somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষক বনাম ছাত্র

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারা দুনিয়াতে শিক্ষক-ছাত্র ভালবাসা বিরাজমান। বাংলাদেশে ৮০-৯০ এর দশকে এরকম অনেক ঘটনা শুনেছি এবং দেখেছি। যখন নিজে ছাত্র ছিলাম তখন ব্যাপারগুলো ঘটলে ছাত্রকেই বোকা মনে হত। আর যখন নিজেই রসায়নের শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছি দু-একটা ঘটনার শিকার নিজেও হয়েছি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই একবিংশ শতাব্দীতে এর কোন বেতিক্রম নেই সারা বিশ্বে। খোদ আমেরিকাতে নিজ ছাত্রের সাথে সম্পর্কের কারনে প্রতি বছর অনেক শিক্ষককেই চাকুরী ছাড়তে হয়। এমনকি অভিযোগ প্রমান হলে আমেরিকা থেকে বের করে দেয়া ভিনদেশী শিক্ষকদের। এমন উদাহরণ নেই এমন বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকাতে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। শিক্ষকের গুণগত মান ঠিক রাখবার জন্যই আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রতি সেমিস্টার পরে ছাত্রদের সুযোগ দেয়া হয় তার শিক্ষককে মূল্যায়ন করার। এ ছাড়াও তারা তৈরি করে নিয়েছে http://www.ratemyprofessors.com/ মত ওয়েবপেজ যেখানে একজন ছাত্র তার শিক্ষকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

ছাত্র-শিক্ষক অঘটনগুলোর প্রধান কারণ দেখা যাবে শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের অন্ধ ভালবাসা। এই ভালবাসার অনেকটাই তৈরি হয় শিক্ষকের মেধার জন্য , যা খুব সহজেই মোহিত করে তোলে অপেক্ষাকৃত কম মেধাসম্পন্ন ছাত্রদের। মেধাশুন্য শিক্ষকেরা হয়ত জানেন না কিভাবে ছাত্রদের মন জয় করা যায়। এই মোহই ছাত্রদের তাদের শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে নিতে উৎসাহিত করে। আর বিচক্ষণ শিক্ষক যদি এই অন্ধ ভালবাসার অপবেবহার করেন তবেই ঘটে মহাবিপদ।

১৯৯৩ সনে কলেজ পাশ করে বুয়েটে ভর্তি হতে দেশের নামকড়া কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলাম। অসম্ভব মেধাবী কিছু শিক্ষকের সাক্ষাৎ হয়েছিল যারা মুহূর্তের মাঝে সমাধান করতে পারতেন জটিল সব পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গানিতিক প্রবলেমগুলো। তাদের মত প্রবলেম সমাধান করার জন্য তারা সরবরাহ করত ক্লাস শেষে চিট শিট। কখনই তাদের বেক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ক্লাসের কিছু অন্ধভক্ত বন্ধু ছিল যারা সরাসরি কোচিং এর ভিতরে ও বাহিরে মেধাবী শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। ওই শিক্ষকেরা তাদের কাছে ছিল সুপার হিরো। একজন হিরো কোনভাবেই অন্যায় কাজ করতে পারে না, এমনকি তাতে সম্মতিও দিতে পারে না। তাদের নিজস্ব পলিটিকাল মতামত ছিল এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। তাদের মেধার কারনেই তারা খুব সহজেই দলে টেনে নিতে পেরেছিল অতি উৎসাহী নুতন মুখগুলোকে। তবে তাদের সফলতার হার শতভাগ ছিল তা বলা ভুল হবে। বিচ্ছিন্ন কয়েকজনের কাছ থেকেই জানতে পারতাম অতি মেধাবী শিক্ষকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ।


সংগ্রহীত ছবি

একদা মুঘল সম্রাট আউরেংজেব তার পুত্রকে দিয়ে শিক্ষকের পায়ের পাতা ধুইয়ে শিক্ষকের মর্যাদা বাড়িয়েছিলেন। ঘটনাটি কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়েছিলেন কাজি কাদের নেওয়াজ- যা জাতির নিকট শিক্ষকের মর্যাদার উদাহরণ। এই কবিতা থেকে একজন ছাত্রের জীবনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকাকেই সম্মানিত করা হয়েছে। একজন ছাত্রের সফলতার দায়িত্ব যেমন একজন শিক্ষকের উপর বর্তায় তেমনি একজন ছাত্রের নৈতিক অবক্ষয়ে শিক্ষকের দায়িত্ব উপেক্ষা করা অসম্ভব।

আজ বাংলাদেশের এই ভয়াবহ জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মেধাবী ছাত্রদের জড়ানোর কারণ হিসেবে গুটিকয়েক কোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সন্দেহের তালিকায় উঠে আসছে। প্রায় দুই যুগ পূর্বে বাংলাদেশের পরিস্থিতি থেকে বর্তমান পরিস্থিতির আন্দাজ করাটা হয়ত সথিক হচ্ছেনা। তবে এতটা অনুমান করা যায় দেশের অতি মেধাবী শিক্ষকদের মতাদর্শের পরিবর্তন হয়েছে। এই শিক্ষকরাই হয়ত দায়ী বর্তমান তরুণ সমাজকে জঙ্গি কর্মে উৎসাহিত করার জন্য। ছাত্রদের এই অবনতির জন্য শিক্ষকরুপী অভিবাবকরা দায়িত্ব এড়াতে পারে না, যাদের উপস্থিতিতেই গড়ে উঠেছে অন্ধবিশ্বাসী জঙ্গি দল। এই অন্ধবিশ্বাসী মূর্খদের মেন্টরদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হয়ত বের হয়ে আসবে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর। মুখশধারী অতি মেধাবী এই শিক্ষকেরাই জাতির এই পরিস্থিতির কারণ। জাতির অভিভাবক হিসেবে তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা দরকার তাদের উদাসীনতার জন্য।

ছাত্রদের পাশাপাশি শিক্ষকেরদের কর্মকাণ্ডেরও হিসেব রাখা অতি প্রয়োজন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রদের মাধ্যমে শিক্ষকদের বাৎসরিক মূল্যায়ন করা অতি জরুরী যা হবে মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে এবং ছাত্রের নাম সম্পূর্ণ গোপন রেখে। এতে হয়ত বের হয়ে আসবে জঙ্গি সৃষ্টির গোপন কর্মকান্ড।

খুব শিগ্রই হয়ত আমাদের দরকার হবে rate my teacher এর মত rate my friend/colleague মত কিছু ওয়েবসাইটের।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৬:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×