somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যে চর্চার প্রয়োজনীয়তা

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘‘অন্তরের জিনিসকে বাহিরের,ভাবের জিনিসকে ভাষায়, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলাই সাহিত্যের কাজ।’’
শুরুতেই প্রমথ চৌধুরীর কথা স্মরণ করছি যিনি সাহিত্যে চর্চার গুরুত্ব অন্যান্যদের তুলনায় বেশ ভালোই বুঝেছিলেন।ধন-সম্পদের তুলনায় সাহিত্যে যে বিশাল আরও মূল্যবান সেটাই তিনি বলেছেন,‘‘যে জাতি মনে বড় নয়,সে জাতি জ্ঞানেও বড় নয়;কেননা ধনের সৃষ্টি যেমন জ্ঞান সাপেক্ষে তেমনি জ্ঞানের সৃষ্টি মন সাপেক্ষে এবং মানুষের মনকে সরল,সচল,সরাগ ও সমৃদ্ধ করার ভার আজকের দিনের সাহিত্যের ওপর ন্যস্ত হয়েছে।’’সুতরাং সাহিত্যের চর্চাও আবশ্যক যেমনটা শিক্ষা অর্জন আমরা আবশ্যক মনে করছি।শিক্ষার সর্বপ্রধান শাখা সাহিত্যেচর্চা।সর্বপ্রধান শাখা সাহিত্যে হলেও এটা সত্য যে সাহিত্যের রস সকলে সানন্দে গ্রহণ করতে চায় না কারণ এই রসের সাথে অর্থের রস পারস্পারিক আকর্ষণ করে না।
প্রত্যেক মানুষেরই কিছু কথা থাকে,থাকে গল্প বা অনুভূতি।আর এ কথাকে বা গল্পকে লিখে ফেলাই সাহিত্যের কাজের মধ্যে পড়বে না।যখন গল্প বা যেকোনো লিখা গবেষণামূলক অথবা অনুসন্ধানমূলক হবে তখনই তা সাহিত্যের পর্যায়ে পড়বে।এজন্যই সাহিত্যে এতো শক্তিশালী কারণ এটি সম্ভাবনাকে বাস্তবে রুপদানে সক্ষম।সাহিত্যে এমন একটি রস যে রসে ডুবে থাকলে শরীরের সকল শিরা উপশিরা এমনকি ধমনীতেও সে রস নিমিষে পৌঁছে যায়।নিমিষেই ব্যক্তির মধ্যে প্রাণের ছোঁয়া লাগে।এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে সম্ভাবনা আসে,আসে অনুভূতির এক কাল্পনিক শক্তি।সৈয়দ শামসুল হককে একটা সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মানব জীবনে সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কতোটুকুন।তখন তিনি বলেছিলেন,‘‘এই যে আমরা এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলি,সুন্দর শব্দ চয়ন করি,ভাষার অলংকরণ করে নিজের ভাব,মতামত প্রকাশ করি সকল কিছুই সাহিত্যের থেকে শেখা।’’
সাহিত্যে বিবেকহীন মানুষকে বিবেকবান করে গড়ে তুলে,মূর্খকে মূর্খতার হাত থেকে বাঁচিয়ে জ্ঞানীর দরবারে নিয়ে যেতে পারে,নির্জীব প্রাণকে সজীব করে তোলে।আদর্শ, নীতিবান এবং মহৎ মানুষ গড়ার কারিগরও কিন্তু এই সাহিত্যেকে বিবেচিত করা যেতে পারে যেমনঃকোলরিজের এনশিয়েন্ট মেরিনার কবিতাটি আমাদেরকে ন্যায়রায়ণতা শেখায়।সাহিত্য আমাদেরকে প্রথমত আক্রান্ত করে অনুভবে। পরে তা আমাদের চেতনাকে নিয়ে যায় জীবনের পথে।ব্যাক্তির চেতনাকে জাগিয়ে তোলা সাহিত্যের অন্যতম কাজ।আর অভ্যন্তরীণ চেতনা জাগ্রত হলেই নি:সন্দেহে যে কেউ মহৎ,নীতিবান এবং সৎ হতে পারবে।সাহিত্যেচর্চার ফলে ব্যাক্তির মধ্যে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।নতুন কিছু সৃষ্টি করাই তাঁর পেশা এবং নেশা হয়ে দাঁড়ায়।তুচ্ছ জিনিস যেমন মাটির কথায় ধরা যাক যখন এই তুচ্ছ জিনিস দিয়ে কেউ একটি মূর্তি বানিয়ে ফেলে তখন সেটা আর তুচ্ছ থাকে না।তেমনি সাহিত্যে চর্চার ফলেও মূল্যবান হওয়া সম্ভব যখন কিনা সাহিত্যের সাথে খেলা করা যায়।আর এই খেলাটা হতে হবে মানবাত্মার সাথে।নিছক কোনো খেলার কথা বলছি না।
