somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লৌকিক লোকলীলা (উপন্যাস: শেষ পর্ব)

১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাশ! আশার লাশ! এমন কথাও শুনতে হলো ওকে! বিলাসের ফোন কাটার পর গায়ের কম্বল ফেলে বিছানায় ঠায় বসে থাকে অমল। এতক্ষণ কম্বলের উষ্ণতায় থাকা শরীর পুনরায় শীতল হতে থাকে, কিন্তু তখন ওর শীতের অনুভূতি যেন লুপ্ত! টিভি দেখে ওর আট মাসের পোয়াতি স্ত্রী সুচিত্রা ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ওকে দুই হাতে মাথার চুল মুঠো করে ধরে দুই হাঁটুতে কনুই ঠেকিয়ে বসে থাকতে দেখে বলে, ‘তুমি শোও নাই এহনো? এই হাড় কাপানে শীতের মধ্যে এট্টা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে বসে আছো?’

মাথা তুলে সুচিত্রার দিকে তাকায় অমল, ওর বিচলিত মুখমণ্ডল আর চোখের দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক কিছু আঁচ করে সুচিত্রা জিজ্ঞাসা করে, ‘কী অইচে তোমার?’

অমল স্ত্রীর দিক থেকে দৃষ্টি নামিয়ে চুপ করে থাকে। সুচিত্রা কাছে এসে অমলের গায়ে হাত রেখে বলে, ‘চুপ করে আছো যে?’
অমল সুচিত্রার দিকে না তাকিয়েই বলে, ‘আশা মারা গেচে!’

আশা আর অমলের সম্পর্কের ব্যাপারে সবই জানত সুচিত্রা, এই পরিস্থিতিতে কী বলা উচিত তা হয়ত বুঝে উঠতে পারে না সে। কখন, কোথায়, কিভাবে মারা গেল আশালতা, সে বিষয়ে জানার কৌতুহল থাকলেও অমলের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে কোনো প্রশ্ন করে না। অমল সুচিত্রার কাছ থেকে নিজেকে লুকোতে চায়, একটা আড়াল খোঁজে, ওর একা থাকতে ইচ্ছে করে। কম্বলটা গায়ে টেনে সুচিত্রার বিপরীত দিকে মুখ দিয়ে শুয়ে পড়ে, তাতে বেশ স্বস্তি অনুভব করে।

সুচিত্রা জিজ্ঞাসা করে, ‘লাইট অফ করে দেব?’
‘দাও।’

লাইট বন্ধ করে কম্বলের নিচে ঢুকে অমলের শরীর থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্ব রেখে শোয় সুচিত্রা। অন্যদিন ঘরে ঢুকে অমলকে জিজ্ঞেস না করেই লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ে সুচিত্রা, তাহলে আজ কেন লাইট বন্ধ করার কথা জিজ্ঞেস করল? প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় অমলের মাথায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর অমলের গায়ে হাত রেখে সুচিত্রা আস্তে করে ছুড়ে দেয় প্রশ্নটা, ‘কিভাবে হলো?’

‘ফরিদপুর থেকে আসার পথে বাস অ্যাকসিডেন্টে।’

কিছুক্ষণ পরই বিলাস আবার ফোন করে জানায় যে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসেছে, অমলই জানাতে বলেছিল ওকে। অমলের খুব রাগ হয় বিলাসের ওপর, কথা বলার সময় বারবারই আশালতাকে শুধু আশা না বলে ‘আশার লাশ’ বলছিল। বিলাস ভুল বলে নি, কিন্তু অমলের প্রেমিক হৃদয় লাশ শব্দটার ভার সহ্য করতে পারে না।

বিলাসের ফোন কেটে দেবার পর অমল চিৎ হয়ে শোয়, পেটের ওপর সুচিত্রার হাত, সুচিত্রা জিজ্ঞেস করে, ‘যাবা তুমি?’

বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলেও অমলের কোনো উত্তর না পেয়ে সুচিত্রা আবার বলে, ‘তোমার যাওয়া উচিত। হাজার হোক পরিমল দাদা তোমার বন্ধু, সে-ও তোমার বন্ধু ছিল!’

সুচিত্রার ঈর্ষা নেই, অথবা থাকলেও অমলের কাছে তা অপ্রকাশিত, তাই অমল জানে সুচিত্রার হৃদয়টা পরিষ্কার। সুচিত্রার কথা শুনে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে অমল, ওর পেটের ওপর রাখা সুচিত্রার সান্ত্বনার হাতটা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে তুলে আনে, স্ত্রীর হাত ধরে সদ্যমৃত প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য নীরবে অশ্রু বিসর্জন করে!

