somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেনা চেনা লাগে!

০১ লা জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'আররে!! এখানে!! কোন পক্ষের?'
'এই তো, কনে আমার বউয়ের কাজিন। সেই সুবাদে.....' চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমিও হাসি হাসি মুখ করে হ্যান্ডশেক করি। লোকটার চেহারা খুবই চেনা চেনা লাগছে। 'লোক' বলব? আমারই বয়সী। আবার 'ছেলে' বলা যায় - অতটা কমবয়সী বলে নিজেকে নিশ্চয়ই দাবী করতে পারি না।
'অ--নে--ক দিন পর দেখা , তাই না?'
'হ্যাঁ- অনেক দিন পর।' উত্তর দেই । কিন্তু কত দিন? স্কুল -কলেজের ফ্রেন্ড না শ্বশুরপক্ষীয় কোন আত্মীয়? শ্বশুরপক্ষের হলে তো পুরোই বেইজ্জতি হবে! না চিনতে পারলে বলবে, 'জামাইয়ের তো বড় অহংকার!'
'সেই ইন্টার্ণীর পর তো আর দেখাই হয়নি।'
ইয়েস, মনে পড়েছে। মেডিকেল কলেজে আমরা একসাথে পড়তাম। ওহো! ও তো হোস্টেলে আমার দুই রুম পরেই থাকতো। ইন্টার্ণীর পর পরই বিসিএস-এ চাকুরী পেয়ে যায়।
'হ্যাঁ- আট বছর প্রায়। তো...'
তো পর্যন্ত বলে সামলে নিলাম। তোর না তোমার? কী বলতাম ওকে। ভাবনাকে টাইম মেশিনে বসিয়ে মেডিকেল কলেজের দিনগুলোতে খানিকক্ষণ ঘুরিয়ে এনেও 'তুই-তুমি'র কোন কূলকিনারা করতে পারলাম না। অগত্যা সম্বোধন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম - 'তো -পোস্টিং কই এখন?'
'বগুড়া সদরে। তুই কি করিস এখন?'
ঠিক হ্যায়, তুই-ই সই। ও যখন 'তুই' বলছে, নিশ্চয়ই 'তুই'- ই বলতাম। আমিও 'তুই' শুরু করলাম।
কমিউনিটি সেন্টারে ঢোকার পর থেকেই আমার 'ও' আমার কাছ ছাড়া। তার খালাতো বনের বিয়ে, তাই বোনের কাছেই তাকে থাকতে হচ্ছে। বংশের বড় জামাই হওয়ায় গুরুজনদের পাশে আমাকে বসতে হয়েছে। দেশ, রাজনীতি, আবহাওয়া তেকে শুরু করে বিয়ে, আতিথেয়তা, অতীত প্রজন্ম- বর্তমান প্রজন্ম ইত্যাদি গুরু-গম্ভীর আলোচনা অত্যন্ত আগ্রহের ভান করে শুনতে হচ্ছিল। মাঝে মধ্যে মাথা ঝাঁকিয়ে 'জ্বি জ্বি' করে খুব একটা কিছু বুঝে ফেলেছি - এরকম ভাবও দেখাতে হচ্ছিল। যদিও ভেতরে ভেতরে এই 'নাগপাশ' তেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাকুল আকাংখায় অস্থির হয়ে উঠেছি। আমার এই ব্যাচমেটটি আসায় তার সাথে গল্প করার ছলে সেখান থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে এলাম। এই বিয়ের বর আবার ওর বউয়ের আত্মীয়।
এবার আরেক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। আমি ওর নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছি না।
কথায় কথায় আমরা চলে গেলাম আমাদের ফেলে আসা দিনগুলোতে। সে-ই কলেজ চত্বর, বোরিং লেকচার, ডাইনিং-এর ফিস্ট, ইন্ডিয়া ট্যুর - কত কিছুই মনে পড়ছে। ওর কথার সূত্র ধরে আমিও অনেক কথাই বলছি। কিন্তু ওর নামটা আর মনে আসে না। কী যন্ত্রণা! এতক্ষণ ধরে কথা বলছি, নাম ধরে ডাকিনি। ইদানীং এ রোগটা হয়েছে - 'নাম ভুলে যাওয়া' রোগ। নাকি ছিল বহু আগে থেকেই- টের পাচ্ছি এখন।
মনে পড়ছে , ও আমাদের ক্রিকেট টীমের বোলার ছিল। স্পিন করতো বলে আমরা ওকে 'মুশতাক' ডাকতাম।
মুশতাক ? না মুরালিধরণ? আচ্ছা, ওর নামও না ছিল 'ম' দিয়ে? মাসুম? মামুন? উঁহু! নাকি 'ল' দিয়ে? লাবিব? লিখন? দূর, নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হচ্ছে।
ভাবছি, বরপক্ষের কেউ এসে ওর নাম ধরে ডাক দেয় না কেন? তাহলেই তো ঝামেলাটা চুকে যায়।
হঠাৎ আমাকে ও জিজ্ঞেস করলো - 'ভাবি কই? পরিচয় করিয়ে দিবি না?'
