- জীবনে কি হওয়ার ইচ্ছা আছে আপনার?
- মঙ্গলীয়ান।
- মঙ্গলীয়ান?
- হুম , মায়া ফুরোলেই মঙ্গলীয়ান । ওয়ান ওয়ে টু মার্স!
- এটা কোন কথা?
- এটা কথা না, ইচ্ছা-স্বপ্ন।
- এমন বাজে ইচ্ছা কারো হয় নাকি?
- হবে না কেনো? কোটি টাকা দিয়ে মানুষ বাক্স কিনে বন্দি হতে চায়। আর আমিতো পৃথিবী থেকে কিছু বড় একটা গ্রহেই বদ্ধ হতে চাইছি তাই না?
- আপনি পাগল।সুস্থ মানুষের এমন উদ্ভট ইচ্ছা থাকেনা।
- তবে সুস্থ মানুষের কেমন ইচ্ছা থাকে?
- সুস্থ মানুষের অনেক ইচ্ছা থাকে। ধরুন আমার কথা। একটা বিয়ে করবো। জামাইয়ের হাত ধরে কানাডা যাবো। নায়াগ্রা ফলস দেখবো। তাকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলবো। মিশরে যাবো। নকল মামীকে হাগ করে, কিস করে ছবি তুলবো।ইউয়ার্ক যাবো, স্টেচু ওফ লিবার্টির নিচে ছবি তুলবো। ফ্রান্স যাবো অনেক ঘুরবো খাবো, এঞ্জয় করবো। আর ছবি গুলো স্মৃতি হিসেবে থাকবে। কি দারুন না বলুন?
- চমৎকার!
- রিয়েলি? আপনার ভালো লেগেছে? থেনক্স।
- হুম চমৎকার বিচ্ছিরি লেগেছে।
- ও আচ্ছা, আপনি এখনো বলতে চাইছেন আপনার স্বপ্ন এর চাইতে সুন্দর? চমৎকার?
- অবশ্যই। ধরুন আমি মার্স মানে মঙ্গলে চলেই গেছি। সেখানে গিয়ে সারাদিন ঘুমোবো, খাবো আর ক্ষেত খামার করবো। কোন এলিয়েন আসলে কাধে হাত দিয়ে বলবো, " মামা চা খাবা? " কাধ না থাকলে পায়ে ধরবো। চা খাওয়াবো আড্ডা দেবো। মঙ্গলে ঘুরবো ওদের নিয়ে।ধরুন মহাবিশ্বের এক বিশাল পর্যটন কেন্দ্র হবে এই মার্স মানে মঙ্গল। তারপর একদিন ২০ বাচ্চার বাপ হবো। বাচ্চাদের নাম দেবো মিথেন চমক, ইথেন চমক, প্রোপেন চমক, বিউটেন চমক,পেন্টেন চমক। ওদের এ নাম দেয়াতে একটা লাভ অবশ্যই আছে। ধরুন কষ্ট করে কারো নাক মনে রাখা প্রয়োজন হবে না। আর ওরা একজন জন্ম নিলে সাথে সাথে ২০ টা নাম মুখস্ত করিয়ে দেবো। নতুন কেউ জন্ম নেয়ার আগে নেংটু পুটু গুলা লাফিয়ে লাফিয়ে বলবে " আইলো আইলো। হেক্সেন আইলো। হেক্সেন চমক আইলো "। এই নামকরনের আলাদা কারন ও আছে। নাতি নাতনিদের নামকরনেও ঝামেলা কম। আইল, আইন, ক্যান, ওয়িক যোগ করে হবে মিথেন চমকাইল, ইথেন চমকাইন, প্রোপেন চমক্যান, বিউটেন চমকোয়িক। আমি হবো চমক গোষ্ঠির সর্দার। একদিন মঙ্গলে এক দেশ বানিয়ে ফেলবো। দেশের নাম দেবো চমক। ধরুন তারো অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গল বিশ্বযুদ্ধ হবে। সেখানে যদি আমার নাতি নাতনিদের মধ্যে কেউ হিটলারের ভূমিকায় অবতির্ন হতে পারে তবে মঙ্গলের নাম পাল্টে চঙ্গল ও হয়ে যেতে পারে। আমার নামে একটা গ্রহ। কি লোভনীয় ব্যাপার চিন্তা করতে পেরেছেন? পারছেন?
- পাগল আপনি। এসব কোনদিন সম্ভব না। বাজে কল্পনা। আর মুসলমানেরা মঙ্গলে যাওয়া পাপ। কিভাবে যাবেন সেখানে?
- ছি ছি! গুহা মানবীর মতো কথা বলছেন কেনো। আচ্ছা আপনি জানেন মানব জাতীর সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার কোনটা?
- কোনটা?
- লাইকা।
- লাইকা মানে?
- লাইকা নামের কুকুরটা। যে মহাশূন্যের প্রথম গিয়েছিলো।
- তো এখানের লজ্জার কি আছে?
