আমার বাসা থেকে দুই মিনিটের দূরত্বে জাতির পিতার ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসা। স্বাভাবিক সময়ে এখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের অল্প কিছু সদস্য দুই প্রান্তে বসে থাকেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের কর্মব্যস্ততায় চারিদিক গমগম করছে। চায়ের দোকানে মাঝে মাঝে দেখি সানগ্লাস পড়া লোকজন খুব গম্ভীরভাবে চা খাচ্ছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, উনারা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, কাছে গিয়ে উনাদেরকে বলি - ভাই আমি আপনাদের চিনে ফেলেছি।
যাইহোক, চুয়াত্তরের শেষে আর পচাত্তরের একদম শুরুতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বঙ্গবন্ধুকে বেশ কয়েকবার জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তিনি হত্যার ঝুঁকিতে আছেন। বঙ্গবন্ধু পুরো ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন- কোন বাঙালি তাঁকে হত্যা করতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। কিন্তু পরবর্তীতে যখন তার এই ভুল ভাঙ্গে, ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। তাঁর ঐ বজ্রকন্ঠ কিংবা ঐ তর্জনী ঠেকাতে পারেনি ঘাতকের বুলেট। ১৮টি বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে তাঁর বুক। জীবন দিয়ে মেটালেন সেই বিশ্বাসের দায়। বাঙালিকে আবারও ছুড়ে ফেলা হলো, এক অনিশ্চিত অন্ধকার গন্তব্যে। সেই সময় থেকে পরবর্তী একটা দীর্ঘ সময় স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয় নি। এই দেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু বলে কিছু ছিলো না। ইতিহাস পরিবর্তিত হয়েছে, হচ্ছে এবং সামনে আরো হবে। আফসোস, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।
আজকে থেকে প্রায় কয়েক বছর আগেও ১৫ আগষ্ট আসলে দেখতাম অনেক মানুষ স্বাভাবিক রাজনৈতিক মত পার্থক্য ভুলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দুই এক লাইন হলেও ফেসবুকে লিখত নিদেনপক্ষে কাভার ফটো বা প্রোফাইল ফটো পরিবর্তন করত। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এই দিনে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। চারিদিকে স্বাভাবিক দৃশ্য। মাঝে মাঝে কিছু স্ট্যাটাসে এই দিনকে কেন্দ্র করে কে কিভাবে বিড়ম্বনায় পড়লেন, কে বিরিয়ানী খেলেনই এই সব হালকা কথা আর চটুল রসিকতা। এমন নয় যে, মানুষ তাঁকে ভুলে গেছেন, তার অবদানকে অস্বীকার করছে, অসম্মান করছেন। বরং এই নিরবতা তাদের প্রতি যারা বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করে কিছু করে খাচ্ছেন, তাঁর আদর্শকে ভুলন্ঠিত করে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেদের অন্যায় আদর্শ।
এই সব কথা প্রকাশ্যে বলার সুযোগ নেই, দিন শেষে আপনিই দোষী। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এখন জনগনের চাইতে ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ সহ পুলিশে বেশি আস্থা রাখে। আমরা পত্রিকায় পড়েছি, এই সব সোনার ছেলেরাই ধর্ষন করে, হত্যা লুন্ঠন করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করে, জয় বাংলা শ্লোগান। ঘৃণায়, লজ্জায় আমাদের গা রি রি করে উঠে। অথচ! বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে জয় বাংলা স্লোগান কি শিহরনই না জাগাতো! উত্তেজনায় টগবগ করতে দেহের প্রতিটি রক্তকনা।
বাস্তবতা হচ্ছে - বঙ্গবন্ধুর প্রতি দেশের মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা চিরজীবনই থাকবে তেমনি তাঁর শাসনামলের ব্যর্থতার কথাও মানুষ স্মরন রাখবে। বিলবোর্ড, পাড়া মহল্লায় উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে তাঁর ভাষন প্রচার করে, গরীব দুঃখীকে খিচুড়ী খাইয়ে মানুষকে সন্তুষ্টি কিংবা বিরক্ত করে তাঁর সম্মান বাড়ানো বা কমানো যাবে না। তিনি যা অর্জন করার তাঁর জীবিত কালেই অর্জন করেছেন, যা খোয়াবার তা তাঁর জীবিত কালেই খুইয়েছেন। কতিপয় গো-ছানাদের অতিরিক্ত কচলাকচলি এবং কিছু ছাগ শিশুদের ম্যাতাকারে প্রকৃত নেতাদের কিছুই যায় আসে না। বাঙালির হৃদয়ের রাজপুত্র তিনি, ঘাতকের বুলেটের সাধ্য নেই সেখানে পৌঁছাবার।
বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার প্রতি রইল অনেক শ্রদ্ধা। মুজিবের মত একজন নেতা বার বার জন্মায় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:১১