somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাগরী (উপন্যাস: পর্ব- পাঁচ)

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাঁচ

অপরাহ্নে রাজকুমারী শান্তা যখন শুনলো যে রাজ্যের খরা নিবারণের নিমিত্তে ইন্দ্রদেবকে সন্তুষ্ট করে বৃষ্টি কামনায় শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী রাজপুরোহিতের পরামর্শে একদল গণিকাকে পাঠানো হচ্ছে এক বনবাসী মুনিকুমারকে হরণ করে নিয়ে আসার জন্য, যার সঙ্গে শীঘ্রই তার শুভবিবাহ অনুষ্ঠিত হবে; তখন রাজকন্যা ভীষণ বিচলিত হলো, মর্মবেদনায় নিজের শয়নকক্ষের কপাট রুদ্ধ করে শয্যায় শুয়ে উপাধানে মুখ গুঁজে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। কিছুতেই তার বোধগম্য হলো না সে মুনিকুমারকে বিবাহ করলে ইন্দ্রদেব কেন খুশি হবেন, আর তার এবং মুনিকুমারের বিবাহের সঙ্গে ইন্দ্রদেবের বারিবর্ষণের সম্পর্ক কী? ইন্দ্রদেবের কি সত্যি সত্যিই বারিবর্ষণের ক্ষমতা আছে? যদি থাকেও তো ইন্দ্রদেবকে তুষ্ট করার জন্য পিতা কেন তাকেই ব্যবহার করবেন? নানাবিধ আত্মপ্রশ্নবাণে তার হৃদয় রক্তাক্ত হতে লাগলো।

আরো অনেক রাজ্যের রাজকুমারীদের মতোই শান্তাও এতোদিন স্বপ্ন দেখেছে, পিতাশ্রী তার স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করবেন; সমগ্র রাজধানী সজ্জিত করা হবে, নানান রাজ্য থেকে হাতি-ঘোড়ায় চেপে সসৈন্যে সুদর্শন রাজা এবং রাজপুত্ররা তার স্বয়ম্বর সভায় অংশ নিতে আসবেন, ভেরি-মৃদঙ্গ-শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে নগরী, স্নান করে চন্দন-কুঙ্কুমে সেজে, বহুমূল্য বস্ত্র এবং অলংকারে শোভিত হয়ে সে স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হবে, রাজা এবং রাজপুত্ররা তার সৌন্ধর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে মনে মনে প্রার্থনা করবে আর সে সকল রাজা এবং রাজপুত্রের ভেতর থেকে কেবল একজনকে নির্বাচিত করবে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে, সঙ্গে সঙ্গে নব কলেবরে শুরু হবে উৎসব, তার বিবাহের আয়োজন। তারপর মহোৎসবের মধ্য দিয়ে তার শুভবিবাহ সম্পন্ন হলে সে বধূবেশে রাজা কিংবা রাজপুত্রের সঙ্গে যাবে নতুন রাজ্যে তার শ্বশুরালয়ে, সেখানেও তার জন্য অপেক্ষা করবে বিপুল সংবর্ধনা-সম্মান। আর পিতাশ্রী কি-না তার সকল স্বপ্ন আর সাধ জলাঞ্জলি দিয়ে তার বিবাহ দিতে চাচ্ছেন একজন বনবাসী মুনিকুমারের সঙ্গে, যে নাকি নিজের জন্মদাতা ব্যতিত আর কোনো মানুষ-ই দেখে নি! নাগরিক জীবন, আচার-ব্যবহার সম্পর্কে যার কোনো ধারণাই নেই; সে হয়তো দিনের পর দিন স্নান করে না, মাথায় লম্বা লম্বা ধূলি-মলিন জটা, কোনোদিন ভাল পোশাক পরে নি, ভাল খাদ্যদ্রব্য আহার করে নি। শাস্ত্র অধ্যায়ন ব্যতিত সংসারের আর কোনো ধারণাই হয়তো তার নেই, আর এমন একজন মানুষের গলায় কি-না তাকে মালা পরাতে হবে! সারাটি জীবন সেই বুরো মানুষটির সঙ্গে তাকে কাটাতে হবে, তার কামনা-বাসনার সঙ্গী হতে হবে, তার রতি ধারণ করে গর্ভবতী হতে হবে আর জন্ম দিতে হবে সন্তানের! এমন রাজকুমারীর জীবনের চেয়ে তো রাজবাড়ীর একজন ভৃত্যের কন্যার জীবনও ভালো!

