View this link
পুরো নাম জিউয়ে কাকু এমি। তবে এমি নামে একডাকেই চিনে আমাদের সবাই। আমরা বলতে, আইভরিকোষ্টের এই শহরে আমরা যে বাংলাদেশী আছি তারা।
এখানে এসে নামবার পর প্রথম যে সমস্যাটায় পরলাম তা হল ভাষার সমস্যা। এখানকার রাষ্ট্রীয় ভাষা ফরাসী,আমাদের ফরাসী জ্ঞান প্রায় শূন্যের কোঠায় বলা যায়।এদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৬০ রকমের ভাষা প্রচলিত আছে।ফরাসী ছাড়াও এখানকার প্রধান সম্প্রদায় বাউলি ভাষাও বেশ প্রচলিত। মালিনকে আর সেনেফুও বলে অনেকেই।প্রতি মাসে দু'বার আমরা যে সহায়তা কার্যক্রম করতাম তাতে অপরিহার্য ছিল এমির উপস্হিতি। প্রতি বার গড়ে ৪৫০/৫০০ জনসাধারন উপস্হিত হত দূরদূরান্ত থেকে।এদেরকে সামলানো,আমাদেরকে তাদের সমস্যাগুলো বলা, বুঝিয়ে দেয়া...সবকিছুতেই তৎপর এমি।তবে মাঝে মাঝে জাতিগত ভাষার দূরত্বের কারণে এমি আবার কালু কে ডেকে এনে দু'জনে আলোচনা করে ঠিক করতো,আসলে কি বলতে চায়! মজার ঘটনাও আছে এ নিয়ে।
সুঠাম কৃঞ্চকায় শরীর,যেন পাথর খুদে বানানো।সারদিনই আমাদের আশে পাশে আছে,যে কোনও কাজে সবসময় তৈরি।
আসল কথাটাই বলা হয়নি,এমি,কালু,হাসান এরা সবাই পরিষ্কার বাংলায় কথা বলে,শুধু তাই নয় ...গানও করে। এক অনুষ্ঠানে গাইল,"বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ীত গেলাম.....।৬ বৎসর ধরে বাংলদেশীদের সাথে আছে। হাসিখুশী এমি...কিন্তূ চোখের তারায় যেন বিষন্নতা ঝিলিক দিয়ে ওঠে মাঝে মাঝে।
বাড়ী ওর আইভরিকোষ্টের ম্যাপের একেবারে কেন্দ্রে অবস্হিত শহর বোয়াকে।যুদ্ধ আর জাতিগত হানাহানি দেখেই ও বড় হয়েছে।বাবা আসিয়ে জিউয়ে আর মা কফি ফেতে ৫ ছেলে ৫ মেয়েকে কষ্ট করে লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করেছে।বোয়াকে আর ইয়ামাসুক্রোতে পড়াশুনা করে ডিগ্রী পাশ করেছে এমি। চাকরির চেষ্টা একেবারে কম করেনি। লঁরা বাগবোর আমলে পুলিশে চাকরি হতে হতে হয়নি....তখন নাকি ঘুষের দর অনেক চড়া ছিল! আড়াই লাখ সেফার (CFA) যোগার আর ও করতে পারেনি। বিয়েটাও হয়নি। বোয়াকে শহরে এখনও প্রতীক্ষায় এমি'র দয়িতা....নাদেইশ..।
যুদ্ধ আর হানাহানি দেশটাকে যেমন ছিঁড়ে খুড়ে খেয়েছে...মানুষের স্বপ্ন গুলোকেও। হয়ত এমিদের জীবনে যে "হারমাতান"তা একদিন কেটে যাবে।ডিগ্রী পাশ এমির চাকরী হবে.....
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৭:১৯