somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখনও আমরা জেন-জি কে উহ্য করছি

০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজনীতি বা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় এমন এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে আমরা এখনো রাজনৈতিক বিশ্লেষণে হিসেবের বাইরে রাখছি। এই শ্রেণিটি মূলত নতুন ভোটারদের নিয়ে গঠিত, যাদের আমরা সাধারণভাবে ‘জেনারেশন জি’ বলে থাকি।

শব্দটি আমাদের সমাজে নতুন হলেও, এই প্রজন্মের বৈশিষ্ট্য আমাদের অজানা নয়। এটি সেই তরুণ জনগোষ্ঠী যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, তথ্যনির্ভর, স্বাধীনচেতা এবং প্রশ্ন করতে জানে। আমরা তাদের সাহস ও সক্রিয়তা প্রত্যক্ষ করেছি গত বছরের গণবিক্ষোভের সময়—তারা দলের ব্যানার ছাড়াই, আদর্শহীনতার শূন্যতাকে অতিক্রম করে সরব হয়েছিল।

একটা রাজনৈতিক রূপান্তরের ভেতর দিয়ে আমরা যাচ্ছি—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, মিছিল, অবরোধ, এবং সর্বাত্মক শাটডাউনের মতো দৃশ্যপট ফিরে এসেছে। কোনটা যৌক্তিক, কোনটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত, এর বিচার যেমন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বিশ্লেষকেরা করেন, তেমনি সাধারণ মানুষও করে—নিজ নিজ অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও বোধ নিয়ে।

এবং ঠিক এইখানেই এসে দাঁড়ায় সেই প্রশ্নটি—এই বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেই, দলের ব্যানারে নেই, কিন্তু প্রতিদিনই রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে—তাদের সম্পর্কে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কৌতূহল কতটুকু?

যদি আমরা গত বছরের জুলাইয়ে ফিরে তাকাই, দেখতে পাই সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া এসেছিল এই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তরুণ প্রজন্ম থেকেই। সেই সময় রাজনৈতিক দলগুলোর একচেটিয়া ব্যাখ্যার বাইরে, একটি বিকল্প সামাজিক চেতনা ফুটে উঠেছিল।
যা কোনো দলীয় ব্যানার থেকে আসেনি। এসেছে অর্জনের ভিত্তিতে। এবং অর্জনকে রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না।

এখানেই মূল সংকট—এই নতুন ভোটারদের কণ্ঠস্বরকে যদি রাজনৈতিক সমীকরণে জায়গা না দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতের সরকার গঠন প্রক্রিয়ার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই নতুন প্রজন্ম কাকে ভোট দেবে?

তারা কি প্রবাহমান ঐতিহ্য অনুসরণ করে ভোট দেবে? নাকি তারা এমন কাউকে খুঁজবে, যিনি বিশ্বাসযোগ্য, যিনি ‘তাদের ভাষায় কথা বলেন’? কেউ কি ভাবছে, কিভাবে এই তরুণদের রাজনৈতিক পরিসরে আনতে হয়?

বাংলাদেশে ভোটদান কেবল সংখ্যার খেলা নয়—এটা জনমতের প্রতিফলন। এবং এই নতুন প্রজন্মের ভোট, মত এবং সিদ্ধান্তই হতে পারে যে কোনো সরকারের ভবিষ্যৎ স্থায়িত্বের ভিত্তি।

রাজনীতির মাঠে দলগুলো এখনো পুরোনো কাঠামো, পুরোনো পন্থা নিয়ে ব্যস্ত। এক তরফা প্রচার, মনোনয়ন, ও ব্যানার-ফেস্টুনে ভরসা রাখে। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন একজন তরুণ ভোটার নিজের ফোনে একসঙ্গে মিম দেখে, রাজনৈতিক বক্তব্য দেখে, চ্যাট করে এবং ভিন্ন মতামত পড়ে বিচার করতে পারেন। তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে হলে কেবল শ্লোগান নয়, যুক্তিও লাগবে।

আমরা যদি এই প্রজন্মকে আবার উহ্য করি, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন না করি, তবে তারা ভোট কেন্দ্রে না গিয়েও প্রতিশোধ নিতে পারে। আর তাদের এই অনুপস্থিতি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ হবে না।

নতুন প্রজন্ম কোনো একটি দলকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে বা করছে কিনা সেই প্রশ্নটির উত্তর খোজার দায় রাজনৈতিক দলের। তারা


দেখে কে বিশ্বাসযোগ্য, কে বাস্তবসম্মত কথা বলেন, এবং কে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করেন।


এবারের নির্বাচনে এই তরুণদের সিদ্ধান্ত হয়তো প্রভাব ফেলবে কে ক্ষমতায় যাবে, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ—তাদের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের সরকার কতদিন স্থায়ী হবে, তার ইঙ্গিতও দিয়ে দিতে পারে।

সুতরাং, ‘জেন জি’ কে কেবল টার্গেট গ্রুপ হিসেবে না দেখে, একজন সম্পূর্ণ নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে, তাদের সঙ্গে সংলাপ গড়ে তোলা জরুরি। নইলে আমরা শুধু একটি প্রজন্মকেই নয়, একটা সম্ভাবনাকেও হারাব।

এ পর্যায়ে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, আমি হয়তো কোনো নতুন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে কথা বলছি। আসল ভুলটা এখানেই ঘটে। এই লেখা বা বক্তব্য মূলধারার রাজনীতিকদের উদ্দেশ্যেই—তাদের কাছে আহ্বান, যেন তারা তরুণদের আস্থা অর্জনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন।

তরুণ প্রজন্ম হয়তো ইউনুস সাহেবের সব কর্মকাণ্ড জানে না, কিন্তু তারা জানে—তিনি একজন নোবেলজয়ী, যিনি বাংলাদেশের নাম বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন। সেই আস্থা ও প্রতীকের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না। সেক্ষেত্রে তার নেতৃত্বাধীন সরকার কিভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, সেটি রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় তরুণদের মাঝেও একটি মনস্তাত্ত্বিক ছাপ ফেলতে পারে—যা আগামী দিনের অংশগ্রহণ বা অনুপস্থিতির ইঙ্গিত বহন করতে পারে।

আস্থা ও অর্জনের চর্চা, প্রশ্ন ও সংলাপের সুযোগ তৈরি করা—এটা সকল রাজনৈতিক শক্তির জন্যই প্রয়োজনীয়। কারণ এই সমাজ একরৈখিক নয়; এটি বহুরৈখিক, বহুধারণার সমাজ। সেই বাস্তবতাকে যারা বুঝতে পারবে না, তাদের জন্য রাজনীতি আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

এবং তার প্রথম ইঙ্গিত হতে পারে, আগামীর ভোটে জেনারেশন জি’র অংশগ্রহণ কতটা হয়—বা না হয়।


প্রকাশিত
সম্পাদকীয়, যায়যায়দিন, ৩০ মে ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:২৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×