গত পরশু রাতে সেখ মুজিবের খুনীদের ফাসি কার্যকর হয়েছে। এই ফাসি তথা বিচারের ব্যপারে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে। সবই যে অনুচিত কথা তাও বলা যায় না আবার ঢালাও ভাবে তা সমর্থন ও করা যায় না । পাপ করলে পাপিকে শাস্তি পেতে হবে এটাই নিয়ম। আবার পাপের শাস্তির পর সে আর ঐ পাপে পাপি থাকে না। শাস্তি মানুষের সমস্ত পাপকে মুছে নিয়ে যায়। পাপ আর পাপি এক নয়, ছিলোও না কোন দিন।
চলুন না একটু পিছে ফিরে দেখা যাক ।
আলোচিত ব্যক্তিবর্গ (যাদের ফাসি দেওয়া হল) সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের প্রয়োজনে সবাই প্রান বাজী রেখে দেশের মুক্তির জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। অংশ গ্রহন করেছিলেন সেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত যুদ্ধে। যুদ্ধ তারা করেছিলেন নি:স্বার্থ ভাবে; নির্লোভ ছিল তাদের সেই ত্যগ। কোন কিছু পাওয়ার আশায় তারা যুদ্ধে যান নি বা করেন নি । শুঢুমাত্র একটাই উদ্দেশ্য ছিল দেশমাত্রিকা কে স্বাধিন করা, রাহুর কবল থেকে মুক্ত করা।
পাক রাহুর কবল থকে দেশ স্বাধিন হবার পর পরই তারা উপলব্ধি করেনল আর এক রাহুর কবলে পতিত হতে চলেছে লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধিনতা। আরও অবাক বিষ্বয়ে তারা দেখলেন যে মানুষের একটি ডাকের ফলে অযুত জনতা খালি হাতে লড়াইয়ে নেমেছিল তৎকালিন সমেয়র এক লড়াকু বাহীনির সাথে, দেশকে মুক্ত করল এক রাহুর কবল থেকে সেই মানুষেরই প্রত্যক্ষ মদদে, এমন কি তার পরিবারের লোকেরা হয়ে দাড়াল ভয়ংকর এক দানবে। স্বাধীনতার অবিস্মবাদিত নায়ক হয়ে মুজিব যেন একটু অহংকারী হয়ে উঠলেন। মোসাহেব দের মোসাহেবি আর তথাকথিত সহযোগী নামের চামচা ( যাদের অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে বেচে আছে এবং সেই কাজটিও দ্বীগুন উৎসাহে চালিয়ে যাচ্ছে)
দের চামচামিতে তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে পড়লেন। ভুলে গেলেন দেশ জাতির কথা। চারপাশের চ্যালাচামুন্ডাদের দাপট এতখানি বেড়ে গেছে যে তাদের আর সামাল দেবার ক্ষমতা তার ছিল না। ফলে ঐ সব দনবদেরকে সমর্থন করে যেতে লাগলেন, আর এর বিরুদ্ধবাদীদের কন্ঠকে চীরতরে স্তব্ধকরে দিতে চালালেন নির্মম অত্যচার নিপিড়ন। এক হিসেবে জানা যায় এক জাসদেরই ৪০ হাজার কর্মীকে মেরে ফেলা হয়, করা হয় তাদের লাশ গুম। সিরাজ শিকদার কে হত্যা করে মুজিব নিজে সংসদে দাড়িয়ে বলেছিলেন কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? দেশে হেন অরাজকতা নেই যা করতে বাকি রেখেছিল শেখের সমর্থকেরা । দ:র্ভিক্ষ আর হানানিতে দেশ তখন একটা যাহান্নামে পর্যবসিত। ব্যাংকগুলো লুট হচ্ছিল দেদারছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসাকে করা হচ্ছিল করায়ত্ব। ব্যাংক লুটের ঘটনায় সয়ং শেখ মুজিব তনয় জামাল-কামাল জড়িত ছিল। ( এ সবই ইতিহাস, আমাদের প্রজন্মকে আগডুম বাগডুম দিয়ে নতুন ইতিহাস বানি্যে শোনানো হলেও তখনকার মানুষ যারা এখনো বেচে আচেন তারা এর জীবন্ত ইতিহাস, একে কেউ মুছে ফেলতে পারবে না)।
এই ছিল যখন দেশের অবস্থা তখন যে কোন দেশ প্রেমিকের পক্ষেই চুপ করে এ সব দেখে সহ্য করে যাবার কোন উপায় ছিল না । কিছু একটা করার তাগিদ তারা অনুভব করছিলেন। প্রচলিত সকল পথই যখন অকার্যকর বলে প্রমানিত হল, তখনই এসেছিল সেই চরম মুহুর্ত টি। মানুষের পিঠ কতটা দেয়ালে ঠেকে গেলে সে এমন একটি কাজ করতে পারে তা আজকে এই ২০১০ সালে বসে উপলব্ধি করা মোটেও সম্ভব নয়। কিন্ত ইতিহাসের অনিবার্য পথ ধরেই ঘটেছিল সে ঘটনা, যা থকে শেখ মুজিবের কোন পরিত্রান ছিল না। তার একটি ছোট্ট নমুনা মাত্র এই যে, যে মানুষটি মাত্র ৩/৪ বছর আগে ছিল দেব তুল্য, সেই মানুষেরই এমন মৃত্যুতে একটি বনি-আদমকে ব্যথিত হতে দেখা যায় নি। বরং মানুষ উল্লাস করেছে, করেছে মিষ্টি বিতরন। কি আশ্চর্যই না ব্যপারটা !!