ঘুটঘুটে অন্ধকারে জনশূন্য পথে টর্চ জ্বেলে অমল যখন পরিমলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়, তখন ওর মনে হয় পৃথিবী থেকে ছিটকে ভিন্ন কোনো গ্রহে এসে পড়েছে ও! রোজকার একই গ্রাম, একই চেনা পথ, তবু সেই চেনা পথেই পা বাড়িয়ে ওর মনে হয় নরকের পথ কি এর চেয়েও অন্ধকার, এর চেয়েও দূর্গম, এর চেয়েও কষ্টসাধ্য! কেমন থমথমে পরিবেশ, কোথাও কোনো শব্দ নেই, কোথাও কোনো প্রাণের অস্তিত্ত্ব টের পায় না অমল; অথবা পরিবেশ রোজকার মতোই স্বাভাবিক থাকলেও প্রাক্তন প্রেমিকার বিয়োগ-ব্যথায় নিজেই মানসিকভাবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পরিমলদের বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই বাতাসে ভেসে আসা ধূপের গন্ধ পায় অমল, ঘর আর বারান্দা থেকে ভেসে আসা আশালতার মা, বোন আর শাশুড়ির কান্না জড়ানো বিলাপ শুনতে পায়, এখানে-ওখানে মানুষের জটলা, তুলসীতলায় রাখা আশালতার মৃতদেহ ঘিরে দাঁড়িয়ে-বসে আছে দশ-বারোজন নারী-পুরুষ। লোকজনের ফাঁক দিয়ে দূর থেকে কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহের দিকে একবার তাকিয়েই দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে অমল। পরিচিতজনরা তাকায় অমলের দিকে, তাদের মুখের বিস্ময় ধরা পড়ে অমলের চোখে, তারা হয়ত ভাবে নি যে অমল আসবে। বিলাস, দীপনসহ কয়েকজন বন্ধুকে দেখে অমল এগিয়ে যায় পরিমলের শোবার ঘরের বারান্দার দিকে। ওদের কাছ থেকে জানতে পারে যে পরিমল ওর ঘরেই আছে, পরিমলের ঘরে গিয়ে দ্যাখে কয়েকজন বন্ধু পরিমলকে ঘিরে বসে আছে, পরিমল দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে আছে নিশ্চুপ হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে, বৈদ্যৃতিক আলোয় স্পষ্ট দেখা যায় চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া জলের ধারা। অমলকে দেখে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে পরিমল, অমল আরো কাছে যেতেই ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে পরিমল বলে, ‘আশারে তুই মাফ করে দিস অমল, মনে কোনো দুঃখ রাহিস নে, ওরে তুই মাফ করে দিস…!’

রাত তিনটার দিকে আশালতার দেহ শ্মশানে আনা হয়, স্বামীর কোলে চড়ে দেড় বছরের একমাত্র পুত্র আশালতার মুখাগ্নি করে, পাশে সজল চোখে দাঁড়িয়ে থাকে একদা প্রেমিক অমল আর প্রেম বঞ্চিত প্রেমাকাঙ্ক্ষী বিলাস; তারপর ওদের চোখের সামনে ওদেরই প্রিয় মানুষ আশালতাকে মাটির ঘরে সমাধি দেওয়া হয়।

আশালতার বিয়ে অমল আর পরিমলের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল, আর আশালতার মৃত্যু দুজনের দূরত্ব ঘুচিয়ে পুনরায় পুরনো বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে, দুজনে আবার আগের মতো কথা বলা, আড্ডা দেওয়া শুরু করে।

পরিমল আশালতার স্বামী, তিনবছর সংসার করেছে দুজন, বহু রাত্রি পাশাপাশি শুয়ে একে অন্যের নিশ্বাসের শব্দ শুনেছে, দুজন-দুজনের হৃদয়ের অতলে ডুব দিয়ে নিগূঢ় কথাটি জেনেছে, একে অন্যকে আদর আর কাম চর্চা করেছে, দুজনে দাম্পত্য কলহেও লিপ্ত হয়েছে বহুবার। সেই পরিমল যখন জানায় যে আশালতা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামীকে নয়, সত্যিকার অর্থে প্রেমিক অমলকেই ভালোবাসত, তখন অমলের মনে হয় তার এই জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই! আজ যদি এখানে আশালতার সমাধির পাশে তার জীবন-প্রদীপ নিঃশ্বেষও হয় তবু কোনো আফসোস থাকবে না!

