somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পেলাম যাদের বন্ধুতা

০১ লা আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সোহেল কাদের। এক সময়ের তুখোড় আড্ডাবাজ ছেলে। চিটাগাং শহর দাবড়িয়ে বেড়াতাম আমরা ৩ জন। সোহেল তার চাচার কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। সেটা ছিলো জিইসি’র মোড়ে। কম্পিউটার হোম। আমি তখোন চিটাগাং চাকুরী করি। একদিন ঢাকা থেকে বন্ধু শাহাদাত উদরাজী গিয়ে আমার অফিসে হাজির। ফেনীর ছেলে। বাসা থেকে রাগ করে বেরিয়ে পড়েছে। কম্পিউটার খুব ভালো জানে। ওর একটা চাকুরী প্রয়োজন। ব্যাগ থেকে ২/৩ টি বায়োডাটাসহ আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমেই কম্পিউটার হোম-এ। সেখানে পরিচয় সোহেলের সাথে। উদরাজীর চাকুরী হয়ে গেলো কম্পিউটার হোম-এ, প্রশিক্ষক হিসেবে। সেই থেকে আমাদের ৩ জনের বন্ধুত্ব।


আমরা ৩ জনই তখোন দু’হাত খুলে লিখতাম, বিভিন্ন পত্রিকায়। বছর খানেক বাদে আমরা দুজন চলে এলাম ঢাকায়। সোহেল রয়ে গেলো চিটাগাং। তারও বছর তিনেক পর উদরাজী চলে গেলো বিদেশে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। সোহেলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। সোহেল বিয়ে করলো। ওর বৌ নাসরিন। ডাক্তার। ২০০০ সালে সোহেল পরিবারশুদ্ধ চলে গেলো আমেরিকাতে। এক দুই বছর যোগাযোগ ছিলো। তারপর...! মাস ছয়েক আগে সোহেলকে আবিষ্কার করলাম, ফেসবুকে। জুলাইতে দেশে এলো সোহেল। এক সপ্তাহের জন্য। তার মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। শেষ দেখা দেখে গেলো। ওর সাথে দেখা হলোনা আমার। মোবাইলে কথা হলো- দীর্ঘ সময় ধরে। একবারও মনে হয়নি ৯ বছর বাদে ওর সাথে কথা বলছি। কোথাও সম্পর্কে ছেদ পড়েনি। দু ছেলের বাপ সোহেল। সুখেই আছে।


৯৬ সালের শেষের দিকে আমার বিয়েতে হাজির উদরাজী। ওকে দেখে ভয়াবহ খুশি হই। আমার গায়ে হলুদ থেকে বৌ ভাত পর্যন্ত সব অনুষ্ঠানেই ওর সরব উপস্থিতি আমাদের পরিবারের অন্যদের মুগ্ধ করেছে। কীভাবে খবর পেলো ? আমরা ফার্মগেটে যেখানে দীর্ঘদিন আড্ডা দিতাম সেখানে গিয়ে জেনেছে- আমার বিয়ে। সোজা চলে এসেছে কুমিল্লাতে। উদরাজী এখন বেক্সিমকোতে। ঢাকায়। এক ছেলের বাবা। রামপুরাতে থাকে। একরত্তি বদলায়নি সে। কথা হয়, দেখা হয় নিয়মিত।


আমার বালবন্ধু মনু’র জীবনে একটাই স্বপ্ন ছিলো- জাপান যাবে। ৯১ সালে চলেও গেলো। প্রথম বছর খানেক চিঠি লেখালেখি হতো। তারপর ম্যালাদিন আর দেখা নেই। আমার বিয়ের সময় আমার জন্য একটা নাইকন ক্যামেরা পাঠিয়েছিলো। যার কাছে দিয়েছে, সে ক্যামেরাটা মেরে দিয়েছে। গত বছর ফিরে এসেছে দেশে। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে এসেই আমাকে ফোন করেছিলো। দু বন্ধু কোলাকুলি করে হৃদয়ের উত্তাপটা নিলাম। কে বলবে, আমাদের দেখা হয়েছে ১৭ বছর পর। ফোনে বিয়ে করে বৌ নিয়ে গেছে জাপানে। তারপর, ৪/৫ বছর পর তার বৌ ফিরে এসেছে দেশে। সাথে ওদের মেয়ে মোহনা। স¤প্রতি মনু আরেকটি কইন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে। ২/১ দিন পর পরই ওর সাথে কথা হয় ফোনে। ও থাকে ঢাকার বাইরে।


