somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিমলা দর্শন

১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘‘আহারে পাহাড়ে – গরীবের শিমলা দর্শন’

অবসরে অনেক ওয়েস্টার্ন বই পড়েছি, সেখানে যে বনের কথা প্রায়ই পড়তাম তা হল পাইনের বন। সেই পাইনের পিছনে লাল সূর্য্ টাকে হারিয়ে যেতে দেখতে দেখতে আমরা শিমলা স্টেশনে এসে নামলাম। শিমলা, ছবি আঁকা এক শৈলশহর। আদ্যোপান্ত ব্রিটিশদের হাতে গড়া। পাইন আর ধুপির ছায়ার মোড়া। ট্রেন থেকে নেমে আড়মোড়া ভেঙ্গে চারদিক দেখতে লাগলাম। শিমলা স্টেশন থেকেও ভাল ভিউ পাওয়া যায়।

যথারীতি দালালের দল এখানেও আছে। oyo.com এর মাধ্যমে হোটেল বুক করা ছিল তাই দালালদের পাত্তা না দিয়ে বাইরে যাওয়ার উপায় খুজতে লাগলাম। মনে প্রাণে আমি একজন ব্যাক প্যাকার কিন্তু ছোট্ট ছেলের কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম । বাসে করে বা হেটে হেটে যাওয়ার ইচ্ছা শিকেয় তুলে গাড়ির খোজ করলাম। 150 রপিতে হোটেলে নামিয়ে দিবে আমাদের চারজন কে । হেটেলে ফরমালিটিস শেষ করে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হলাম ততক্ষনে একটা দুটা করে বাতি জ্বলে উঠেছে। আমাদের হোটেল টা ছিল Hotel Basant, Cart Road/Old bus Stand Road এ । রুম ভাড়া 1200 রুপি ছিল। আমরা হেটে ম্যালের দিকে যেতে লাগলাম উদ্দেশ্য রাতের খাওয়া আর আমার জন্য শীত বস্ত্র কেনা ( তেমন কোন শীত বস্ত্র ছাড়াই আসলে গিয়েছিলাম) আর রাতের খাওয়া সেরে নেওয়া। লিফটে টাকা দিয়ে ম্যাল রোডে উঠলাম। মুলত ম্যাল টা হল অভিজাত মার্কেট এরিয়া। অনেক গুলি ব্রান্ড শপ দেখলাম।

আমি বিভিন্ন ভ্রমন ব্লগে খোজ নিয়ে মুসলিম বা হালাল খাবারের ☺ হোটেল খুজে যা পেয়েছিলাম তা হল ম্যাল রোডের নিচে জামে মসজিদের ওখানে মুসলিম খাওয়া-দাওয়া পাওয়া যাবে। অনেক সিড়ি ভেঙ্গে যা পেলাম সেটা আর বলার মতন না। তাই আমিও ওখান থেকে লোয়ার বাজারের দিকে চলে আসলাম। একটা জ্যাকেট কিনলাম আর খুজে ফিরে একটা চাইনিজ রেস্তোরাতে ঢুকলাম। খাবারের অডার দিয়ে আতশবাজির রোশনাই দেখতে লাগলাম- পরের দিন ছিল দিওয়ালি- চারিদিকে একটা উৎসব উৎসব ভাব অনেকটা আমাদের চাঁদ রাতের মতন।

রাতের খাবার খাওয়ার আগে শিমলা-মানালি ঘোরার জন্য গাড়ি ঠিক করে ফেললাম 04 দিনের জন্য ৭৫০০ রুপি(রোথাং পাসের খরচ সহ)। রাতের খাবার ভালই ছিল খরচও কম বিল কাউন্টারে ওরা মম বানাচ্ছিল দেখে আমার ছেলে ছো মেরে একটা নিয়ে কামড় বসিয়ে দিল এবং আমাদের অবাক করে দিয়ে সে ওটা খেয়ে ফেলল, দোকানী মমর জন্য বিল নিতে রাজি হল না উপরুন্ত আমার ছেলে কে আরও খাওয়ার জন্য বলল কিন্তু ছেলে আর খেল না। রাত ৯টা রাস্তাঘাট মোটামুটি মানবশুন্য তবে বানর পূর্ণ্ । দোকানদারের বলে দেওয়া পথে বানর এর হাত থেকে বেচে হোটেলে ফিরে আসলাম। কাল হবে শিমলা দর্শন।

