somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিকরা মানুষ, শিক্ষকরা নন

২৮ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত ২৬ তারিখ আগারগাঁওয়ে মহিলা পলিটেকনিকে ছাত্রীদের সড়ক অবরোধের সময়ে ছবি তুলতে যেয়ে তিনজন সাংবাদিক পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হন । সরকার নাকি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সদের পদবী ২ থেকে ৩ এ নামিয়ে দিয়েছে আর সে জন্যই ছাত্রীদের এ প্রতিবাদ।সরকার অবশ্য এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা অস্বীকার করেছে। দেশের আরও কিছু ইনস্টিটিউটেও আন্দোলনের খবর হয়ত পাওয়া গেছে ।পুলিশের অতি তৎপরতার কারনে ছাত্রীদের আন্দোলন হাইলাইটেড হয়েছে বা সাংবাদিকরা আহত হয়ে ছাত্রীদের আন্দোলনের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে , দুটির যেকোনোটিই হতে পারে। আমার লিখার বিষয় এর কোনটিই নয়।

আর একটি ঘটনা হল বহু দিন ধরে বেসরকারি প্রাইমারি শিক্ষকরা তাদের চাকুরি টিকে রেগুলার করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আন্দোলন করছিলেন , এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা গত ১৫ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে স্মারকলিপি দেবার জন্য শান্তিপূর্ণ ভাবেই অগ্রসর হবার সময় শাহবাগে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে জল কামান এবং বেদম লাঠিচার্জ করে । অনেক শিক্ষক আহত হয়েছিলেন । একজন শিক্ষক পরে পরে মারা গিয়েছিলেন । উনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধাও।

দুই ঘটনায় পুলিশ জড়িত । শাহবাগের ঘটনাটিতে শিক্ষকদের উপর পুলিশের নির্মম অংশগ্রহন এবং সে সম্পর্কিত পত্রিকায় ছবিগুলো আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। পুলিশ,মন্ত্রি,আমলা থেকে শুরু করে আমরা যে কেউই আমাদের জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরুদের বা যাদের কাছে আমরা পাঠদান পেয়েছিলাম বা পেয়ে থাকি তাদের শ্রদ্ধার আসনেই রাখি।এ অনুভূতিটাই আমাদের শান্তি দেয়। এটাই তো মূল্যবোধ ।

শাহবাগের ঘটনায় পুলিশের কিচ্ছু হয়নি আর পলিটেকনিকের ঘটনায় ছজন পুলিশ বরখাস্ত হয়েছেন সাময়িক ভাবে। তার মানে টা কি ? মানে সাংবাদিকরা শিক্ষকদের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ(তাও আবার একটি শীর্ষ দৈনিকের সাংবাদিক বলে কথা) । না হলে দুটি ঘটনায় সরকারের দু রকম আচরণ হবে কেন ?পুলিশের এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন মস্তিস্কগুলো আবার আহত সাংবাদিকদের দেখতে গিয়েছেন ,সান্তনা জানিয়েছেন।আর অন্যদিকে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। হায়রে মূল্যবোধ , তুই কোথায় ?

তবে এটাই মনে হয় ঠিক। সাংবাদিকেরাই তো গুরুত্বপূর্ণ । উনারা আপনার ঢোল বাজাবেন আবার প্রয়োজন মতো ঢোল ফুটোও করে দিতে পারেন । তাই তো এনারা গুরুত্বপূর্ণ । কোথাকার কোন শিক্ষক সরকারকে নাড়াবে, প্রশ্নই আসে না । মূল্যবোধের এই দেউলিয়াপনা আমরা রাষ্ট্র যন্ত্র থেকেই শিখি। এজন্যই দুর্নীতি হয়, স্বজনপ্রীতি হয় , সব অনিয়ম দেখেও আমরা চোখ বুজে থাকি।

আশির দশকের শেষে আইএসএসবি(সামরিক বাহিনিতে ভর্তি) পরীক্ষার নিমন্ত্রন পত্র পেয়েও যখন অংশগ্রহণ করি নি তখন আমার এক কাছের আত্মীয় বলেছিলেন বাবা ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে গেলে না, টিকেই তো যেতে , দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারতে। তখন দেশের সামাজিক বাস্তবতায় (জিয়া এবং পরে এরশাদের প্রতাপ দেখার পরে) ওনার এ বক্তব্যটাই ছিল স্বাভাবিক । ওনার এ উপলব্ধিটা সে সময়কার বিদ্যমান নীতিহীনতাকেই দেখায়। আর এখনকার বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় এখন থেকে শিক্ষক পেটানকেই স্বাভাবিক ধরে নেয়া হবে।

যে সরকারটি পরিবর্তনের কথা বলে ক্ষমতায় এসে কেবল নিজেরই অবস্থার পরিবর্তন করে, যে পত্রিকাটি বদলে দেবার কথা বলে বিদ্যমান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়কে চালু রাখে , যে সাংবাদিকরা ব্যক্তিগত লাভক্ষতির কথা চিন্তা করে সহকর্মীর নির্মম হত্যার বিচার চাইতে কুণ্ঠিত হয়, আমাদেরই উচিত এদের মুখোশ উন্মোচন করা ।
source