শান্তা কোনোভাবেই নিজেকে বোঝাতে পারছে না, ক্রমাগত কেঁদেই চলেছে সে। কান্নার দমকে তার পিঠ ফুলে ফুলে উঠছে। মুনিকুমার সম্পর্কে এইসব কথা তার ভাবনায় যতো উঁকি দিচ্ছে ততোই তার মনে হচ্ছে যে পিতাশ্রী একটা বনমানুষ অথবা হনুমানের হাতে তাকে অর্পণ করতে যাচ্ছেন। নিজের মাথার কেশ হাত দিয়ে টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার। তার সেবাদানকারী সেবিকারা ভয়ে রুদ্ধ কপাটের বাইরে বসে আছে মূক হয়ে।

শান্তার এই মানসিক দূরাবস্থার কথা রাজমহিষী বর্ষিণীর কানে যেতেই তিনি ছুটে এলেন, কিন্তু শান্তা কিছুতেই তার কক্ষের কপাট খুলবে না, শেষে বর্ষিণীর অনেক অনুরোধের পর শান্তা রুদ্ধ কপাট খুলে দিলো। বর্ষিণী ব্যথিত কন্যাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায়-পিঠে আদুরে হাত বুলিয়ে দিলেন। কন্যাকে শান্ত করার চেষ্টায় নানাবিধ সান্ত্বনা দিলেন, দৈবকে মেনে নিয়ে রাজ্য এবং রাজ্যবাসীর মঙ্গলার্থে মুনিকুমারকে পতি হিসেবে গ্রহণ করার উপদেশ দিলেন। কন্যাকে সান্ত্বনা দিলেও ভেতরে ভেতরে তাঁর বক্ষও বিদীর্ণ হচ্ছে। কেননা শান্তা তাদের একমাত্র সন্তান। যদিও শান্তাকে তিনি গর্ভে ধারণ করেন নি কিন্তু গর্ভজাত কন্যার ন্যায় স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে বড়ো করেছেন অযোধ্যার রাজা দশরথের কাছ থেকে উপহার পাওয়া শিশুকন্যাকে। কখনো ভাবেন নি যে শান্তা তাঁর গর্ভজাত কন্যা নয়। তাঁরও ইচ্ছে ছিল কন্যার জামাতা হবেন কোনো রাজ্যের সুদর্শন-সাহসী বীর রাজপুত্র নয়তো রাজা। কিন্তু অদৃষ্টের লেখা কে খণ্ডাতে পারে! রাজা লোমপাদের ন্যায় তিনিও অদৃষ্টকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না। দীর্ঘক্ষণ কন্যাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন, নিজেও কাঁদলেন, বোঝালেন কন্যাকে। রাজা লোমপাদও এলেন কন্যার কক্ষে, তিনিও রাজ্যের মঙ্গল কামনায় দৈবকে মেনে নেবার পরামর্শ দিলেন কন্যাকে। একসময় রাজা লোমপাদ এবং রাজমহিষী বর্ষিণী দুজনই প্রস্থান করলেন। ছুটে এলো অদ্রিকা, মেধা, মেনকাসহ শান্তার অন্যান্য সখিরা। সখিরা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। রাত্রির অন্ধকার ঘনিয়ে এলে অদ্রিকা আর মেধা ব্যতিত সকলেই প্রস্থান করলো।

