মাথার ঘাম অফিসের মেঝেতে ফেলে বাবা টাকা আয় করেন।সেই টাকা দিয়ে বাদামতলী থেকে চাল, কারওয়ানবাজার থেকে মাছ,কাপ্তানবাজার থেকে সবজি কিনে আনা হয়।তারপর সকাল থেকে রাত অবধি বিনাবেতনের সবচেয়ে কঠিন চাকুরীটা করেন মা।তৈরি হয় আপনার-আমার পেটপূজার প্রসাদ।আর সেসব প্রসাদ ভক্ষণ করেই আমি-আপনি বেঁচে আছি,বুকভরে শ্বাস নিচ্ছি,ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছি।এটা শুধু বেঁচে থাকার দীর্ঘ পরিক্রমার সামন্য একটা উদাহারণ মাত্র।এমন অসংখ্য উদাহারণের সমন্বয়ে আমরা বেঁচে আছি,যার নেপথ্য কারিগর আমাদের পরিবার।
সুতরাং আমার-আপনার এই জীবনটা শুধু আমাদের একার না।এই জীবনের ভাগীদার,বাবা-মা সহ পরিবারের অন্যান্যরাও।এই জীবনের উপর আপনার যতোটুকু হক আছে,বেশি না হলেও 'কম নয়' পরিমান হক তাদেরও আছে।
জীবন অর্থমূল্যের ঊর্ধ্বে।পৃথিবীকে কিছু দেয়ার জন্য আমি-আপনি অক্ষম হলেও,আমাদের অনেক কিছু দেয়ার জন্য এই পৃথিবী সক্ষম।তার সেই সক্ষমতাটাই আমাদের জন্য সুযোগ।সর্বোপরি বেঁচে থাকতে হবে।জীবন যেহেতু তুচ্ছ নয়,এ জীবন শেষ করে দেয়ার জন্য তুচ্ছ কারণও যথেষ্ট নয়।
গতো কয়দিনে,'প্রিয় ফুটবল দলের ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করলেন সমর্থক' এইধরণের একাধিক শিরোনাম আমি দেখেছি।যে ফুটবল খেলা দিনশেষে শুধুমাত্র বিনোদনের উৎস,আনন্দের স্বল্পমূল্য মাধ্যম,তার জন্য আপনার অমূল্য জীবন শেষ করে দেয়া নিছকই অর্থহীন।মনে রাখতে হবে,দূরপ্রাচ্যের যেসকল দলের খেলা দেখে আমরা আনন্দিত-আপ্লুত-আকৃষ্ট-উদ্বেলিত হচ্ছি,বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি সেসকল দেশের খেলোয়ারদের কাছে অনেকগুলো ভিনগ্রহের মতোই অপিরিচিত একটি গ্রহ।
অতএব,এতো মূল্যবান জীবনকে খেলা দেখে হেলায় শেষ করা যাবেনা।আপনার একটি জীবন মানে আরো অনেকগুলো জীবন। আপনার বাবা-মা,ভাই-বোন,স্ত্রী-পুত্রকন্যা।মনে রাখবেন,পছন্দের দলের পরাজয়ে আপনার অস্থায়ী অ-সুখ;অন্যদের স্থায়ী শোকের কারণ হলে,পৃথিবী নামক আদালতের বিচারিক কাঠগড়ায় আপনি চিরস্থায়ী আসামি হয়ে থাকবেন।আপনার জীবনের তুলনায় বিশ্বকাপ ফুটবল, পুচ্ছদেশের মাসব্যাপী জমা হওয়া লোমের মতোই তুচ্ছ।
©নাকিব।
২৫/৬/২০১৮।