somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিচ্চি কিউট পাচ্চা কিউট-২

০৯ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একদিন কাজিনের বাসায় গেলাম। দুই পিচ্চি খেলছে আপনমনে। আমি সবসময় পিচ্চিদের একটু সময় দেই মেশার জন্য, শুরুতেই ধরে কচলাকচলি অনেক পিচ্চিই পছন্দ করে না। কিছুক্ষণ দূর থেকে ওদের সাথে কথা বলি, আড়ষ্টতা কেটে গেলে ওরাই কাছে আসে। এক পিচ্চি বল নিয়ে রান্না করছে তার হাড়িতে। আমি বললাম, “কী রান্না করো?”
“ডিম” পিচ্চি উত্তর দিল।
: “হাড়িতে কী দিচ্ছ?”
: “লবণ”। বলেই সে গাদাখানেক অদৃশ্য লবণ দিয়ে দিলো হাড়িতে।
: “করেছো কী! এতো লবণ দিলে তিতা হয়ে যাবে তো!”
পিচ্চি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে হাড়ি থেকে লবণ কমিয়ে নিলো। তারপর এক খাবলা অদৃশ্য চিনি দিয়ে বললো, “এখন চিনি দিয়েছি, আর তিতা লাগবে না”।
৪ বছরের এক পিচ্চির এইটুকু বুদ্ধিতে চমৎকৃত হলাম। :D
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই পিচ্চি আমার কাছে এসে ভিড়লো। পিচ্চি চুলা, হাড়ি, মশলা, ডিম নিয়ে আমার কাছে হাজির।
: “ফুপি, এখানে লবণ দাও”
আমি এক খাবলা অদৃশ্য লবণ দিলাম।
: “মরিচ দাও একটু”।
আমি এক চিমটি মরিচ দিলাম।
: “আদা দাও”
আমি এক চামচ আদা বাটা দিলাম।
: “ফুপি, তোমার হাত ধুয়ে ফেলো”।
আমি অদৃশ্য বেসিনে হাত ধুয়ে ফেললাম।
: “সাবান দিয়ে ধোও”।
আমি আবারো সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললাম। :|
কিছুক্ষণ সেই পিচ্চি মনযোগ দিয়ে ডিম রান্না করলো। তারপর আমার কাছে এনে বললো, “দেখো তো ফুপি, গরম হয়েছে নাকি!” আমি হাড়িতে হাত দিয়ে “উফ্‌! কী গরম!” বলে আঁতকে উঠার ভান করলাম।
আমি অদৃশ্য বেসিনে কল ছেড়ে পোড়া হাতে পানি দিচ্ছি। আর পিচ্চি খিলখিল করে হাসছে।
একটু পর পিচ্চি আমাকে প্লেটে সেই ডিম এনে দিলো। আমি গপাগপ সেটা খেয়ে নেয়ার ভান করলাম। :-/
পিচ্চি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। কী নিষ্পাপ সেই হাসি!

আমার দেড় বছর বয়সী পিচ্চি ভাতিজিটাকে নিয়ে বলি একটু। মাত্র মাত্র কথা বলা শিখছে। সবকিছু নিজের মতো করে নিয়ে বলে। উ-কার বলতে তার একটু কষ্ট হয়। নানু -দাদু বলতে গেলে কন্ঠ চিকন হয়ে যায়। সেজন্য আম্মু-আব্বু না বলে আম্মা-আব্বা বলে। আমাদেরকে ডাকে ‘পি’ বলে। গলা ছেড়ে ডাকে, “পি, আতো! তাতায়ি!” ( ফুপি, আসো, তাড়াতড়ি)। আমাদের দেখাদেখি ওর মাকে ভাবী বলে ডাকে। “বাব্বীইইই! আম্মাআআআ! দাআও!” (দাঁড়াও)।
“দুষ্টামি করবে না, আচ্ছা?” এটা বলার সাথে সাথেই ঘাড় কাত করে সম্মতিপ্রদানপূর্বক আগের কাজই করতে থাকে।
“এটা খাবে?” বললেই ঘাড় কাত করে মোলায়েম স্বরে বলে, “নাআআআ!” স্বর যতোটা মোলায়েম হয়, তার সেই খাবার না খাওয়ার ইচ্ছা ততোটাই বেশী। সেই “নাআআআ” বেশ শক্ত না, জোর করেও খাওয়ানো যায় না। :|
ওর আপাতত সবচেয়ে অদ্ভুত উচ্চারণ হচ্ছে ‘তামতি’। পানিকে তামতি বলে ও। পানি দেখিয়ে বললাম, “এটা কী?”
: “তামতি”
: “বলো পানি”
: “তাম্‌তি”
: “বলো পা”
: “পা”
: “নি”
: “নি”
: “এবার বলো পানি”
: “তাম্‌তি” :|

