somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরাও পাকিস্থানি!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষার প্রশ্নে আপোষ না করার প্রেক্ষিতে বাঙালির সবচাইতে বলিষ্ঠ আবেগ ছিলো সাংস্কৃতিক ঐক্যবদ্ধতা।বখতিয়ারের ঘোড়া এ বঙ্গে প্রবেশের আগে কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাতের খবর ইতিহাসে পাওয়া যায় না যাকিনা একটি সম্প্রীতির ইঙ্গিত বহন করে।ঐতিহ্যগত এই সহবাস বঙ্গ হরিকেল ,সমতট রাঢ় জনপদ হয়ে আজকের ভূখণ্ডের বাংলাভাষা মজ্জায় ,চেতনায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যে এই ভাষার জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম জাতীয়মুক্তির সোপান হয়ে দাড়িয়েছিলো।ভারত পাকিস্থান বিভাজন এই সহবাসে সাময়িক ছেদ ঘটালেও ১৯৫২ সেই আবেগকে পুনরুজ্জিবিত করেছে নিঃসন্দেহে। ঐতিহাসিক ৫২’র এই সংগ্রাম ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা শক্তিশালী করতে যেভাবে কাজে লেগেছে তা ভিন্ন জাতিসত্ত্বায় নেই বললেই চলে।দ্বিজাতি তত্ত্বের ভ্রান্ত এবং অন্যায্য জাতিগত ধারণাকে যে শ্রেনী গ্রহণ করেছিলো সেই একই শ্রেনীই সাম্প্রদায়িক পাকিস্থানকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলো অল্পসময়েই এই ভাষাভিত্তিক অধিকারের প্রেক্ষিতে।পর্যায়ক্রমে এই পূর্ব পাকিস্থানবাসী যেভাবে পাকিস্থানকে অমানবিক এবং অসঙ্গগত রাষ্ট্রব্যাবস্থা বলে উন্মোচিত করে তার উপক্রনিকা ছিলো ভাষা আন্দোলন।
শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় চিন্তা থেকেই যে রাষ্ট্রের ভিত্তি সে রাষ্ট্র ভাষার মতো অতীব প্রাকৃতিক বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে যেটি কিনা হাজার বছরের যূথবদ্ধতার বিপরীত ।এই প্রেক্ষাপটই১৯৫২ সালের ভাষার দাবিতে গড়ে উঠা সংগ্রাম এই ভূখণ্ডকে আলাদা সত্ত্বা এনে দেয়।যার ফলশ্রুতিতে আজকের বাংলাদেশ গড়ে উঠার রক্তাক্ত ইতিহাস।কিন্তু এতো রক্ত এতো সংগ্রামের পরিচলন পথে আমাদের লড়াই ছিলো কখনো সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে কখনো অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে।পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালি অবাঙ্গালি ধারায় বিভক্ত হয়েছে গোটা মানুষ,ব্রিট্রিশ শাসনে জিন্নাহর নেতৃত্বে আমরাই প্রশ্ন করেছি আমরা ভারতবাসী নাকি পাকিস্থানি।বাঙালি পরিচয়ের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহন করেই আমরা ৭১ এর সূচনা করেছি।এই দীর্ঘপথে আমরা যেমন ভুলে গেছি আমাদের সঙ্গগ্রামের কারন।সেদিন আমরা লড়াই করেছি কারন ঐসব শাসকরাই এদেশের ভাষার অস্তিত্ত্বকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিলো,ঐসব শাসকরাই আমাদের উপর বৈষম্যের খড়গ চাপিয়েছিলো।অথচ,আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পর আমাদের শাসক এবং জনগনের ক্ষুদ্রাংশ কি পাকিস্থানির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় নি?

