জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে শেষ পর্যন্ত হিমালয়ে চলেই আসলাম। বাকি জীবন এখানে ধ্যান করেই কাটিয়ে দেবো। হিমালয়ের কোনো এক অজানা যায়গাতে দাঁড়িয়ে আছি। একাধারে ক্লান্ত ও শ্রান্ত। হাটাহাটির ফলে বেশ তৃষ্ণার্ত। ঢক ঢক করে অনেক খানি পানি পান করলাম। আবার হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরেই অনুভব করলাম প্রকৃতি আমাকে মিসকল দিচ্ছে। কতক্ষন আর সহ্য করা যায়। ভালো একটা যায়গা দেখে হালকা হয়ে নিলাম। এবার যাওয়া যাক। হাটা ধরেছি। “বৎস দাঁড়াও”, আকাশ বাতাশ কম্পিত করে শব্দ দুটি আমার কানে এলো। এই নির্জন হিমালয়ে কে আমাকে ডাকে? ভূত এফএমের কথা মনে পরলো। আমি ভয়ে কাপতে কাপতে অজ্ঞান হওয়ার আগ মুহুর্তে দেখলাম সামনে ইয়া জটা ধারি গায়ে লেংটি পরা ইয়া বড় বড় লাল চোখ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে এক আজব লোক। এক অজানা কারনে তার মাথা ভেজা। আমি আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
জ্ঞান ফেরার পরে দেখি সেই অদ্ভুত লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো মতে জিজ্ঞাসা করলাম
-আপনি কে, এই খানেই বা কি করেন?
>বৎস, আমাকে তুই চিনবি না। কোনো এক সময় বাড়ি ছেড়ে এই হিমালয়ে এসেছি। এখানেই তপস্যা করে দিন কাটে আমার।
ওনার হিমালয়ে থাকার কথা শুনে খুশিই হলাম। আমিও হিমালয়ে সাধনা করতেই এসেছি, একজন গুরু পাওয়া গেলো।
>বৎস তুই আজকে আমার জীবন বাচিয়েছিছ। বল তুই কি চাস।
-(অবাক হয়ে) আমি আপনার জীবন বাচালাম কিভাবে?
>একদিন ধ্যান করা অবস্থায় এই বরফের মাঝে জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলাম বৎস। তোর উষ্ণ প্রসবনে সে বরফ গলে যাওয়ায় আজ ১২ বছর পর আমি বরফ মুক্ত হয়েছি।
এতক্ষনে কাহীনি বুঝলাম। সে সময় তার মাথা ভেজা থাকার কারনও বুঝলাম। আগে রাস্তা ঘাটে এই কাজ করার জন্য কতই না ভোগান্তির শিকার হতাম। কুকুরের দৌড়ানি খাইছি, মানুষের দৌড়ানি খাইছি। একবার তো ধরা পরে কিছু নগদ নারায়ন ও দেয়া লেগেছিলো। আর আজ সেই কাজ, সেই “ইয়ে” করার ফলে একজন সাধকের জীবন বেচে গেছে। নিজের প্রতি নিজেরই গর্ব হচ্ছে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে সাধক বললেন
>তুই আমার জীবন বাচিয়েছিস বৎস, এর বিনিময়ে আমি তোর দুইটি ইচ্ছে পুরন করে দেবো।
কথা টা শুনে আমার ভেতরটা চকচক করে উঠলো। যে জন্য হিমালয়ে ধ্যান করতে আসলাম, সে উদ্দেশ্য বোধহয় ধ্যান করা ছাড়াই পূর্ন হয়ে যাবে।
>বল বৎস, তোমর ইচ্ছের কথা আমাকে বল।
-আমি অনেক ধনের মালিক হতে চাই!
>(কাশতে কাশতে) কেনো বৎস, একটা তে কি পোষাচ্ছে না? মানুষ একটা সামলাতেই কোমর ভেঙ্গে ফেলে, আর তুই অনেক চাস?! কোন হারবালের ফাইল খাস বৎস?
-ইয়ে মানে আমি ধন-সম্পত্তির কথা বলছি।
>ওওওও, আগে বলবি তো। আমি মনে করেছিলাম......... থাক সে কথা, তোর ইচ্ছে পূরন হয়ে যাবে। তোর শেষ ইচ্ছে কি বৎস?
মনে মনে শেষ ইচ্ছের কথা টা ভেবে নিলাম। এই সেই ইচ্ছে, যেটার জন্য সুদুর হিমালয়ে চলে এসেছি সাধনা করতে।
-দয়াল বাবা, আমাকে এমন ক্ষমতা দিন যাতে আমি পৃথিবীর সকল মেয়ের মন জয় করতে পারি।
বেশ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলো। অদ্ভুদ নিষ্ঠুর হাসি দিয়ে বললো
>বাবারে,এই ক্ষমতা যদি আমার থাকলে আমি এই হিমালয়ে পইরা থাকি? এই কাজের জন্যই আমি এই হিমালয়ে পইরা আছি। কিন্তু এখনো সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারি নাই। তুই বুঝি এই জন্যই হিমালয়ে আইছোস? যা বাপ, নিজের ঘরে ফিরা যা।
আমিও তব্দিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সাধু বাবার সাধু ভাষার হঠাৎ পরিবর্তন হলো ক্যান? সাধু বাবাও তাহলে ছ্যাক খেয়ে হিমালয়ে আসছে!
- সাধুবাবাও তাহলে ছ্যাকা খেয়েছিলেন। তা আপনিও কি স্যান্ডেলের ম্যাসাজ খেয়েছিলেন যে একদম সোজা হিমালয়ে এসে পড়েছেন?
বলেই হাসতে লাগলাম, ওদিকে সাধু বাবা রেগে আটচির(চৌচিরের দ্বিগুন) হয়ে গেছে।
>আমার সাথে বেয়াদবি করিস মূর্খ............ ঠাস
ঠাপ্পরের ব্যথায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে দেখি আমার ডান হাত আমার বাম গালে আছে। হাত নামিয়ে দেখি সেখানে একটা মশাও আছে। নাহ, আজ কাল মশার যন্ত্রনায় ঘুমানোও যায় না। দেশটা গেলো
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩১