মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ১০ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে সরকার বিচারের মুখোমুখি করবে।
এজন্য হাইকোর্ট মাজারের পেছনে অবস্থিত পুরনো হাইকোর্ট ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ১৫ মার্চের মধ্যে বিচারের জন্য ভবনটির অবকাঠামোগত সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য স্বাধীনতার মাস মার্চ থেকেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। ৭ মার্চের আগে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে আইন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। বিচারের প্রথম ধাপে জীবিত থাকা শীর্ষ পর্যায়ের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার পর তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের আরও কড়া নজদারির মধ্যে আনা হবে। এরা যাতে কেউ দেশত্যাগ করে পালাতে না পারে সেজন্য সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছে। বিমানবন্দরসহ প্রতিটি বহির্গমন পয়েন্টে গোপন তালিকা পাঠানোসহ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শীর্ষ অপরাধীদের গতিবিধি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হবে।
ইতিমধ্যে সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার জানামতে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা পাওয়া মাত্র তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে। এ বিষয়ে তারা প্রস্তুত আছেন। তিনি জানান, প্রস্তাবিত তালিকায় ৫ জনের নাম আছে। এরা সবাই সর্বনিম্ন ডিআইজি পদমর্যাদার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। মুক্তিযোদ্ধা এবং সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে তাদের অনেক সুখ্যাতি আছে।
এদিকে বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন যত দেরি হবে তত দেশে ও বিদেশে আন্তর্জাতিক মহলে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ষড়যন্ত্র ডালপালা বিস্তার করবে। তিনি বলেন, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তথ্য-প্রমাণের কোন সমস্যা হবে না।
শুধু জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার করতে তাদের পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামে সে সময় প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনই যথেষ্ট হবে। এর বাইরে তাদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরোচিত অত্যাচারের বহু প্রমাণ ও প্রত্যক্ষ সাক্ষী রয়েছে। তবে সব কিছু নির্ভর করবে তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর। এজন্য তারা সরকারকে এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে দক্ষ, যোগ্য ও প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন- এমন কর্মকর্তাদের তদন্তভার দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীসহ তাদের দোসরদের তালিকা তৈরির কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিচারের জন্য প্রস্তুতকৃত ১৯৭৩ সালের তালিকা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তালিকা সমন্বয় করে এ তালিকা করা হচ্ছে। মৃতদের বাদ দিয়ে চিহ্নিত ও শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা আগে করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন,
প্রথমে প্রায় ১ হাজার অপরাধীর নামের তালিকা প্রস্তুত করে বিচার শুরু হবে। তবে সব মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ১৯৯৩ সালে গঠিত বেগম সুফিয়া কামালের গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট, ২০০০ সালে জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত শতাধিক যুদ্ধাপরাধীর নাম ও অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও এ বিষয়ে প্রকাশিত বহু বই-পুস্তক, দলিল ও নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে। চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে শিগগির একটি কমিটি করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথমে বিচারের আওতায় আনা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন যুদ্ধকালীন সময়ে জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানের সভাপতি ও রাজাকার বাহিনীর প্রধান উদ্যোক্তা গোলাম আযম, নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান উদ্যোক্তা এবং বর্তমানে জামায়াতের আমীর মাওঃ মতিউর রহমান নিজামী, পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর ঢাকা মহানগরীর প্রধান এবং বর্তমানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকবাহিনীর সরাসরি মদদে খুলনাঞ্চলে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও তথাকথিত শান্তি কমিটির প্রণেতা বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওঃ একেএম ইউসুফ, নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার নেতা, মুক্তিযু্দ্ধকালে শেরপুর-জামালপুরসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রথম আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা এবং বর্তমানে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা প্রমুখ।
সাধারণ ক্ষমা ও বিচার : ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। তবে ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা, ঘরবাড়ি অথবা জাহাজে অগ্নিসংযোগের দায়ে দণ্ডিত ও অভিযুক্তসহ ১৮ ধরনের অপরাধে জড়িতদের এ ক্ষমার বাইরে রাখা হয়। এর আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে দেয়া ভাষণে যুদ্ধবন্দি ও দালালদের বিচারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি খুলনার এক জনসভায় এও বলেছিলেন, কেউ দালালদের জন্য সুপারিশ করলে তাদেরও দালাল হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে। বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগ পর্যন্ত দেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাগারে আটক ছিল ৩৭ হাজার ৪১ জন।
সারাদেশে ৭৩টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করে তাদের বিচার কাজ চালানো হচ্ছিল। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর এর আওতায় প্রায় ২৫ হাজার ৭১৯ জন আসামি ছাড়া পায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক বাকি ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছিল। সে সময় গোলাম আযমসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতারা দেশে ছিল না। এজন্য তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ’৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৮৮৪টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে সাজা হয় ৭৫২ জনের। এতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল ১৯ জনের।
বাকিদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। দালাল আইনে সবচেয়ে বেশি সাজা হয়েছিল কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ গ্রামের আবদুল হাফিজের। হত্যা, ধর্ষণ, লুটতারাজের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার সাজা হয়েছিল ৪১ বছর।