প্রথমত,১৯৭২ সালের গৃহিত সংবিধানমতে বাংলাদেশের সকল নাগরিক বাঙ্গালি।স্বভাবতই এ ভূখণ্ডের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সকল আদিবাসী এঈ বাঙালিত্ব গ্রহন করে আত্নপরিচয় ভুলতে চাই নি যেটা আমরাও ৫২ তে চাই নি।
দ্বিতীয়ত,আদিবাসী জনগোষ্ঠির আত্নপরিচয়ের উপলব্ধি শুধুমাত্র নিছকই একটি স্বীকৃতির দাবি নয় যা নতুন করে বলার কিছু নাই।বরং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় নেই উন্নয়ন,নেই বসতভিটা,নেই যোগাযোগ,নেই সাংস্কৃতিক আত্নপরিচয় চর্চা কিংবা টিকে রাখার গ্যারান্টি।
তৃতীয়ত,বাংলা ভাষাকে পাকিস্থানের সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে বড় আবেগ ছিলো ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষা তথা মাতৃভাষা’।বড় পরিতাপের বিষয় হলো এই ,যে বাংলাভাষাভাষী মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে প্রাণ দিয়েছে সেই তারাই আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থাটিও করতে পারে নি ।
চতুর্থত,কাপ্তাই লেক বানাতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষকে উদবাস্তু করার মাধ্যমে যে দখলদারিত্ব চালানো হয়েছে তা কি বাঙালিদের প্রতি পাকিস্থানি নিপীড়নের থেকে ভিন্ন কিছু?উপরন্তু হাজার বাঙ্গালিকে সেখানে পাঠিয়ে জমি দখলের যে কারবার চলেছে এবং চলছে তা শুধুমাত্র একটি খণ্ডিত অংশের মানুষের চাহিদা পূরনের জন্য ভিন্নজাতির মানুষদের উপর রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন যা পাকিস্থানি রাষ্ট্রচরিত্রকেই মনে করিয়ে দেয়। পাহাড়ি জনগনের উপর জারি রাখা হয়েছে অঘোষিত সামরিক শাসন।এরশাদের সামরিক শাসন আমরা ১ দশক সহ্য করি নাই অথচ পাহাড়ে অবিরত সেনাশাসন আমরাই যুক্তিসিদ্ধ করছি ।
১৯৬৪ সালে হালুয়াঘাট ,ময়মনসিংহ,শেরপুর প্রভৃতি অঞ্চলে পাকিস্থানি সরকার কর্তৃক আদিবাসী বিতাড়ন করা হয়েছে যা এখন ইতিহাস । খাগড়াছড়ি,বান্দরবান,রাঙ্গামাটির মানুষগুলোর দেশান্তরের গল্প অজানা নয় আবার এই দেশান্তরি মানুষদের জায়গাজমি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার ঘ্টনাও বলে শেষ করা যাবে না। আদিবাসীদের সংস্কৃতি কি অবস্থায় আছে তা আমরাও যেমন জানি না সরকারও জানে না। নিরেট বাস্তবতা এই যে স্বাধীন এই দেশেও আদিবাসীরা দেশত্যাগ করে,আজকের বাংলাদেশের বাংলাদেশী বাঙালিদের কাছে এই দেশান্তরের ব্যাখা কি?আদিবাসীদের স্বকীয়তা,সংস্কৃতি,ভাষার অস্তিত্বরক্ষায় শাসক এবং বাঙালির আন্তরিকতা কতটুকু?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর কোথায়, জানা নেই তবে এটুকু বলা ভাষার জন্য যে মানুষগুলো প্রাণ দেয় সেই তাদের অন্তত ভাষা সংস্কৃতির প্রশ্নে যেকোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত। বিবেক তাই বলে………
তা না হলে বরকত রফিকের আত্নত্যাগকে অমর্যাদা করা হয়। একুশের প্রহরে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা যখন শহীদ মিনারে যায় তখন সেটা প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছু নয় কারন এই রাষ্ট্রই আজ অন্য জাতিসত্ত্বার ভাষা স্বকীয়তাকে অস্বীকার করছে।কাজেই দিনশেষে আমরা আর রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছি একেকটা আস্ত পাকিস্থানি…।
২১ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে বাঙালির আবেগ আর পাকিস্থানি রাষ্ট্রচরিত্র - এই দুটি একসাথে চলে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×