২৮ দিন হয়ে গেল আব্বু মারা গেলেন। দেখতে দেখতে কাটে নাই এই আঠাশটা দিন। প্রচন্ড কষ্ট বুকে দিয়ে আমরা অতিবাহিত করছি একেকটি দিন। পিতৃবিয়োগের যাতনা যে এতটা তীব্রতর তা বুঝে উঠার সময় এখনো শেষ হয় নি আমাদের। কত অজস্র হিসাব নিকাশ করেছি জীবনভর। কত যে অঙ্ক কষেছি অহরহ। চাকরি-বাকরি, বিয়ে-শাদী, গাড়ী-বাড়ি। অথচ আব্বুর অনুপস্থিতি ছিল না কোন হিসাবেই। কোনদিন আব্বুকে দেখি নাই সিরাসলি অসুস্থ হতে অথবা দীর্ঘসময় বিশ্রাম নিতে। আর তাই খুব বেশি অপ্রস্তুত ছিলাম আমি। মাঝে মাঝে যখন ভাবি ‘কি করে মৃত্যুর মত তীব্র একটা সত্যকে এতদিন পাশ কাটিয়ে ছিলাম’ – নিজেকে খুব বোকা মনে হয়। বোকা এবং হতভাগা। যে কিনা চোখ বন্ধ করে ভাবে আমাকে কেউ দেখছে না। আমি জানি আমার মত বোকা অজস্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারপাশে। আসলে এরকম বোকা না হলে বুঝি বেঁচে থাকা যায় না এ পৃথিবীতে।
পৃথিবীর নিয়মকানুন খুব নিষ্ঠুর মনে হয়। কেনইবা আমাদের জন্ম হয়, কেনই বা আমরা বুকচেরা বন্ধনে বাঁধা থাকি এতগুলো বছর – আর একদিন সব শেষ। খুব কঠিন নিয়মগুলো। কোনদিন ভাবি নাই মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তরতাজা প্রাঞ্জল একজন মানুষ এভাবে চিরবিদায় নেবে। সারাক্ষণ অতিবাহিত হয় এই নিষ্ঠুর ভাবনায়। সমাজ সংসার আমার কাছে এখন অতি অপরিচিত। মাথাভর্তি কালোচুলে আমার বিধবা মাকে যখন দেখি- বুক ফাটা আর্তনাদে তছনছ করতে ইচ্ছা করে সবকিছু। আমি পারি না। মানুষ কিছুই পারে না। যেমন পারিনি আর কয়টা বছর আব্বুকে ধরে রাখতে। অজস্র বেদনা নিয়ে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। অজস্র যাতনা পৃথিবীতে রেখে মানুষকে মরে যেতে হয়।