যে ফাঁসি কার্যকর হয়নি : বিচার চলাকালীন সময়ে ১৯৭২ সালের ৮ জুন কুষ্টিয়ার দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সদস্য রাজাকার চিকন আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর চিকন আলী তার নিজ গ্রাম কুষ্টিয়ার মিরপুরের বাসিন্দা রিয়াজউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। উচ্চ আদালত তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দালাল আইন বাতিল হয়ে যাওয়ায় চিকন আলী জেল থেকে ছাড়া পায়। তবে সে আশি সালের শেষদিকে মারা যায়। উচ্চ আদালতের বিচারক ফাঁসির পরিবর্তে যাবজ্জীবনের রায় দেয়ার সময় বলেন, যুদ্ধাপরাধের মতো জঘন্য অপরাধে চিকন আলীদের বিচার হলেও এখনও মোটাওয়ালারা বিচারের বাইরে রয়ে গেছে।
গোলাম আযমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ : মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তান সরকার ও পাক সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমসহ ১৪ জন রাজনীতিককে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ তালিকায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন মুসলিম লীগের খান এ সবুর, পাকিস্তান ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতা নুরুল আমীন, ওয়াহেদুজ্জামান ঠাণ্ডা মিয়া, খাজা খয়েরউদ্দিন, কাজী আবদুল কাদের প্রমুখ। এছাড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য গঠিত নাগরিক শান্তি কমিটির ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ এপ্রিল বিকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে ২০/২৫ হাজার লোকের সমাবেশ ও মিছিল হয়। এতে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম, খাজা খয়ের উদ্দিন, কৃষক শ্রমিক পার্টির নেতা এএসএম সোলায়মান, মুসলিম লীমের খান এ সবুর প্রমুখ।
গোপন প্রতিবেদন : একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার কাছে গোপন প্রতিবেদন পাঠানো হতো। প্রতি মাসে দু’বার করে পাঠানো সেসব প্রতিবেদনে জামায়াতের পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি (পরবর্তী সময়ে ছাত্রশিবির) মতিউর রহমান নিজামী, ছাত্রসংঘ নেতা আলী আহসান মুজাহিদদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হতো। এসব গোপন প্রতিবেদনের বহু কপি ইতিমধ্যে সরকার সংগ্রহ করেছে।
তারা যা বলেছিল : সে সময় জামায়াত ও আলবদরের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে নানা অপকর্ম করা ছাড়াও প্রকাশ্যে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তৃতা দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ২ মে ঢাকা নগর জামায়াতের সভায় গোলাম আযম বলেন, মিল-কলকারখানা যাতে চালু থাকে সেজন্য কাজ করতে হবে। আর পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এমএম কাজিমের স্বাক্ষরে এ প্রতিবেদন পশ্চিম পাকিস্তানে ইয়াহিয়া সরকারের কাছে পাঠানো হয়। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সভায় গোলাম আযম বলেন, হিন্দুরা মুসলমানদের অন্যতম শত্রু। তারা সব সময় পাকিস্তানকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তিনি প্রতিটি গ্রামে শান্তি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
যুদ্ধ চলাকালে ১৪ জুন ময়মনসিংহের জামালপুর মহকুমায় ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিউর রহমান নিজামী বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেনাবাহিনী যেভাবে কাজ করছে তাতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা সম্ভব। তিনি বলেন, ইসলাম রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এজন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশও দেন।
জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমীর প্রয়াত আব্বাস আলী খান ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট আজাদী দিবসে জয়পুরহাটে রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীর সম্মিলিত কুচকাওয়াজে সভাপতির ভাষণে বলেন, রাজাকাররা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমূলে ধ্বংস করে দিতে জান কোরবান করে দিতে বদ্ধপরিকর। একাত্তরের ১৭ অক্টোবর রংপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, এ যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। তিনি ইসলামবিরোধী শক্তি প্রতিহত করতে যুবকদের সংঘটিত করে আলবদর বাহিনীতে যোগ দেওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেন।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফরিদপুরে অপর এক সমাবেশে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, ঘৃণ্য শত্রু ভারতকে দখল করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের আসাম দখল করতে হবে। এজন্য আপনারা সশস্ত্র প্রস্তুতি গ্রহণ করুন (১৫ সেপ্টেম্বর, দৈনিক সংগ্রাম)। ৪ ডিসেম্বর মুজাহিদ এক যুক্ত বিবৃতিতে ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমরাও ঘোষণা করছি ১৯৬৫ সালের মতো এ দেশের ছাত্র-জনতা ইস্পাত কঠিন শপথ নিয়ে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করে যাবে।
দালাল আইন বাতিল : পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করেন। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ চারটি গুরুতর সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কারাগারে আটক ১১ হাজার আসামি জেল থেকে বেরিয়ে আসে। দালাল আইনে ১৯৭৩ সালে চারদলীয় জোটের একাংশের আমির মাওঃ মোহাম্মদ ইসহাকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল।
তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে গঠিত ডা. মালিক মন্ত্রিসভার সদস্য। প্রায় ২৪ মাস কারাগারে থেকে তিনি মুক্তি পান। মালিক মন্ত্রিসভায় জামায়াতের দু’জন সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর মাওঃ আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ (অর্থমন্ত্রী) এবং অপরজন সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির প্রয়াত আব্বাস আলী খান (শিক্ষামন্ত্রী)। দেশ স্বাধীনের পর এরা দু’জনই গ্রেফতার হয়েছিলেন।
মুজাহিদের সেই বক্তব্য : ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে বেরিয়ে আসার সময় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী ছিল না, বর্তমানেও নেই। এটা বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত। মুজাহিদের এই বক্তব্যে দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
উপরন্তু, এ বিষয়ে ৩১ অক্টোবর জামায়াতের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, প্রয়াত শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের তদন্তানুসারে দেশে যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা ১৯৫ জন। বাংলাদেশ সরকার ক্ষমার নিদর্শন হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় ওই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে অন্য যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দেশে আর কোন যুদ্ধাপরাধী থাকার কথা নয়। জামায়াতের এ বিবৃতিতে দেশজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে। বেশিরভাগ মানুষ দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে।
সংগ্রহেঃ- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:৩৬