somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরু,গাধা ও বাঁশ

০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গরু, গাধা ও বাঁশ তিনটাই সমাজের পরম উপকারী পদার্থ। প্রথম দুটি প্রাণি এবং শেষেরটি উদ্ভিদ। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই, তবু বুঝি প্রাণি ও উদ্ভিদের মধ্যে বিস্তর তফাৎ আছে। তফাৎ যতই থাকুক একটি জায়গায় অন্তত মিল আছে তা হলো প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ই নিশ্চিতভাবে পদার্থ। তিনটি জিনিসকে এক নামে পদার্থ বলে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করাই উত্তম বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তো স্কুলে গরুর রচনা পড়েনি এমন কোন গরু......... থুক্কু মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু কোন রচনার বইয়ে গাধা বা বাঁশ বিষয়ক কোন রচনা অন্তত আমার চোখে পড়েনি। কেউ এ দুটোর রচনা পড়েছে বলে আমার জানাও নেই। গরু দুধ দেয় বলেই কি গরুর প্রতি এতটা পক্ষ পাতিত্ব? গোয়ালাও তো আমাদের দুধ দেয়। তাহলে কোন বইয়ে গোয়ালার রচনা নেই কেন? যাকগে, সে সব কথা কর্তা ব্যক্তিরাই ভাল বলতে পারবেন। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো- গাধা ও বাঁশ বিষয়ক রচনা পাঠ্য বইয়ে অর্ন্তভূক্ত করা আবশ্যক। কারন আদিকাল থেকেই এদুটো পদার্থের ব্যবহার সমাজে ব্যাপকহারে হয়ে আসছে। ডিজিটাল যুগেও গাধা ও বাঁশের ব্যবহার কমেনি বরং বেড়েছে। সনাতন ব্যবহারের পাশাপাশি এখন গাধা ও বাশেঁর ডিজিটাল সংস্করণও চোখে পড়ছে হরহামেশা। সেদিন দেখলাম ফেসবুকে এক গাধা আরেক গাধার পাছায় আছিলা এক বাঁশ দিয়ে ষ্ট্যাটাস দিয়েছে। সে লিখেছে বাঁশ খাওয়া গাধা এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমার লেখার বিষয় সেটি নয়। বিষয়টি হচ্ছে দিনে দিনে সমাজে যেমন গাধার সংখ্যা বাড়ছে তেননি বাড়ছে বাশেঁর ব্যবহারও। সুতরাং গাধা ও বাশঁ নিয়ে আমাদের অবহেলার আর কোন সুযোগ নেই। অবিলম্বে গাধা ও বাঁশ বিষয়ক পৃথক দুটি বা সম্মিলিত একটি মন্ত্রণাালয় গঠন করা উচিত।

গরুর গোশ্ত এখন চারশো টাকা কেজি। ক’জন লোক মাসে একবার গরুর গোশ্ত খেতে পারে বলুনতো? প্রতিবেশী দেশ থেকে গরুর চালান বন্ধ হওয়ায় দেশে যেমন গরুর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে তেমনি বাড়ছে গরুর গোশ্তের দাম। শুধু তাই নয়, সনাতনী পদ্ধতির লাঙল দিয়ে চাষাবাদ এবং কৃষিপণ্য পরিবহনে গরুর গাড়ির ব্যবহার প্রায় বিলুপ্তের পথে চলে যাওয়ায় এখন গোশ্ত ও দুধ খাওয়া ছাড়া গরুর ব্যবহারও উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে। সুতরাং পাঠ্য বই থেকে গরুর রচনা উঠিয়ে দেয়া উচিত। গরুর চারটি পা দুটি শিং ও একটি লেজ আছে এমন গদবাঁধা চিরচেনা বিষয়টি পাঠ্য বইয়ে ঘটা করে পড়ার কি দরকার বলুন? গরুর রচনা বেশী বেশী পড়লে কি গরুর গোশ্তের দাম কমবে?