আশালতার খুলি হাতে পরিমল আবার বলে, ‘প্রত্যেক বছর মাথা-চালানে তুই মাথা নিস, এবারও তুই নে। মাথা-চালানে আশার মাথা নেওয়ার সবচেয়ে যোগ্য মানুষ তুই-ই, তোরই নেওয়া উচিত।’

অমল আরো অধিক বিস্ময়ে তাকায় পরিমলের দিকে, এতটা সে ঘুণাক্ষরেও আশা করে নি; বিলাসও খুব অবাক হয়।
অমল বলে, ‘তোর ইচ্ছে অইচে ইবার মাথা নেওয়ার, এবছর তুই-ই নে।’
পরিমল মাথা নাড়ে, ‘না।’

গত পাঁচ বছর যাবৎ মাথা-চালানের আসরে মাথার খুলি বহন করে অমল, আর পিছন থেকে বাম হাতে অমলের কোমর আর ডান হাতে বেতের ছড়ি ধরে রাখে পরিমল। বীভৎস সাজে সজ্জিত হয়ে ওরা মাথা চালানে বসে; দুজনেরই পরনে থাকে কাছামারা লাল ধুতি, মাথায় বাঁধা থাকে লাল কাপড়। মুখ থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে প্রথমে সাদা রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়, তার ওপর কোথাও লাল-কালো-হলুদ রঙের ডোরাকাটা দাগ, কোথাও গোলাকার কিংবা ত্রিশূলের মতো চিহ্ন আঁকা থাকে! গলায় থাকে রঙিন কাগজের ফুলের মালা। অমলের সামনে রঙ দিয়ে সাজানো কুলায় থাকে মাথার খুলি, সে-ও লাল-কালো রঙে সাজানো, খুলির চারপাশেও থাকে ফুলের মালা। মাথা চালানের দিন সকল সন্ন্যাসীদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে থাকে অমল, তারপর পরিমল; আগত দর্শকদের দৃষ্টি ঘোরে ওদেরকে কেন্দ্র করেই।
তিনদিন আগে ব্রতগুরু আদ্যনাথ বালা পরিমলকে ডেকে নিয়ে গোপনে বলে, ‘তোরে এট্টা কথা কই মন দিয়ে শোন। আশা তোর বউ ছিল, গিরামের মিয়া হিসেবে আমিও ওরে স্নেহ করতাম। মিয়াডা অপঘাতে মরে গেল। এহন স্বর্গে আছে না নরকে আছে, তাই বা কিডা জানে! তুই যদি রাজি থাহিস এবার আমরা ওর মাথা তুলে চালান দেই। ও যদি নরকেও যায় এই চালানের পূণ্যে আর বাবা ভোলানাথের দয়ায় ঠিক স্বর্গে চলে যাবি। তুই কী কোস?’

পরিমলের চোখে ভেসে ওঠে ছোটবেলায় মামাবাড়ির টিনের ঘরের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখা দুই টাকা দামের ছবিতে দেখা নরকের দৃশ্য- ইহজগতে মিথ্যা বলার অপরাধে নরকে কারো মুখ থেকে জিভ টেনে বের করে ছুরি দিয়ে কাটছে জাঁদরেল চেহারার যমরাজের প্রতিনিধি, পণ্য বিক্রির সময় ওজন কম দিয়ে ক্রেতাকে ঠকানোর অপরাধে কারো হাত কেটে দিচ্ছে, পশু হত্যার অপরাধে যমরাজের বিকট দর্শন দুজন প্রতিনিধি হত্যাকারীকে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ছেড়ে কুম্ভিপাকম করছে; এছাড়াও নানা ধরনের পাপের শাস্তিস্বরূপ করাত দিয়ে কারো দেহের মাঝখান থেকে কাটছে, কারো শরীর পেচিয়ে মুখের কাছে ফণা তুলে আছে বিরাটাকৃতির বিষধর সাপ, বৈতরণী নদী পর হবার সময় কারো শরীরের অর্ধেক গিলে ফেলেছে কুমির!

অপঘাতে মৃত্যু, আশালতাও যদি এভাবে নরকে কষ্ট পায়! আশালতা স্বর্গে গেছে নাকি নরকে, এসব কোনোদিন ভাবে নাই পরিমল। কিছুদিন আশালতার জন্য খারাপ লেগেছে, তারপর বছর দেড়েক পর আবার বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে জীবন। মাঝে মাঝে আশালতার কথা মনে পড়ে, কিন্তু সে-সবই ইহজগতের কথা, ইহজগতে আশালতার স্মৃতি মাঝে মাঝে চাগাড় দেয় মনোজগতে। আদ্যনাথ বালার উস্কানিতে পরিমল বিচলিত বোধ করে। বলে, ‘গুরুদেব আশার মাথা দিয়ে যদি চালান দিবার চান, তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু আমার এট্টা আবদার আছে।’

‘কী আবদার?’
‘চালানে আশার মাথা আমি নিবার চাই।’
আদ্যনাথ এক মুহূর্ত না ভেবে বলেন, ‘নিবি। আশা তোর বউ, চালানে মাথা নিবার অধিকার সবার আগে তোরই।’
‘যদি অমল মাথা নিবার চায়?’
‘আমি অমলরে বুজোয়ে কবানে।’

