somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিএইচডি ডিগ্রি জালিয়াতি, জাতির দৈন্যতা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

০৫ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তমত
মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০১৫ ১৪:১৩ ঘণ্টা
পিএইচডি ডিগ্রি জালিয়াতি, জাতির দৈন্যতা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, মেহেরীন ইসলাম কলি নামের এক মহিলা, তিনি আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি (ইউকে ক্যাম্পাস) থেকে বিবিএ সার্টিফিকেট নেন লন্ডনের গ্রিলহল কলেজ থেকে। তার ডিগ্রির সমতা বিধান করতে গিয়ে ইউজিসি দেখতে পায় ওই ছাত্রী লন্ডনে কোনো দিন যাননি। বাংলাদেশে বসেই লন্ডনের ওই কলেজের সার্টিফিকেট নিয়েছেন আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে। আজমেরি ইসলাম নামের অপর এক নারী আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তার সনদ যাচাই করেও ভুয়া বলে প্রমাণ পায় ইউজিসি। এ বিষয়ে ইউজিসির তথ্য মতে, শুধু দেশের নয়, বিদেশ থেকে ডিগ্রি যারা আনে তাদের ডিগ্রি সমতা বিধান করতে গিয়ে প্রায়ই এ ধরনের অসমতা ও ভুয়া সার্টিফিকেট ধরা পড়ে। ভুয়া সনদধারীদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এক ঘটনা ছিল ২০১১ সালে। ওই সময় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের কাছে ধরা পড়েন আল জাহেরী নামে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের (আরইবি) এক কর্মকর্তা। তিনি পিএইচডি ডিগ্রি সমতা বিধান করার জন্য ইউজিসি’র কাছে আবেদন করেন। পিএইচডির সুপারভাইজার হিসেবে তিনি খোদ ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করেন। এরপর ওই ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান ডেকে পাঠান। সেই ব্যক্তির কাছে নজরুল ইসলাম জানতে চান তিনি (নজরুল ইসলাম) দেখতে কেমন। ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি দেখতে অনেক লম্বা এবং মুখে তার দাড়ি রয়েছে। এই সময় চেয়ারম্যানের রুমে ইউজিসির সদস্য ছাড়াও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তখন হাস্যরস তৈরি হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ ওই কর্মকর্তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পরে জানা যায়, আরইবি’র ওই কর্মকর্তা রাজধানীর ঝিগাতলার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ইউএসএ (বাংলাদেশ স্ট্যাডি সেন্টার)সহ অন্তত ৫৬টি প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ টাকায় পিএইচডি ডিগ্রি বিক্রি করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেশির ভাগই মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া কেন্দ্রিক পরিচয় দেয়। আর ভুয়া ডিগ্রি নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি আমলা, কর্মকর্তা ও আইনজীবীর সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এ রকম কয়েকজন ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে চিহ্নিতও করেছে। তাদের ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, যারা ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি নেয়, তাদের ডিগ্রিকে সমতা করাতে আমাদের কাছে আসে না। তবে এ ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি সংখ্যা সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে না থাকলেও ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছেন এ সংখ্যা ৫ হাজারের কম নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চলতি বছর মে মাসে গাজীপুর সদর উপজেলাধীন কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলতাব হোসেন ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর শুধু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করে এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রির সন্ধান পেয়েছে ডিআইএ। অর্থাৎ প্রাপ্ত অভিযোগের প্রায় ৯০ ভাগই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই এই গুরুতর অপরাধ করেননি। তথ্য নিয়ে যতদূর জানার চেষ্টা করেছি তাতে, কয়েক জন যুগ্ম সচিব, উপ-সচিব, কয়েকটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা অবৈধভাবে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। এছাড়াও একটি জেলার শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, হাইকোর্টে দুই ডজন আইনজীবী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ক্যাটালগার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক, তথ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং কয়েকটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে চাকরি করছেন এমন ডিগ্রি নিয়ে। তারা ২০১৩ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এই ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি জমা দিলেও এখন তারা নীরব রয়েছেন। তদন্ত সূত্র বলছে, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে বাড়তি সুবিধা নেয়ার জন্যই অনেকে এমনটি করে থাকেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, শুধু দেশে নয়, বিদেশ থেকে অনেকেই ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আমেরিকা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ (বাংলাদেশ স্ট্যাডি সেন্টার) নামে একটি প্রতিষ্ঠান গত ১০ বছরে ৪ হাজারের বেশি পিএইচডি ডিগ্রি দিয়েছে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলার পর এখন তা বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকে সেখান থেকে নেয়া সার্টিফিকেটধারী ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করছেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:২৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×