পক্ষান্তরে সমাজের প্রতিটি স্তরে যে হারে গাধার উৎপাদন বাড়ছে তাতে গাধা নিয়ন্ত্রণের কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সমাজটা অচিরেই গাধায় ভরপুর হয়ে যাবে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, সভা সমিতি,ক্লাব, সংগঠন, সরকারী বেসরকারী অফিস-আদালত, ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে কিংবা বক্তৃতার মঞ্চে কোথায় গাধার দেখা মিলবে না বলুন? কিছু দিন আগে একটি জাতীয় দৈনিক এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পাওয়া শিক্ষার্থীর মান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছিলো। প্রতিবেদনে প্রকাশ গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া এক ছাত্র অধ্যক্ষের কাছে ছুটির আবেদন লিখেছিল এভাবে-
“বরাবর, প্রধান অদক্ষ্য .............কলেজ।” আরেক ছাত্র লিখেছিল “বরাবর, প্রধান প্রিন্সিপাল............কলেজ” আর অতি সম্প্রতি বেসরকারী একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে এসএসসিতে এপ্লাস পাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর জ্ঞানের যা বহর দেখলাম তাতেতো রীতিমত ভীমরি খাওয়ার যোগাড়। ভাবুনতো এরা কি উত্তম গাধা নয়? আর এদের যারা গাধা বানিয়েছে সে শিক্ষকবৃন্দ কি আরো উত্তম গাধা নয়? আমরা আসলে গাধা চিনতে ভুল করি। যদি স্কুলের পাঠ্য বইয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গাধা সর্ম্পকে রচনা পড়তে দেয়া হয়। তাহলে গাধার পরিচয় , বংশ বিস্তার, রং, শ্রেণি বিভাগ এবং পরিণতি সর্ম্পকে তারা সম্যক জ্ঞান লাভ করবে। তাহলে তারা গাধা চিনতে অন্তত ভুল করবে না। ফলে তাদের গাধা হয়ে উঠার সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমিন ভয়ংকর গাধার সংস্পর্শ থেকে তারা দূরে থাকতে শিখবে। অবশ্য গাধা চিনতে স্বয়ং বিধাতাও নাকি ভুল করেন। প্রচলিত আছে, এক লোকের গাধা পোষার খুব শখ ছিল, তার স্ত্রীর ছিল গরু পোষার। কিন্তু গরু ও গাধা রাখার মত তাদের গোয়ালঘরে পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলান ছিলনা। গরু ঘুমায় তো গাধা দাঁড়িয়ে থাকে, গাধা ঘুমায় তো গরু দাঁড়িয়ে থাকে। গাধা নাকি গরু কোনটা পুষবে এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীতে প্রায়ই ঝড়তো হতো। একদিন স্বামী বেচারা স্ত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মনে মনে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করলেন যেন রাতের মধ্যে গরুটি মরে যায়। সকালে গোয়াল ঘরে গিয়ে তিনি দেখেন গাধাটি মরে পড়ে আছে। বেচারা আক্ষেপ করে দু’হাত উপরে তুলে বললেন “ কোন অভিযোগ নেই তোমার কাছে প্রভু, তুমি এতদিন থেকে এ জগতটা চালাচ্ছো আর কোনটা গরু কোনটা গাধা সেটাই চিনতে ভুল করলে?” সুতরাং মানুষের পক্ষে গাধা চিনতে ভুল হতেই পারে। তবে গাধা বিষয়ক জ্ঞান যত বাড়ছে, গাধা চিনতে ভুলের পরিমানও তত কমবে।