অদ্রিকা শান্তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে শয্যায়, আর মেধা মেঝেতে বসে জলচৌকিতে বাঁ-হাতের কনুইয়ে ঠেস দিয়ে গালে হাত দিয়ে আছে। প্রিয় সখিদের সান্নিধ্যে সবসময়ই খুশি থাকে শান্তা, অথচ আজ তার অন্তর ছেয়ে আছে বিষাদের ঘন ছায়ায়। তার মনে হচ্ছে বনবাসী মুনিকুমারের পত্নী হয়ে জীবন অতিবাহিত করার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। দিনের পর দিন সে চর্চার মাধ্যমে নিজেকে একজন রাজবধূ হবার যোগ্য করে তুলেছে। মাতাকে দেখে দেখে শিখেছে কী করে রাজবাড়ীর অন্দরমহল সামলাতে হয়; একজন রাজমহিষীকে কতোটা ধৈর্যশীল, বিচক্ষণ, পতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল আর বাকনিপুণা হতে হয়। নিজের দেহের যেমনি যত্ন নিয়েছে, তেমনি যত্ন নিয়েছে আপন চিত্তের। সে কি এতোসব করেছে একজন বনবাসীকে বিবাহ করার জন্য?

বিলাপ করতে করতে বললো শান্তা, ‘সখি, এই জীবন আর আমি রাখবো না। আমি হয় অগ্নি প্রবেশ করবো, বিষফল ভক্ষণ করবো নয়তো সর্প আলিঙ্গন করবো।’

প্রাণপ্রিয় সখির এই অন্তর্যাতনা অদ্রিকা আর মেধার বক্ষকেও বিদীর্ণ করছে। তাদের চোখে টলমল করছে অশ্রু। অদ্রিকা বললো, ‘সখি, তুমি এখনই ভেঙে পোড়ো না। এমনও তো হতে পারে যে গণিকারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো, তারা মুনিকুমারকে তার পিতার নিকট থেকে হরণ করে আনতে পারলো না। অথবা মহর্ষি বিভাণ্ডকের অভিশাপে প্রস্তরখণ্ড কিংবা ভস্ম হয়ে গেল গণিকারা!’

অশ্রুসিক্ত নয়নে শান্তা বললো, ‘সখি, গণিকারা চৌষট্টি কলায় পারদর্শী। ছলনায় এবং কলায় তারা বর্ষার কল্লোলিনী গঙ্গার ন্যায় প্রখর। তাদের নিপূণ কলানৈপূণ্যে কেবল মুনিকুমার কেন, স্বয়ং ব্র‏হ্মা-বিষ্ণু-শিবও হয়তো অটল থাকতে পারবেন না! জানো না, পুরাকালে কতো তপস্বীর কঠোর তপশ্চর্যা ভেঙে দিয়েছে স্বর্গের অপ্সরারা, তপস্বীদের পথভ্রষ্ট করে তাদের রতি ধারণ করে তারা সন্তানের জন্ম পর্যন্ত দিয়েছে। মর্তের এই গণিকারাও স্বর্গের অপ্সরাদের চেয়ে রূপে-গুণে কম নয়!’

কিছুতেই হৃদয় শান্ত হচ্ছে না শান্তার। কারো কোনো কথাতেই নির্বাপিত হচ্ছে না তার হৃদয়ের অগ্নি। কিছুক্ষণ পর মেধা প্রস্থান করলো। আর একই কথা বারবার বলতে বলতে অদ্রিকা আর কোনো সান্ত্বনা বাক্য খুঁজে না পেয়ে মর্মপীড়িত-অশ্রুস্নাত সখির পাশে অশ্রুসজল চোখে মৌন হয়ে বসে রইলো।

কিছুক্ষণ পর হাওয়ার বেগে ছুটে এসে শান্তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো সখি রাধা। শয্যায় উপবিষ্ট শান্তার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই তার হৃদয় আর্দ্র হলো আর শান্তা পুনরায় দু-হাতে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কয়েক পলকের জন্য রাধা শান্তার মুখশ্রীতে দৃষ্টি বুলাতে পেরেছে, তাতেই তার মনে হলো একবেলার শোকেই ম্লান হয়ে গেছে প্রিয় সখির মুখশ্রীর সৌন্ধর্য! কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে গেছে উপুড় করে রাখা পদ্মপুষ্পের পাপড়ীর ন্যায়। রাধা কাছে ছুটে গিয়ে প্রিয় সখির মাথায় হাত রাখতেই শান্তা দু-হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘সখি আমায় বিষফল এনে দাও, আমি খেয়ে প্রাণ জুড়াই!’

