৯-১০ ঘণ্টা অফিসের পর মিটিং হয়, মেয়েদের মাসিকের মতো মান্থলি মিটিং; কোনমাসে রক্তপাত বেশি কোন মাসে কমের মতো কোন মিটিং এর সময়কাল বেশি আর কোনদিন প্রলম্বন একটু কম ঘটে। মাঝে মাঝে আবার প্রধান কার্যালয় থেকে পাল্লুদের আগমন ঘটে। ৫বছর ধরে একই কথা শুনছি - আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে হবে, আমানত বৃদ্ধি করতে হবে, সেবার মান বাড়াতে হবে। ঢাকা শহরে মানুষ কয়জন? কয়জনকে ব্যাংকের ছাতার নিচে আনা যায়? বিরক্ত লাগে। এক ছাগলের বাচ্চা বলে আমরা না কি রেলী (বানানটা লিখতে পারছি না, য ফলা নিচ্ছে না) বের করব, আমাদের ব্যাংককে পরিচিত করতে! অফিস আওয়ারের পর এক দু ঘণ্টা রাস্তায় রাস্তায় হাঁটব গ্রাহক বাড়াতে। বাসায় আসি ছটারও পরে। আর অফিসের লোকদের সাথে শুয়ে গেলে পারি অথবা গ্রাহকদের সাথে; ঐটাই ফ্যামিলি কি না! একটা মোজা কিনতে গেলেও না কি ভোলা যাবে না আমি ব্যাংকার, দোকানদারদের সাথে সখ্য করতে হবে। চাকুরীই জীবন চাকুরীই মরণ। অনেকে শুক্রবারেও মার্কেটিং এ বের হয়। হিসাব। সাপ্তাহিক শোয়ার হিসাবও এক্সেলে শিট্ বানিয়ে করতে হবে। কোন এক ব্যাংকে একই ডিপার্টমেন্টের দুজন মেয়ে প্রায় কাছাকাছি সময়ে প্রেগনেন্ট হওয়াতে এক শাখা ব্যবস্থাপক তাদের ডেকে নিয়ে বলেছে আমার যাতে ব্রাঞ্চ চালাতে সমস্যায় পড়তে হয় তাই তোমরা প্ল্যান করে এই কাজ করেছো! কে কখন লাগাব বা প্রেগন্যান্ট হব তার রোস্টারও ব্যাংককে বছরের শুরুতে জমা দিয়ে দেবার বিধান করলেই হয়। টার্গেট টার্গেট শুনতে শুনতে বিবমিষা লাগে।
১৫কোটি মানুষের মধ্যে ৫কোটি মানুষও ব্যাংকিং করে না। আমরা বেশিরভাগ মানুষকে ব্যাংকিং করার যোগ্য বলেই বিবেচনা করি না। সেবা সেবা, কিসের সেবা! ফালতু চার্জ কাটা, লোনের উচ্চ মাত্রায় সুদ, তেলা মাথায় তেল দেয়া, এসব করে এখানে ব্যাংকগুলো বেঁচে আছে। এরা (আমিও) যখন সেবার কথা বলে তখন আমার ভীষণ হাসি পায়। একটা চাকরীই তো করে এক একজন। এর বাইরে আর কোন পরিচয় নাই। সেই কবে মাস্টার্স পাস করছে তারপরে আর পড়াশুনা নাই। এখনকার পোলাপান আবার অনেক স্মার্ট। অধিকাংশ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রোডাক্ট বিবিএ এমবিএ করা-এমবিএ তে কি হয় বলতে পারে না। কিছু প্রোডাক্ট অবশ্য আসলেই ভালো।
আমার মনটা আজকে অনেক বিক্ষিপ্ত। এই পেশাটা আমার সব কেড়ে নিলো, শান্তিপূর্ণ ঘুম, প্রেমের সময়, ভাবার সময় সব। কোন বিকল্প ও খুঁজে পাই না। গত ২বছরে একটা ছোট গল্প লিখতে পারিনি। কত প্লট মাথায় বাসায় ফিরে এত শ্রান্ত থাকি আর হয়ে উঠে না। আমার আর শিল্পী হওয়া হলো না। গান ভুলে গেলাম। লিখতে ও ভুলে যাচ্ছি।
আমি তাহলে নরমাল হয়ে যাচ্ছি, হাহ হাহ...আমিও অফিস যাব, বাসায় ফিরব, সঙ্গম করব, বাচ্চা বিয়াবো, বাচ্চার স্কুল - জামাই চক্রে বন্দী হব।
আমি সবকিছুর মুখে পিসাব করি।