এ তো গেলো গাধার কথা। এবার আসি বাঁশ প্রসঙ্গে। দালান কোঠা অট্রালিকা যত বানান না কেন বাশঁ ছাড়া সম্ভব নয়, তা আমরা সবাই কমবেশী জানি। রডের বিকল্প হিসেবে সম্প্রতি দেশে নির্মাণ শিল্পে বাঁশের ব্যবহার জাতি হিসেবে আমাদের সম্মান বাঁশ সমান উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তো বাঁশ দেখেননি এমন মানুষ সমাজে খুঁজে পেলেও দু’একটা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু জীবনে একবারও বাঁশ খাননি এমন মানুষ সমাজে একটিও খুঁজে পাওয়া যাবেনা, এব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কারন আমি নিজেও বাশঁ খাওয়া লোকদের দলভূক্ত। আমরা বাঁশ খেতে পছন্দ করি না, তবুও অনিচ্ছাই কিংবা গাধামির কারনে বাশঁ খাই প্রতিনিয়ত। বন্ধু, শত্রু,মিত্র ,প্রেমিক প্রেমিকা, অফিসের বস এমনকি বউয়ের কাছে থেকেও আমরা অনেকেই বাঁশ খেয়ে থাকি। আর রাজনৈতিক মহলে একে অপরকে কিভাবে বাঁশ খাওয়ানো হয় এনিয়ে কথা না হয় না-ই বললাম। এ বাশঁ হয় কোনটা চিকন কোনটা মোটা, কোনটা তৈলাক্ত, কোনটা খসখসে, কোনটা ছিলা আবার কোনটাবা আছিলা। বাশঁ খাওয়া যে কত বেদনার তা কেবল ভূক্তভোগীরাই জানেন। কিন্তু কোথাও তা প্রকাশ করেন না আত্মসম্মান হারানোর ভয়ে। বাশঁ যে রান্না করেও খাওয়া তা জানা ছিল না। একবার সপরিবারে গিয়েছিলাম রাঙ্গামাটি ভ্রমনে। দেখলাম উপজাতি মেয়েরা বাশেঁর কচি চারা (আমরা বলি হোঁক) ডালায় সাজিয়ে বিক্রি করছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ওখানকার উপজাতি সম্প্রদায় এটি সবজি হিসেবে রান্না করে খায়। সুতরাং বাশঁও নানান পদে, নানান রূপে, নানান সাইজে খাওয়া যায়। আর তৈলাক্ত বাশঁ বেয়ে এক লাফে বানরের দু’মিটার উপরে উঠে পিছলে নিচে এক মিটার নেমে যাওয়ার অঙ্কটা হাইস্কুলে একবারও করেনি এমন লোকও সম্ভবত পাওয়া যাবে না। সুতরাং বাশঁ কত প্রকার ও কি কি , কিভাবে খাওয়া যায়,কিভাবে হযম করা যায়, কিংবা কিভাবে অন্যকে দেয়া যায় তা নিয়ে সবিশেষ রচনা পাঠ্যসূচীতে অর্ন্তভূক্ত করা উচিত নয় কি ? । বাশঁ খেতে আমাদের ভাল না লাগলেও বাশঁ খাওয়াতে আমাদের খুব ভাল লাগে। কাউকে বাশঁ দিতে বা খাওয়াতে পারলে আমরা খুব আনন্দিত আর গবির্ত হই। এ নিয়ে মজার একটা গল্প শুনিয়ে শেষ করবো। রাজা সুযোগ পেলেই গোপালভাঁড়কে খুব বাঁশ দেয়ার চেষ্টা করে। রাজা যতবার তাকে বাঁশ দেয়, গোপালভাঁড় তার চেয়ে বড় বাঁশ রাজাকে ফেরত দেয়। একদিন রাজা গোপালভাঁড়কে বলছেন“গোপাল আমার চেহারার সাথে তোমার চেহারার খুব মিল আছে দেখছি, তোমার মা কি আমার বাবার রাজমহলে প্রায়ই আসতেন?” গোপালভাঁড় উত্তরে বললেন“ না হুজুর আমার মা আসতেন না, তবে বাবা প্রায়ই আসতেন।”


লেখকঃ কলেজ শিক্ষক।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×