রাধার চোখ থেকে অশ্রুধারা গড়িয়ে নামলো অধরে। রাধা এতোক্ষণ রাজবাড়ীতে ছিল না, নিজের বাড়িতে গিয়েছিল দরকারী কাজে। রাজবাড়ীতে প্রবেশ করামাত্র অন্য একজন সখির মুখে সকল বৃত্তান্ত শুনেছে সে। অন্য সখিদের চেয়ে তার বক্ষ বিদীর্ণ হচ্ছে অধিক, কেননা সে বৃহন্নলা হলেও সকল সখির চেয়ে তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে শান্তা, আর শান্তা তাকে বলেছিল, ‘রাধা, আমার বিবাহের পর তুমিও আমার সঙ্গে আমার পতিগৃহে গিয়ে থাকবে। তুমি থাকলে আমি সর্বক্ষণ পুলক অনুভব করবো সখি।’

আর এখন? মুনিকুমারের সঙ্গে বিবাহ হলে সে কী অরণ্যে গিয়ে রাজকুমারীকে সঙ্গ দেবে!

আজ সন্ধ্যায় শান্তার নিজস্ব প্রমোদ কক্ষে নৃত্য-গীতের আসর বসার কথা ছিল। শান্তা নিজের এবং সখিদের আমোদের জন্য কয়েকদিন পরপরই নৃত্য-গীতের আসর বসায়। রাধা এই আসরের প্রধান শিল্পী, সে-ই আসর পরিচালনা করে, অন্য সখিরাও নৃত্য-গীত করে। মাঝে মাঝে রাজমহিষী বর্ষিণী এবং অন্তঃপুরের অন্যান্য নারীরাও নৃত্য-গীত উপভোগ করতে আসেন। শান্তা এবং তার সখিদের এই নৃত্য-গীতের আসরে অন্তঃপুরের নারী, শিশু এবং বৃহন্নলা ব্যতিত পুরুষদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কিন্তু আজ আর গানের আসর বসবে না, যেন মৃত মানুষের বক্ষের নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে রাজকুমারী শান্তার কক্ষে। রাধা কিছুক্ষণ শান্তার পাশে বসে নীরবে অশ্রু বিসর্জনের পর শোকার্ত শান্তার পিঠে, বাহুতে এবং শয্যায় ছড়িয়ে থাকা দীর্ঘ কেশরাশিতে দৃষ্টি পড়তেই উঠে গিয়ে হস্তীদন্তের কাঁকুই এনে বললো, ‘এখনই দুঃখে ভেঙে পড়লো চলবে না সখি। তোমাকে ঠিক মতো আহার-নিদ্রা করতে হবে। উঠে বসো দেখি, কেশ বন্ধন করে দিই।’

বলে রাধা নিজেই শান্তার বাহু ধরে তাকে বিছানা থেকে তুলে সোজা করে বসালো। দু-হাতে ছড়ানো কেশের গোছা একত্রিত করে কাঁকুই চালিয়ে বিন্যাস করতে লাগলো। পীড়িত কণ্ঠে শান্তা বললো, ‘সখি, এই দীর্ঘ কেশ আমি কর্তন করবো। কী হবে এই কেশদাম দিয়ে? কার জন্য যত্ন করে গুছিয়ে রাখবো? একজন বনবাসী জটাধারী মুনিকুমার কী এই কেশের মর্ম বুঝবে!’

রাধা কাঁকুই দিয়ে শান্তার কেশ আঁচড়ে খোঁপা করতে করতে অদ্রিকাকে বললো, ‘সখি অদ্রিকা, সুগন্ধির পাত্রটা দাও তো।’

