এক প্রখ্যাত আলেমের স্ত্রী-সন্তানদের অবিশ্বাস্য জীবনযাপন -জিয়াউল হক মিজান
• মওলানা খলিলুর রহমানের পরিবারটি কি আপনার সহানোভূতি পাওয়ার যোগ্য নয়? পানি নেই, গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই- আছে শুধু ঝিলের অসহনীয় দুর্গনধ এবং কোটি কোটি মশার সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ। আর আছে রোদে শুকানো, বৃষ্টিতে ভেজা আর বন্যায় ডুববার দুঃসহ বাস্তবতা। খোদ রাজধানী ঢাকায় এমনই এক অবিশ্বাস্য পরিবেশে অনধকার খুপরিঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন একজন বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআনের বিধবা স্ত্রী ও এতিম সন্তানরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি আরো অসহনীয় করে তুলছে তাদের জীবন। বিশিষ্ট আলেম মাওলানা খলিলুর রহমান ছিলেন মগবাজারের নয়াটোলা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। কওমি মাদ্রাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি সাধারণ মাদ্রাসা থেকেও কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি বড় মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। চমৎকার তাফসির করতেন বিভিন্ন মাহফিলে। কিন্তু বিখ্যাত এই আলেমের মৃত্যু স্ত্রী-সন্তানদের দাঁড় করিয়েছে দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মাওলানা খলিলুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। তার আগে পর্যন্ত স্ত্রী লাভলী বেগম এবং দুই ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে সহকর্মী ইয়াছিন হুজুরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সঞ্চয় না থাকলেও সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল তখন। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে আকস্মিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন লাভলী বেগম। তাৎক্ষণিকভাবে খলিলুর রহমানের ছাত্ররাই চাঁদা তুলে দু�মাসের বাসা ভাড়া, কয়েক দোকানের বকেয়া পাওনা এবং লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ফ্ল্যাট বাড়ি ছেড়ে থাকা চার অবুঝ সন্তানকে নিয়ে অসহায় লাভলী বেগম আশ্রয় নেন একটি ঝুপরিঘরে।
মওলানা খলিলুর রহমানের পরিবারটি কি আপনার সহানোভূতি পাওয়া যোগ্য নয়?
পানি নেই, গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই- আছে শুধু ঝিলের অসহনীয় দুর্গনধ এবং কোটি কোটি মশার সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ। আর আছে রোদে শুকানো, বৃষ্টিতে ভেজা আর বন্যায় ডুববার দুঃসহ বাস্তবতা।
খোদ রাজধানী ঢাকায় এমনই এক অবিশ্বাস্য পরিবেশে অনধকার খুপরিঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন একজন বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআনের বিধবা স্ত্রী ও এতিম সন্তানরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি আরো অসহনীয় করে তুলছে তাদের জীবন।
বিশিষ্ট আলেম মাওলানা খলিলুর রহমান ছিলেন মগবাজারের নয়াটোলা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। কওমি মাদ্রাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি সাধারণ মাদ্রাসা থেকেও কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি বড় মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। চমৎকার তাফসির করতেন বিভিন্ন মাহফিলে। কিন্তু বিখ্যাত এই আলেমের মৃত্যু স্ত্রী-সন্তানদের দাঁড় করিয়েছে দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি।
ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মাওলানা খলিলুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর। তার আগে পর্যন্ত স্ত্রী লাভলী বেগম এবং দুই ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে সহকর্মী ইয়াছিন হুজুরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সঞ্চয় না থাকলেও সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল তখন। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে আকস্মিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন লাভলী বেগম। তাৎক্ষণিকভাবে খলিলুর রহমানের ছাত্ররাই চাঁদা তুলে দু’মাসের বাসা ভাড়া, কয়েক দোকানের বকেয়া পাওনা এবং লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর ফ্ল্যাট বাড়ি ছেড়ে থাকা চার অবুঝ সন্তানকে নিয়ে অসহায় লাভলী বেগম আশ্রয় নেন একটি ঝুপরিঘরে। ৩০০/৪ নম্বর নয়াটোলা চেয়ারম্যান গলির শেষ প্রান্তে অবস্থিত এ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নেই গ্যাস কিংবা পানির লাইনও। পেছনে বেগুনবাড়ি ঝিলের পচা-দুর্গনধযুক্ত ময়লা পানি। কোনায় ছোট ঘর। ঘরটি ৬০০ টাকায় ভাড়া নেন বৃদ্ধা আমেনা ও তার মেয়ে রহিমা। ওই ঘরে পার্টিশন দিয়ে লাভলীদের কাছে একাংশ সাবলেট দিয়েছেন তারা। এ বাড়িতে রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বছরের পর পছর আশপাশের কোনো বাড়িতে অনুনয়-বিনয় করে রান্না করে আনতে হয় এ বাড়ির বাসিন্দাদের। টয়লেট সারতে হয় অন্য বাড়িতে গিয়ে। গোসল করা, কাপড় ধোয়া থেকে সবই করতে হয় অন্যের দয়া নিয়ে।
লাভলী বেগমের বড় মেয়ে মোর্শেদার বয়স ১৪ বছর। নয়াটোলা মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে পড়ে সে। একই মাদ্রাসায় পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে দুই ছেলে আতিকুর রহমান ও আশিকুর রহমান। ছয় বছরের মোমেনা আকতারকে দিয়ে দেয়া হয়েছে আমবাগানের এক এতিমখানায়। এতিমখানায় দেয়া হয়েছে দুই ছেলেকেও। বড় মেয়ের লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করা হয় মাদ্রাসার পক্ষ থেকে। মাওলানা খলিলুর রহমানের শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় আইইএস স্কুলে এক হাজার টাকা বেতনে আয়ার চাকরিও পেয়েছেন তার বিধবা স্ত্রী। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পর আর কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছেন না লাভলী।
১ হাজার টাকা বেতনের ৪০০ চলে যায় খুপরিভাড়া। মাসে ১০০ টাকা লাগে মেয়ের লেখাপড়ার জন্য কেরোসিন কেনা বাবদ। কাপড়-চোপড়, চিকিৎসা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা সবই করতে হয় বাকি ৫০০ টাকা দিয়ে। অথচ কেবল ভাত রান্না করে খেলেও মাসে ১ হাজার টাকার বেশি চাল লাগে তার পরিবারে। মাছ-গোশত তো দূরের কথা, ৪ টাকায় এক কেজি কলমিশাক কিনে তাও তিন দিন পর্যন্ত একটু একটু করে খেতে হচ্ছে তাকে। নিজের অতীত এবং স্বামীর মানমর্যাদার কথা ভেবে যেখানে-সেখানে হাত পাততে পারেন না। মানুষের দয়া-দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকতে হলেও এ জন্য তীব্র মনোকষ্ট আছে তার। তা ছাড়া মেয়েটা দিন দিন বড় হচ্ছে। তার ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে লাভলীকে।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে লাভলী বেগম বলেন, মাওলানা খলিলুর রহমানের স্ত্রী হিসেবে রান্না করা, গোসল করা, কাপড় ধোয়া, টয়লেট ব্যবহার করা, খাবার এবং ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করাসহ প্রতিটি কাজেই আশপাশের লোকজন আমাকে সহযোগিতা করেন। কিন্তু অন্যের বাসায় এসব নিত্যকাজের জন্য কত দিন যাওয়া যায় বলুন? একই অভিব্যক্তি মেয়ে মোর্শেদারও। মশার উৎপাতে যে খুপরিঘরে দিনের বেলায়ও বসা যায় না, সেই ঘরে গভীর রাত পর্যন্ত হারিকেন জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতে হয় তাকে। এ জন্য কোনো দুঃখ নেই তার। কিন্তু প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য না থাকায় নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ নিতে না পারার কষ্ট ভুলতে পারছে না মেয়েটি কোনোমতেই।
দৈনিক নয়া দিগন্তে মওলানা খলিলুর রহমানের পরিবারের অসহায় অবস্থা বর্ণনা করে পরিবেশিত রিপর্টটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। আপনি চাহিলে আলেম পরিবারটির সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। আমার বিশ্বাস নয়া দিগন্তের মাধ্যমে আপনার সহযোগতা তাদের কাছে পৌছে যাবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