পুলিশের পিটুনির পরে মরে যাওয়া শিক্ষকের স্মারকলিপি- লুৎফর রহমান রিটন |

মানুষের জয় হোক, ন্যায় হোক আর শুভ হোক।
আমি এক শিক্ষক, অতিশয় দরিদ্র লোক।

চিরকাল শিখিয়েছি শুধু হয় সত্যের জয়
মানবের কাছে জানি দানবেরা মানে পরাজয়।
শিখিয়েছি গুরুজনে চিরকাল দিতে সম্মান
শিখিয়েছি মানবতা নম্রতা মমতার গান।
মানবজন্ম বৃথা যদি তার নাহি থাকে দান—
শিখিয়েছি দেশ-মাটি-মানুষের কিসে কল্যাণ।

দারিদ্র্য আমাদের চেহারায় এঁকে দেয় ছাপ
পেশাটা মহান তবে এ পেশায় আসাটাও পাপ!
তাই তো পাপের বোঝা আমাদের কাঁধে চেপে থাকে
নীতি আর আদর্শ আমাদের অনাহারে রাখে।

আমাদের পোশাকেও দারিদ্র্য উঁকি দিয়ে যায়
ছেঁড়া জুতো-স্যান্ডেলে দারিদ্র্য চেপে রাখা দায়!
স্মার্ট নই, বোকাসোকা, ভীতু খুব, শক্তিও কম
চিৎকার করব যে সে সাহস নাই একদম।

চুপচাপ বেঁচে থাকি, চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নাই
মানুষ গড়ার কাজ। মাস শেষে সামান্য পাই।
অভাবের দৈত্যটা গরিবের পেটে মারে ঘাঁই।
কেউ খোঁজ নেয় না তো তিন বেলা খাই কি না খাই!
এক বেলা খেতে পাই! উপোসের আছে অভ্যেস।
মানুষের ভালো হোক ভালো থাক এই প্রিয় দেশ।

প্রাইমারি শিক্ষক কম দামি খাটো হওয়া লাগে
সবার খাওয়ার পরে ছিটেফোঁটা আমাদের ভাগে!
যুগে যুগে কালে কালে আমরাই অভাবের বলি।
ভাবলাম আর কত! এইবার কিছু কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আমাদের কোনো গতি নাই
জায়গা তো একটাই, ভাবলাম সেখানেই যাই।
স্মারকপত্র লিখে ‘হাসিনা’র কাছে দিয়ে আসি
বলে আসি—মা জননী, তোমাকে যে কত ভালোবাসি!
বিনিময়ে আমরাও সামান্য ভালোবাসা চাই
তা না হলে এ জীবনে বাঁচবার কোনো আশা নাই।

অআকখ চিনিয়েছি এবিসিডি শিখিয়েছি যাঁরা
অবজ্ঞা অবহেলা অনাদর কেন পাবে তাঁরা!
বিনিময়ে কেন তাঁরা টেনে যাবে অভাবের ঘানি?
জবাব দেবে না কেউ জ্ঞানী আর সুশীলেরা জানি!
আমার মতোই কিছু শিক্ষক অভাগার দল
ঢাকা এসে জড়ো হই হাতে নিয়ে শেষ সম্বল।
শহীদ মিনারে এসে সব্বাই সমবেত হই
আমাদেরও দাবি আছে, আমরা আগন্তুক নই।

সামান্য কিছু দাবি মানবিক কিছু কথা লিখে
যাত্রাটা শুরু হলো পিএমের অফিসের দিকে।
শান্তিপূর্ণ ছিল আমাদের সেই সমাবেশ
হইচই ভাঙচুর ছিল নাকো হিংসার লেশ।
আচমকা পুলিশের তাণ্ডবে কামানের জল
পথেই ছিটকে পড়ে অনাহারী দেহ দুর্বল!
পুলিশের ছেলেগুলো আমাদেরই প্রিয় সন্তান
শিক্ষক পিতাসম! তাঁহাকেই করে অপমান!
পুলিশের পিটুনিতে শিক্ষক কাঁদে লজ্জায়
জীর্ণশীর্ণ দেহ রাজপথে গড়াগড়ি খায়!

নির্দয় লাঠিপেটা ভাঙাচোরা শরীরে কি সয়?
জখম আহত গায়ে রক্তের লাল ধারা বয়!
জামার কলার টেনে ঘাড় ধরে টানাহেঁচড়ায়
আমাদের অপমানে রাষ্ট্রের কী-ই-বা আসে যায়!

গরম কামানজল লাঠিপেটা সইতে না পেরে
অপমানে জর্জর অবশেষে গেছি আমি হেরে।
সামান্য শিক্ষক আজিজুর মরে গেছি, হায়—
লিখিত এ অভিযোগ পোস্ট করি কোন ঠিকানায়!
প্রধানমন্ত্রী, মা গো, তোমাকেই চিঠি লিখিলাম
একদিন আমরাই তোমাদের গুরু তো ছিলাম!

আমাদের ছাত্ররা আছে কত বড় বড় পদে।
কেহই তো আসিলি না স্যারদের ঘোর এ বিপদে!
তোদেরকে পিটিয়েছি। বকাঝকা করেছি যে কত!
মানুষ হবি রে তোরা একদিন মানুষের মতো।
মানুষ হবি না তোরা? পড়া কেন রেডি হয় নাই?
বেত দিয়ে পিটিয়েছি, মনে করে আজও ব্যথা পাই।
আমাদের ছাত্ররা কেউ কেউ আজকে পুলিশ!
মানুষ হলি না তবে! গুরুদের গায়ে হাত দিস!

ক্ষমা করো ঈশ্বর আল্লাহ ও গড ভগবান
ছেলেগুলো নাবালক নালায়েক অবুঝ নাদান।
অভিশাপ দিচ্ছি না, প্রার্থনা করি দুই হাতে—
আমাদের ছাত্ররা থাকে যেন দুধে আর ভাতে...
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×