আদ্যনাথের সিদ্ধান্তে ঠিক হয় এবার মাথা চালানে মড়ার মাথা পরিমলই নেবে। তাতে অমল কিছুটা মন খারাপ করলেও পরিমল যেন আনন্দে আত্মহারা! মাথা চালানের দিন সন্ধ্যায় শত শত মানুষ চালান দেখতে আসবে, ঢাক আর কাঁসরের বাদ্যে মুখরিত হবে চারিদিক, ধূপের ধোঁয়ায় ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশে পরিমল গিয়ে চালানে বসবে, দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে সে। হাতে এক মুষ্টি ধূপ নিয়ে আদ্যনাথ বালা যুবকের চপলতায় নেচে নেচে শ্লোক বলবে-
‘চালানে চালিলাম ধূপ
স্বর্গে ওঠে ধূমা
ভূত নাচে প্রেত নাচে
নাচে চন্দ্রকণা,
ভূতেরই নাচনি দেখে
ভয়ে যে মরি
এক মুষ্ঠি ধূপ লও
রাক্ষসীনা বুড়ি।’

আদ্যনাথ বালা ছাড়াও অন্য দুই বালা শিবু আর গোবিন্দ উচ্চকণ্ঠে শ্লোক বলে মুখরিত করে তুলবে চালানের আসর। তারপর মাথা-চালানের শেষ দিকে যখন মাথা মাথায় নিয়ে নেচে নেচে দেইল মন্দিরে যাবে, তখনো থাকবে শত শত মানুষ, আর মধ্যরাতে শ্মশানপূজা দিতে যাবার সময় পথের দুই ধারে থাকবে হাজার হাজার দর্শনার্থী। মানুষ তাকে দেখবে, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সে শরীরের সব শক্তি উজার করে নাচবে, কয়েকদিন মানুষের মুখে মুখে থাকবে তার নাম! আর তার আনন্দ দ্বিগুণ হবে, কেননা সে তার প্রিয়তম স্ত্রীর মাথার খুলি বহন করবে!

তিনটে দিন এমন স্বপ্নে বিভোর থাকার পর সমাধি থেকে আশালতার মাথার খুলি তুলতে তুলতে হঠাৎ আত্মপোলব্ধী হয় পরিমলের, মনে হয় অমল আর আশালতার সম্পর্কের সঙ্কটকালে সে স্বার্থপরের মতো কূটকৌশলে বাবাকে দিয়ে আশালতার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত আশালতাকে বিয়ে করে বাল্যবন্ধু অমলের সাথে অন্যায় করেছে; গত পাঁচ বছর যাবৎ মাথা-চালানে মাথা নেয় অমল, কেবল আশালতার স্বামী হিসেবে জোর খাটিয়ে এবার সে মাথা নিলে অমলের সাথে আরেকটি অন্যায় করা হবে। অমলের সাথে এই অন্যায় করা ওর অনুচিত।

অমলকে চুপ করে থাকতে দেখে পরিবল বলে, ‘নে ধর, কাল তুই-ই মাথা নিবি।’

অমল দুই হাত এক সঙ্গে করে বাড়িয়ে দিলে পরিমল মাথার খুলিটা ওর হাতে রাখে, খুলির স্পর্শ পাওয়া মাত্র অমলের শরীর কিছুটা কেঁপে ওঠে, গায়ের লোম কাঁটা দিয়ে ওঠে। ওর ইচ্ছে করে খুলিটা বুকে জড়িয়ে ধরতে, খুলির কপালে চুমু খেতে, কিন্তু পরিমল আর বিলাসের সামনে অশোভন দেখাবে বলে ইচ্ছেটা অবদমন করে। চোখ ভিজে ওঠে অমলের, পলক ফেলতেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু, যা ম্রিয়মাণ চাঁদের আলোয় দেখতে পায় না বিলাস আর পরিমল। ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকে খুলির দিকে, ছয় বছর পর আবার যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে আশালতা; অনুভব করে ওর দুই হাতের আঁজলায় আশালতার মাথার খুলি নয়, জীবন্ত আশালতার কোমল মুখমণ্ডল, যে মুখমণ্ডল দু-হাতে ধরে সে অসংখ্যবার চুমু খেয়েছে কপালে আর ঠোঁটে! অমলের হাতে যেন এখন রক্ত-মাংসের আশালতার সেই কোমল মুখমণ্ডল, যেখানে খেলা করে পশ্চিমের ম্রিয়মাণ চাঁদের আলো, ঝিঁঝির সঙ্গতের সঙ্গে রাতের নীরবতা বিদীর্ণ করে যেন গেয়ে ওঠে আশালতা-
‘লাগি সেই হৃদয় শশী, সদা প্রাণ হয় উদাসী,

পেলে মন হত খুশি, দিবা-নিশি দেখিতাম নয়ন ভরে…।’


সমাপ্ত


রচনাকাল: ২০১৯ সাল।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×