গত পাঁচ বছর হিমুর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই রুপার।অবশ্য যোগাযোগ নেই বললে ভুল হবে,হিমুর পাত্তা নেই।প্রথম প্রথম মনে হয়েছিলো,সে তার স্বভাবসুলভ ডুব দিয়েছে।রুপাও তাই খুব বেশি মাথা ঘামায়নি।মাথা ঘামতে শুরু করলো,বছর ঘুরে যাওয়ার পর।তারপর থেকে সম্ভাব্য সকল যায়গায় খোঁজ করা হয়েছে।কেও কিছু বলতে পারেনি।ওর পুরনো আস্তানার ম্যানেজার জানিয়েছে-
'একদিন সকাল সকাল ঘুম থেইকা উইঠা দেহি,হিমু ভাইজানের রুম খালি।সেদিন রাইত তিনটায়ও দেখছি বারান্দায় বইসা বিড়ি ফুঁকতে।এরপর আর কিছু কইতে পারুম না আপা।আপনি তার কি হন?'
ওর ফুপাত ভাই বাদল একদিন রুপাদের বাড়ির সামনে এসে বিরাট হইচই শুরু করলো।সাথে গুন্ডা কিছিমের একজন।বারবারই বলছে,হিমু ভাইজানের কিছু হইলে এই জগলু সবার কল্লা নামায়ে দিবে।আমার বাপ এক,আমার জবান এক।কথা যদি ঠিক না রাখি,তয় আমি গু খাই,কাঁচা গু। রুপার বাবা নাকি গুন্ডা লাগিয়ে হিমুকে গায়েব করে দিয়েছে।অশ্রাব্য আর কুতসিৎ গালাগালি।বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা।রুপার বাবা পুলিশে ফোন দিলেন।পুলিশ আসার আগেই বাদল আর জগলু পালিয়ে গেলো।তবে যাবার আগে,ইট দিয়ে বাড়ি দিয়ে, রুপাদের বাড়ির দারোয়ানের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে গেছে।রুপা শুধু বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছে।অজ্ঞাত কারণে সেদিন,রুপার বাবা আর টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি।
কয়েক বছর পর।রুপা দেখলো,শহরের রাস্তায় অসংখ্য তরুণ হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরছে,খালি পা।তাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন করে তরুণী।গাঁঢ় নীল শাড়ি পড়নে।মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।রুপার চোখ আটকে গেলো একজনের দিকে।রুপার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসছে।প্রবল বৃষ্টির শব্দ উপেক্ষা করে রুপা সে হাসির শব্দ শুনতে পেলো।সে চেষ্টা করলো এগিয়ে যেতে,কিন্তু সে নড়তে পারছেনা।পা দুটো স্থবির হয়ে আছে।সে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো।
রুপা তাকে আবিষ্কার করলো তার ঘরের বিছানায়।সে কি স্বপ্ন দেখেছে, নাকি হ্যালুসিনেশন? বিছানায় উঠে বসলো,রাত দুটো বেজে দশ।অজানা কারণে,এই রাতে রুপা সাঁজতে বসলো।নীল শাড়ি পড়লো,পরিপাটি করে চুল বাঁধলো।চা বানালো।কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় বসলো।চা শেষ হতেই আবার উঠে দাঁড়ালো।অস্থির লাগছে।হঠাত রাস্তায় চোখ পড়তেই চমকে উঠলো রুপা।বুকটা ধড়াস করে উঠলো। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় স্পষ্ট দেখলো,কেও একজন হেঁটে আসছে। সেই চিরচেনা ভঙ্গি।পড়নের পাঞ্জাবির হলুদ রঙটা বুঝতেও বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলোনা।অস্ফুটভাবে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,হিমু!
পরের কয়েক মিনিট রুপার কাছে মনে হয়েছে অনন্তকাল।দোতলা থেকে নেমে,দারোয়ানকে ঘুম থেকে উঠিয়ে,তাকে দিয়ে গেট খুলিয়ে রুপা রাস্তায় নেমে এলো।
রুপা দাঁড়িয়ে আছে।হঠাতই বৃষ্টি শুরু হলো। এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে একেবারে মুষলধারে।বৃষ্টির প্রবল ছাঁট ভিজিয়ে দিচ্ছে তাকে। রুপা দাড়িয়েই আছে।ভিজতে লাগলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৪২