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! পরিচয় করাতে হলে তো নাম বলতে হবে। এখন নিজের মাথায় যে কয়টা চুল আছে, সেগুলোও ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে আগেই কেন সারেন্ডার করলাম না এটা ভেবে। আগেই যদি বলতাম,' কিছু মনে করিস না, তোর নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না, আমার মাঝেমধ্যেই এ রকম হচ্ছে আজকাল।' কিন্তু এতক্ষণ সারা দুনিয়ার গল্প করে কেমনে জিজ্ঞেস করি - 'তোর নাম কি?'
আচ্ছা, এক কাজ করলে হয় না? বউকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দেই। বলি, এ হচ্ছে আবীর। ও যখন বলে উঠবে,'আরে আমি তো আবীর না, আমি অমুক।' - আমি অত্যন্ত অবাক হবার ভান করে বলবো, 'দেখ কান্ড! আমি এতক্ষণ তোকে আবীর ভেবেছি। তুই দেখি আবীরের মতোই মোটা হয়ে গেছিস, চুলেও পাক ধরেছে। সে জন্যই চিনতে পারিনি।'
হ্যাঁ, এই বুদ্ধিটা পছন্দ হলো। বললাম, 'হ্যাঁ আছে ভেতরে। দেব পরিচয় করিয়ে।'
তবে তার আগেই ও বললো, 'ওই যে আমার বউ বসে আছে, চল পরিচয় করিয়ে দিই।'
তা-ই সই। আগে ওর বউয়ের সঙ্গেই পরিচয় হোক।
আমার মনে পড়ল, এই মুশতাকের (অথবা মুরালিধরণের) আমাদের এক ব্যাচমেটের সাথে প্রেম ছিল- স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা? না স্বপ্না? থাক এক নামের চিন্তায় বাঁচি না, আবার আরেক নাম!
'মুন্নি, ও হচ্ছে সেলিম, আমার ব্যাচমেট, ডাক্তার। হোস্টেলে আমরা পাশাপাশি রুমে থাকতাম। '
ওর কথা শুনে আমি আনন্দে মনে মনে তিনটা ডিগবাজি খেলাম। মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেল। নিমিষেই সব অস্থিরতা উধাও। মুশতাক বা মুরালিধরণের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'সেলিম না রে, আমি মারুফ।'
আমার কথা শুনে ওর চোখ যেন কপালে উঠলো, মুখ হাঁ হয়ে গেল। কন্ঠস্বরে প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে বললো, 'আরে মারুফ? দেখ কান্ড! আমি এতক্ষণ তোকে সেলিম ভেবেছি। তুই তো দেখি সেলিমের মতোই মোটা হয়ে গেছিস। এ জন্যই কনফিউজড হয়ে গেছি। এই বয়সে টাকও তো বানিয়ে ফেলেছিস বিশাল একটা! সে জন্যই চিনতে পারিনি!
...................................
'রস+আলো'র 'পাঠক রম্যসংখ্যা'য় ছাপা হওয়া গল্পের Blog edition!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:২৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×