অদ্রিকা উঠে গিয়ে সুগন্ধির পাত্র এনে রাধার হাতে দিয়ে বাতায়নের কাছে গিয়ে আবরণ সরিয়ে দিতেই এক পশলা বাতাস প্রবেশ করায় কক্ষের গুমোট ভাব যেন কিছুটা উবে গেল, আর বাতাসের ঝাপটায় কক্ষের জলন্ত প্রদীপগুলোর অগ্নিশিখা কেঁপে কেঁপে উঠলো। সে দৃষ্টি বোলালো আকাশের দিকে; না, নগরীর আকাশে মেঘের ছিটে-ফোঁটাও নেই। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে অদেখা মেঘের কাছে সে তার অন্তরের আকুতি জানালো, ‘ওগো ভিনদেশী মেঘ, একবার উড়ে এসো অঙ্গরাজ্যের আকাশে; ঋষির বয়ে আনা সংবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে ঝরে পড়ো অঙ্গরাজ্যের ভূমিতে, আমার সখির অন্তরের অনল নির্বাপিত করো। রক্ষা করো আমার সখিকে।’

কিন্তু ভিনদেশী মেঘের সাড়া না মেলায় কিছুক্ষণ পর অদ্রিকা পুনরায় এসে বসলো পূর্বের স্থানে।

রাধা সুন্দর খোঁপা বেঁধে শান্তার কেশে সুগন্ধি মাখিয়ে দিয়েছে। অল্পক্ষণ পর শান্তা তাকে বললো, ‘রাধা, তোমার মৃদঙ্গটা নিয়ে এসো সখি। আজ আমার কক্ষেই বাদ্য-গীত করো তুমি। যতো রকম বিদ্যা তোমার জানা আছে আজ তা প্রদর্শন করো। তোমার আঙুলে ঝড় তুলে শান্ত করো আমার অন্তরের ঝড়, আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না!’

রাধা উঠে হাতের কাঁকুই আর সুগন্ধিপাত্র যথাস্থানে রেখে মৃদঙ্গ আনবার জন্য প্রমোদ কক্ষের উদ্দেশে পা বাড়াতেই শান্তা আবার বললো, ‘রাধা, আমার বক্ষ দগ্ধ হচ্ছে, জ্বলে যাচ্ছে হৃদয় অরণ্য। আজ আমায় একটু মদ্য এনে দিতে পারো সখি? যাও, প্রিয় সখি, যদি আমায় কিছুমাত্র ভালবেসে থাকো, তবে আমার জন্য মদ্য নিয়ে এসো।’

অদ্রিকা বারণ করলো না, রাধাও অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শান্তার দিকে। তাদের সখির মনে আজ আগুন জ্বলছে। হয়তো তরল আগুনই পারে সখির মনের আগুন ক্ষণিকের জন্য নির্বাপিত করতে। কক্ষ থেকে প্রস্থান করলো রাধা। কপাটের বাইরের অলিন্দে শান্তার ভৃত্যরা বসে আছে আদেশের অপেক্ষায়। রাধা তাদের উদ্দেশে বললো, ‘তোমরা বিশ্রামে যেতে পারো। প্রয়োজন হলে আমি তোমাদের ডাকবো।’

চলে গেল ভৃত্যরা। রাধাও চলে গেল আর বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো মদ্য নিয়ে প্রবেশ করলো শান্তার কক্ষে, শান্তার শয়নকক্ষ লগ্ন নিজন্ব প্রমোদকক্ষ থেকে নিয়ে এলো মৃদঙ্গ। অদ্রিকা কক্ষের কপাট বন্ধ করে দিলো আর রাধা মৃদঙ্গ রেখে তিনটি তাম্রপাত্রে মদ্য সাজিয়ে রাখলো মেঝের জলচৌকির ওপর। শয্যা থেকে নেমে মেঝেতে বসলো শান্তা, মদ্যপাত্র হাতে নিয়ে যেন শূন্য দৃষ্টিতে চুমুক দিলো। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে বসে রাধা মদ্যপাত্রে চুমুক দিয়ে ধীর লয়ে মৃদঙ্গে তাল ঠুকলো। বাজাতে লাগলো একের পর এক বিভিন্ন লয়ের বাজনা, গীতও গাইলো। প্রদীপের তেল কমে এলো, রাত বাড়তে লাগলো, রাধাও ক্রমশ ঝড় তুললো তার আঙুলে। মদ্যের মাদকতা আর মৃদঙ্গের নিনাদে অবগাহন করে শান্তা ক্ষণিকের জন্য ভুলে থাকতে চাইলো তার অন্তর্যাতনা।


(চলবে......)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×