somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বায়োগ্রাফি পর্ব -৩: হলিউড অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট

১০ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নায়িকা হিসেবে “টাইটানিক” চলচ্চিত্র দিয়ে সারাবিশ্বে চলচ্চিত্রপ্রেমিদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন কেট উইন্সলেট । অভিনয় জগতে আগে থেকেই অবস্থান ছিল তার । ১৯৯১ সালে ব্রিটিশ টেলিভিশনের মাধ্যমে তার কাজ শুরু হয় ,তিনি বিবিসির শিশুদের সাইন্স ফিকশন এ অভিনয় করেন । এরপর মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি “হেভেনলি ক্রিয়েচার” নামে ১৯৯৪ সালে একটি চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন । যার গল্প আবর্তিত হয়েছিল দুজন মেয়ের একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড করাকে ঘিরে ।

১৯৯৫ সালে “সেন্স এন্ড সেন্সসিবিলিটি ” চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন এবং এরপরই পরিচালক জেমস ক্যামেরুন এর চোখে পড়েন আর অভিনয় করেন বিখ্যাত “ টাইটানিক” চলচ্চিত্রে । কেট উইন্সলেট জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৫ সালের ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডের ব্যারকশায়ারে । তার বাবার নাম- রজার উইন্সলেট এবং মার নাম স্যালি ব্রিজেস উইন্সলেট । তার বাব-মা উভয়েই মঞ্চ অভিনয়ের সাথে জড়িত ছিলেন এবং তার নানা-নানি রিডিং রেপাটরি নামে একটা থিয়েটার চালাতেন । শৈশব থেকে চলচ্চিত্র ,নাটক ,গান এর প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা ছিল আর সেজন্যেই এই অভিনেত্রী ছোটবেলা থেকেই নাট্যকলার ওপর লেখাপড়া করা শুরু করেন । মাত্র ১১ বছর বয়সে অভিনয় শেখার জন্যে তিনি “রেডরফ থিয়েটার” স্কুলে ভর্তি হন ।



“হেভেনলি ক্রিয়েচার” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যে তিনি ১৭৫ জন মেয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করেন । “হেভেনলি ক্রিয়েচার” চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন-পিটার জ্যাকশন । চলচ্চিত্রটি ৫১তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পায় এবং সেই বছরের একটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য হয় । অভিনেত্রী ইমা থমসনের স্ক্রিনপ্লেতে এবং এংলি’র পরিচালনায় “সেন্স এন্ড সেন্সসিবিলিটি ” চলচ্চিত্রটি হয় । এ চলচ্চিত্রের থিম সং করে কেট উইন্সলেট । ১৯৯৬ সালের মধ্য সময়ে কাজ শুরু করেন প্রখ্যাত নির্মাতা জেমস ক্যামেরুন এর “টাইটানিক” চলচ্চিত্রের কাজ , নায়ক হিসেবে ছিলেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এই চলচ্চিত্রে । ১৯৯৭ সালে মুক্তির পরই এই চলচ্চিত্র রোমান্টিক চলচ্চিত্র হিসেবে নাম লিখিয়ে ফেলে চলচ্চিত্রপ্রেমিদের মনে । ১৯৯৮ সালের চলচ্চিত্র “শেক্সপিয়র ইন লাভ” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন কেট উইন্সলেট ।

কেট উইন্সলেট অভিনীত সেরা দশটি চলচ্চিত্র হচ্ছে-“হেভেনলি ক্রিয়েচার(১৯৯৪)” , “সেন্স এন্ড সেন্সসিবিলিটি(১৯৯৫)” , “হ্যামলেট(১৯৯৬)”, “টাইটানিক (১৯৯৭)”, আইরিশ”(২০০১) , “ইটারনাল সানসাইন অফ স্পটলেস মাইন্ড(২০০৪)”,“ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড(২০০৪)”, “লিটেল চিলড্রেন(২০০৬)”,“রেভুলেশানারি রোড(২০০৮)”, “দ্য রিডার(২০০৮)”।