ওদের কাজের মেয়েটা নানী-দাদী বলে কী যেন বলছিলো। সেটা শুনে পিচ্চি সুর করে করে বলছে, “নাআআআনীইইইই”
আমি পেছন থেকে একই সুরে বললাম, “পাআআআনীইইই”।
সেও সুর করে বললো, “পাআআনীইইই”। এরপরই ওর মগের দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে বললো, “তাম্‌তি!” :|

একবার ভাতিজি খুব বিরক্ত করছে। ভাবী বিরক্ত হয়ে বললো, “ইস্‌! বিরক্ত করছো কেন?” এবারে পিচ্চি কেঁদে কেঁদে বললো, “পঅঅপ্‌ পঅঅপ্‌ পঅঅপ্‌!” ( ওর ভাষায় ধমক দিলো আরকি!) ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। সেটা দেখে তার কান্নার বেগ গেলো বেড়ে। সবাইকে আরেকবার বকে দিয়ে নিজের গালে নিজেই আদর করে বলতে লাগলো, “ আদো আদো আদো!” ( আদর আদর আদর) B-)

ভাতিজি একবার কলা খাবে। তখন সে আরো ছোট, খোসা মুখে দিয়ে ফেলে কী না সেই ভয়েই ওর খালামণি কলা সবটা ছিলে দিলো। সেটা পিচ্চির পছন্দ হচ্ছে না, সে বড়দের মতো একটু একটু করে খোসা ছাড়িয়ে খাবে সেটা নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলো। ভাবী আরেকটা কলা এনে অল্প খোসা ছাড়িয়ে দিলো। সেটাও তার পছন্দ না, আগের কলাটাকেই এভাবে দিতে হবে। ছিলে ফেলা খোসা আবার কীভাবে লাগাবে সেটা পিচ্চিকে বোঝানোই যাচ্ছে না, সে কেঁদেকেটে অস্থির। শেষে ভাবী সেই কলাটাকেই খোসায় ভরে রাবার ব্যান্ড দিয়ে আটকে দিল। পিচ্চি মহা খুশী। B-)
এটা বলতে গিয়ে একটা গল্পের কথা মনে পড়লো। একবার রাজদরবারে আসতে বীরবলের দেরী হচ্ছিলো। রাজা জবাবদিহি করতে গেলে বীরবল বললো যে সে বাচ্চা সামলাতে গিয়ে দেরী করে ফেলেছে। রাজা বিরক্ত হয়ে বললেন, “কী এমন একটা কাজ এটা বলো শুনি? এজন্য রাজদরবারে আসা দেরী হবে এটা মানা যায়?”
বীরবল শুয়ে হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, “আখ খাবো! আখ খাবো!”
রাজকর্মচারী ছুটে গিয়ে আখ নিয়ে এলো।
বীরবল আবারো হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, “আখ ছিলে টুকরো করে দাও”।
রাজার হুকুমে আখ ছিলে টুকরো করে দেয়া হলো।
বীরবল এবার হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, “ আমি এই আখটাই আস্ত খাবো!”
এইবারে রাজা বুঝে গেলেন পিচ্চি-পাচ্চা কী জিনিস! :D
:D
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×