২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর ইউরোপের একটি শহরে ক্রস কান্ট্রি দৌড় হচ্ছিল। খুব যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিযোগিতা তা নয়। কিন্তু কিছুদিন আগেই লন্ডন অলিম্পিকে ৩০০০ মিটার স্টিপল চেজের ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী কেনিয়ান এথলেট আবেল মুতাই এতে অংশ নিয়েছিলেন। প্রতিযোগিতায় পরিষ্কার ফেবারিট ছিলেন এই কেনিয়ান।
যথারীতি দৌড় শুরু হয়ে ফিনিশিং লাইন থেকে কয়েক মিটার আগে এসে আবেল কনফিউজড হয়ে ভেবেছিলেন দৌড় শেষ।
তার ঠিক পেছনেই ছিলেন স্পেনিশ রানার ইভান ফার্নান্দেজ। ইভান বুঝেছিলেন আবেলের বুঝতে ভুল হচ্ছে। তাই তিনি চিৎকার করে তাকে আরো দৌড়াতে বলছিলেন।
আবেল স্পেনিশ বুঝতে না পারায় ইভান এর স্পিচ ধরতে পারেন নি, বরং কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়েই থাকেন। ইভান ততক্ষণে আবেল এর ঠিক পেছনে চলে এসেছে। আর একটু পরেই ফিনিশিং লাইন। ইভান আবেল কে ধাক্কা মেরে ফিনিশিং লাইন পার করে দিয়ে নিজে তা পার হন।
সাংবাদিকরা দৌড়ে এসে আবেল কে বাদ দিয়ে ইভান কে ঘিরে ধরল। প্রশ্ন করল, "এটা আপনি কী করলেন? কেন করলেন?
ইভান উত্তরে বললেন , "আমার স্বপ্ন, আমরা এমন এক কমিউনিটি রেখে যাব যারা একে অপরকে সাহায্য করবে আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, জয়ের পথে।"
সাংবাদিক বলল, "কিন্তু তাকে আপনি জেতালেন কেন?"
তিনি উত্তর দিলেন, "আমি তাকে জিতিয়ে দিইনি, সে এমনিই জিতত। এটা তারই প্রাপ্য ছিল।"
সাংবাদিক আবার বলল, "কিন্তু আপনি জিততে পারতেন তো!"
ইভান বলল, "দেখো, সত্যিই আমি জিততে পারতাম। কিন্তু এই জেতার মূল্য কী হতে পারত, কী সম্মান আমি পেতাম? হয়তো একটি মেডেল পেতাম। তা দিয়ে আমি কী করতাম? আর এ রকম জেতায় আমার মা-ই বা আমাকে কী ভাবতেন?"
সংযুক্তি ঃ
গতকালই একটা ডিপার্টমেন্ট শপ থেকে কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনি। সেলসম্যান ছেলেটা জিনিস প্যাক করে দিয়ে ক্যাল্কুলেটর দিয়ে দাম হিসেব করে আমার কাছে ৪৫২ টাকা চাইলো। সে আমার সামনেই ক্যাল্কুলেটরের কি চাপছিল, আমি দেখলাম, ২০০ চাপতে গিয়ে সে শুধু ২ চেপেই এগিয়ে গেল। তার মানে ১৯৮ টাকা বাদ পড়ে গেছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটু থেমে গেলাম। আমার জিনিসের দামের চেয়ে প্রায় ২০০ টাকা কম দিতে হবে, দারুণ তো! আবারও সে ৪৫২ টাকা চাইছে! আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, আবার হিসেব করে দেখ, ২০০ টাকা কম হয়েছে! সে খানিক আশ্চর্য হয়ে আবার হিসেব করল। দেখলাম এবারো ২০০ এর বদলে শুধু ২ ই আসলো। তার ডাবল জিরো কি নষ্ট, কিন্তু সে তা জানে না। আমি আর না পেরে তার সিনিয়র একজনকে বললাম। সে নিজের ক্যাল্কুলেটরে হিসেব করে ৬৫০ টাকাই বলল, এবং আমার দিকে কিছুটা কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে রইলো। আমি তাদের কৌতুহলী চাহনি পেরিয়ে পেমেন্ট করে বেরিয়ে আসলাম।
এখানে আমি কি ধন্যবাদ পাবার মতো কিছু করেছি? আমি মনে করি, ধন্যবাদ পাবার মতো কিছু আমার দ্বারা হয়নি। বরং এটাই আমার দ্বায়িত্ব ছিলো। দ্বায়িত্ব পালন করে কেউ ধন্যবাদ পেতে পারে না। আমাদের সন্তানদের জন্য যে পৃথিবী আমরা রেখে যেতে চাই, তা আমাদেরকেই গড়ে দিতে হবে।
(লেখাটি আমার ফেবু ওয়ালেও দেয়া হয়েছে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৫২