somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে গিয়েছি...

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা লেখা পড়ছিলাম। একজনের ছাদের উপর পাইচারি করতে করতে Beethoven এর Moonlight Sonata শুনবার ইচ্ছের কথা। বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়তে থাকবে আর মনে মনে হবে কবিতার সাথে আলাপন। "চাঁদের আলো পড়ে কপালের টিপ চমকে চমকে উঠুক, বেজে উঠুক হাতের চুড়ি আর হাতে থাকুক কারো হাত...."

এই লাইনগুলো পড়তে পড়তে হঠাৎ খেয়াল গেল কারো ভাবনার মাঝে টুপ করে ঢুকে যেতে পারলে কেমন হয়। হয়তো পাশের বাসার ছাদে জায়গা করে নিলাম। রেলিংয়ে দুহাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পূর্ণিমার সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে রাতের হাওয়া গেলা যাক না হয় -

(না হয় পাশের বাসার Moonlight Sonata-কে গুনগুন সুরে গান গাওয়ালাম)

: বাহ্‌ আপনি তো দারুণ গান করেন
(প্রথমে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি, কিছুক্ষণ নীরবতা, আরও কিছুক্ষণ পর)
: আপনি?
: (মৃদু হেসে) আমি এইখানে নতুন এসেছি। গতকালকেই এলাম
: ওহ। তাই বলি আগে দেখিনি কেন।
: স্টেটসে ছিলাম। আমার ফুফু থাকে এইখানে
: ওহ আচ্ছা।
: অনেক সুন্দর না আজকের রাতটা?
: হুম
: ছাদে আসেন বুঝি নিয়মিত
: না ঠিক নিয়মিত না। যখন ইচ্ছে করে।
: কেমন লাগে?
: দারুণ! বিশেষ করে এই এমন কোন রাতে যখন আকাশে মেঘ থাকে না, বাতাসে মৌ মৌ করতে থাকে হাসনাহেনার সৌরভ, আর রাতের পৃথিবীর সাথে চলে চাঁদের অভিসার।
: বাহ্‌ দারুণ বলেছেন তো! কি গান গাইছিলেন একটু আগে
: ওহ সেইরকম কিছু না। এমনিই গুনগুন করছিলাম আরকি
: আমার তো বেশ মনে হল। গান করেন বুঝি?
: আরে না। ওরকম কিছু না
: আচ্ছা

অদ্ভুত! সত্যিই অদ্ভুত! লেখাটা থামিয়ে এসির স্পীডটা বাড়িয়ে দিতে গিয়ে জানালা দিয়ে চোখ পড়তে দেখি আজ সেইরকমই একটা রাত। পূর্ণিমা শশী যেন মৃদু মৃদু ছন্দে Moonlight Sonata-র সুরটা রাতের আকাশে ছড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইচ্ছে করছে রাতটাকে স্বপ্নসুতোয় দিয়ে বেঁধে পাঠিয়ে দিই সেই অপরিচিতার মনের আকাশে।

...

ভাত খাচ্ছিলাম। আয়েশ করে। এই আয়েশ শব্দটা আমার এত এত প্রিয়। ইচ্ছে করে আয়েশ করে আয়েশের গালটা ঠেনে বলি, "এমন মিষ্টি কেন তুমি" :).....আয়েশ করে রাজকীয় ভঙ্গিতে। হাহা না না রাজকীয় তোশকে কাত হয়ে শুয়ে আঙ্গুরের থোকা থেকে একটা একটা করে মুখে দিতে দিতে কর্তক নৃত্য দেখছিলাম না :P...কল্পনায় যদিও দৃশ্যটা ছিল ওমন তবে বাস্তবে ইলিশের কাঁটা বাছতে বাছতে টিভিতে সুনিধি চৌহানের গানের অনুষ্টান দেখছিলাম। এর আগে দেখছিলাম একটা ভ্রমণের অনুষ্ঠান। প্যারিস দেখাচ্ছিল। আহ্‌ ইচ্ছে করছিল তখনি যদি চলে যেতে পারতাম। আসলেই এই সেদিন সিরিয়াসলী ভাবছিলাম ইউরোপ যাব বছরের শেষের দিকে। সম্ভাব্য ভ্রমণসঙ্গী একজনের সাথে আলাপও করছিলাম এই নিয়ে। সে যাক, তো খেতে খেতে হঠাৎ লেখার এমন একটা রাশ উঠে এল ভেতর ভেতর। ইচ্ছে করছিল তখনি খাওয়া থামিয়ে লিখে ফেলি শব্দগুলো। এমন যে আগে কখনো করিনি তা না, হয়তো খেতে বসেছি। মাঝখানে হাত ধুয়ে উঠে পরে শব্দগুলো মাথা থেকে বের করে পরে গরম করে খেয়েছি। একটা তৃপ্তি পাওয়া যায় এমন হঠাৎ হঠাৎ ধরা দেওয়া শব্দগুলোকে যদি ঠিকঠিক প্রকাশ করতে পারি তো। এইবার মনে হল থাক, আগে ইলিশের একটা গতি করা যাক পরে ভেবে দেখা যাবে।

