১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তির কথা কারও মনে আছে? যেই চুক্তি ইজরাইল ও পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশান) এর সাথে হয়েছিল। যাতে পিএলও ইজরাইল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, আর ইজরাইল পিএলও কে প্যালেস্টাইন এর বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে মেনে নেয়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের উপস্থিতিতে ইজরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক রবিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী শিমন পেরেজ ও এই চুক্তির বলে প্যালেস্টাইন স্ব-শাষিত কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মর্যাদা পাওয়া ইয়াসির আরাফাত ১৯৯৪ সালের নোবেল শান্তি পদক পান (যিনি বাংলাদেশের রজতজয়ন্তীতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসে আমাদের আনন্দের অংশীদার হয়েছিলেন)।
কিন্তু প্যালেস্টাইন এর পিএলও এর সাথে চুক্তিকে দুটি পক্ষ মেনে নেয় নি। যার প্রথম পক্ষ প্যালেস্টাইন এর উগ্রপন্থী দল হামাস, আর দ্বিতীয় পক্ষ ইজরাইল এর চরমপন্থী একটা গ্রুপ। প্রথম পক্ষ হামাস এই চুক্তিতে ইজরাইল এর স্বীকৃতিকে না মেনে প্রতিবাদ সরূপ ইজরাইল এ রকেট হামলা চালায়, আর পিএলও এর সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। তারা ঘোষনা দেয় দুনিয়ার মানচিত্র থেকে ইজরাইল কে মুছে দেয়ার, যা আজ ২৭ বছরে হাজার হাজার প্যালেস্টাইনির রক্তের উপর দিয়ে চলমান। আর ইজরাইলী চরমপন্থি গ্রুপের হাতে আইজ্যাক রবিন ১৯৯৫ সালে নিহত হন।
আর এই অসলো চুক্তির বলে প্যালেস্টাইন নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে পথ তৈরি হয়েছিল তা চুক্তির পরে এসব ঘটনার ফলস্রুতিতে থমকে যায়। সেই অসলো চুক্তি যদি চলমান থাকতো তথা শান্তির স্বপক্ষে যদি ইজরাইলী সদিচ্ছার অভাব যদি না হতো এবং হামাস এর উগ্রবাদীতা যদি না থাকতো তাহলে অনেক আগেই প্যালেস্টাইন নামক একটি দেশ হতে পারতো। আর এই উগ্রবাদীতার ছুতোয় সবকিছুকে পদদলিত করে ইজরাইল তার পুরোনো কট্টর অবস্থানে ফিরে যায়।
কয়েক বছরের মাঝে ইয়াসির আরাফাত এর হত্যাজনিত মৃত্যু পুরো শান্তিপ্রক্রিয়াকে ডিপফ্রিজে পাঠিয়ে দেয়। আর চরমপন্থীদল হামাস লাইমলাইটে এসে নিয়মিত বিরতিতে উস্কানি দিয়ে ইজরাইল কে তার ইচ্ছামত প্যালেস্টাইনীদের রক্তের উপর হোলিখেলার সুযোগ করে দেয়।
আজ ২৭ বছর পার হয়েছে অসলো চুক্তির। এখনো প্যালেস্টাইন এ নারী,শিশু ও সাধারণ মানুষের রক্ত নিয়ে ইজরাইল এবং হামাস নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে নিয়মিত একসাথে কাজ করে যাচ্ছে। আর ইজরাইল তার ভূমি বাড়িয়ে যাচ্ছে, যা আগামী কয়েকবছর এর মাঝেই পূর্ণতা পাবে।
আর পাশের মুসলিম দেশ সৌদিআরব, তুরস্ক, জর্ডান, সিরিয়া, মিশর নিজেদের বন্ধুরাষ্ট্র ইজরাইল কে হালকা করে বকে দিয়ে নিজেদের দ্বায়িত্ব পালন করেই যাবে, যাদের সবার সাথে ইসরাইলের ব্যাবসা-বাণিজ্য ও কুটনৈতিক সম্পর্ক সবই চলছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো ইজরাইল কে ব্ল্যাংক চেক দিয়েই রেখেছে।
আর বাংলাদেশ বা মালয়েশিয়ার মত মিডলইস্ট থেকে দূরের দু-একটি রাষ্ট্র হুদাই একটু প্রতিবাদ জানাবে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বরাজনীতির কিছুই না বুঝে হাহাকার করে যাবে এক পক্ষ। আর আরেক পক্ষ হামাস ইজরাইলের সব উড়াইয়া দিতেছে, আবাবিল পাখি এসে সব কিছু পাথরের দ্বারা ধ্বংস করে প্যালেস্টাইন এ মুসলিমদের জিতিয়ে দিবে বলে অলিকের আশায় বসে থাকবে। এর মাঝে ইজরাইল তার পড়াশোনা, দক্ষতা, টেকনোলজি দিয়ে ও আয়রন ডোম প্রযুক্তির দ্বারা হামাসের রকেট হামলা কে আকাশে আতশবাজির খেলনা বানিয়ে প্যালেস্টাইনীদের কে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:৫৩