হার্ট কই? )
আমাদের মেডিক্যালে এক টিচার ছিলেন। তার নামের শুরুতে ছিল এল. ই.। এল. ই.-তে কি হয় এখন আর মনে নেই। প্রথম যখন নামটা শুনলাম, ভাবলাম- এলি - মহিলা। পরে যখন ক্লাস নিতে এলেন, দেখলাম- পুরুষ। তার ক্লাস নেয়ার একটা অন্যরকম স্টাইল ছিল। স্টকে ছিল প্রচুর কৌতুক। তার ভাষায় 'মেডিক্যাল জোকস'। তার কয়েকটি ঝেড়ে তার পর তিনি পড়াতে শুরু করতেন। পড়ার ফাঁকে ফাঁকেও চলতো জোকস। আমাদের ব্যাচের কেউই সেগুলো স্যারের আগে অন্য কারো মুখ থেকে শুনিনি। স্যার এগুলো কোত্থেকে পান জিজ্ঞেস করলে মিটি মিটি হাসতেন- কিছু বলতেন না।
টিচাররা কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে কারো কারো পারি না বলতে খারাপ লাগতো। অনেকেই না পারলে বলে দিত- পারি না। কয়েকজনের তা বলতে যেন লজ্জা লাগতো। তাই না পারলেও তারা কিছু একটা বলার চেষ্টা করতো। আন্দাজে। এবং স্বাভাবিকভাবেই তা হতো ভুল কোন উত্তর, যা ক্লাসের অন্যদের জন্য বেশ আমোদজনক একটা ব্যাপার হতো। 'স্লিপ অব টাং'-এর কারণেও কোন শব্দের কাছাকাছি আরেকটা শব্দ বের হয়ে যেত অনেকের মুখ থেকে, যার অর্থ দাঁড়াতো সম্পূর্ণ অন্যরকম, হাস্যকর কিছু একটা। একদিন ঐ স্যারের ক্লাসেও হলো এরকমটা। স্যার এক শিশুর বুকের এক্সরে প্লেট দেখিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, এক্স-রেতে কি দেখা যাচ্ছে? নিউমোনিয়া আক্রান্ত ঐ শিশুর এক্সরেতে যা দেখা যাচ্ছিল ডাক্তারী ভাষায় তাকে বলে কনসোলিডেশন (Consolidation)। তবে আমাদের সেই সহপাঠির মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলো- কনস্টিপেশন (Constipation)। যার অর্থ কোষ্ঠকাঠিন্য। হয়ত 'যা-হোক-একটা' উত্তর দেয়ার তাগিদে না, স্লিপ অব টাংয়েই এরকমটা হলো, কিন্তু হাসির হররা বয়ে গেল ক্লাসে। হাসির দমক থিতিয়ে এলে স্যার বললেন, খোকা, না পারলে বোলো পারি না, তবু এমন উল্টোপাল্টা শব্দ বোলো না। শেষে গল্পের ঐ ভদ্রলোকের মতো অবস্থা হবে।
আমরা গন্ধ পেলাম আরেকটি মেডিক্যাল জোকসের- 'কোন গল্প স্যার?'
শোন-
এক হিন্দু ভদ্রলোক। তিনি মেডিক্যাল রিলেটেড কোন প্রফেশনের সাথে যুক্ত নন। তবে কিছু কিছু মেডিক্যাল টার্ম জানেন। তাই ডাক্তার কাছে গেলে বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন আলোচনায় নিজের বিদ্যেটুকু জাহিরের চেষ্টাটা করতেন পুরোমাত্রায়। তো এই ভদ্রলোক একদিন এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন। চিকিৎসক একজন সার্জন। ডাক্তারকে তিনি বললেন, 'Doctor, I want to do castration.' অর্থাৎ কিনা তিনি ক্যাসট্রেশন করাতে চান। ইংলিশ টু বেঙ্গলী ডিকশনারী অনুযায়ী Castrate অর্থ খোজা বা খাসি করা, পুরুষত্বহীন করা, সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা হরণ করা।
ডাক্তার হতবাক। ৩০-৩২ বছরের যুবক ভদ্রলোক। এ বয়সেই কেন ক্যাসট্রেশন? জিজ্ঞেস করলেন- ' আপনার ওয়াইফের এ ব্যাপারে সম্মতি আছে? তার সাথে কথা বলেছেন?'
'না।'
'তার অনুমতি ছাড়া তো আমি এ অপারেশন করতে পারব না। আপনি তার সাথে আগে কথা বলেন।'
পরদিন আবার এলেন ভদ্রলোক। না- তার স্ত্রীর কোন আপত্তি নেই। সুতরাং...
রোগীর ইচ্ছানুযায়ী ডাক্তার 'হরণকার্য' সম্পন্ন করলেন। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চেতনা ফিরে পেয়ে ভদ্রলোক আশেপাশে তাকালেন। পাশের বেডেই দেখলেন আরেক রোগীকে। ভদ্রলোকের যে স্থান জুড়ে ব্যান্ডেজ বাধা ঐ রোগীরও সে স্থানে ব্যান্ডেজ বাধা। ঐ রোগীকেও 'সমগোত্রীয়' ভেবে উৎফুল্ল হলেন ভদ্রলোক। জিজ্ঞেস করলেন- 'ভাই আপনার কি অপারেশন হয়েছে?'
এ ধরণের ব্যক্তিগত একটা প্রশ্নে স্পষ্টতই বিরক্ত হলেন ঐ রোগী। ভদ্রলোকের দিকে একবার তাকিয়ে নিরাসক্ত গলায় বললেন- Circumcision (সারকামসিশন)। ইংলিশ টু বেঙ্গলী ডিকশনারী অনুযায়ী যার অর্থ লিঙ্গাগ্রের ত্বকচ্ছেদ করা, সুন্নৎ করা। সোজা বাংলায় মুসলমানী করানো, খতনা করানো।
অপারেশনের নামটা শুনেই শোয়া অবস্থা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলেন আমাদেও আলোচ্য ভদ্রলোক। উত্তেজিত গলায় চিৎকার দিয়ে উঠলেন- Yes, yes. That was the word, that was the word.