- আছে ম্যাডাম। লজ্জায় জ্বর ধরে যাওয়ার মতো ব্যাপার আছে।
- কিভাবে?
- আপনি জানেন না, মানুষ আশরাফুল মাকলুকাত? তো মানুষ সৃষ্টির সেরা হয়ে ও মহাশূন্যে আগে পারি দিতে পারেনি। কি লজ্জার ব্যাপার না? এটা মুসলমান না। পুরো মানব জাতীর লজ্জা। তো মঙ্গলেও যদি কুকুর বিড়াল বান্দর আগে যায় তবে লজ্জায় মাথা কাটবেন না পা কাটবেন আপনি নিজেও ভেবে পাবেন না। ধরুন মঙ্গলে থাকতে থাকতে কুকুর বিড়াল বান্দর বিবর্তন হতে হতে বুদ্ধিমান হলে গেলো। তখন মঙ্গলের নাম পরিবর্তন করে দেবে কুকুর থেকে কুঙ্গল, বিড়াল থেকে বিঙ্গল, বান্দর থেকে বাঙ্গল। এখন নামটা মঙ্গল, মানুষ থেকে মঙ্গল। তো ওরা বিবর্তনে বুদ্ধিমান হয়ে গেলে একদিন পৃথিবীর মানুষকে হুমকি দেবে, " বল ভাউ/ ম্যাও, নাইলে দিলাম বুমা মাইরা "। হতেই তো পারে তাইনা?
- উফফফ! আপনি একটা অসম্ভব পাগল। এগুলো কল্পনা ও না। বাজে চিন্তা।
- আচ্ছা ধরুন মঙ্গলে নাস্তিকরা গেলো। মঙ্গলে ওরা বাচ্চা পয়দা করতে করতে কানা করি ভড়ে ফেললো। ওদের বাচ্চা গুলো ও হবে নাস্তিক। তো ওরা ওদের বাচ্চাদের বলবে, " চান্স পাইলেই টেরাই করবা। এক বুমাতে বাংলাদেশ, সৌদি উড়াইয়া দিবা। সব আস্তিকের বাচ্চা "
- এসব কথা কেনো বলছেন? নাস্তিকেরা কি খৃষ্টান, হিন্দুদের উপর বোমা মারবে না নাকি? নাস্তিকেরা শুধু মুসলমানদের দিকে কেনো তাকাবে? আমাদের দেশের দিকে তাকান? নাস্তিকেরা মন্দির ভেঙ্গে দেয়, গির্জা ভেঙ্গে দেয়, মসজিদ ভেঙ্গে দেয়। আর নাম দেয় মাসুম ভাইদের উপর। বোমা মারে নাস্তিক জঙ্গীরা। বলে কিনা মুসলমান মানেই টেরোরিস্ট। মুসলমানেরা ভাই ভাই। শান্তির ধর্ম। তাইলে যারা বোমা মারে তারাই নাস্তিক। নাম মুসলমানের হইলেও নাস্তিক।
- তাইলে দেখেন? মঙ্গল যদি নাস্তিকেরা দখল করে ফেলে তাইলে কি সমস্যা হবে? এক কথা দুই কথায় বোমা মারবে। পৃথিবীতে বোমা মারতে মারতে হাওয়া কইরা দিবে।
- তো আপনি বলছেন আপনি মুসলমান তাই যেতে চাচ্ছেন মার্সে?
- একেবারে তা নয়। ওই যে বললাম স্বপ্ন ইচ্ছা। মুসলমান হিসেবে জায়েজ নাকি তার বিস্তর ফতোয়া দিলাম।
- উফফফ বাদ দেন তো। পারবো না আপনার সাথে। আপনি একটা পাগল। কি বলেন না বলেন নিজেও জানেন না। ফালতু লোক। দূর হন আমার সামনে থেকে।
- তো ম্যাডাম কি চিন্তা করলেন? ওই জমিটা ছেড়ে দেবেন?
- না আমি ওই জমি ছাড়বো না। কেনো ছাড়বো।
- এতোক্ষন ধরেই তো বোঝালাম। মানুষের স্বপ্ন-ইচ্ছা কতোবড়। আপনার চেয়ে আমার ইচ্ছা-স্বপ্ন বড় দেখে আপনি ভাবতেও পারছেন না। আমাকে বলছেন পাগল। অবাস্তব। তেমনি আপনার ছোট একটা জায়গার আপনার তিনতলা বাড়ির স্বপ্নের চাইতে ওই জমিতে প্রতিবন্ধিদের দ্বারা পরিচালিতো মার্কেটটা অনেক বড় স্বপ্ন। হয়তো অবাস্তব লাগছে, তবু সেটা স্বপ্ন - ওদের ইচ্ছা।
- আমার লাভ?
