somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোৎস্নার মেঘমালা অথবা আশা-ফুল

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত জেগে জোনাকিদের কুচকাওয়াজ দেখতে দেখতে কখনো কখনো সিমির নিঃশ্বাস ভারী হয়ে ওঠে। ভোর হলে হয়তো জোনাকিরা মিশে যাবে ব্যস্ততার জনসমুদ্রে,চন্দ্রাহত জলের গোপন ভাঁজে ভাঁজে ঢেউয়ের সাথে মিশে হারিয়ে যাবে কোনো নীল জলরাশিতে কিংবা সেখানটায় ঠিক যেখানটায় ঘুমন্ত ঠোঁটের কাছাকাছি স্বপ্ন ঝুলে থাকে আমাদের জাগিয়ে দিতে,তাই না ? সিমির প্রশ্নটা গুঞ্জন তুলে থেমে যায় রায়হানের চোখের অতলে।

রায়হান জানতে চায় - তারপর ?

তারপর রাতের শৃঙ্খল ভেঙে একে একে বেরিয়ে পড়ে চাঁদ,জ্যোৎস্নার মেঘমালা আর অন্ধ পিপীলিকারা। ছুঁয়ে দিতে চায় ভোরের শুকতারাকে।

জ্যোৎস্নায় মেঘমালারাও বুঝি থাকে,আমার শৃঙ্খলভাঙা নারী ! ভারী অদ্ভুত ব্যাপার তো!

এরপর রায়হানের বিমুগ্ধ আঙুলেরা পাতার পর পাতা লিখে চলে সিমির ব্যঞ্জনাময় পংক্তি নৈশভ্রমণের পথ অনুসরণ করে। ওর অধর সিমির চোখের পাতায় এঁকে দেয় স্বপ্নের উপত্যকা,এঁকে দেয় নীল পাখির অস্থির পায়চারী,লিরিকস সিম্ফনি,গড়ে দেয় সাম্রাজ্য। বলে -

প্রিয় নারী,এসো বৃষ্টিতে ভিজি। জেনে রেখো এ বৃষ্টি আমাদের যৌথ অশ্রু নয়। চলো দলিত এ ধারার সাথে করে নেই বোঝাপড়া। শৃঙ্খলিত অবিশ্বাসী নূপুরের ছন্দকে মুক্ত করে দাও আজ। ঘুমাও ব্রহ্মাণ্ডের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, আমার প্রিয়তমা নারী!

সিমির কাছে মনে হতে থাকে চুইয়ে পড়া রোদের মতো রায়হানের কণ্ঠ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। সিমির দু'চোখ বেয়ে ঘুম নামে, ওকে আচ্ছন্ন করে রাখে কোনো মায়াঘ্রাণে। কিন্তু ও প্রাণপণে জেগে থাকতে চায়। কারণ ঘুমোলেই টুপ করে মানুষটা উড়ে যাবে। সেদিনও ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবার পরও স্বপ্নে দেখেছে রায়হান ওর পাশে নেই। বাইরে রাতজাগা কুকুরদের তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠা ওকে ভীত করেছে যথেষ্ট। সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে বাথরুমে উঁকি দেবার পর মনে হয়েছে হয়তো ভেন্টিলেটরের পেছনে ও ঝুলে আছে। ঠিক তাই, উঁকি দেয়া মাত্রই রায়হান ওকে বলেছে -

তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি। বলেই কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলো। ব্যাপারটা ভীষণ গোলমেলে লাগলেও সকালে যখন ঘুম ভেঙেছে ওর একবারও মনে হয়নি ঘরের দরজা দিয়ে বের না হয়ে ভেন্টিলেটরে ও কেন ঝুলছিলো! নিশ্চয়ই ও ঠিক কোনো প্রয়োজনেই এমনটা করেছিলো,হুম বলে মাথা নাড়ে সিমি। এরপর ও সারাদিনই কান খাড়া করে রেখেছে রায়হান কখন ফেরে। এখন বাইরে যেতে হলে দরজায় তালা লাগিয়ে গেলেও আর সমস্যা হবে না। দরজা বন্ধ থাকলেও ভেন্টিলেটরের ফাঁক গলিয়ে ও ঠিক বাসায় ঢুকতে পারবে।