গাড়ি সকাল ৮.৩০ এ হোটেলের সামনে চলে আসল-ড্রাইভার যোগেশ জি। আজকের প্লান লোকাল সাইট সিয়িং(গ্রীন ভ্যালি- এডভেঞ্চার পার্ক্-ফাগু বা হাগু ভ্যালী- জাখু মন্দির-ম্যাল রোড/রিজ)। প্রথমে গেলাম গ্রিন ভ্যালী। রাস্তার পাশে বিস্তীর্ন্ এলাকা জুড়ে পাইনের বন সবুজ আর সবুজ। যদিও পুরো শিমলাটাই সবুজের ছড়াছড়ি। এরকম একটা পাহাড়ের ঢালে গাড়ি পার্ক করা হল- এটাই হল গ্রীণ ভ্যালী। কিছু শাল-চাদরের দোকান সাথে কিছু হাবিজাবির দোকান ছিল আর ছিল দুরবীন। দুরবীন দিয়ে দুর একটা ভ্যালী দেখাচ্ছে যেখানে সোনি দেওল কি একটা ছবির শুট্যিং করেছিল, খরচ ১২০রুপি। আমরা অবশ্য আমাদের দু চোখের দুরবীণ দিয়ে যা দেখার দেখলাম কিছু ছবি তোলা হল ব্যস পরের গন্তব্য শিমলার মাউন্টেন চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় ঢুকলাম না কারন ঢুকলে আমার ছেলে সারাদিনে আর বের হবে না। এমনিতে কালকা মেইল আমাদের ১টা দিন নষ্ট করে ফেলেছে তাই আর সময় নষ্ট না করে ছুটলাম এডভেঞ্চার পার্ক এ।

টিকিটের দাম আমার কাছে বেশি মনে হল আর আমরা শিমলার রুপ আস্বাদনে বের হয়েছি তাই এটাকে এড়িয়ে চললাম ফাগু ভ্যালি তে। এসে দেখি এলাহি কান্ড। ঘোড়া ঘোড়া আর তার পিঠে আমাদের মতন গাধা। শিমলা যাবার আগে এক ভ্রমন ব্লগে পড়ে জেনেছিলাম নিচ হতে উপরে উঠার পথ টা খুব বাজে অর্থাৎ এবড়োথেবড়া মার্কা এবং ঘোড়ার গায়ের গন্ধে সেটা আরও উৎকট মনে হল। যাই হোক ঘোড়ায় উঠতে হলে ৫০০/- জন প্রতি লাগবে (অবশ্য দামাদামির সুযোগ আছে)। মেয়ে সদস্যরা জানাল তারা জ্বান হাতে নিয়ে ঘোড়ায় উঠবে না তারা গাড়িতেই ওয়েট করবে। অগ্যতা আমি আর নিজাম ভাই ঘোড়ার গুল্লি মেরে আমাদের দু-পেয়ে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে চড়াই উৎরাই পেরোতে লাগলাম। পথে যেতে যেতে ঘোড়সওয়ার ও ঘোড়সওয়ারীদের কে দেখে একটা প্রবাদ মনে হল- ঘোড়ায় চড়িয়া মদ্দ হাটিয়া চলিল। যা হোক ৩০ মিনিটের মতন লাগল উপরে উঠতে। সেখানে আবার টিকিট কাটতে হয় ভ্যালি তে প্রবেশের জন্য। টিকিট কেটে ঢুকলাম ভিতরে পাহাড়ি গরু আছে সাথে ছবি তুলার জন্য টুপি-বন্দুক-লাঠি ইত্যাদি।

গরুর পিঠে ছবি তুললাম তার পর আরও সামনে অগ্রসর হলাম। এখানে কিছু অস্থায়ী দোকানপাট বসেছে বারোয়ারী পণ্য নিয়ে। হাটতে হাটতে এককাপ চা নিয়ে সামনে এগোলাম। এখানেও বানরের কারিশমা চলছে। এক দোকান থেকে একটা সোয়েটার নিয়ে চম্পট দিল- পরে অবশ্য দোকানী এক প্যাকেট নুডুলস এর বিনিময়ে বানরের সাথে শান্তি চুক্তি করল। ভ্যালির একদম সামনে কিছুটা অংশ দড়ি সামিয়ানা ইত্যাদি দিয়ে আলাদা করা আছে। সেখানে আবারও দুরবীণ কাহিনী। এখানে দুরবীন দিয়ে দেখাচ্ছে আপেল বাগান☺ আর পাহাড় শ্রেণী ইত্যাদি। শিমলার ধারে কাছে আপেল বাগান নেই, আছে সেই কাঠগড়-এ। আর আপনি যদি মানালি যাবেন বলে প্লান করে থাকেন তাহলে আপেল বাগানটা ওখানেই দেখে নিবেন। এখানে ৩০০