শুধুমাত্র শিক্ষা আমাদেরকে মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যেতে পারবে না।চাই সঠিক শিক্ষা যে শিক্ষার সাথে থাকবে না কোনও লেনদেন বা অর্থ উপার্জনের নেশা,থাকবে না কোন পিছুটান,থাকবে না কোনও উদ্দেশ্য।যেখানে উদ্দেশ্য থাকবে সেখানে কখনো মানবসত্তার অস্তিত্ব টিকে থাকতে পারে না,পারে নি এবং কখনোও পারবে না।সঠিক শিক্ষা লাভের জন্য সাহিত্যে চর্চার কোনও অংশে কমতি নেই।উদ্দেশ্যপ্রনেদিত হয়ে সাহিত্যে চর্চা করলে সেই সাহিত্যে সকলের মনোরঞ্জন করতে ব্যর্থ হবে।সাহিত্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীও কিন্তু এটাই বলে গিয়েছেন যে,‘‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া কারও মনোরঞ্জন করা নয়।’’আধুনিক সময়ে সাহিত্যের উদ্দেশ্যটা পালটিয়ে গেছে।মনোরঞ্জন করাটাই আসল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহিত্যিকদের অবশ্যই সাহিত্যে চর্চার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা পাবার পথ থেকে সরে আসতে হবে।কেননা জনপ্রিয়তা বা অন্যেকে তুষ্টি করার উদ্দেশ্য সাহিত্যে চর্চা করলে সেখানে মননশীলতা বা সৃষ্টিশীলতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।আর মননশীলতা বা সৃষ্টিশীলতা হচ্ছে সাহিত্যের প্রাণ স্বরূপ যেই প্রাণ অন্য প্রাণকে সজীব করতে সক্ষম।সুতরাং সকল ধরনের বাহ্যিক প্রভাবক যে প্রভাবক অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-কলাপের অন্তরায় হিসেবে কাজ করতে পারে সেগুলি পরিত্যাগ করে সাহিত্যে চর্চায় মনোনিবেশ করতে পারলে সত্যিকার অর্থেই ভালো ও উঁচু স্তরের সাহিত্যিক বুনে যাওয়া সম্ভব তবে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা তো থাকতেই হবে।সকল কিছুর পাশাপাশি বই পড়ারও অভ্যাস বেশির থেকে বেশি থাকতে হবে।সকল ধরনের বই পড়তে হবে সেটা যেই বই-ই হোক না কেনও।বই পড়া ছাড়া সাহিত্যচর্চার উপায়ান্তর নেই।এটা আমার কথা নয় প্রমথ চৌধুরীই বলে গেছেন।বই পড়তে থাকলে ধীরে ধীরে আপনি নিজেকে একজন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।তবে এই বই সাহিত্যের বই হতে হবে।সাহিত্যের বই ছাড়া একজন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি হওয়াটা অসম্ভব।তবে যারা বই ছাড়া ধ্যান এবং তপস্যার দরুণ জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান হয়েছিলেন তাঁদের কথা এই প্রযুক্তি নির্ভর ও যান্ত্রিকতার যুগে না বলায় শ্রেয় বোধ করছি কারণ তাঁরা উত্তম আর আমরা অধম।আমাদের সময়টুকুন মোটেও ভালো যাচ্ছে না।এই অসময়ে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান হওয়াটা জরুরি।যদি এই অসময়ে কেউ সঠিক ও উপযুক্ত কাজ করতে পারে তবে সে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানীদের দলে প্রবেশ করতে পারবে।
সুতরাং এই দুর্দিনে নিজ অস্তিত্ব ও সত্তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাহিত্যের পাঠ এবং চর্চা উভয়েরই বেশ প্রয়োজনীয়তাবোধ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৪৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×