এরপর সিমি সারাদিন বুকের মধ্যিখানে একটি আশাফুলের কুঁড়ি নিয়ে ঘোরে। সময়ের সাথে সাথে ওর ছায়ার দৈর্ঘ্য বাড়ে। নিওরোন গোলকে উদ্বিগ্নতা,আবেগ সংশয়ের ঘনঘটা আর মিষ্টি অলৌকিক সুরের অনুরণন থেকে। কী চায় সিমি ?ও জানে না। শুধু বুঝতে পারে একটু আগেও দিনের আলো ছিলো কচি লেবুর গন্ধ ছড়িয়ে। গোধূলি এলো বলে! এসো তুমি,ঝরা পাতার শব্দ থেকে ফুল ফোঁটার শব্দ পর্যন্ত অফুরান সম্ভাবনা নিয়ে আমায় আলিঙ্গন করো - বলে সিমি ওর দু'হাত প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে। শেষ বিকেলের রোদ একটু একটু করে হারিয়ে যায় কুয়াশার ফনায়। ওপারেই সমুদ্র। সমুদ্র মানেই সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে নেমে যাওয়া,অতলে অবগাহন তোমার সাথে,রায়হান!
আর তখনই ব্যাপারটা ঘটে। একটা চাপা নিঃশ্বাস টের পায় সিমি ওর আশেপাশে। চোখ বন্ধ থাকায় ওর ইন্দ্রিয়ের তীব্রতা যেন কোনো গভীর গহ্বর ঠেলে উঠে আসে। ঘর জুড়ে অদ্ভুত ইউক্যালিপ্টাস হাওয়ার ছড়াছড়ি। ফিসফিসিয়ে রায়হান বলে -

আলো জ্বেলো না। পরস্পরের বাহুতে মাথা রেখে আজ চলো নক্ষত্ররাজির নকশীকাঁথা বুনি। কান পাতো,সমুদ্রের স্বর শুনতে পাবে। ঘুমিয়ে পড়ো না।

সিমি কিছু বলতে উদ্যত হলেও রায়হান ওর ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বলে - উহু,কথা বলে এখন মুহূর্তটুকু নষ্ট করো না। রাত্রির অস্তিত্ব অনুভব করো।

রায়হানের কথা শুনতে শুনতে সিমির কেমন তন্দ্রাভাব হয়। এলোমেলো পায়ে আলোআঁধারি কামরার একমাত্র বিশাল জানলার গ্লাসটি খুলে দিয়ে রায়হান বলে -

যে একরত্তি নিঃসঙ্গ হাহাকার কিছুক্ষণ আগেও লুটোপুটি খাচ্ছিলো ল্যাম্পপোস্টের তলায়, ও এখন বাড়ি চলে যাচ্ছে। ওকে আর ডেকো না,কেমন ?

রায়হান,বাঁশির আওয়াজ পাচ্ছো ?

হুম,কান পেতে শোনো ঘুমন্ত নগরীর গান!

আমাকে রেখে চলে যাবে নাতো ? সিমি ওর বাহু শক্ত করে ধরে রাখে কাঁধে মাথা হেলিয়ে

পাখি হবে সিমি ?

টুপটাপ করে পড়া শিশিরফোঁটার মতো শব্দ করে রায়হান কথা বলে যায়। সিমি বোঝে না ও কি বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরেই রায়হান কিছু বলে যাচ্ছে। শিশিরফোঁটাগুলো ঘরের এপ্রান্ত- ওপ্রান্ত জুড়ে খেলা করছে,দেয়াল জুড়ে রেখে যাচ্ছে তাদের জলজ পদছাপ। হিমেল আবরণে ডুব দিচ্ছে সিমিকে নিয়ে।

সিমি,তোমাকে নক্ষত্রটিপ এনে দেবো। চোখ খোলো। সিমি, সিমি... করে কেউ যেন ওকে ডেকেই যাচ্ছে।

সিমি চোখ খুললে দেখতে পায় রাত্রি জ্বলে-পুড়ে চোখের সামনে উজ্জ্বল আকাশ। একি ছাদ কি করে হাওয়ায় মিলালো! পুরো আকাশটা একসময় সিমির দু'চোখ গ্রাস করে নিলো স্মৃতিরোদ হয়ে। এর মাঝে জ্বলজ্বলে এক বিন্দু। সূর্য! রায়হানের নক্ষত্রটিপ! সূর্যও তাহলে নক্ষত্র হয়ে যায় বুঝি ? আজও ও চলে গেলো দেয়াল ফুঁড়ে,পাখি হয়ে! সিমিও হাত বাড়ায় পাখির বনজ্যোৎস্না হতে। আহ্‌! আমাকেও আজ উড়িয়ে দিলে জীবনের না-ছোঁয়া উচ্ছ্বাসে !

সমাপ্ত
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×