আর কয়েকদিন পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তার পূর্বেই শুরু হবে বইমেলা। যদিও এই ডিজিটাল সময়ে কাগজের বইয়ের প্রতি তেমন একটা আকর্ষণ অনেকেই অনুভব করেন না, সবাই ডিজিটাল মাধ্যমেই পছন্দের বইটি পড়ে নেন। মাঝে মাঝে আমি নিজেও এমনটাই করি, কিন্তু যাই বলুন না কেন কাগজের বই হাতে নিয়ে চিৎ হয়ে, কাৎ হয়ে, উপুর হয়ে, আধশোয়া হয়ে, চেয়ারে বসে, হাঁটতে হাঁটতে এমনকি কেউ কেউ নাকি বাথরুমে প্রাকৃতিক কাজ সারার সময়েও বইটি হাতে নিয়ে উপভোগ করেন তার ভিতরের সকল রূপ, রস গন্ধ। আর ডিজিটাল মাধ্যম আসার পরে আগেকার সে লাইব্রেরীর চেয়ার-টেবিলগুলো নিজেরাই গল্পে-গুজবে অলস সময় পার করে, আর বইয়ের প্রকাশক, লেখক বা বই বিক্রেতারা অনেকেই নাকি ঘুমিয়ে কাটায়। যাই হোক আমার নিজের মতামত শেয়ার করার জন্যই এই ব্লগের অবতারণা। আমার মতের সঙ্গে কারও কারও ভিন্নমত হলেও কোন সমস্যা নেই নিশ্চিন্তে মন্তব্যে জানাতে পারেন আপনার নিজস্ব ভাবনা, শেয়ার করতে পারেন কাগজের বই নিয়ে কোন মজার স্মৃতি।
ছবি: গুগল
১। আমি অনেক পরিক্ষা করে দেখেছি, হার্ডকপি বই নিয়ে পড়লে বিষয়বস্তুর যতটা গভীরে যাওয়া যায় সেই একই বই মোবাইলে/ট্যাবে/ল্যাপটপে/ডেস্কটপে মোদ্দাকথা ডিজিটাল কপি পড়ে ততটা গভীরে কখনোই পৌঁছাতে পারি না।
২। কাগজের বই নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন যেভাবে সময়ের সঙ্গে বইয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারি, ডিজিটালে তার ১০-২০ ভাগও পাই না।
৩। কাগজের বইটি এক বা দুবার পড়লে বইয়ের পুরো বিষয়বস্তুই প্রায় আয়ত্ব (মুখস্ত/হৃদয়ঙ্গম) হয়ে যায় কিন্তু ডিজিটাল বইটি ১০ বার পড়েও আমি তার ৫০ ভাগও দুয়েকদিন পরে মনে করতে পারি না।
একসময় বইয়ের পোকা ছিলাম, নিজের একান্ত অলস সময়গুলো পার করতাম বই পড়ে, সে তালিকায় ছিল গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটিকা/নাটক, প্রবন্ধ, রম্যরস, এ্যাডভেঞ্চার, থ্রিলার, কমেডি, এ্যাকশন সব ধরণের বই-ই আমার পড়তে খুব ভালো লাগত। এমনও হয়েছে কোন কোন বই পড়তে গিয়ে তা শেষ না করে উঠতে পারিনি। কিন্তু বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল বইগুলোর সঙ্গে ঠিক তাল মেলাতে পারছি না। হয়ত আমার ব্যর্থতা, অথবা এই ডিজিটাল বইগুলো পড়ে হৃদয়ঙ্গম করার কোন ডিজিটাল তরিকা রয়েছে যা আমার অজানাই রয়ে গেছে।
তাই সম্মানিত পাঠকবৃন্দের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ, এ ব্যাপারে আপনাদের যার যার ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করুন। আপনাদের নিকট থেকে এ বিষয়ে কোন হেল্প পাওয়া যায় কি না।
আরও একটি ব্যাপার, যদিও পার্সোনাল তবুও শেয়ার করলাম, আমি খুব দ্রুত বাংলা/ইংরেজী টাইপ করতে পারি, আর এ্যকুরেসিও যথেষ্ট সন্তোষজনক। জীবনে অনেক বই প্রায় নির্ভুল টাইপ করে দিয়েছি। প্রতিটি বইমেলার আগে দু'একটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি কম্পোজ করে দিয়ে রথ দেখা আর কলা বেচার কাজটা একসঙ্গে সেরে ফেলতাম। যদি কারও হাতে প্রকাশযোগ্য কোন পাণ্ডুলিপি থাকে যা কম্পোজ করা দরকার, নক করবেন দ্বিধাহীনভাবে। যদিও কাজটি প্রকাশকরা নিজ দায়িত্বেই করে থাকেন, কিন্তু তথাপি বইমেলার আগে অনেক কাজ হাতে থাকায় অনেকে নতুন কাজ নিতে চান না কেবমাত্র সময়মত পাণ্ডুলিপি কম্পোজ করিয়ে শেষ করতে পারবেন না এই ভয়ে...।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৫০