somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প: হাসি (সবাইকে বড় মিস করছি)

২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এক-

ভোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অথচ এক রহস্যময় যুবক। তার আচরন আর কথাবার্তা অনেক সময় বিপরীতমূখী মনে হয়। প্রতিদিন বিকেলে মলিদের বাসায় যেতে হয় তাকে পড়াতে। বিশেষ করে মলিই দিন রাত ভেবে যায় অথচ ভোলাকে বুঝতে পারে না। প্রতিদিন একই পোষাক পরা, পুরনো সেলাই করা জুতো তাও আবার এক পায়ের হিল নেই-ভোলার এ বিষয়গুলো মলির কাছে একেবারেই বেমানান। একবার বিষয়গুলো ভোলার কাছে বলতে গিয়ে মলিকে ধমক খেতে হয়েছে।
আজ পড়তে বসে মলি দেখতে পেলো-ভোলার বাম পাশের গাল লাল হয়ে ফুলে আছে। পড়ার মাঝে মলি শুধু উস্‌খুস্‌ করছে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করার জন্য। ভোলা মলির পড়া লিখছে আর বলছে-
"মলি, আজ তোমার পড়ায় মনযোগ নেই।"
"স্যার, আপনি সত্যি কথা বলেছেন।"
"তাহলে কেন?" ভোলা লেখা থামিয়ে মলির দিকে তাকায়।
"একটা কথা বলি, ধমক দিবেন নাতো?"
"ধমক দেব না।"
মলি বলল-"স্যার, আপনার বাম গালটা ফুলে আছে কেন?"
ভোলা বলল-"সত্যি কথা বলবো?"
"জী বলেন।" মাথা বাঁকিয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল মলি।
ভোলা অতি স্বাভাবিকভাবে বলল-
"এখানে আসার পথে পুলিশের থাপ্পড় খেয়েছি। এক রিক্সাওয়ালাকে পেটাচ্ছিল। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাকেও কিছু খেতে হলো আরকি।"
কথাগুলো শুনে মলি ফিক্ করে হেসে উঠলো আবার হাসি চেপে বলল-"স্যার, তারপরও আপনাকে প্রতি দিনের মতই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আপনার খারাপ লাগছে না?
ভোলা বলল-"আমার খারাপ লাগছে না। নিজের কষ্টে আমি অতটা বিচলিত হইনা যতটা অন্যের কষ্টে হই।"

-দুই-

বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই মলি লক্ষ্য করলো ভোলার জামার উপরের দু’টো বোতাম ছেড়া, পকেটটা ছিড়ে অর্ধেক ঝুলে আছে। পড়ার রুমে ভোলার পিছু পিছু আসতেই মলি বলে উঠলো-"স্যার!"
ভোলা আরাম করে বসে মলির দিকে চোখ তুলে তাকালো-
"আজকেও তোমাকে সত্যি কথা বলবো?"
"জী বলেন।" মলির স্বাভাবিক উত্তর।
ভোলা বলতে লাগলো-"ফুটপাতে একটা দোকানে একটা জামা পছন্দ হয়েছিল। আমার পকেটে অবশ্য সামান্য কিছু টাকা ছিল। তারপরও জামাটা নেড়েচেড়ে দোকানীকে দাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানী বড় একটা দাম হাকালো। আমি জামাটা রেখে চলে আসতে চাইলাম। দোকানী বলল-কত দিবেন। আমার কাছে যে টাকা আছে তা দিয়ে হবে না বিধায় বললাম- না নেব না। তখন দোকানী আমার জামার কর্লার ধরে বলল-দাম বলে যেতে হবে। তখন ধস্তাধস্তি করে এই অবস্থা। দেখো পকেটটাও ছিড়ে গেছে।"
মলি ফিক্ করে হেসে উঠে আবার চেপে গিয়ে বলল-
"স্যার, তারপরও আপনাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।"

-তিন-

ভোলা মাসের মাঝামাঝি সময়ে একদিন অসময়ে মলিদের বাসায় গিয়ে হাজির। ভোলা বলল-"মলি, আজ তোমাকে আমি পড়াবো না।"
মলি বলল-"স্যার, আপনাকে আজ খুব কান্ত মনে হচ্ছে। কোন সমস্যা?"
"মলি, আজকেও তোমাকে একটা সত্যি কথা বলি-মেসে আমার চার / পাঁচ মাসের ভাড়া বাকি আছে। আমার রুমমেটরা আমার বিছানা, বইপত্র সব বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আমি কোন প্রতিবাদ করিনি। কারণ ওদের কোন দোষ নেই। আর ফেলে দেয়া জিনিসপত্রগুলো আমি আর টোকাইনি। কারণ এখন আমার কোন গন্তব্য নেই।"
মলি মাথা হেড করে ভোলার কথাগুলো শুনলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভোলা আবার বলল-"মলি, তোমার মাকে ডেকে নিয়ে এসো, তাঁর সাথে কথা আছে।"
মলি ভেতর থেকে তার মাকে নিয়ে আসলো। ভোলার সাথে কুশল বিনিময় হল। তারপর ভোলা মলির মাকে বলল-
"খালাম্মা, হঠাৎ করে আমি একটু আর্থিক সংকটে পড়ে গেছি। হয়ত মলিকে আমি আর পড়াতে পারবো না। আমার এই চলতি অর্ধেক মাসের বেতনটা যদি দিয়ে দিতেন তাহলে খুব উপকৃত হতাম। মলির মা কথাটা রাখলেন না। উল্টো অনেকগুলো কথা শোনালেন। ভোলা শুধু বলল-"ঠিক আছে, খালাম্মা।"
মলির চোখ দু’টো জলে ভেজা। ভোলা বলল-"মলি, তুমি খুব ভাল মেয়ে। আমার সব গল্পের শেষে তুমি ফিক্ করে হেসে দিতে। অথচ আজকে তুমি কাদলে। কিন্তু আজকে আমার খুব হাসি পাচ্ছে।" ভোলা এবার সত্যি সত্যি হাসলো। তারপর ভোলা ধীর পদক্ষেপে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলো। মলি দু’চোখে এক সমুদ্র জল নিয়ে তাকিয়ে থাকে ভোলার চলে যাওয়া পথের দিকে।

-সমাপ্ত-
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×