somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কলমযোদ্ধা

২৬ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাহ, আজ আবার হাতে নিয়েছি কলম!
কত দিন পরে ঠিক মনে নেই-
হয়ত বছর তিনেক হবে । বা আরো বেশি
অবশ্য এর কারণ এই নয় যে;
আমার পুরোনো ধাঁচে, পুরোনো সুরে
বিষাদক্লিষ্ট মন নিয়ে, সেই গানগুলি আবার গাইব ।
যাই হোক, আগে বলে নেই, কেন ছেড়েছিলাম কলম আমি
তার কাহিনী ।

বছর দু তিন আগে তার কথা ।
তখন আমার পচিশ কি ছাব্বিশ বছর বয়স।
স্বীকার করছি, সময়ের চেয়ে ছিলাম
অনেক বেশী অপরিনত । নইলে এত মিছিল, মিটিঙ
দাবি আদায়ে এত মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম দেখেও
আমি ছিলাম নির্বাক, নিশ্চুপ! নিয়মিত ক্লাশ নেয়া
সন্ধ্যায় লেখালেখি- কেটে যেত নিরুত্তাপ জীবন আমার ।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের এত উত্তেজনা, মিছিল করা দেখে
মনে মনে বলতাম, ছেলেমানুষ!

আপামর জনতা, রাজনীতিবিদেরা হাতে মেলালেন হাত,
ছাত্রনেতাদের কন্ঠ হয়ে উঠল অগ্নিঝরা।
বর্ষার ফুসে ওঠা, দুকূল ছাপানো পদ্মার জোয়ারের মত
বাড়ছে আন্দোলন, সবার মত মলয় বাবুরও বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
আমায় বলেন তিনি; আনিস সাহেব, দেশের খবর রাখেন ??
আমি আমার নিরুত্তাপ কন্ঠে বলি, রাখি তো ।
ইয়াহিয়া ক্ষমতা ছাড়বেন, বঙ্গবন্ধু হবেন প্রধাণমন্ত্রী ।
কল্পনায় ভাসবেন না, থমথমে মুখে বলেন
মলয় চক্রবর্তী, যুদ্ধ আসন্ন ।

এরপর এল কালরাত, অন্ধ বিভীষিকা, মারণাস্ত্রের
নগ্ন হুঙকার ঢাকার আকাশে বাতাসে।
একাত্তরের পঁচিশ, সে রাতে আমি ঢাকায় ছিলাম না ।
পরদিন এসে দেখি, ঢাকার রাস্তায়, ছোপ ছোপ
জমাট রক্ত । ইকবাল হল, জগন্নাথ হল এখন ধ্বংসাবশেষ ।
আকাশে উড়াউড়ি একদল হাড়গিলে শকুণের ।
আমি ঘরের পানে পা বাড়াই, দুঃশিন্তার ডালি নিয়ে ।
ফিরে দেখি, মেঝেতে লুটানো মা’র কাতরানো, বোনটি ঘরে নেই ।
ছোট ভাইটার হাতে ধরা কোরআন, শক্ত নিথর লাশ তার
দেয়ালে হেলান দেয়া, খোলা চোঁখে কি ভীতির চিহ্ন !
আমি স্তম্ভিত, চেয়ে দেখি- বাবার রক্তে ভেসে গেছে
ঘরের মেঝে। আমি ভুলে গেলাম কাঁদতে, এ কী নিষ্ঠুরতা ।
ভাই হয়ে ভাইয়ের রক্তহরণ !

আমার বিবেক আমায় দিল ধিক্কার, তীব্র হুংকারে
বলল আমায়, কাপুরুষ তুমি ।
জেগে ওঠো,শক্ত করো তোমার পেশীগ্রন্থি । ছাড়ো কলম,
তোলো অস্ত্র। জানিনা কোথা হতে এল এত সাহস,
এই সাদাসিধে আমার প্রাণে, নিরস্ত্র আমি
যুদ্ধে নেমে পড়ি । কী দিয়ে যুদ্ধ করেছি,
সে প্রশ্ন আজ অবান্তর । কেননা হৃদয় দিয়ে যে যুদ্ধ হয়
তাতে কী অস্ত্রের দরকার? সামান্য বিস্ফোরক তখন
হয়ে ওঠে ধ্বংসাত্নক, আর্জেস গ্রেনেডকে উড়িয়ে দেয় ফুৎকারে।
দোলনা রাইফেল তখন হারিয়ে দেয় একে-৪৭ কে ।
মনে পড়ে- সেই গায়ের বধূর কথা, যার ঘরে একবেলা
খেয়েছি ক্ষুধার অন্ন । আপনি খাবেন না?
জিজ্ঞেস করতেই, হাসি মুখে উত্তর তার-
আপনারে খাওয়াতি পারলাম, এই মোর পূণ্যি,
আমার খাওয়া শেষ । ফিরবার সময় তার কান্নার ধ্বণি
ভগবান আপনাগো ভালা করুক-এই যে ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ
জাত-পাত, ধর্মের বিভেদ ভোলা বাঙালির এক সুর;
সেই শক্তি, মারণাস্ত্রের থেকে শক্তিশালী হাজারগুনে!
সে লিখল, বিজয়ের ঐতিহাসিক মহাকাব্য ।

যুদ্ধ শেষ, দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠার দিণ হল শেষ ।
তথাকথিত বিজয়ে সবাই খুশি । কিন্তু আমার জীবন যুদ্ধ
চলতেই থাকে । সে আমায় গুপ্ত হন্তারকের মত
আঘাত করে নিয়ত, পিছন থেকে । বারবার মনে আসে
তার উপহাস ভরা কথাগুলি, কলমের দাসত্ব করে
কী পেলি? যাওবা পেলি, হারালি তো সর্বস্ব।
সত্যিই তাই-মায়ের পঙ্গুত্ব, বাবা, ভাইয়ের মৃত্যু
বোনের সম্ভ্রমহানি; আমারি ভুলে, আমারি অবহেলায় ।
অনুতাপে জর্জর আমি, ছেড়ে দিলাম চাকরি;
ছাড়লাম লেখালেখি ।

এরপর বছর খানেক যেতে না যেতেই দেখি
আবার যুদ্ধের ডাক ! একী অনাচার, অবিচার-
বজ্রগর্জনে হুঙকার দেয় সরকারি চাটার দল ।
কবিরা লেখেন কবিতা- ভাত দে হারামজাদা,
সিরাজ শিকদারেরা হারায় ক্রসফায়ারে ।
ছোট্ট শিশুর ক্ষুধার অন্ন জোটে না। গরিবের কম্বল
শোভা পায় চেয়ারম্যানের দামি খাটে। সামান্য খাবার নিয়ে
মা শিশুর কাড়াকাড়ি, মায়ের ঢিলে মৃত্যু হয়
অভুক্ত সন্তানের । দুভিক্ষের কড়াল গ্রাস চারিদিকে;
আমায় নাড়া দেয়। আমার বিবেক জাগ্রত করে ।
সে বলে, আবার এসেছে যুদ্ধ, তবে ভিন্নরূপে।
এবারে কোন দৃশ্যমান শত্রু নেই, এবার যুদ্ধে জয় পাওয়া
হয়ত অনেক কঠিন, তবু এগিয়ে যাও লেখনীর যুদ্ধে;
কলম যোদ্ধা তুমি । তুলে ধর অন্যায় যত
তোমার লেখায় ।

এই আমার দ্বিতীয়বার কলম ধরবার কাহিনী !
এবারের যুদ্ধেও আমি ঢেলেছি হৃদয়ের সবটুকু। একাত্তরে
অস্ত্র ছিল হৃদয়, তাই সে ছিল বল্লমসম লক্ষ্যভেদী।
আজো সেই আমি নির্ভয়ে নেমেছি অন্যায় দমনে, সত্য উদ্ধারে ।
হয়ত এ যুদ্ধ বিশাল দীর্ঘস্থায়ী, ক্ষয়ক্ষতি সীমাহীন;
তবু চলবে আমার যুদ্ধ । কারণ এ যুদ্ধের জয়েই
লেখা হবে বাঙালির সমৃদ্ধির ইতিহাস । যেমন একাত্তরে
লেখা হয়েছে আমাদের আত্নপরিচয়ের কথা। এবার
আমাদের জিততেই হবে, হেরে গেলে আমরা বিনষ্ট হব;
হারাবে আমাদের জাতিসত্বা । তাই এ যুদ্ধ
আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ ।

তারিখ : ২১/১২/০৬

সুপ্রিয় ব্লগারগন । নতুন কোন কবিতা এবার লিখতে পারিনি । তাই পুরোনো লেখাই দিলাম । সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৮:৩৪
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×