রপি খরচ না করাই উত্তম। যাহোক আমাদের সাইট সিয়িং প্রা্য় শেষের দিকে। এবার গেলাম এই দিনের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাতে । জাখু টেম্পল। জাখু টেম্পলের ইতিহাস গুগলেই পাবেন। আমি ইতিহাস পাড়লাম না। ওখানে যেতে যেতে আমার ছেলে ঘুমিয়ে পড়ল। বাধ্য হয়ে আমি প্রথমে গাড়িতে বসে রইলাম। অন্যরা গেল উপরে যেখানে বিশাল একটা হনুমানজির মূর্তি স্থাপিত করা আছে। চারিদিকে বানর আর বানর (একটাও হনুমান দেখলাম না)। এখানে গেলে চশমা-টুপি-ক্যামেরা-পার্স ইত্যাদি সাবধানে রাখতে হবে না হলে বানর বাবাজি থাবা মেরে যা পাবে নিয়ে চম্পট দিবে। পছন্দের খাবার না দিতে পারলে জিনিস ফেরৎ

পাওয়ার আশা করাই বৃথা। (আপনারা দু-একটা জুস নিয়ে উঠতে পারেন, দরকার পড়লে ব্যবহার করবেন না হলে নিচে নেমে আপনি সাবাড় করবেন।) উপরে একটা লন আছে যেখানে বসলে শিমলার নান্দনিক

ভিউ পাবেন। অনায়াসে ২/৩ ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন। শিমলা চার্চের পাশ দিয়ে পায়ে হাটা পথ আছে সেখান দিযেও উপরে উঠতে পারবেন যদি আপনার হার্ট শক্ত হয় তো! আমার হার্ট যথেষ্ট শক্ত কিন্তু হাটু দুর্বল তাই ছেলেকে নিয়ে আবার গাড়িতে করেই নেমে আসলাম নিচে সেই লিফটের কাছে। জম্পেশ ফলের পসরা সাজানো ছিল টপাটপ ২ প্লেট সাবাড় করলাম। ভালই লাগল। উপরে উঠে সোজা কেএফসিতে ঢুকলাম। পেট পুজা সেরে ম্যার রোডের এমাথা ওমাথা করতে লাগলাম। আসলে আপনি যদি একটু আলসে প্রকৃতির হোন তবে ম্যালের পাশে যে বেঞ্চ গুলি আপনার জন্য আদর্শ। শুধু একটা ক্যামেরা আর একটা সানগ্লাস চোখে দিয়ে বসে বসেই দেখতে থাকুন ন্যাচারাল বিউটি আর বিউটিফুলদের ☺♥♥♥। অসাধারন – অনবদ্য-অবিস্মরনীয় কিছু মুহূর্তের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে বিকালটা।

আমরা এভাবে রাত প্রায় ৮ টা পযন্ত রিজে সময় কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম।
রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম- পরের গন্তব্য মোহময়ী মানালি। ড্রাইভার সকাল ৮ টায় আসবে, সো দেরি করার কোন সুযোগ নাই ২৬০ কিলো পাহাড়ি রাস্তা- ইটস গোয়িং টু বি এ লং ডে।

পুনশ্চঃ শিমলায় লোকাল ট্যুর প্লান যেটা এজেন্সিগুলি দিয়ে থাকে সেটা আমার কাছে ভাল লাগে নি (কুফরি-ফাগু-জাখু)।
আমার মতে শিমলায় দেখার অনেক কিছুই আছে, যেমন;
• ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ
• অবজারভেটরি হিলস
• সামার হিলস
• চ্যাডউইক ঝর্না
• মন্দির গুলি
• আনানডেল রেসকোর্স
• শিমলা মিউজিয়াম
• তত্বাপানি (উò পানি), রাফটিং
• কাঠগড় ( আপেল বাগান)
• এবং কয়েকটি রিজার্ভ ফরেস্ট)
এগুলো আপনাদের ম্যানেজ করে দেখতে হবে।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কওমী মাদ্রাসায় আলেম তৈরী হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×