প্রচলিত আছে,সপ্তম শতাব্দির শুরুর দিকে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা কিছু মানুষের সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ উচ্চারিত উক্তি-"আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি" এর 'রহম' শব্দটি থেকেই 'রোহিঙ্গা' শব্দটির উৎপত্তি !
১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইলের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিলো। বিপত্তিটা ঘটলো তখনই,রাজা 'বোদাওফায়া' যখন রাজ্য দখল করলেন। ক্ষমতা হাতে পেয়ে তিনি শুরু করলেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের আধিপত্যের প্রচলন।রোহিঙ্গাদের সুখের ঘরে দুঃখের আগুন জ্বলার কেবল তখন শুরু। পরবর্তিতে সেই আগুনে ঘি ঢালার মহান! দায়িত্ব হাতে নিলো এক সময়ে এ ভূখণ্ডের দখল নেয়া ব্রিটিশরা। তালিকা করলো মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর,যেখানে বেমালুম গায়েব ছিলো 'রোহিঙ্গা' নামটি! ভূল কিংবা ইচ্ছাকৃত,রোহিঙ্গাদের আজকের করুণ পরিণতির নেপথ্য সেই ঘটনাটিই যে অন্যতম,এবং যার জন্য দায়ী খোদ 'ব্রিটিশরা',তা বোঝার জন্য বোদ্ধা হবার খুব বেশি একটা প্রয়োজন নেই।
স্বাধীনতা অর্জনের পর রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে মিয়ানমার,যার শুরুটা হয় ১৯৪৮ সালে।১৯৬২ সালে 'জেনারেল নে উইন' ঘটিয়ে দেন এক সামরিক অভ্যুত্থান,দখল নেন রাষ্ট্র ক্ষমতার।বাতাস বইতে শুরু করে উল্টো দিকে! দুর্ভোগ্যের নতুন অধ্যায় শুরু হয় পদে পদে লাঞ্চনা,বঞ্চনা,অন্যায় আর নির্যাতনের স্বীকার হওয়া রোহিঙ্গাদের।নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের গায়ে দেয়া হয় বিদেশীর তকমা।কেড়ে নেয়া হয় ভোটাধিকারও।এমনকি ধর্ম চর্চায়ও নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ।বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োগ,সম্পত্তি জবরদখল সহ হত্যা,লুন্ঠন,ধর্ষন তো ছিলো রীতিমত সাধারন ব্যাপার।
মিয়ানমারের 'রোহিং' অঞ্চলে বসবাসকৃত এই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী মূলত মুসলিম।মিয়ানমার ছাড়াও,কমপক্ষে ছয় থেকে সাত লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এবং প্রায় সম সংখ্যক সৌদিআরবে বসবাস করে বলে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা হলেও আঁচ করা যায় তাদের অন্য আরেকটি পরিচয় 'কালা' নামটি শুনে।যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সীমাহীন ঘৃণা !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১২