বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের মস্তিষ্ক কখনোই তার চলমান অবস্থা থেকে বিরত থাকে না। জন্ম থেকে মৃতু্য পর্যন্ত সার্বক্ষনিকভাবে মস্তিষ্ক সচল থাকে । শারীরিক বিশ্রামের জন্য যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি তখনোও মস্তিষ্ক কাজ করে । আমরা জাগ্রত অবস্থায় যেসব দৃশ্য দেখি অথবা কল্পনায় যেসব দৃশ্য আনতে পারি, সেসব দৃশ্যকল্প অনেকটা কম্পিউটার মেমোরির মত আমাদের অবচেতনে রেকর্ড হতে থাকে । আমরা ঘুমিয়ে গেলে আমাদের 6ষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে এই দৃশ্যগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ।প্যারাসাইকোলজির সূত্র মতে, যা আমাদের কল্পনা অথবা অভিজ্ঞতার বাইরে, আমরা তা কখনোই স্বপ্নে দেখতে পারি না । যেমন-আমাদের দেশের একজন নিরক্ষর দিনমজুর কখনোই একটি স্পেসশিপ বা সাবমেরিন স্বপ্নে দেখতে পারবে না । কারন এই ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে সে পরিচিত নয় ।
19শতকের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ও স্বপ্ন বিশ্লেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, সুনিদ্রার জন্য স্বপ্ন সহায়ক ভূমিকা পালন করে । প্রতিটি স্বপ্নের বিষয়ই মানুষের অবচেতন মনের এককটি ভিজু্যয়াল ভার্সন ।
হোমারের ইলিয়াড ওডিসি, ব্যাসদেবের মহাভারত অথবা বাইবেল এ স্বপ্ন বিশ্লেষনের যেসব তথ্য পাওয়া যায় তাতে বোঝা যায় প্রাচীনকাল থেকেই স্বপ্নকে মানুষ ভবিষৎ ঘটনার পূর্বসংকেত বলে মনে করে আসছে । আধুনিক মনোবিজ্ঞানী ও সনাতন স্বপ্ন বিশ্লেষকদের মধ্যে একটি মৌলিক সাদৃশ্য রয়েছে সেটি হল, উভয়ই স্বপ্নকে রূপক ও প্রতীকী অর্থে গ্রহণ করে । যেমন-সাপকে শত্রু, কবুতরকে শান্তি, কুকুরকে অশুভ আত্মার প্রতীক ইত্যাদি বলে চিহ্নিত করেছেন স্বপ্ন বিশেষজ্ঞরা । ফ্রয়েড তার 'Interpretations of dreams'-এ বলেছেন মানুষ যা কিছু স্বপ্নে দেখে তা একেকটি রূপক প্রতিচ্ছবি ।এটি তার অবদমিত কামনার অন্তর্গত উন্মোচন । তবে কিছু কিছু সন্তোসজনক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায় নি । যেমন- কেউ পরপর কয়েকদিন স্বপ্ন দেখলো রাস্তায় হাটার সময় একটা গরু এসে তার ডান কাঁধের মাংস খুবলে নিয়েছে । কিছুদিন পর স্বপ্নে দেখা জায়গাতেই একটা গরু তাকে একইভাবে আঘাত করে, একইভাবে আহত করল । এ জাতীয় ঘটনার অনেক নজীর আছে । এ ধরনের স্বপ্নকে বলে 'প্রিকগনিশন ড্রিম' । এ ঘটনাকে কাকতালীয়ও বলা যায় না কারন কাকতালীয় ব্যপারগুলোকেও একটি স্ট্যাটিসটিক্যাল প্রবাবলিটির মধ্যে থাকতে হবে । প্রিকগনিশন ড্রিমের ক্ষেত্রে তা থাকে না । এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে- মানুষ স্বপ্নে ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত নয় । কাজেই এ জাতীয় স্বপ্ন ব্যাখ্যাতীত ।
আমরা যখন স্বপ্ন দেখি তখন মস্তিষ্কের স্নায়ু সক্রিয় থাকে । যেহেতু শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রন করে মস্তিষ্কের স্নায়ু, সেহেতু ঘুমন্ত অবস্থায়ও স্নায়ু শারীরিক প্রত্যঙ্গের উপর সারসরি প্রবাব বিস্তার করে থাকে । 'Invert reaction' বলে একটি ব্যপার আছে । ধরুন আপনার একটা আঙুল পুড়ে গেল- আঙুল পোড়ার খবর যখন স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে তখন আপনি তীব্র ব্যাথা অনুভব করবেন । কিন্তু Invert reaction এর ক্ষেত্রে এর উলেটাটি ঘটে । আগে মস্তিষ্ক আঙুল পোড়ার অনুভূতি পায়, তারপার সে খবর আঙুলে পৌঁছায় । স্বপ্নের পুরো ব্যাপারটি হয় মস্তিষ্কে । সেখান থেকে Invert reaction-এ শরীরে তার পভাব পড়তে পারে । ঠিক এই সূত্র অনুযায়ী স্বপ্নে কুকুর কামড়ালে ঘুম থেকে উঠে যেখানে কামড় দিয়েছে সেখানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে ।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০০৬ বিকাল ৫:৫৪