(অনেকে বলে থাকেন যে আর্মি পুলিসের ভয়ে মানুষ নাকি শোক প্রকাশ বা জানাজ করতে পারেন নাই, কথাটা যে মিথ্যা এবং যুক্তির ধোপে টেকে না কিন্ত প্রমান করে গেলেন সেই মুজিবের খুনী বজলুল হুদা। গতকাল তার লাশ গ্রামের বাড়ি পৌছলে হাজার হাজার মানুশ তাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকে। লাশকে পুলিস সহ প্রশাসনের সকল বাধা ছিন্ন করে স্থানী্য় হাইস্কুল মাঠে নিয়ে স্বতর্ফুত জানাজ করে। আর একথা সবাই জানে হাসিনার পুলিশ বিডিআর কোনটাই এই লাশ গুলোকে যথাসম্ভব তাড়াতারি পুতে ফেলার চেষ্টার কোন কসুর করে নাই, এটলিষ্ট চাকুরী বাচানোর দায়েই হোক আর প্রমশন বাগানোর ধান্দাযই হোক।)
ত তখনকার প্রেক্ষাপটে এই খুনীরাই ছিল জাতীয় বীর। (আর আদতে তারা সবাই তা ছিলেন ও। প্রত্যকেই মুক্তিযুদ্ধে অসিম সাহসি ভুমিকা রেখে নিজেদেরকে জাতির কাছে চির ঝ্বনী করে গেছেন )। কিন্তু সময়ের সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন আসে। স্থান কালের ব্যবধানে ন্যায় অন্যায়ের মাত্রাও পরিবর্তিত হয়। হয় ভালো মন্দের ও স্থান বদল। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধিনতা সংগ্রামের অন্যতম ৫ সিপাহসলার কে ফাসির রজ্জু গলায় পড়ে দেশ মাত্রিকার কাছে পাওনা ঝ্বন শোধ করে যেতে হল।
কিন্ত এ যাওয়া টা ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য বড়ই অপমানকর, বড়ই লজ্জার । শেখ হাসিনা সরকার খুবই বড় গলায় মুক্তিযোদ্ধের চেতনার সোল এজেন্সি দাবি করেন। তিনি ছাড়া দেশে আর কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারী আছেন সেটা উনি মানতেই চান না, আর কেউ যে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে পারেন সেটাও মানেন না । সেই হাসিনার নিকট থেকে এটা আশা করা যায় না। ( একথা ত অস্বিকার করার উপায় নেই যে তারা খুনী, এবং সেই অর্থে অপরাধী। বিচার পক্রিয়ায় তাদের ফাসি, জেল-জরিমানা যাই হোক হল।) চুরান্ত শাস্তির পর ত আর তাদের পাপ থাকার কথা না। ত এই অবস্থায় তাদেরকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাবে সমাহিত করেলে ( না হলেও একজন নগন্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও) কি খুব বেশি চাওয়া হত?? কিন্ত তা না করে এদের যাতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাবে সমাহিত না করতে হয় সে জন্য আইন প্রনয়ন করে তা ঠেকালেন।
হায়রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা!! আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দরদ!!!
তবে যে যাই বলুক, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এদের স্মৃতি হৃদয়ে জাগরুক রাখবে চিরকাল। স্বাধিনতার লাল সবুজ পতাকার পাশে এরা চির সমুজ্জল থাকবে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ( দ্ধান্দাবাজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবও নয়, নয় একজন খুনী হিসেবেও!!)