আমার স্কুল জীবনের আরেক বন্ধু বাসু। আমি গ্রামের বাড়িতে গেলে ওর বাসাতেই উঠি। চাকুরী করে। জেলা অডিট অফিসে। অডিটর। আমার সকল সুখ আর সামান্য ছিটেফোটা দুঃখগুলো ওর সাথে শেয়ার করি। বাসুও তাই করে। বাসুর দুই মেয়ে। ইতু আর যুথি। বৌকে নিয়ে বেশ সমস্যায় আছে বেচারা। সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন হচ্ছে তার বৌ। তার সারাদিনের কর্মসূচি হচ্ছে- সকালে ঘুম থেকে উঠে এক থালা ভাত খাবে। তারপর টিভি ছেড়ে দিয়ে একটার পর একটা হিন্দি সিরিয়াল দেখতে থাকবে। মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে দেবে বুয়াকে দিয়ে। ঘরের সকল কাজ বুয়া করে দেবে। মেয়েরা ফিরলে একসাথে দুপুরের খাবার খাবে। আবার খাটে শুয়ে টিভি দেখবে। খাট থেকে সে নামেই না। ভুল বললাম, নামে... শুধু বাথরুম করার জন্য। স¤প্রতি তার ওজন কমেছে। এখন ৯২ কেজি। আগে ছিলো ৯৪ কেজি...


মিলনের দুই বোন ছিলো আমার ক্লাসমেট। ইয়াসমিন আর মাজু। ওদের সাথে যতোটা বন্ধুত্ব হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি মিলনের সাথে। সেটা ৮৩ সালের ঘটনা। তারপর সময় আগায়। আমাদের বন্ধুত্বও পাকে। স্কয়ারের আমার এ কলিগের ছোট বোনের সাথে মিলনের বিয়ে হয়। সে বিয়ের উকিল বাপ ছিলাম। তার বৌ রুমা। মিলনের সাথে দারুন জুটি ছিলো। বিয়ের ক’বছরের মাথায় সংসারের একমাত্র ছেলে মিলনকে তার বৌ আলাদা করে ফেললো। ওরা ঢাকাতেই আছে। একা মিলনের মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। বছরে এক দু’বার মিলন মায়ের খোঁজ নেয়। না নেবার মতো। ওর দুই মেয়ে। প্রাপ্তী আর প্রকৃতি। রামপুরায় থাকে মিলন। টাকা-পয়সা-সংসার সবই আছে ওর, শূধূ সুখ নেই। বেচারা মিলন, ওর জন্য বড় মায়া হয় আমার !


মুজিবের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় ঢাকাতে। আমি আর ও তখোন একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে তেমন কিছু না বুঝলেও দু’জন দু’জনকে বুঝে ফেলি তাড়াতাড়ি। তারপর কতো শতো ঘন্টা আমরা একসাথে কাটিয়েছি, তার ইয়ত্তা নাই। এখনও সুযোগ পেলে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেই। সর্বশেষ তার বাসায় গিয়েছিলাম গেলো বৈশাখের প্রথম দিন। ওর সাথে দেখা হলে মনে হয় কালইতো দেখা হয়েছে...। মুজিবের সাথে আমার চমৎকার বোঝাপড়া। চাকুরী করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে। দুই পুত্রের জনক।


শিল্পী বিপুল শাহ আর রাশেদের সাথে সম্পর্ক ৯৭/৯৮ সালে। জাহিদ রেজা নুরের সাথে সখ্যতা হয় প্রথম আলোতে। ২০০২ সালে। ভারী চমৎকার মানুষ। গত ২ বছরে ধরে সম্পর্ক চ্যানেল আইয়ের শান্তনুর সাথে। ওকে আমি যতোটা পছন্দ করি, ঠিক ততোটাই অপছন্দ করি। শান্তনুর সাথে আমার সম্পর্কটা অমিমাংশিত। গিয়াসের সাথে পরিচয় সেই ভোরের কাগজ থেকে। তারপর ভোরের কাগজ ছেড়ে প্রথম আলো। আমাদের কতো শতো দিন একসাথে পথচলা। চা- আড্ডা- বিড়ি খাওয়া- সারা দেশময় ঘুরে বেড়ানো...। বন্ধু থেকে ছোট বোনের স্বামী। গিয়াস এখন দেশ টিভিতে। ওর মতো সৎ সাংবাদিক আমি খুব কম দেখেছি। ভোরের কাগজ > প্রথম আলো > যায়যায়দিন > ইটিভি ছেড়ে ও এখোন দেশ টিভিতে। স¤প্রতি আরো দু’একটি মিডিয়া হাউজের সাথে ওর কথা হচ্ছে। সহসাই হয়তো দেশ টিভিও ছেড়ে দেবে। এ ছাড়া বিশ্বময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমার কিছু বন্ধু....।


সামহয়ারের বন্ধুদের কথা আজ বলবো না। অন্য কোনোদিন, অন্য কোনো প্রসঙ্গে বলবো...। আমার বন্ধুরা সুখে থাকো। ভালো থাকো তোমরা। আজ বাদে কাল বন্ধু দিবস। এদিনে তোমাদের স্মরণ করি অন্তর থেকে।
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×