- ওই যে চঙ্গল? মার্সে আমি ছেলে পুলে জন্মদিলাম। ওরা হিটলার হয়ে মঙ্গল জয় করে নিলো। নাম দিলো চঙ্গল। তেমনি আপনি আপনি ওতোটুকু জায়গা প্রতিবন্ধিদের মার্কেটের জন্য ছেড়ে দিন, ওরা সফল হলে মার্কেটের নাম হবে টঙ্গল।
- কিন্তু আমি আমার পার্টনারদের রাজী করাবো কিভাবে?
- ওই যে বললাম ফতোয়া? প্রত্যেক ফতোয়ার বিপরীতেই ফতোয়া আছে। লাভ আছে। ধরুন প্রতিবন্ধিদের মার্কেটে মানুষ বেশি আসবে। তাদের সহানূভুতি দেখাতে আসবে। আন্তর্জাতিক ভাবে নাম কামাবে। আপনাদের কম্পানির নাম হবে। শেয়ারের দাম বাড়বে ক্যাঙ্গারুর মতো লাফিয়ে।
- আচ্ছা আমার ভাবতে হবে। আমি এতো।কিছু ভেবে দেখিনি। আপনি এখন যান। আপনার মোবাইল নাম্বার লিখে দিয়ে যান। মিটিং শেষে আপনাকে জানানো হবে।
মিস টগরকে ধন্যবাদ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। আমার মোবাইল নাম্বার নেই। আছে একটা টেলিফোন। সাদা-ময়লা মেশানো ক্রিং ক্রিং শব্দ করা টেলিফোন। মোবাইল ফোন গুলো ঝামেলা, একটা আতংকের কারন। হুট হাট করে কল এসেই আতংক বাড়ায়। ধরুন আপনি টয়লেটে বসে আছেন শান্তির জন্য। হুট করেই মোবাইলে কল আসলো। আপনি আতংকে কি করবেন না কি করবেন ভাবতে ভাবতে কিছু একটা করতে যাবেন আর হবে সর্বনাশ। দেখবেন সারা শরীরে হাগু লেগে একাকার। নিজেকে আতংক মুক্ত রাখতে মোবাইল থেকে দূরে থাকি।
রিসিপাশনে এসে আবুল সাহেবের সামনে দাড়ালাম। প্রত্যেক অফিসে রিসিপশানে সুন্দরী মেয়ে থাকে। কিন্তু এখানে ভিন্ন। কারন আবুল সাহেবের চেহারা খুব বেশি মায়া মায়া। এমন মায়া ভড়া মুখ মেয়েদের ও হয় না। পাওয়া খুব কষ্টের। কিন্তু আবুল সাহেব আমাকে দেখে বিরক্ত হয়েছেন। বিরক্ত হওয়ারই কথা। মিস টগরের সাথে কথা বলার জন্য অনেকদিন জ্বালিয়েছি তাকে। অফিসে অন্যান্য মানুষ থাকতে ও আমি মিস টগরকে বেছে নিয়েছে। কারন নারীদের মন লোহার মতো শক্ত হতেই পারে কিন্তু মন ছোঁয়ানো ঠান্ডা কথা পেলেই লোহা ভেঙে দু টুকরো। তখন তাকে আপনি তাকে যেভাবে ইচ্ছে গড়তে পারেন। আবুল সাহেবকে আজ আর বেশি জ্বালাতন করবো না। কারন আমার কাজ হয়ে গেছে। মিস টগর আমার সামনেই তার ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন। নামের জন্য বাকীটা তিনিই করবেন। পকেট থেকে একটা কাগজ করলাম। সেখানে আমার টেলিফোন নাম্বার লেখা আছে। পকেটে এমন অনেক গুলো আছে। বলা চলে আমার ভিজিটিং কার্ড। কাগজটা আবুল সাহেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, " নাম্বারটা লিখে রাখেন। টগর ম্যাডাম বলেছে "।
অফিস থেকে বেড়িয়ে মতিঝিলের মোড়ে এসে দাড়িয়েছে। এটা কি মানুষের মিছিল? না এটা কোন মিছিল নয়। এটা যুদ্ধ। বেঁচে থাকার জন্য সব মানুষ হাটছে, ছুটছে। বেঁচে থাকার রসদ পেলে তারা অল্প একটু স্বপ্ন দেখে, অল্প একটু ইচ্ছা করে। যেখানে ছাড়িয়ে যাওয়ার, পেড়িয়ে যাওয়ার উপায় আছে সেখানে মানুষ একটা বাড়ি আর ভালো খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।এর বাইরে কাওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার উপায় নেই, ইচ্ছা নেই, আর মুর্দা কথা সময় নেই। হয়তো মানুষগুলো বাঁচতে গিয়ে মরে যাচ্ছে, ইচ্ছা স্বপ্নের কবর দিচ্ছে এখানে সেখানে। নিজেকেই বন্দি করছে নিজের মাঝে।