হঠাৎ করে খুব প্রফুল্ল লাগছে। কারণ আছে অবশ্যই কিছু। তবে ঠিক বুঝতে পারছিনা সেগুলোই মুখ্য কিনা। প্রথম কারণ রবিঠাকুরের প্রায় ৬০টা পেইন্টিংস এর একটা প্রদর্শনী হচ্ছে কাল। সেই একি যায়গায় এই সেদিন যেখান থেকে ঘুরে এলাম। এর অনেকগুলো নাকি আগে কখনো প্রদর্শিত হয়নি। শিহরিত হচ্ছি খবরটা জানার পর থেকেই। আর তর সইছে না কখন সকাল হবে কখন ছুটে যেতে পারবো ছবিগুলোর কাছে। আর দ্বিতীয় কারণ, কদিন পরেই তাহমিমা আনাম আসছেন। তার সদ্য বের হওয়া বইটা সম্পর্কে আলোচনা করতে। তাহমিমা আনাম! যার জন্য ফেইসবুকে আমি ফ্যান পেইজ খুলে বসেছি সেই কোন কালে। যার উপর একসময় কঠিন ক্রাশ ছিল। সেই তাহমিমা আনামকে সামনাসামনি দেখতে পাবো! ওয়াও :-) :-)

বেশ অনেকদিন পরে লিখতে বসেছি। নিজের সাথে কিছু বোঝাপড়া করতে নিজের মাঝে ডুব মেরেছিলাম। ভাবছিলাম সুয়চ্চ কোন পাহাড় বা সাগরের কিনারায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে বোঝাপড়ার কাজটা করলে মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। চলে গেলাম এমন এক পাহাড়ের চূড়ায় যেখানে এই মহাদেশে পূব আকাশের রবির কিরণের প্রথম রশ্মিটা এসে পড়ে। বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম সে সৌন্দর্যের সামনাসামনি যখন হয়েছিলাম। আমার স্বপ্নেও আমি এমন কোন দৃশ্যের কথা ভাবতে পারতাম না। সামনে নীচে যতদূর চোখ পড়ে মেঘের বিশালতা। তার ফাঁকে ফাঁকে দ্বীপ, সমুদ্র, আর বাকী পৃথিবী। প্রথমেই প্রাণেশ্বরকে মনে মনে প্রণতি জানিয়ে নিয়েছিলাম এমন একটা দৃশ্য চাক্ষুস করার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে বলে। কত্তদিন, কত্ত কত্তদিন এমন একটা পাহাড়ের চূড়ার উঠে মেঘদেখবার জন্য ভেতরটা ছটপট করেছে সে একমাত্র আমিই জানি। কিছু পর যখন মেঘের হিমহিম ছোঁয়া শরীরে পরশ ভুলিয়ে দিয়ে গেল তখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না সত্যি সত্যিই আমি মেঘকে এমন করে আমার সমস্ত অন্ত:করণ দিয়ে অনুভব করছি...সেই মুহূর্তটাকে শুধু অনুভূতি দিয়েই পরখ করা যায়। পৃথিবীর কোন শব্দ নেই তার ঠিকঠিক বর্ণনা করে। এই এখন লিখতে বসে মনে হচ্ছে অনুভূতির সেই দুর্লভ মুহূর্তটা ফিরে ফিরে পাচ্ছি। আরেকটি মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে। সাগরের তীরে বালুর উপর খালি পায়ে দাঁড়ানো আমি আর ঠান্ডা ঠান্ডা আটলান্টিকের জল যখন আমাকে একটু পর পর ছোঁয়ে ছোঁয়ে যাচ্ছিল। অসাধারণ সেই অনুভূতিটাও। মন মনে হচ্ছে বহুদিন পর স্নিগ্ধতার একটা ডুব মেরে উঠেছে প্রতিদিনকার কর্মব্যস্ততার মাঝ থেকে।

অর্ণবের "হারিয়ে গিয়েছি" গানটা শুনছি কদিন ধরে। বেশ লাগছে।

"...হারিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই এইখানে...হারিয়ে গিয়েছি এই তো জরুরী খবর..." ♩ ♪ ♫ ♬










সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:৪৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×