, তখন তিনি ইচ্ছা করলে পুরোটাই নিজের পরিবারের জন্য রেখে দিতে পারেন।
মূল বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ বলেছেন কুরবানী দিতে - আমরা দিব। কাহিনী এখানেই শেষ।
তবে দেশে এবং বিদেশেও যেভাবে পশু বেচা কেনা হয় - সেটা আমার মতে ঠিক না। আপনারা নিজেরাই একটু গভীরে চিন্তা করেন, তাহলেই বুঝবেন আমি কেন কথাটা বললাম।
দেশে, গরুতে কতটুকু মাংস হবে, সেটার ভিত্তিতে আমরা দামদর শুরু করি।
"বাজারে আটশো টাকা কেজি, গরুতে মাংস হবে এক শো কেজি, তুমি এক লাখ টাকা চাও কোন আন্দাজে?"
ইদানিং দেশে বিদেশী স্টাইলে লাইভ ওয়েটেরও সিস্টেম চালু হয়েছে। গরুকে মেশিনে তোলা হবে, সেই ওজনের ৫৫-৬০% মাংসের দর বিবেচনা করে দাম বলা হবে। বিদেশে এমনটা করা হয় কারন এখানে গরু কেনা বেচাই হয় এইভাবে। তবে আমরা আলাদাভাবে যারা কোরবানি দেই, তাঁরা গরুর চেহারা, সাইজ এবং আমাদের বাজেটের সমন্বয়ে একটা ডিলে আসি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
দেশি কিছু পন্ডিত আবার গবেষণা করে বের করেছেন আসলে মাংস ৪৫% হয়, সাথে কলিজা বা অন্যান্য অর্গান যোগ করলে ৫২% হবে, কাজেই এর বেশি দাম দেয়া ঠিক না। আরে ভাই, তুই কি বাজারে মাংস কিনতে গেছিস যে এইভাবে দাম করতে হবে? আমার বাজেট পঞ্চাশ হাজার টাকা। আমি যাব এই টাকায় বেস্ট গরুটা কিনতে। না পেলে খাসি। মাংস বেশি হলে ভাল, আমি, আমার পরিবার আত্মীয় এবং গরিবরা বেশি মাংস পাবে। আর কম হলে কম পাবে। মাংসের ওজন নিয়ে দাম দর করা কেন? সেটাতো তখন কসাইয়ের দোকান থেকে মাংস কেনার মতন হয়ে গেল।
এই একই সূত্র ধরে "ভাই জিতছেন" "ভাই ঠকে গেলেন" - টাইপ কথাবার্তাও জঘন্য। এখানে হারজিত কিসের ভিত্তিতে বলছে? গরু/ছাগল বড় ছোট হওয়াটাতো এখানে বিষয় না। কোরবানি কবুল হলো কি হলো না, সেটার উপরই হারজিত নির্ভর করে। কেউ কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছে কোরবানি কবুল হয়েছে কিনা?
এখন উল্টোদিকে আসা যাক।
গরু ব্যাপারীরা গরুর যেমন দাম হাঁকেন, সেটাওতো ঠিক না। জিন্দেগীর সব কামাই এক দানেই সেরে ফেলতে চায়। এমন ভাব যেন একটা গরু বিক্রি করেই লাস ভেগাসে ভ্যাকেশন ট্রিপে যাবে, তারপরে হজ্ব করে তওবা করে রিটায়ার করে ফেলবে।
ওদের হিসাব হবে এমন, গরু পালতে যা খরচ হয়েছে, সাথে নিজের একটু লাভ রেখে তারপরে বিক্রি। যেহেতু এটি কোরবানির ঈদ। এখানে একটু ছাড় দেয়া উচিৎ কারন কোরবানি হচ্ছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। যা লাভ রাখার বছরের অন্যান্য সময়ে রাখুন। রেগুলার কসাইয়ের দোকানে যখন গরু বিক্রি করবেন, তখন কয় কেজি মাংস হবে, কতটুকু ফেলে দিতে হবে ইত্যাদি হিসাবে রেখে তখন দাম দর করুন। কিন্তু কোরবানির পশুতে যে ছাড়টা আপনারা দিবেন, সেটাও আপনাদের সদকা, আপনাদের কোরবানি। নিশ্চই আল্লাহ ইন শা আল্লাহ এর প্রতিদান আপনাদের দিবেন।
রমজান উপলক্ষে, কোরবানি উপলক্ষে বিদেশে মুসলিম দোকানগুলোতে চলে ডিসকাউন্টের প্রতিযোগিতা। ইচ্ছা করে বছরের সমস্ত গ্রোসারি শপিং এই সময়েই করে ফেলি! আর আমাদের দেশে ঘটে ঠিক এর উল্টা। বিদেশের ব্যবসায়ীগুলিকে এত ডিসকাউন্টের পরেও দেখি টাকার উপরে রীতিমতন ঘুমাচ্ছেন, আর আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের সেটা দেখি না। কারনটা কি? আল্লাহর উপর ভরসা করেন? তাঁর রহমত, বরকতের উপর? তাহলে নিশ্চই জানেন উনার উদ্দেশ্যে এক টাকা ব্যয় করলে বিনিময়ে দশ টাকার বরকত ফেরত পাবেন? এইটাই হচ্ছে ঘটনা।
অনেক ব্যবসায়ী বলেন গরু পালতে আমাদের যে খরচ হয়, সেটার জন্যই গরুর এত দাম। আমরা আসলে লাভ করতে পারিনা, লসে বিক্রি করতে হয়। তা ব্যবসায় নেমে জানেন না কিভাবে ভ্যারিয়েবল cost কমাতে হয়? এক টাকা খরচের আগে চিন্তা করতে হয় এটা আমাকে কত পার্সেন্ট প্রফিট এনে দিবে, এটার বদলে অন্য কোন সাশ্রয়ী উপায় আছে কিনা - ইত্যাদিতো ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজিরই অংশ। এইসব নিয়ে পড়াশোনা, গবেষণা না করে হুটহাট করে ঝাঁপায় পড়ে নিজের পাশাপাশি মার্কেট নষ্ট করেন কেন?
এনিওয়েজ। এসব ফেসবুকে লেখালেখি করে লাভ নাই। দুই চারজন পড়বেন, আর আমাদের জনসংখ্যা আঠারো কোটি। মরুভূমিতে দুই ফোঁটা পানি ঢালার মতন ব্যাপার। তবু চেষ্টা করে যাই। একজন হলেও যদি বুঝেন! উপলব্ধি করেন!
সবাইকে কোরবানির ঈদের আগাম শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৩ রাত ১২:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×