somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানী/ জীবের অধিকার প্রসঙ্গে : কোনটা শেষ কথা - ধর্ম, নাকি ঈশ্বর?

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনার কাছে কি ধর্মের আগে ঈশ্বর, নাকি ঈশ্বরের আগে ধর্ম? আপনি বলতে পারেন, ঈশ্বরই আগে, কিন্তু ধর্মই তো ঈশ্বরকে পাওয়ার একমাত্র উপায়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কোন ধর্ম দিয়ে ঈশ্বরের কাছে যাবেন? ঈশ্বর এক, কিন্তু ধর্ম তো অনেক। আবার সব ধর্মেই ঈশ্বর বলছেন একমাত্র এই ধর্মেই তাঁকে পাওয়া সম্ভব। তো ধর্মই যদি ঈশ্বরকে পাওয়ার একমাত্র রাস্তা হবে, তবে কোন ধর্মের উপর কোন ধর্মকে বিচার করবে মানুষ? দৈবচক্রে যে ধর্মাবলম্বীর ঘরে আপনি জন্মেছেন, সেটাকেই প্রকৃত ধর্ম বলে আপনি বিশ্বাস করেন, কিন্তু ঠিক এই এক যুক্তি, এক বাস্তবতা তো অন্য ধর্মাবলম্বীর বেলায়ও সত্যি, সেও তো ঠিক একই কারনে বিশ্বাস করে তার ধর্মই একমাত্র সত্য। তাহলে সেই পরম মানদণ্ডটা কোথায় যেটা দিয়ে পরম সত্য ঈশ্বরকে পাওয়ার রাস্তা নির্ধারণ করা যায়?

বিস্ময়টা এখানেই, সেই পরম মানদণ্ড মানুষ শুধুমাত্র নিজের মধ্যেই খুঁজে পেতে পারে, পৃথিবীর আর কোথাও তা পাওয়া সম্ভব না। অন্যান্য জীবের মত মানুষও অসংখ্য রিপু দিয়ে তৈরি। তার ক্ষুধা আছে, বেঁচে থাকার এবং নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা আছে, বংশ বিস্তারের দায়িত্ব আছে, কিন্তু মানুষ আলাদা, কারণ তার মধ্যে মগজ এবং মনের সামঞ্জস্যের মাধ্যমে বিবেক, নীতিবোধ, ন্যয়পরায়নতা, সমবেদনা নামক কিছু বিষয় তৈরি হয়েছে, যাকে একত্রে মনুষ্যত্ব বলা হয়। এই মনুষ্যত্বই মানুষকে রিপুর দাস হওয়া থেকে বিরত করে, ভোগের বদলে রক্ষা করতে শেখায়, নিজের বদলে অন্যের কথা ভাবায়, আত্নত্যাগের শিক্ষা দেয়, সর্বোপরি এমন এক বিচারবোধের সৃষ্টি করে যা সত্যের অনুসন্ধান করতে পারে। যার মনুষ্যত্ববোধ প্রবল, ঠিক-ব্যঠিক, ন্যায়-অন্যায় বিচারের জন্য তার কোন কিতাব বা গুরু-বানীর উপর নির্ভরশীলতার প্রয়োজন হয়না, তার ভিতরের মনুষ্যত্ব নামক সেই পরম মানদণ্ড দিয়েই সে বুঝতে পারে তার কি করতে হবে। মনুষ্যত্বের সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। যে মনে করে সে নেহাত মানুষ হয়ে জন্মানোর কারণে নয়, বরং মনুষ্যত্বের কারনে মানুষ, সে যেকোন ধর্মের শুদ্ধতাকে ধারণ করতে পারে, এবং ধর্মের শুদ্ধ সৌন্দর্যের সাথে নিজের মনুষ্যত্বের মিশেলে ঈশ্বরের সাধনা করতে পারে।

জীবের অধিকারকে স্বীকার করা সেই মনুষ্যত্বেরই পরিচয় বহন করে। মানুষ জানে, যেহেতু সে অন্যান্য জীবের চেয়ে বেশী ক্ষমতাধর, সুতরাং তার প্রথম কাজ হচ্ছে রক্ষা করা, শুধু নিজেকে বা নিজের জাত কে না, বরং পুরো সৃষ্টিজগতকে। তার ভিতরের পরম মানদণ্ড দিয়েই সে উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের মূল ব্যপারগুলো তার ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, তা অন্য সব জীবের বেলায়ও সত্যি। না খেয়ে থাকলে তার যেমন কষ্ট, সেই কষ্ট অন্য সব জীবের বেলায় এক। তার শরীরে কোথাও আঘাত লাগলে যেমন ব্যথা, সেই ব্যথার বোধও এক। ঠিক একইভাবে জীবনের প্রতি তার যে আকর্ষণ, বেঁচে থাকার অধিকার তার যতখানি, অন্য সকল জীবের ক্ষেত্রেও তা সমান। একজন মায়ের স্তনের দুধে তার সন্তানের যতখানি অধিকার, একটা বাছুরেরও তার মায়ের দুধে ততখানিই অধিকার। তেলাপোকা দেখলেই সে তখন আর পিষে মারেনা, বরং সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি সে গভীর সমবেদনা নিয়ে তাকায়। ইসলাম ধর্মে আল্লাহ মানুষের জন্য পশুপাখি খাওয়া হালাল করেছেন, এটাই তো হওয়ার কথা। আল্লাহ তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে ভালবাসেন, আর তাই মানুষকে তার ক্ষমতা ভোগ করার আনন্দ থেকে তিনি বঞ্চিত করেননি। কিন্তু মানুষ যদি তার বিচার-বিবেক দিয়ে ভোগের বদলে রক্ষার মন্ত্র নেয়, আল্লাহ তো তাতে কোথাও হস্তক্ষেপ করেননি। ভেগান/ভেজিটেরিয়ান হতে ইসলাম সহ অন্য কোন ধর্মেই কোন বাঁধা দেয়া হয়নি। কোরবানিকে পর্যন্ত ফরজ না করে ওয়াজিব করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে- “যুলহিজ্জাহ মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে কোন মুসলমান যদি ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পশু কোরবানি দিতে অসমর্থ হয়, তবে কোরবানির সমপরিমাণ অর্থ সে ‘সদকা’ হিসেবে দান করতে পারে”। Click This Link

মানুষ যদি তার মনুষ্যত্ববোধ দিয়ে জীবনে চলতে চায়, তবে পৃথিবীর কোন ধর্মই তাতে বাঁধা না; মানুষের সংকীর্ণতা, রিপুর আধিপত্য, চিন্তার অক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধ জ্ঞানই সেক্ষেত্রে বাঁধা। নিজের ভেতর ডুব দিয়ে সত্যকে অনুসন্ধান করলে এই সমস্ত বাঁধা কাটিয়ে ফেলা যায়, আর এর মাধ্যমে যে উপলব্ধির সন্ধান পাওয়া যায়, তা দিয়ে ধর্মের প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হয়। নিজেকে বাদ দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় না, নিজের মধ্য দিয়েই ঈশ্বরকে পেতে হয়।

সকলের জন্য শুভকামনা। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৭
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×