একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে পুত্র ও নাতিকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্প অর্পণ করে টিএসসির দিকে হাঁটতে হাঁটতে পুরোনো দিনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায় প্রবীণ কথাসাহিত্যিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফয়জুল কবীর জিন্নার, মনঃশ্চক্ষে অনেক বন্ধুর মুখ ভেসে ওঠে, যাদের কেউ মারা গেছেন আর কেউবা নিভু নিভু প্রদীপের মতো এখনো আছেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে এ পথেই ফুরিয়েছে তাদের যৌবন। টিএসসির কাছে আসতেই অনুজপ্রতিম চিত্রশিল্পী হাকিম বিন মনসুর তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে এসে বলেন, ‘আরে জিন্না ভাই! কেমন আছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ, সুস্থ আছি। তুমি কেমন আছো মনসুর?’
‘আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি। আপনাকে দেখে ভালো লাগছে, এই বয়সেও শহীদ মিনারে আসেন!’
‘কী বলো তুমি মনসুর! আমাদের অগ্রজেরা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিলেন, আর আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসবো না! এই বুকের সবটুকু জুড়ে রয়েছে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির প্রতি প্রেম, তাইতো বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা করেই জীবনটা পার দিলাম! বয়স হয়েছে সত্য, কিন্তু মন তো মানে না, তাই আজও ছুটে আসি।’
‘সত্যিই জিন্না ভাই, আপনাদের দেখে নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে।’
‘আমার বেশ গর্ব হয় জানো, আমরা দুই প্রজন্ম বাংলা ভাষার সেবা করে যাচ্ছি।’
‘এটা সত্যিই গর্ব করার মতো ব্যাপার!’ সদ্য মধ্য বয়সে পা দেওয়া জিন্নার ছেলের দিকে তাকিয়ে মনসুর বলেন, ‘তোমার কবিতার চর্চা কেমন চলছে তিতুমীর?’
মোহাম্মদ আজওয়াদ আহবাব তিতুমীর বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো চলছে চাচা।’
‘বাহ বেশ বেশ, তোমাদের হাতেই তো সমৃদ্ধ হচ্ছে উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতা! এবার তোমার বই বেরিয়েছে?’
‘না, এবার বই করিনি, ইনশাল্লাহ আগামী বছর বের করবো।’
‘বের হলে বোলো।’ হঠাৎ তিতুমীরের ছেলের দিকে দৃষ্টি পড়ে মনসুরের, ‘তোমার ছেলে? মাশাল্লাহ দেখতে সুন্দর হয়েছে, বেশ বড়ো হয়ে গেছে। কি নাম তোমার দাদু ভাই?’
তিতুমীরের পাঁচ বছরের ছেলে বাবার আঙুল মোচড়াতে মোচড়াতে বলে, ‘মোহাম্মদ আয়মান আওসাফ সবুজ।’
‘বাহ, খুব সুন্দর নাম!’ সবুজের গালে আদর করেন মনসুর, তারপর জিন্নার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘আসি জিন্না ভাই। দেখা হবে।’
‘বাসায় এসো।’
‘আসবো সময় করে।’
মনসুর বিদায় নিলে আবার তিতুমীর এবং সবুজের সঙ্গে হাঁটতে থাকেন জিন্না।
‘আসসালাম ওয়ালাইকুম চাচা।’
ভিড়ের মধ্যে সালাম পেয়ে জিন্না সালামকারীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেন বন্ধু ডা. আলীর ছেলে বখতিয়ার, সালামের জবাব দিয়ে বলেন, ‘তোমার আব্বা কেমন আছে বখতিয়ার?’
‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছেন। আব্বা আপনার কথা প্রায়ই বলেন। চাচা আমার একটা আবদার আছে আপনার কাছে।’
‘বলো, কী আবদার।’
‘আমার ছেলে হয়েছে, আমার ছেলের নামটি আপনি দেবেন।’
‘আলহামদুলিল্লাহ তোমার ছেলে হয়েছে শুনে খুব খুশি হলাম। কাল বিকেলে ফোন দিও, নাম দেব।’
পরদিন বিকেলে বখতিয়ার ছেলের নামের জন্য ফোন করে জিন্নাকে, জিন্না তার ছেলের নাম দেন- মোহাম্মদ আসীর ইনতিয়ার ইমন।
বখতিয়ার বিগলিত হয়ে বলে, ‘মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ, খুব সুন্দর নাম! জাযাকাল্লাহু খাইরান।’
ঢাকা
ফেব্রুয়ারি, ২০২২।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০১