১৯৯৬ সালে উইলাইয়াম শেক্সপিয়র এর লেখা অবলম্বনে কেনেথ বানাথের পরিচালনায় নির্মিত “হ্যামলেট” চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি ।“হ্যামলেট” চলচ্চিত্রের কাহিনী হ্যামলেটকে নিয়ে , যে ডেনমার্ক এর প্রিন্স এবং নিজ বাড়িতে ফিরে আসে তার বাবার হত্যাকারীর খোঁজ করতে । তার অভিনীত চলচ্চিত্র “আইরিশ” মুক্তি পায় ২০০১ সালে , যার গল্প ঔপন্যাসিক আইরিশ মারডক ও তার স্বামী জন বেয়লির ভালোবাসা নিয়ে । চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন রিচার্ড আয়ার । ২০০৪ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র “ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড” , এতে জনি ডেপ এর সাথে তিনি অভিনয় করেন , যা একটি পরিবার ও একজন মানুষের সাথে সেই পরিবার নিয়ে গল্প । ছবিটি পরিচালনা করেন মার্ক ফরস্টার ।“ইটারনাল সানসাইন অফ স্পটলেস মাইন্ড” চলচ্চিত্রে কেট অভিনয় করেন জিম ক্যারির সাথে । ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটির গল্প লেখেন –মাইকেল গন্ড্রি , চার্লি কফম্যান,প্যারি বিসমাথ ।আর ছবিটি পরিচালনা করেন ফরাসি পরিচালক মাইকেল গন্ড্রি। এটি মূলত একটি রোমান্টিক সাইন্স ফিকশন চলচ্চিত্র ।



২০০৬ সালে নির্মিত “লিটেল চিলড্রেন” চলচ্চিত্রটির গল্প শুরু হয়েছে সারাহ পিরসকে দিয়ে , যিনি একজন উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী ও মা । যার স্বামী একজন পর্ণস্টার এর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে । এ নিয়েই ছবির শুরু ।ছবিটির গল্প নেয়া হয়েছে লেখক টম প্যারিটা লেখা গল্প অবলম্বনে । ছবিটি পরিচালনা করেছেন- টড ফিল্ড । লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও এর সাথে অভিনীত কেট উইন্সলেট এর আরেকটি চলচ্চিত্র হচ্ছে -“রেভুলেশানারি রোড”। রিচার্ড ইয়ারটস এর উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটিতে উঠে এসেছে ১৯৫০ দশকে কানেকটি শহরে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া এক অল্প বয়সী দম্পতিকে ঘিরে , যারা তাদের দুটি বাচ্চাকে প্রতিপালনের সময় ব্যক্তিজীবনে যে সমস্যায় পড়তে হয় তাকে নিয়ে । ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৮ সালে আর পরিচালনা করেন পরিচালক স্যাম মেন্ডেস । কেট উইন্সলেট এর অস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র “দ্য রিডার” মুক্তি পায় ২০০৮ সালে । বার্নাড সেসলিংকের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয় দুজন অসম বয়সী নর-নারীর ভালোবাসা । ছবিটি পরিচালক স্টিফেন ডালদ্রি পরিচালনা করেন । এছাড়া তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এনিগমা । যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ।

কেট উইন্সলেটকে অভিনয়ে অবদান এর স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১২ সালে কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই) উপাধি দেয়া হয় । ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ তিনি হলিউডের ওয়াক অফ ফেমে সম্মানিত হন । ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত পাঁচবার তিনি অস্কারের জন্যে মনোনয়ন পান । গ্রামি অ্যাওয়ার্ড,গোল্ডেন গ্লোব’সহ আরও অনেক পুরস্কার তিনি পেয়েছেন ।



২০১৪ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত অ্যাকশন সাইফাই ছবি “ডাইভারজেন্ট” । সামনে ২০১৪ তে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার “এ লিটল সস” ছবিটি । তাছাড়া ২০১৫ তে ক্রাইম নির্ভর ছবি “ট্রিপল নাইন” , কমেডি চলচ্চিত্র “ দ্য ড্রেসমেকার এবং রোমান্স-অ্যাকশন-সাইফাই নির্ভর ছবি “ইন্সারজেন্ট” মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে ।

অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট মনে করেন - Life is short, and it is here to be lived.


কিছু চলচ্চিত্র প্রতি আয়-
টাইটানিক (১৯৯৭) $ ২,০০০,০০০
হলি স্মোক(১৯৯৯) £৩৬০,০০০
কুইলস(২০০০) £ ৪৫০,০০০
এনিগমা(২০১১) £ ৩০০,০০০
ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড (২০০৪) £ ৬,০০০,০০০

বায়োগ্রাফি পর্ব-১:আলফ্রেড হিচকক -“দ্য মাস্টার অফ সাসপেন্স
বায়োগ্রাফি পর্ব-২: হারিয়ে যাওয়া : বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদ পুরুষ -জহির রায়হান
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×